এই মন তোমারি পর্ব ২১

এই মন তোমারি পর্ব ২১
নুজাইফা নূন

-” শাফায়াত এতো জোরে সূরার গাল চেপে ধরেছে যে ব্যাথায় সূরার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সে শাফায়াতের থেকে নিজকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা’ই করে না। বরং প্রিয় মানুষ টার সান্নিধ্য পেয়ে তার ভালো লাগে।তার দেওয়া যন্ত্রণায় সূরার সুখ সুখ অনুভব হয়।তার হার্ট বিট বেড়ে যায়।মনের মধ্যে হাজারো সুখের প্রজাপতি উড়তে থাকে।

সূরা দুহাতে আঁকড়ে ধরে শাফায়াত কে। প্রাণভরে তার গাঁয়ের মিষ্টি ঘ্রাণ শুঁকে নেয়।তার শক্তপোক্ত লোমশ বুকে অধর ছুঁয়ে দেয়। কিন্তু এতে ও যেনো শাফায়াতের রাগ কমে না। বরং বেড়ে যায়।সে নিজের আক্রোশ মেটাতে আঁকড়ে ধরে সূরার অধর। নিজের সমস্ত রাগ, ক্ষোভ, আক্রোশ মেটাতে থাকে সূরার কোমল অধর জোড়ায়।এক পর্যায়ে শাফায়াত যখন দেখলো সূরা সমস্ত ব্যাথা সহ্য করেও নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কোনো চেষ্টা’ই করছে না , তখন সে সূরা কে ছেড়ে দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“নেক্সট টাইম যদি আবারো একই ভুল করো,তাহলে কিন্তু এর থেকেও খারাপ কিছু হবে তোমার সাথে। খারাপ কিছু মানে বুঝতে পেরেছো তো? শুধু আরাব কেনো কোনো পুরুষ মানুষের সামনেই তুমি সাজগোজ করে চুল ছেড়ে যাবে না। অনেক চেষ্টা করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পেরেছি যার কারণে তোমার লম্বা চুলগুলো এখনো কাটিনি। কিন্তু নেক্সট টাইম তোমাকে সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না। বুঝতে পেরেছো?”

-” সূরার চোখের পলক পড়লো না। নিষ্পলক চোখে তার সামনে থাকা রাগান্বিত মানুষ টার মুখশ্রীর দিকে চেয়ে থাকলো। শাফায়াত লক্ষ্য করলো সূরার ঠোঁট অনেকটা কে’টে গিয়ে ব্লিডিং হচ্ছে।যা দেখে শাফায়াতের বুক ধুক করে উঠলো। নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড অচেনা লাগছে শাফায়াতের।সে কিভাবে পারলো বাচ্চা একটা মেয়ের সাথে এমন অমানুষের মতো আচরণ করতে? শাফায়াত আর কিছু ভাবতে পারে না‌।তার বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয়।

সে বুঝতে পারে এই গাইয়া মেয়েটা একটু একটু করে তার মন হরণ করে নিয়েছে।তার মনের মালকিন হয়ে উঠেছে।সে না চায়তেও এই গাইয়া বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে। মেয়েটা অন্য কারো হবে বা অন্য কেউ তার প্রশংসা করবে এটা সহ্য করতে পারে নি শাফায়াত।

শাফায়াত এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সূরার দিকে।কোন কিছু না ভেবে আবারো সূরার অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয়।পরম যত্নে শুষে নিতে থাকে সূরার অধরে লেগে থাকা র’ক্ত। বেশ কয়েক মিনিট পরে শাফায়াত সূরা কে ছেড়ে দেয়। ইউটিউব দেখে চুল খোঁপা করা শিখে সূরার চুল সুন্দর করে খোঁপা করে দিয়ে ফ্লোর থেকে সূরার ওড়না তুলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বললো, এখন থেকে এভাবেই আরাবের সামনে যাবে। আর আরাব যদি কখনো তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে , তুমি সোজা তাকে বলে দিবে তুমি আমার বিয়ে করা ব‌উ ।ওকে?”

-” সূরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।”
-” আরাব কি আমার থেকে ও সুন্দর?”
-” জানি না। আমি তো তার দিকে সেইভাবে তাকায় দেখি নি পুলিশ।”
-” এইতো গুড গার্ল।”

-” সূরা কিছু না বলে রুমের বাইরে আসার আগেই শাফায়াত সূরার হাত ধরে বললো, গাধা আমি মাথায় ঘোমটা দিয়ে যেতে বলেছি তারমানে এটা নয় যে তুমি এইভাবে তার সামনে চলে যাবে। শাফায়াত সূরা কে আয়নার সামনে নিয়ে এসে বললো, আয়নায় একবার তাকিয়ে দেখো নিজেকে কেমন পেত্মীর মতো লাগছে।আমি নিজেই আমার ব‌উ দেখে ভয় পাচ্ছি।না জানি আরাবের কি অবস্থা হবে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর পড়তে যাও।আর হ্যাঁ পড়া শেষ হলে সোজা আমার রুমে চলে আসবে।আরাব যেগুলো পড়াবে সেগুলো আবার আমি তোমাকে দেখিয়ে দিবো। তাহলে দেখবে পড়া সহজ লাগবে তোমার কাছে।সবটা তাড়াতাড়ি নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারবে।”

-” ঠিক আছে পুলিশ।”
-” সূরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে শাফায়াত রুমে নেই।সূরা মাথায় ঘোমটা টেনে রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে শফিকুল দেওয়ান এর সাথে দেখা হয়। শফিকুল দেওয়ান রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে থাকে সূরার দিকে।যেন তার চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে সূরা একটু ভয় পেয়ে যায়।সে কি করবে বুঝতে না পেরে শফিকুল দেওয়ান এর পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ায় জন্য পা বাড়ানোর আগেই শফিকুল দেওয়ান বললো, দাঁড়াও মেয়ে।”

-” ব্যাস সূরার পা থরথর করে কাঁপতে থাকে।সে এই মানুষ টাকে অনেক ভয় পায়।তার ভয় আরো বাড়িয়ে দিতে শফিকুল দেওয়ান এসে বললো, তুমি শাফির রুমে কি করছিলে?তোমাকে না বলেছি তুমি শাফির আশেপাশে থাকবে না।তোমার জন্য আমার আর নাজমার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।এখন তুমি আবার চায়ছো আমার বিজনেস ও খারাপ হোক। আমার ফ্রেন্ডের মেয়ে তরী এই বাড়ির বউ হয়ে এলে আমি কোটিপতি হয়ে যাবো।

তখন আর নাজমার মুখে দিনরাত খোঁটা শুনতে হবে না।তোমাকে আবারো বলছি তুমি শাফির থেকে দূরে দূরে থাকবে।মেয়েরা হচ্ছে আস্ত ছলনাময়ী। তুমি ছলনা করে একবার যদি আমার ছেলেটাকে নিজের বশে নিয়ে যাও , তাহলে আমার এতো দিনের সব পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমার ছেলে হারাবে রাজকন্যা , আর আমি হারাবো রাজত্ব।তোমাকে যেনো আর কখনো শাফির‌ আশেপাশে না দেখি।তাহলে কিন্তু কাকা বলে ডাকার জন্য সেলিম কে এই ধরণীতে পাবে না তুমি।আর আমার কথা শুনে চললে অনেক অনেক টাকা পাবে তুমি।তবে এই ব্যাপারে কেউ যেন কিছু জানতে না পারে। কথাটা মাথায় রেখো।’

-” সূরা ভাবতেও পারে নি শফিকুল দেওয়ান এতোটা নোংরা মনের।সে চোখের পানি মুছে বললো, আমি গরীব হতে পারি। কিন্তু লোভী না আব্বা।আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো আব্বা। তবু ও আপনি আমার কাকার কোনো ক্ষতি করবেন না দয়া করে।বাবার পরে সেলিম কাকা আমাকে বাবার আদর স্নেহ ভালবাসা দিয়ে বড় করেছে।আমি এক বাবা হারায়ছি , অন্য জন কে আমি হারাতে পারবো না আব্বা।”

-” এইতো লাইনে আসছো মেয়ে। যখন সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠে তখন ঠিক এভাবেই আঙ্গুল বাঁকা করতে হয়। আর কয়েক মাস পরে তোমাদের বিয়ের ছয় মাস পূর্ণ হবে। তুমি শাফি কে ডিভোর্স দিয়ে এই বাড়ি থেকে চিরদিনের জন্য চলে যাবে।তোমার ছায়াও যেন শাফি দেখতে না পায়। আমি তরী কে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসবো।তরী’ই এই বাড়ির যোগ্য ব‌উ।”

-” ডিভোর্সের কথা শুনে বুকটা খা খা করে উঠে সূরার।সে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে শফিকুল দেওয়ান এর পা‌ জড়িয়ে ধরে বললো, এমন টা বলবেন না আব্বা। পুলিশ কে বড্ড ভালোবাসি আমি।তাকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কল্পনা ও করতে পারি না।আমি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আব্বা।আপনি দয়া করে এই বাড়ি থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না আব্বা। দরকার হয় আমি কাজের লোক হয়ে এই বাড়ির এই কোণে পড়ে থাকবো। তবুও পুলিশ কে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবেন না আব্বা। আমি ম’রে যাবো তাকে ছাড়া।”

এই মন তোমারি পর্ব ২০

-” সূরার চোখের পানিতে মন ভেজে না শফিকুল দেওয়ান এর।তিনি কিছু না বলে সূরার থেকে জোর করে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের রুমে চলে যান।”

এই মন তোমারি পর্ব ২২