এই মন তোমারি পর্ব ২৩

এই মন তোমারি পর্ব ২৩
নুজাইফা নূন

-” আমার বাচ্চা চাই পুলিশ। অনেক অনেক বাচ্চা।ঘর ভর্তি শুধু বাচ্চা আর বাচ্চা থাকবে।তারা ছোট্ট ছোট্ট পায়ে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াবে , সারাক্ষণ বাড়ি টা মাতিয়ে রাখবে। আধো আধো বুলিতে আমাকে মা আর আপনাকে বাবা বলে ডাকবে। একবার ভাবুন কত্তো মজা হবে তখন।”

-” শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরার কোমর জড়িয়ে ধরে সূরার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বললো, তুমি ক্যারি করতে পারলে আমি একাই ফুটবল টিম, ক্রিকেট টিমের জন্ম দিয়ে রেকর্ড গড়তে পারি। কিন্তু কথা হচ্ছে তোমার যে শুটকি মাছের শরীর তাতে একটা বাচ্চা ক্যারি করতে গেলেই তুমি চোখের পানি নাকের পানি এক করে নিবা।তাই এখন এসব বাচ্চাকাচ্চার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মন দিয়ে পড়াশোনা করো। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে একটু মোটা তাজা হ‌ও। শরীরে রক্তের সঞ্চার করো। তারপর বাচ্চা নিয়ে ভাবা যাবে।নিজে একটা বাচ্চা হয়ে সে এসেছে অন্য বাচ্চার মা হতে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” শুধু কি যাদের স্বাস্থ্য ভালো তাদেরি বাচ্চা হয়? তারাই মা ডাক শুনতে পায়? যাদের স্বাস্থ্য ভালো না তাদের কি মা ডাক শোনার কোনো অধিকার নেই পুলিশ?”
-“একটা প্রাণের মধ্যে আরো একটা প্রাণ ক্যারি করা সহজ কথা নয় পাখি।দশ মাস দশ দিন তোমাকে কষ্ট সহ্য করতে হবে।প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। তুমি বাচ্চা একটা মেয়ে।আমি কোনো রিষ্ক নিতে পারবো না।আগে বড় হ‌ও, তারপর যে কয়টা খুশি বাচ্চার জন্ম দিও।”

-” আমি কোনো কথা শুনতে চাই না পুলিশ। আমার বাচ্চা চাই মানে বাচ্চা চাই।”
-“জেদ করো না মেয়ে।বাই দ্যা ওয়ে হঠাৎ এই বাচ্চার ভূত তোমার মাথায় এলো কেন?’
-” মা বলেছে বাচ্চা ছাড়া সংসার পরিপূর্ণ হয় না।বাচ্চা হলে আপনি আমাকে আরো বেশি ভালোবাসবেন। তখন আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। ”

-” মানে কি? এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি না?”
-” হ্যাঁ বাসেন, তবে অল্প একটু। এতো টুকু তে আমার পোষায় না পুলিশ।তাছাড়া দাদা দাদী নাতি নাতনিদের অনেক ভালোবাসে।আব্বা তো আমাকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না।আব্বা বলেছে কোনো এক ডানা কাটা পরীর সাথে নাকি আপনার বিয়ে দিবে।”
-” আশ্চর্য! বাবা বিয়ে দিতে চায়লেই কি আমি বিয়ে করবো?”

-” ব্যাডা মানুষ বলে বিশ্বাস নেই।এরা আর কোনো হাদিস জানুক বা না জানুক ইসলামে চার বিয়ে করার হাদিস ঠিকই জানে। কিন্তু এই সূরা সেটা হতে দিবে না। আমি তো সিনেমায় দেখেছি নায়ক নায়িকা পালিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু তাদের বাবা মা মেনে নেই না।পরে যখন তারা বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বাবা মায়ের সামনে হাজির হয় তখন নাতি নাতনির মুখের দিকে তাকিয়ে ছেলেমেয়েদের কে মেনে নেয়।

তাই আপনার সাথে ঐ ডানা কাটা পরীর বিয়ে হ‌ওয়ার আগেই যদি আমাদের ঘর আলো করে বাচ্চা কাচ্চা চলে আসে, তাহলে আব্বা নাতি নাতনির টানে আমাকে মেনে নিবে। আমার আপনাকে হারাতে হবে না।আপনাকে পাওয়ার জন্য এটুকু কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো পুলিশ বলে সূরা আরো গভীর ভাবে শাফায়াত কে আঁকড়ে ধরলো।তার বুকে অজস্র চুমু তে ভরিয়ে দিতে লাগলো। শাফায়াত সূরার আহ্বানে সাড়া দিলো।

সে সূরা কে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো। সে সূরার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখ আজ অন্য কিছু বলছে।তাকে অ’স’ভ্য বেহায়া হতে উষ্কে দিচ্ছে। শাফায়াত আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সূরার দিকে। তাদের মধ্যে আর এক ইঞ্চি সমান দূরত্ব রয়েছে।

শাফায়াতের গরম নিঃশ্বাস সূরার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। সূরা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।এর‌ই মধ্যে কর্কশ শব্দে শাফায়াতের ফোন বেজে উঠলো। শাফায়াত বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই অপর প্রান্ত থেকে যা শুনলো তাতে তার ফোন ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেল। সে এসির মধ্যে ও ঘামতে লাগলো।সে বুঝতে পারছে না ব্যাপার টা কিভাবে সূরা কে বলবে?আবার মিথ্যা কথাও বলতে পারবে না। সত্যি টা সূরার জানার দরকার।”

-” সূরা শাফায়াতের এমন অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে পুলিশ? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কার ফোন ছিলো? আর সে কি এমন বললো যাতে আপনার মুখের আদল বদলে গেল?”
-“শাফায়াত সূরা কে বুকের সাথে চেপে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো, তোমার সেলিম কাকা বাকিটা বলতে পারলো না শাফায়াত।তার স্বর কাঁপছে।”

-” সেলিম কাকা এতো রাতে কেন ফোন দিলো পুলিশ?সে ঠিক আছে তো?”
-” তোমার সেলিম কাকা আর এই দুনিয়াতে নেই সূরা।তাকে কেউ নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। কথাটা শোনা মাত্রই সূরার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো তার।দর্শনেন্দ্রিয় থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়লো। সেলিমের সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

শাফায়াত সূরা কে শান্ত করে সবাইকে ব্যাপার টা জানানোর জন্য নিচে এলো। সূরা হঠাৎ লক্ষ্য করলো দরজায় শফিকুল দেওয়ান দাঁড়িয়ে রয়েছে।সূরা গুটি গুটি পায়ে তার দিকে এগিয়ে এলো।তার চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।তিনি সূরার দিকে তেড়ে এসে বললো, তোকে বলেছিলাম আমার ছেলের থেকে দূরে থাকবি। কিন্তু তুই আমার কথা কানে তুললি না।

আমার আর আমার কোটিপতি হওয়ার মাঝে তুই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিস। এমনকি আমার ছেলেটাকে বশ করে তার মন টা তোর করে নিয়েছিস।এখন শাফি তোকে ভালোবাসে ,তোকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে।শাফি এখন কিছুতেই তোকে ডিভোর্স দিবে না।যা করার তোকে করতে হবে।এখনো ও সময় আছে শাফির জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যা।না হলে কিন্তু তোর চাচি চাচাতো ভাই বোন তাদের সাথেও সেই একই অবস্থা হবে যেটা তোর সেলিম কাকার সাথে হয়েছে।”

-” তার মানে আমার কাকা কে আপনি মেরেছেন?”
-” হ্যাঁ আমিই মেরেছি তোর কাকা কে।”
-” নিজের স্বার্থের জন্য এতো নিচে নামতে পারলেন আপনি? অমানুষের মতো দু দুটো বাচ্চা কে এতিম বানিয়ে দিলেন আব্বা? পৃথিবীতে টাকায় কি সব?”
-” হ্যাঁ আমি অমানুষ। আমার স্বার্থের জন্য আমি সব করতে পারি। আমার টাকা চাই। অনেক অনেক টাকা।আর আমার টাকা পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে তরী।তরী এই বাড়ির বউ হয়ে এলে আমার সেই চাওয়া পূরণ হবে। আমি টাকার বিছানায় ঘুমোতে পারবো।”

-” আমি আর আপনাকে সেই সুযোগ দিবো না আব্বা। আমি এক্ষুনি পুলিশ কে সব সত্যি টা বলে দিবো। আপনার এই ভালো মানুষের মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলে দিবো।দিনের পর দিন আপনি মার মতো ভালো একজন মানুষ কে ঠকিয়ে আসছেন। এমনকি আপনার র’ক্ত, আপনার অংশ , আপনার ছেলেমেয়েদের ও আপনি ঠকাচ্ছেন। কিন্তু আর না। আর কাউকে ঠকাতে পারবেন না আপনি।

এই মন তোমারি পর্ব ২২

-” সে সময় তুই পাবি না ।আমারি বোঝার ভুল ছিলো। এইখানে সেলিমের কোনো দোষ নেই।সব কিছুই মূলে রয়েছিস তুই। তুই না থাকলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।এখন বুঝতে পারছি আমি শুধু শুধু সেলিম কে মারলাম। আমার সেলিম কে না মে’রে তোকে মা’রা উচিত ছিলো।তবে একটা কথা কি জানিস , একটা খু’নে’র ও যে শাস্তি দশটা খু’নে’র ও সেই শাস্তি বলে শফিকুল দেওয়ান সূরার ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করলো।সাথে সাথে সূরা ও মাগো বলে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।

এই মন তোমারি পর্ব ২৪