এই মন তোমারি পর্ব ২৪

এই মন তোমারি পর্ব ২৪
নুজাইফা নূন

-” সূরা মা কি হয়েছে তোর? তুই ঠিক আছিস তো? ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলি কেন? তুই ঘুমোচ্ছিস দেখে আমি নুজাইফার রুমে গিয়েছিলাম। নুজাইফার রুম থেকে তোর চিৎকার শুনে আমি ছুটে এসেছি।ভেবেছি কি না কি হয়েছে তোর? খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছিস মা?”

-” সূরা তখনো নির্বিকার হয়ে বসে আছে।তার গাঁ ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে।এখনো শরীর থরথর করে কাঁপছে। নাজমা দেওয়ান সূরার এই অবস্থা দেখে সূরা কে পানি খাইয়ে দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, মা কে বলবি না কি হয়েছে?বাবা মা কে স্বপ্নে দেখেছিস?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” সূরা নিজের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, আমি তো ঠিকই আছি। আমার তো কিছু হয় নি। ওহ্ তার মানে এটা আমার স্বপ্ন ছিলো।এক মূহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো হয়তো সবটা সত্যি সত্যি হয়ছে। আব্বা সেলিম কাকা কে মে’রে দিয়েছে।যদিও এটা স্বপ্ন কিন্তু আব্বা তো আমাকে বলেছেন সুন্দর ব্যাডা মানুষের থেকে দূরে থাকতে।এমন ও তো হতে পারে আমি তার কাছাকাছি গেলাম আর আব্বা সত্যিই সেলিম কাকা কে মেরে দিলো।না না আমি নিজের সুখের জন্য এমন কিছুই করবো না।

কিছু সময়ের জন্য ভেবেছিলাম হয়তো আমার হারানো সুখ আবারো ফিরে এসেছে। কিন্তু না সুখ নামক সোনার হরিণের দেখা যে আমি কোনোদিন ও পাবো না।আমি যে বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।জানি সুন্দর ব্যাডা মানুষ কখনো আমার হবে না।

কিন্তু আমি দূর থেকে তাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো।যে মন আমি তার নামে লিখে দিয়েছি সেটা আর কখনো কাউকে দিতে পারবো না।সে আমার হোক বা না হোক আমি সারাজীবন তার হয়ে থাকবো।আব্বা মানুষ টা বেশি সুবিধার না।সে নিজের ছেলের সুখের জন্য তরীর সাথে তার বিয়ে দিতে চায়ছেন না। চায়ছেন তার স্বার্থের জন্য। তার স্বার্থের জন্য নিজের ছেলের ক্ষতি করতেও তার হাত কাঁপবে না। আমি তার ভালোর জন্য এই বাড়ি থেকে চলে যাবো ঠিকই তবে তাকে কখনো তালাক দিবো না।সে আমার কাছে সবসময় আমার সুন্দর ব্যাডা মানুষ হয়ে’ই থাকবে। সূরার থেকে রেসপন্স না পেয়ে নাজমা দেওয়ান আবারো বললো,

-” কিরে কি এতো ভাবছিস ?”
-” সূরা ভাবলো শফিকুল দেওয়ান এর কথা তাকে বলে দিবে। কিন্তু পর মূহুর্তে ব্যাপার টা এড়িয়ে গিয়ে বললো, তেমন কিছু না মা। আপনি চিন্তা করবেন না।আমি ঠিক আছি মা।”

-” তোর চোখ মুখ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস। আমার থেকে কিছু লুকিয়ে যাচ্ছিস।শাফি বাড়িতে আসার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি তুই কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিস।চোখে মুখে ভয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।আরাব যাওয়ার পর তুই রাতের খাবার না খেয়েই এসে ঘুমিয়ে পড়েছিস। শাফি এইটুকু সময়ের মধ্যে দুই বার এসেছে তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তুই ঘুমিয়েছিস দেখে শাফি তোকে আর ডাকে নি।এখন চট করে উঠে পড় তো।ফ্রেশ হয়ে শাফির রুমে যা।শাফি বোধহয় এখনো না খেয়ে তোর জন্য বসে আছে। ছেলেটা যে তোর প্রতি সদয় হয়েছে এজন্য আমি আল্লাহর দরবারে লাখ শুকরিয়া জানিয়েছি। তোদের মধ্যে দূরত্ব কমে এসেছে দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। দোয়া করি তোরা দুজনে এভাবেই সারাজীবন হাসিখুশি থাক।”

-” নাজমা দেওয়ান এর কথা শুনে সূরার বুক ভারী হয়ে আসে। ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয় সে। সে তো এটাই চেয়েছিল তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ তাকে ভালোবেসে নিজের করে নিক।আর সে সূরা কে আপন করে নিতেও চেয়েছে। কিন্তু তার যে কিছু করার নেই।সে অপরাগ ।সূরা নাজমা দেওয়ান এর আড়ালে চোখের পানি মুছে বললো, আমি আপনার কাছে থাকবো মা। পুলিশের সাথে আমি থাকবো না মা।”

-” কেনো মা?শাফি তো তোকে ওর রুমে থাকতে অনুমতি দিয়েছে।তাহলে তুই যাবি না কেন?”
-“দয়া করে আপনি আমাকে জোর করবেন না মা।”

-” তুই ইদানিং বড় হয়ে গিয়েছিস রে সূরা। নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখে গিয়েছিস। ঠিক আছে ।তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর বলে নাজমা দেওয়ান রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।নাজমা দেওয়ান এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে সূরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বললো, আমার যে আর কোনো উপায় নেই মা।যে দিন টা দেখার জন্য আমি এতো দিন অপেক্ষা করছি সেই দিন টা যখন আমার সামনে উপস্থিত হলো তখন এক ঝড় এসে আমার সবটা এলোমেলো করে দিলো।আমি যে মানুষ টার আশেপাশে থাকলে নিজেকে সামলে নিতে পারবো না মা।তার থেকে দূরে যেতে পারবো না।বুকে যে বড্ড জ্বলন উঠেছে আমার।এ আগুন যে প্রেমের সর্বনাশা আগুন। ভালোবাসার মানুষ কে কাছে না পাওয়ার আগুন।এখন যদি আমি মানুষ টার কাছে যাই ,তাহলে যে সেই আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হবে। আমি যে সে জ্বালা স‌ইতে পারবো না মা।”

-” শাফায়াত ল্যাপটপে কাজ করছে।সে এখনো ডিনার করে নি।ভেবেছিলো সূরা কে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খাবে। অবশ্য সে দুইবার নাজমা দেওয়ান এর রুমে গিয়েছে সূরা কে খাওয়াবে বলে, কিন্তু মেয়েটা ঘুমন্ত মুখ দেখে শাফায়াতের ইচ্ছে হয় নি তাকে জাগানোর।তাই তো নিজেও না খেয়ে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করে আছে। অনেক সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পর ও যখন সূরা তার রুমে আসে না , তখন শাফায়াত আবারো নাজমা দেওয়ান এর রুমে খাবার নিয়ে উঁকি দিতে যায়।

শাফায়াত গিয়ে দেখলো সূরা দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুঁজে রেখেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। শাফায়াত গিয়ে সূরার মাথায় হাত রাখতে’ই সূরা চোখ তুলে তাকালো। কেমন বিধ্বস্ত লাগছে তাকে দেখতে। চোখ দুটো ফুলে উঠেছে। শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরা ছোট দেহ তার বুকে টেনে নিয়ে বললো, কি হয়েছে পাখি? কান্না করছো কেন?”

-” সূরা এক ঝটকায় নিজেকে শাফায়াতের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, সবসময় এমন গাঁয়ে পড়েন কেন? সুযোগ পেলে’ই জড়িয়ে ধরেন, চুমু দেন, ভালো লাগে না আমার।বিরক্ত লাগছে আপনার ছোঁয়া। সূরার এহেন কাণ্ডে অবাক হয়ে যায় শাফায়াত।সে মনে মনে বললো,

-” হুট করে মেয়েটার কি হলো? যে মেয়েটা সবসময় আমার একটু ভালোবাসা , ছোঁয়া পাওয়ার জন্য ছটফট করেছে,সেই মেয়েটা এখন বলছে আমার ছোঁয়া তার বিরক্ত লাগছে।হাউ স্ট্রেঞ্জ? শাফায়াত সূরা কে কিছু বললো না। বরং টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে খাবার মেখে এক লোকমা সূরার মুখের সামনে ধরলো। কিন্তু সূরা শাফায়াতের হাতে খেলো না।তার হাত সরিয়ে দিলো।যা দেখে শাফায়াত রাগ বেড়ে গেল । তবু ও সে নিজেকে শান্ত করে বললো, আমি ও কিন্তু খাই নি মেয়ে। অনেক ক্ষুধা লাগছে আমার। তোমাকে খাইয়ে দিয়ে তারপর খাবো।”

-” আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে গেছি। আমি নিজে হাতে খেতে পারি।আমি তো আপনাকে বলি নি যে আমার জন্য না খেয়ে আপনি বসে থাকেন।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৩

-” সূরার কথা শুনে শাফায়াতের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়।সে ভাবতেও পারিনি সূরা এমন কিছু বলবে।রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সে সূরার গাল চেপে ধরে মুখের মধ্যে এক লোকমা খাবার ঢুকিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ সূরা এক বিষ্ময়কর কাজ করে বসে।সে শাফায়াতের গালে ঠাস ঠাস করে থা’প্প’ড় মেরে দেয়।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৫