এই মন তোমারি পর্ব ২২

এই মন তোমারি পর্ব ২২
নুজাইফা নূন

-” শফিকুল দেওয়ান চলে গেলেও সূরা নির্বিকার , হতভম্ব হয়ে ঠাঁই সেখানেই বসে থাকে।সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।মনে হয় যেনো কেউ তার বুকে হাতুড়ি পিটা করছে।সে যে এই কয় মাসে তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ কে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।ভালোবাসার মানে বুঝতে শিখেছে।

তার বাবার সাথে এই মানুষ টার অনেক মিল পেয়েছে সূরা।তার বাবা যেভাবে সূরার চুলে তেল দিয়ে বেনী করে দিতো, তার ভেজা চুল গুলো মুছে দিতো।এই মানুষ টাও ঠিক সেইভাবে সূরার খেয়াল রেখেছে।সূরা কে আগলে রেখেছে। মানুষ টার শাসন , বারণ ,সূরার প্রতি তার কেয়ারিং সবটা সূরার মন কেড়েছে।তার কাছাকাছি গেলে নিমিষেই সূরার মধ্যে থাকা সব অশান্তি দূর হয়ে গিয়ে সুখের আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মনের মধ্যে নিষিদ্ধ সব চাওয়ারা উঁকি দেয়।সূরার খুব ইচ্ছে হয় তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ কে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে।তার গাঁয়ের মিষ্টি গন্ধ নিজের গাঁয়ে মাখতে।তাকে আপন করে নিতে।যতটা আপন হলে কেউ আরো থেকে আর কখনো দূরে সরে যেতে পারবে না। কিন্তু কি করবে সে? শফিকুল দেওয়ান যে তার আর তার ভালোবাসার মাঝে দেয়াল সৃষ্টি করে দিয়েছে।সে দেয়াল টপকে তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে যাওয়ার সাধ্য যে সূরার নেই। সেলিম সূরার র’ক্তে’র কেউ নয়।

তবু ও লোকটার অভাবের সংসারে সূরা কে নিয়ে এসে বাবার আদর স্নেহ দিয়ে তাকে বড় করেছে।সে কিভাবে পারবে নিজের সুখের জন্য তাকে বাবার আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করা মানুষ টাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে?তার দুই টা ছেলেমেয়ে কে এতিম করে দিতে?তার চাচি কে বিধবা করে দিতে?

সে যতোই সূরা কে সহ্য করতে না পারুক , তবু ও চাচি তো মায়ের’ই মতো।সে কিভাবে পারবে তার চাচির আর্তনাদ সহ্য করতে? এতোটা স্বার্থপর হতে পারবে না সূরা। সূরা আর কিছু ভাবতে পারে না।তার মাথা ভারী হয়ে আসে।সে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়াতেই শাফায়াত এসে জিজ্ঞেস করে, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছো মেয়ে? এখনো পড়তে যাও নি কেনো?”

-” সূরার কি হলো কে জানে সে দৌড়ে এসে জাপটে ধরলো শাফায়াত কে। শাফায়াত ও সূরার ছোট্ট কোমল দেহ আঁকড়ে ধরে রাখলো নিজের বক্ষ পিঞ্জরে। মূহুর্তের মধ্যে যেন সূরার সমস্ত যন্ত্রণা দূর হয়ে গেল।তার মনে হলো এটা যেন তার পরম শান্তির জায়গা।সে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে পড়ে থাকলো শাফায়াতের লোমশ বুকে। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর শাফায়াত বুঝতে পারলো সূরা কান্না করছে।

সে সূরা কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে সূরার মুখ দুহাতে আঁজলা করে ধরে বললো , কি হয়েছে আমার পাখি টার? কান্না করছো কেন?কেউ কি কিছু বলেছে? নাকি পড়া পারো নি দেখে মন খারাপ হয়েছে।দেখো তুমি যদি আরাবের কাছে না পড়তে চাও ,পড়ার দরকার নেই।আমি নিজেই সময় বের করে তোমাকে পড়াবো।না হয় কোনো ভালো মহিলা টিচার এনে দিবো তোমার জন্য। তবু কান্না করো না পাখি। তোমার চোখের পানি দেখে তোমার পুলিশের কষ্ট হচ্ছে তো।বলো না কি হয়েছে?”

-” সূরা কোনো উত্তর দিলো না। বরং আরো জোরে শাফায়াত কে আঁকড়ে ধরলো।যেনো ছেড়ে দিলেই শাফায়াত তার থেকে দূরে চলে যাবে।”
-” আরে বাবা বলবে তো কি হয়েছে?”
-” আব্বা সূরা বলতে গিয়েও মুখে হাত দিয়ে থেমে গেল।সে এক মূহুর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলো শফিকুল দেওয়ান আর তার মধ্যে যে কথা হয়েছে সেগুলো শফিকুল দেওয়ান কাউকে বলতে বারণ করেছে।তাহলে যে তিনি সূরার কাকার ক্ষতি করে দিবেন।”

-” বলো বাবা কি? কি বলেছে বাবা?”
-” কিছু না।ঐ হঠাৎ আমার নিজের আব্বার কথা খুব মনে পড়ছে পুলিশ। আমার আব্বা কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলো পুলিশ?”

-“শাফায়াত সূরার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, মন খারাপ করে না পাখি। মানুষ চিরদিন এই পৃথিবীতে থাকার জন্য আসে না। একদিন না একদিন তাকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ছেড়ে চলে যেতে হয়। তোমার বাবার এই পৃথিবীতে আয়ু ফুরিয়ে এসেছিলো তাই তিনি চলে গিয়েছেন।এসব ভেবে মন খারাপ করো না।তোমাকে যে তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শিখতে হবে।

তুমি কয়েক মাস আগে বলেছিলে না আমি যতো তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শিখতে পারবো আপনি আমাকে ততো তাড়াতাড়ি ভালোবাসবেন তাই না পুলিশ? দেখো তোমার পড়াশোনা শেখার আগেই তুমি একটু একটু করে পুলিশের মন চুরি করে নিয়েছো? তোমার প্রতি বাজে এক অনুভূতির সৃষ্টি করেছো।এই যে এখন আমার তোমাকে দেখলেই মনের মধ্যে ভ’য়ং’ক’র চাওয়ার সৃষ্টি হয়, তোমাকে আদর দিতে, ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। আমার রঙে তোমাকে রাঙিয়ে দিতে মন চাই। তোমার মাঝে হারিয়ে যাওয়ার সাধ জাগে। নিজের হাত পা শিরশির করে নিজেকে উষ্কে দেয় তোমার কাছে যাওয়ার জন্য। এখন এর দায়ভার কে নেবে বলো তো ? পারবে তো আমার উত্তাপ সহ্য করতে?”

-” শাফায়াতের কথায় সূরা ঠিক লজ্জাবতী পাতার ন্যায় নুইয়ে পড়ে।যা দেখে শাফায়াত সূরা কে নিজের বক্ষ পিঞ্জর থেকে তুলে কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললো, আমার লজ্জাবতী ললিতা। এখন যতো পারো লজ্জা পেয়ে নাও।পরে কিন্তু আমি তোমাকে লজ্জা পাওয়ার মতো কোন সময়’ই দিবো না।”

-” সূরা প্রতিত্তরে কিছু না বলে শাফায়াতের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসে।আরাব তখন নুজাইফা কে হিসাববিজ্ঞানের ম্যাথ বুঝিয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু নুজাইফার কানে কোনো কথা যাচ্ছে না।সে কলম কামড়ে ধরে এক ধ্যানে আরাবের দিকে তাকিয়ে থাকে।নুজাইফার নজর এলোমেলো হয়।সে মনে মনে বললো,

-” আপনি এতো সুন্দর কেনো আরাব ভাই। আপনি যখন ভার্সিটি তে যান নিশ্চয় মেয়েরা আপনাকে দেখে পাগল হয়ে যায়। আমি নিজেই তো বারবার আপনার এই রুপে মাতোয়ারা হয়ে যায়।মন পিঞ্জিরা উত্তাল পাত্তাল হয়ে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করা যে বড্ড দায় হয়ে যায়।এটা আপনি কবে বুঝবেন আরাব ভাই? কবে আমার মনের না বলা কথাগুলো পড়ে নিতে পারবেন আরাব ভাই?”

-” আরাব হঠাৎ লক্ষ্য করলো নুজাইফা প্রখর দৃষ্টি তে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আরাব গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, তোর দৃষ্টি খাতার দিকে না থেকে আমার দিকে কেনো নুজু?”
-” আপনাকে দেখছিলাম আরাব ভাই।”

-” আরাব কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে লক্ষ্য করলো, সূরা মাথায় এক হাত ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে আগের কোনো সাজগোজ নেই। চোখ দুটো কেমন ফোলা ফোলা লাগছে।নাকের পাটা লাল হয়ে আছে। যেমন টা অনেক ক্ষণ যাবত কান্না করলে হয়। ব্যাপার টা বেশ সন্দেহজনক মনে হলো আরাবের কাছে।সে মনে মনে বললো, সূরা কি তাহলে কান্না করেছে? হঠাৎ কি হলো সূরার?

এই মন তোমারি পর্ব ২১

শাফায়াত ভাইয়া বাসায় আসা পর্যন্ত তো সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। তাহলে হঠাৎ কি হলো সূরার সাথে? নাজমা আন্টি তো বলেছিলো সূরা তার বোনের মেয়ে। অর্থাৎ শাফায়াত ভাইয়ার কাজিন। কিন্তু শাফায়াত ভাইয়া সূরা কে এমন ভাবে ডেকে নিয়ে গেল যেন সে তার বিয়ে করা ব‌‌উ। তাছাড়া কাজিনের সাথে শাফায়াত ভাইয়া এতোক্ষণ কি কথা বললো?সেটাও আবার বন্ধ রুমে??”

এই মন তোমারি পর্ব ২৩