আমি মায়াবতী পর্ব ৩৮

আমি মায়াবতী পর্ব ৩৮
তাহমিনা মিনা

খাটের মাঝখানে আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে আছে সাবিহা।উদ্দেশ্য,মায়াকে খাটে শুতে না দেওয়া। আজ সাবিহা সংকল্প করে বসেছে। যে করেই হোক,মায়া আর কাব্যর প্রেমের শুরুটা জানতেই হবে। সাবিহা নিজের বেণী দুটো দোলাচ্ছে। মায়ার তাকে দেখে মনে হল, সে যেন একটা ছোট্ট বাচ্চা।

যেন মায়ের কাছে কোন একটা জিনিসের আবদার করে বসেছে।মা সেটা দিতে না চাওয়ায়,ভুলভাল কাজ কারবার করছে। মায়া কয়েকবার ওকে বলেছে, যাতে ও সরে যায় ওখান থেকে। কিন্তু সাবিহা নাছোড়বান্দা। আজ সে কোনভাবেই মায়ার কোন কথাতেই চুপ করবেনা। তাকে সবকিছু জানতেই হবে। মায়া বিরক্ত হয়ে বলে,”আমার কিন্তু ঘুম পাচ্ছে সাবিহা। সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছি আমি। এখন না ঘুমোতে পারলে কিন্তু সকালে আমি কোচিং ক্লাসে যেতে পারবো না।”
সাবিহা হাতের উল্টো পিঠে কি যেন দেখে বলল,” প্রেম করা বুঝি খুব পরিশ্রমের কাজ?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“উফ সাবিহা,তোকে নিয়ে হয়েছে আমার জ্বালা। প্রথমত ওই বেটার কথাগুলা শুনতে হবে। তার কথামতো বেশি খাবারও খেতে হবে।আবার বাসায় এসে তোর কাছে সবকিছু বলতে হবে। এখন তো শুধু তুই,কিছুদিন আগে তো কবিতাও ছিল। ভাগ্যিস, বেচারী প্রেম করছে।তাই এখন এর জ্বালাটা বুঝতে পারছে। যখন তুই প্রেম করবি তখন বুঝবি, এসব কেউ জিজ্ঞেস করলে কেমন লাগে।”

“আমার ওতো কিছু বোঝার দরকার নেই তো।আমি যেটা জানতে চাইছি তুমি সেটা বল। এই গোমরা মুখো রিজার জন্য তো আমি ভালোভাবে দিনে জিজ্ঞেসও করতে পারিনি। না জানি ও কখন বলে দেয় কাউকে।”
“বাদ দে তো।”

“না।বাদ দিব না। আজ তোমাকে বলতেই হবে।যে তুমি ওনাকে দেখি এত ভয় পেতে লজ্জা পেতে, হুট করে কি এমন হলো যে কলেজে থাকা অবস্থায় তোমরা প্রেমে জড়ালে?”
মায়া একবার মাথা চুলকালো।তারপর বলল,”আমার আসলেই অনেক ঘুম পেয়েছে সাবিহা। আমাকে একটু ঘুমাতে দিবি?”
“আমি কি তোমাকে না করেছি ঘুমোতে? তুমি অবশ্যই ঘুমাবে ,অবশ্যই। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। বলে দিলেই তো হয় আর ডিস্টার্ব করবো না।”

মায় একবার সাবিহার দিকে তাকালো। এই মেয়েটা বড্ড একগুঁয়ে টাইপের। যেটা বলবে, সেটা করেই ছাড়বে। কিন্তু মায়া নিরুপায়। সবকিছু এখন বলা সম্ভব না। বিশেষ করে সাবিহাকে তো অবশ্যই না। তাহলে সোহাগের ব্যাপারটাও সে জেনে যাবে। মায়া চায় না সোহাগকে খারাপ বানাতে কারো কাছে। তাহলে বাবা আর সোহাগের বাবার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা মায়া চায় না।

“এই মায়াপু, বলো না।”
“বলবো, কিন্তু আজকে না। ”
“কেন?”
“সমস্যা আছে সাবিহা।”
“কি সমস্যা? ”

“দেয়ালেরও কান আছে রে সাবিহা। আমরা আমাদের ঘরের মধ্যে আছি। হতেও তো পারে বাইরে থেকে কেউ আমাদের ঘরে কান পেতে আছে। কেউ যদি জেনে যায়,তাহলে কি হবে?”
সাবিহা এবার হাই তুলতে তুলতে হাল ছেড়ে দিয়ে বলে,”বুঝেছি। তুমি বলবে না। এইজন্য এতো বাহানা।”

“একদিন আমি অবশ্যই বলবো সাবিহা। কিন্তু আজকে না। ”
“কবে বলবে বলো। আমাকে তারিখটা বলো।”
“আমাদের যেদিন বিয়ে হবে, তখন বলবো।”
সাবিহা মুখ বেঁকিয়ে বলে,” হয়েছে। এসো তুমি। ঘুমিয়ে পড়ো। আমি আর জানতে চাইবোনা।”
সাবিহা ধপ করে উঠে এসে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ে নিজের জায়গায়।

মায়া কিছুক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকে। বাইরে থেকে চাঁদের আলো আসছে। সাবিহার মুখে পড়ে ওর মুখটা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। এই মেয়েটা খুবই ঘুমকাতুরে। কোনো এক জায়গায় শুলেই ঘুমিয়ে পড়ে। হুট করে লাইট বন্ধ করে দেওয়ায় কিছুক্ষণ মায়া কিছুই দেখতে পারে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর অন্ধকার সহ্য হয়ে গেছে। মায়া ধীরে ধীরে উঠে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। এই ঢাকার শহর সবসময়ই জেগে থাকে। কখনোই মনে হয় ঘুমোয় না।

মায়ার ভীষণ ইচ্ছে করছে এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে। কিন্তু ভীষণ আলসেমিও লাগছে। ফ্লোরে বসে পড়ে মায়া। তার জীবনটা নিয়ে তার হাজারটা অভিযোগ। কেন এমন হলো তার সাথে? কি উদ্দেশ্যে সে জন্মেছে কে জানে? মায়ার ইচ্ছে করে তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা সাবিহাকে জানাতে। কিন্তু সাবিহাকে জানালে সবকিছুই বদলে যাবে। বাবা অনেক আশাবাদী সবাইকে নিয়েই। এখন গ্রামেও আসা-যাওয়া করে।

সোহাগ ভাইয়ের বাবাকে সে গ্রামের সবার চাইতে বেশি ভরসা করে। সে যদি জানে এইসব তাহলে অনেক কষ্ট পাবে। সুন্দর অনেক মুহুর্তের কথা মনে পড়ছে মায়ার। ভাবতেই লজ্জা লাগে তার এখনও যখন সে কাব্যর সাথে সামনাসামনি এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল। অতীতের কথা ভাবতে তার ভালো লাগে। এই সোহাগটার জন্যই মাঝেমধ্যে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তার। তবুও সবগুলো স্মৃতিই সুন্দর। জীবন্ত। মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। মনে পড়ে যায় ৬ মাস আগের কথা। সেদিন…..

ফ্ল্যাসব্যাক…..
রিজা নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। সাবিহার স্কুলেই তাকে ভর্তি করে দিয়েছে। সাগরিকা তাকে সোহাগ আসার সময়ই একটা কোচিং ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে। তবে, এখন রিজা আর আগের মতো সাজগোজ করেনা। সিম্পল থাকে। সে হয়তো বুঝে গিয়েছে সাজগোজ করে কারো মন জয় করা যায় না। কিন্তু আজ সে কোচিং বা স্কুল কোথাও যায়নি।

মায়া কলেজ থেকে ফিরে তাকে সোফায় বসে থাকতে দেখেই আঁতকে উঠে। আজকে তো সোহাগ ভাইও আসবে। রিজা তাকে দেখে হাসতে হাসতে বলে,”এসে গেছো আপু? আজকে আমিও তোমাদের সাথে পড়বো সোহাগ ভাইয়ের কাছে?”
মায়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে,”কেন? তোকে তো কোচিং এ দেওয়া হয়েছে। সেখানে পড়ানো হয় না?”

“আরেহ, হয় তো। কিন্তু আমাদের কোচিং এ পরীক্ষা আছে কালকে। আমি অনেক কিছুই পারি না। স্যার বলে দিয়েছে আর কাউকে কিছু বোঝাবে না। একদম পরীক্ষার পরই সবকিছু বুঝিয়ে দিবে। তাই আমি আজ সোহাগ ভাইয়ের কাছে থেকে বুঝে নিবো।”

“অহ, আচ্ছা।”
“আচ্ছা তুমি যাও। গোসল করে নাও।”
“আম্মা আর ফুপি কই রিজা?”
“মামী তো আজকে সাব্বিরকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে আর মা তো কাজে গিয়েছে।”
“উফফ, তোকে আর কতবার বলবো যে ফুপি কাজে যায় না। কাজ শিখতে যায়।”
“একই হলো।মা তো কিছুদিন পর কাজ করবেই। ”
“হুমম। ”

“আমারও অনেক ইচ্ছে আছে সেলাইয়ের কাজ করার।”
“আমার ও আছে।”
“তোমার পরীক্ষার পর কি শিখবে আপু? আমিও তাহলে শিখবো তোমার সাথে। তখন তো অনেকদিন বন্ধ থাকবে। ”
“নাহ রিজা। আমার ভর্তি কোচিং করতে হবে।”
“তাহলে এসএসসির পর কেন শিখো নি?”

“আমি তখনও কোচিং করেছি। কলেজে ভর্তির জন্য। ”
“অহ। বুঝেছি।”
“হুমম। ”
“আজকে কি কবিতা আপু আসবে?”
“হ্যাঁ, আসবে। একটু পরই আসবে। ”
“ওকে। তাহলে আজকে অনেক মজা করবো।”
“আচ্ছা।”

মায়া ভিতরে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করেই আম্মাকে কল দেয়। ওপাশ থেকে সাগরিকা কল রিসিভড করলে বলে,”তুমি আজই কেন গিয়েছো আম্মা? রিজা বাসায় আছে। কোচিং-এ যায়নি। ও আজকে সোহাগ ভাইয়ের কাছে পড়বে।”

সাগরিকা অবস্থা বুঝে বলে,” আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো মা। চিন্তা করিস না। আর শোন, রিজার ব্যাপারটা এখন তোর বাবাকে জানানো উচিত। কিছু একটা করে বসলে সব দোষ আমার ঘাড়েই পড়বে।”
“আমি বুঝতে পারছি আম্মা। তুমি যতো তাড়াতাড়ি পারো চলে আসো। আর হ্যাঁ, সাবধানে এসো।”
“ওকে।”

কল কেটে দিয়ে মায়া কল দেয় কবিতাকেও। কবিতাকেও তাড়াতাড়ি আসতে বলে।ভয়ে মায়ার হাত পা কাঁপতে থাকে। না জানি আজ রিজা কি কি করবে। ওকে বোঝানোও মুশকিল। একটা কথা বললে বুঝবে অন্য একটা।

“অনেক দিন পর তোমাকে দেখলাম সোহাগ ভাই। আমার তো কোচিং থাকে। তুমি যেই সময়ে আসো, সেই সময়ে আমি কোচিং-এ থাকি। তাই আসতে পারি না।” বেশ দরদ নিয়ে কথাগুলো বলে রিজা।
সোহাগ বিরক্তি চেপে রেখে বলে,”হুমম, বুঝেছি। এখন অংক কর।”
“আমি মোটামুটি সবই পারি এখন। তাইনা বলো সোহাগ ভাই?”
“হুমম। ভালোই পারিস। কিন্তু এতো কথা বললে সবই ভুলে যাবি।”
“হুমম।”

কবিতা মায়াকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,”আমার তো সবকিছু গন্ডগোল লাগছেরে মায়া। এই রিজাকে তো আমি খুব শান্তশিষ্ট ভেবেছিলাম। আমাদের সাথে থাকলে তো এতো কথা বলেনা। আর এখন তো মনে হচ্ছে খই ফুটেছে মুখে। কেস তো জন্ডিস।”
“হুমম, এইজন্যই তোকে ডেকেছি আগে আগে। ভাইয়াকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস কর। যাতে ও কথা বলার সুযোগ না পায় বেশি।”

“মাইয়া তো ডুইবা ডুইবা জল খাইতাছে। যেমন তুই আমার ভাইয়ের প্রেমে খাইতাছোস।” বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসে কবিতা।
মায়া ওর দিকে চোখদুটো সরু করে বলে,”আর আপনি যেরকম আপনার বড় ভাইয়ের বন্ধুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন।”
“হইছে, থাম।”
“ঠ্যাস মারা কথা বন্ধ কর।”

“কেন বন্ধ করবো? তুমি যখন আমার ভাইয়ের প্রতি কাকলির কেয়ার দেখে রাগে কলম ভেঙে ফেললে, তখনই বুঝেছিলাম তুমি ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছো মনা আমার। শেষমেষ আমার কাছে ধরা পড়েই গেলে।”
“আস্তে কথা বল। শুনবে।”
“অনেকদিন আমরা একসাথে কোথাও যাইনা, সোহাগ ভাই। আমাদের নিয়ে যাবে কোথাও?”

হকচকিয়ে উঠে মায়া রিজার কথা শুনে। সোহাগ এইবার বিরক্ত হয়ে বলে,”আমার সামনে পরীক্ষা আছে। তোকে নিয়ে ঘুরার সময় আমার নেই। ফ্যাঁচফ্যাঁচ করিস না। তোর যদি অংক করার থাকে, তাহলে কর। না হলে আমায় ওদেরকে পড়াতে দে। তিনমাস পরেই ওদের পরীক্ষা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা৷তোর তো এখনও সময় আছে। আর তাছাড়া তোর যে ম্যাথ, সেগুলো মায়াও পারবে। ওর কাছে থেকেই করিস।”

মায়া রিজার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। হয়তো কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু মায়া জানে মেয়েটা এখানেই থাকবে। হলোও তাই। কিছুক্ষন মাথা নিচু করে অংক করলো সে। আবার কিছু মুহূর্ত পরেই সোহাগকে বিরক্ত করা শুরু করলো।

“আজকে আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। আমাদের একটা দাওয়াত আছে।” আনমনে বলে কবিতা।
“অহ, তাহলে আজ তো বেশিক্ষণ পড়তে পারবে না?” কবিতাকে জিজ্ঞেস করে সোহাগ।
“আর কিছুক্ষণ থাকবো।”
সোহাগ তড়িঘড়ি করে বলে,”সমস্যা নেই। আজ আমারও তাড়া আছে। এই ম্যাথটা শেষ করো। তারপরই চলে যাবো।”
মায়া সহসাই তাকায় সোহাগের দিকে। সে এই মুহুর্তে কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা রিজাকে। মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল তার। রিজা মেয়েটা কিছু না বুঝেই কথা বলে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে থাকে সে। যতোই হোক, রিজা তারই বোন। এতোটা অপমান সে সহ্য করতে পারবে না। মেয়েটা যদি বুঝতো, তবে কি এইভাবে কথা বলতো সে?

” এইটা তুই কি করেছিস কবিতা? আমাদের নিয়ে মেসেঞ্জারে গ্রুপ কেন খুলেছিস তুই?” ফোনে কবিতাকে জিজ্ঞেস করে মায়া।
“রাত ১২ টার জন্য অপেক্ষা কর।”
“মানে কি? আমি কিন্তু লিভ নিবো।”
“কতবার নিবি? যতোবার নিবি ততোবারই এড দিব তোকে।”
“পাগল হয়ে গেছিস তুই?”

“পাগল তো তোরা আমাকে বানিয়েছিস। একদিকে তুই কল করে জ্বালাতন করছিস আরেকদিকে ভাইয়া সমানে আমার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে। আমি দরজা আঁটকে বসে আছি।”
“কি করতে চাইছিস তুই বল তো? উল্টাপাল্টা কিছু করবি না কিন্তু। ”
“তোদের এই বেশি কথার জন্যই আমি উল্টাপাল্টা কাজ করবো। ১২ টা বাজতে আর মাত্র ১০ মিনিট আছে কিন্তু তোদের আগ্রহ কতো শোনার৷ ফোন রাখ। ”

মায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। এই কবিতা কি করবে কে জানে। সে চোখ বন্ধ করে থাকে। কিন্তু সময় যেন যায়ই না। উত্তেজনায় সারাঘর জুড়ে পায়চারি করতে থাকে সে।
হঠাৎ মোবাইলটা টুং করে উঠে। সে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে কবিতা একটা মেসেজ পাঠিয়েছে গ্রুপে। মেসেজটা পড়ে তো ওর মাথা পুরোই নষ্ট হয়ে যায়। ইশশ” কি লজ্জা। এখন কাব্য স্যারের সামনে যাবে কিভাবে সে?

কবিতা লিখেছে,”জনাব কাব্য এবং জনাবা মায়া, আপনারা আমাকে কিছু কথা গোপন করতে বলেছিলেন। আমি গোপন করেছি। কিন্তু আমাকে তো আপনারা চিনেনই। আমি কতটা কথা বলতে ভালোবাসি। কথা না বললে আমার পেটের ভাতই হজম হয় না। তবুও আমি আপনাদের কথা ভেবে অনেকদিন গোপন করেছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে। আর বদহজম তো আছেই।

আমার বয়স খুবই কম। এই বয়সে গ্যাস আর বদহজম এর জন্য মৃত্যু হলে, আমি লজ্জা পাবো ভীষণ। আপনারাও নিশ্চয়ই চাইবেন না আমি এতো কম বয়সে মারা যাই। তাছাড়া এই বদহজমের কোনো মেডিসিন নেই। এই রোগ সারার একটাই উপায়। সেটা হচ্ছে কথাগুলো বলে দেওয়া। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ আমি মোটেও বলতে পারবো না।কিন্তু, আমি বলতে চাই৷আর আপনাদের দুজনের কথাই এক৷ তাই আর নিজেদের মধ্যে চেপে রেখে আপনাদের পেটেও গ্যাসের সৃষ্টি করবেন না।

আপনারা যে একে অন্যকে ভালোবাসেন, সেটা এখন জানিয়ে দিন একে অপরকে৷ আমি আর আপনাদের সিক্রেট বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারছিনা। বেটার হবে, আপনারা একে অন্যকে জানিয়ে দিন। নিজেদের মধ্যে কথা বলুন।
আর হ্যাঁ, আমি কিন্তু আপনাদের বলিনি এইসব। বলিনি মানে সামনা-সামনি বলিনি। আপনারা বলতে মানা করেছিলেন। তাই বলিনি।

তাই মেসেজ করলাম। যদিও আমার চাইনিজ খাওয়া এখন থেকে বন্ধ হবে। ফুসকা খাওয়া বন্ধ হবে। ফ্রি ফ্রি আর কেউ খাওয়াবে না। তবুও বললাম। আমাকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু নিজের জান বাঁচানো আগে ফরজ ।”
মায়া বসে পড়লো ফ্লোরে। লক্ষ্য করে কাব্য স্যারও মেসেজটি সিন করেছে। ইশশ! কি লজ্জা। মায়া ডাটা অফ করে অফলাইন হয়ে পড়ে।

“তুই এমন কেন করলি কবিতা? আমি এখন যাবো কিভাবে উনার সামনে? আমি ক্লাসে যাবো কিভাবে? কোচিং-এ যাবো কিভাবে?”
“আজাইরা প্যাঁচাল বন্ধ কর। জানিস কালকে আমি কি দেখেছি? তুই জানলে চমকে যাবি।”
“কি দেখেছিস?”
“ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। আর তুইও ভাইয়াকে ভালোবাসিস। তাহলে সমস্যা কি?”
“কি দেখেছিস তাই বল।”

“কালকে লিফটে নামার সময় সোহাগ ভাই সময় দেখার জন্য ফোন বের করেছিল। তখন তার মানিব্যাগটা পড়ে গিয়েছিল পেছনে। আমি উনাকে ওটা উঠাতে গিয়ে তার মানিব্যাগের মধ্যে কি দেখেছি জানিস?”
“কি?”
“তোর ছবি।”

মায়া প্রায় চিৎকার করে উঠে বলে, “মানে কি? ”
“মানে যেটা বললাম সেটাই। সে তোকে পছন্দ করে।”

আমি মায়াবতী পর্ব ৩৭

মায়া স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে পড়ে করিডোরে। কি শুনলো সে এটা? হঠাৎ সে দেখে কাব্য স্যার এইদিকেই আসছে। সে ভয় আর লজ্জায় ছুটে যায় সেখান থেকে। কিন্তু সে যদি পিছনে ফিরে একবার দেখতো, তাহলে দেখতে পেতো কাব্যও তার মতোই লজ্জা পাচ্ছে। আর কবিতা কাব্যর দিকে তাকিয়ে বিটকেল মার্কা হাসি দিচ্ছে।

আমি মায়াবতী পর্ব ৩৯