আমি মায়াবতী শেষ পর্ব 

আমি মায়াবতী শেষ পর্ব 
তাহমিনা মিনা

রিজা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে,”মামী কি বললো মায়াপু?”
“আমাকে সাজগোজ শেষ হলে আবার বাসায় যেতে বললো।”
“কেন?সরাসরি সেন্টারে গেলেই তো হতো।এখন আবার বাসায় কেন যেতে হবে?”
“শান্ত হয়ে যা রিজা।নিশ্চয়ই কোনো প্রয়োজন আছে।তাই যেতে বলেছে। তুই একদমই বদলে গেছিস।আগে কত শান্তশিষ্ট আর চুপচাপ ছিলি।এখন তো শুধু উড়ে বেড়াস দেখি।”

মরিয়মের কথায় রিজা হাসে।ছোট বাচ্চারা অর্থহীন কথা বললে বাচ্চারা যেভাবে হাসে,ঠিক সেভাবে।রিজার হাসি নজর এড়ায় না মায়া কিংবা মরিয়মের।মায়া ওকে জিজ্ঞেস করে,”হাসছিস কেন রিজা?তোকে দেখতে এখন কেমন যেন লাগছে।হাসলি কেন?”
“মরিয়ম আপুর কথা শুনে।”
“আমি কি ভুল কিছু বলেছি নাকি যে তুই হাসলি?ঠিকই তো বলেছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছো।আমি বদলে গেছি।সম্পূর্ণ বদলে গেছি।তোমাকে আগে তুই করে বলতাম।এখন তুমি বলি।আগে বলতাম মইরম।এখন বলি মরিয়ম।আগে একটু ভালো খাবারের জন্য কত কাজ করে তারপর খাবার পেতাম।আর এখন না চাইতেই অনেক কিছুই পেয়ে যাই।আগে কোনোকিছু না বুঝেই মায়ের কাছে এটা সেটার আবদার করে বসতাম।জানতাম যে মায়ের সামর্থ্য নেই।

আর এখন মায়ের সামর্থ্য থাকলেও চাইনা।কারণ মা এমনিতেই আমাকে সবকিছু দিয়ে দেয়।আগে একজনকে ভালোবেসে তার জন্য কত কিছুই না করতাম।তাকে আমার প্রতি একটু আকৃষ্ট করতে পাগলের মতোই করতাম।আর গতকাল তার কাছে থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়েও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি।এখন বলো তো মরিয়ম আপু,আমি কি শুধুই উড়ি নাকি উড়ে উড়ে সারা দুনিয়া চষে বেড়াই?”

মায়া আর মরিয়ম দুজনই আঁতকে উঠে রিজার কথায়।এটা পার্লার।মায়া চারদিকে তাকিয়ে ভালোমতো দেখে।একটু দূরে একটা মেয়ে সাবিহাকে শাড়ি পড়াচ্ছে।কিন্তু সাবিহা এতোই নড়াচড়া করছে যে সে সেটা করতে পারছেনা।রিজা আর মরিয়মের সাজ শেষ।তাই তারা মায়ার পাশে এসে বসে আছে।যে মেয়েটি মায়াকে সাজাচ্ছিল সে কারো সাথে কথা বলতে বাইরে গেছে।মায়া রিজার দিকে ফিরে আস্তে আস্তে বলে,”সোহাগ ভাই তোকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে?আর তুই বলছিস তুই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিস?কিন্তু কেন?তুই তো তাকে ভালোবাসিস।”

মরিয়মও বলে,”আগে না সোহাগ ভাই বাড়ি গেলে মামার বাড়ি গিয়ে পড়ে থাকতি।কত কাজ করাতো তোকে দিয়ে।তাও ভাইকে দেখার জন্য সেখানেই থাকতি।তাহলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিস কেন?”
রিজা একটু হেসে বলে,”ভালোবাসলেই তাকে বিয়ে করতে হয় নাকি?ভালোবাসলেই যে ঘর বাঁধতেই হবে, এমন কোনো কথা আছে নাকি?যে বিয়েতে কোনো ভালোবাসা নেই বরং শুধু কারো সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আমাকে ব্যবহার করা হবে,সেই বিয়ের কি কোনো দরকার আছে?”

মরিয়ম বলে,”মানে কি?কি বলছিস তুই এইসব?কিসের মাধ্যম?”
মায়া কিছুই বলে না।সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে রিজা কি বলতে চাইছে।রাগে তার মাথা যেন গরম হয়ে গেল মুহুর্তেই।ইচ্ছে করছে সোহাগের দু গালে দুটো থাপ্পড় মারতে।
রিজা এবার মায়াকে বলে,”আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মায়াপু।আমি আর আমার বান্ধবী লতা।তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?”

“কিসের সিদ্ধান্ত?আমি কিভাবে সাহায্য করবো?কোথাও যাওয়ার পার্মিশন কিন্তু আমি তোকে দিব না।ফুপিকেও দিতে দিবো না।”
“আরে,সে সব কিছু না।তবে বিষয়টি মা কে নিয়েই।”
“কি? ফুপিকে আবার কি করবি?”
“বিয়ে দিব।”

মায়া যতোটা না অবাক হয়েছে,তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে মরিয়ম।অনেকটা আতঙ্কের মতো শব্দ করে বলে, “কি বলছিস এইসব?মাথা খারাপ হয়ে গেছে?তোর বাবা মারা গেছে কত বছর আগে।এতোদিন বিয়ে করলো না।আর এখন কেন বিয়ে করতে যাবে?”

“কেন করবে না?আমি তো মেয়ে।আমি যদি ছেলে হতাম,তাও একটা কথা ছিল।আমাকে বিয়ে দিলে আমাকে তো শ্বশুরবাড়িই যেতে হবে।আমি কি আমার মা কে নিয়ে যেতে পারবো?নাকি আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সেটা মেনে নিবে?আমার জন্য মা সারা জীবন বিলিয়ে দিল।আমি কি পারবো নাকি?আমার বান্ধবী লতার মা নেই।ওর একটা ছোট ভাই ও আছে।ক্লাস থ্রি তে পড়ে।

ওর মা ওদের রেখে পালিয়ে গেছে অন্য লোকের সাথে।ওর বাবাও আর বিয়ে করেনি যখন ওর মা পালিয়ে গেছে,ওর ভাইয়ের বয়স তিন ছিল।আংকেল খারাপ পুরুষ হলে অনেক আগেই বিয়ে করে নিতো।ওদের খবরও নিতো না।কিন্তু উনি বিয়ে করেনি।আমার মা ও তো একই রকম।আমরা দুজন ঠিক করেছি আমরা একটা পরিবার হবো।জানি বাকি মামারা আমার সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না।কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো।মা কে আমি বিয়ে দিবোই।”

মায়ার ইচ্ছে করছে রিজাকে একটু আদর করতে।মরিয়মের যে রিজার সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি,সেটা দুজনেই বুঝতে পেরেছে।কিন্তু মায়া তাতে কোনো পাত্তাই দিলো না।মায়া বললো,”আমার বিয়ের সব অনুষ্ঠান শেষ হলেই আমি বাবাকে বলবো কথাটা।ভালো হতো যদি আমার বিয়ের আগেই ফুপির বিয়ে দিতে পারতাম।আমিও ভেবেছিলাম কিন্তু তুই কিভাবে নিবি বিষয়টা,তাই আর কাউকে বলিনি।”

“আমি আগে মেনে না নিলেও এখন বুঝি বিষয়টা।আর আমিও একটা পরিবার চাই।ভাই-বোন চাই।”
“ইনশাল্লাহ, সবই হবে। সেটা খুব তাড়াতাড়িই হবে।”
“মায়াপু,আমাকে কেমন লাগছে।এই শাড়িটায় আমাকে কিউট লাগছে না?”

সাবিহার ডাকে তিনজনই ঘুরে তাকায় সাবিহার দিকে।বলার অপেক্ষা রাখে না যে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।কিন্তু রিজা টিপ্পনী কেটে বলে,”অসাধারণ লাগছে ম্যাডাম আপনাকে।দুনিয়ায় তো আর কেউ প্রেমে পড়েনি।আপনি একাই পড়েছেন।তার প্রমান জনে জনে আপনার কাজে কথায় বিলিয়ে দিচ্ছেন।এতো দামী একটা ড্রেস আমার না হওয়া বুড়ো বরের থেকে নিয়ে এখন আবার শাড়িও নিয়েছে।সুপার লাগছে আপনাকে।তা আপনার সেই উনি কে দেখিয়েছেন তো আপনার ছবি?নিন নিন।আপনার মোবাইলে ছবি তুলে ফটাফট পাঠিয়ে দিন।সে অপেক্ষায় আছে।”
রিজার কথায় সবাই হাহা করে হেসে উঠে।আর সাবিহার ব্লাশ দেওয়া গালদুটো আরও লাল হয়ে উঠে।

“তুমি কি বুঝতে পেরেছো মায়া আমি কি বুঝাতে চাইছি তোমাকে?”
মায়া মাথা নাড়ায়।যার অর্থ সে বুঝেছে।মাথা উঁচু করে বাবাকে জিজ্ঞেস করে,”আমাকে কি তুমি ভালোবাসো বাবা?”
মায়ার এমন কথায় চমকে উঠে রিজভী আর সাগরিকা।চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা একসাথে আছে।কিন্তু এখনও এইরকম একটা প্রশ্ন করেনি সে রিজভীকে।রিজভী অনেকটা আমতা-আমতা করে বলে, “কেন ভালোবাসবো না তোমাকে?

অবশ্যই ভালোবাসি।আমার প্রথম সন্তান তুমি।আমাকে সর্বপ্রথম বাবা বলে ডেকেছো তুমি।কেন ভালোবাসবো না তোমাকে?তোমার মায়ের অন্যায়ের শাস্তি হয়তো তুমিও পেয়েছো।আমার থেকে তোমাকে আলাদা করে রেখেছিলাম।কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি চেয়েছিলাম তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতে।তোমার মা কে তার নতুন একটা জীবন শুরু করার কথা বলেছিলাম।

কিন্তু তোমার মা তোমাকে আমার কাছে দেয়নি।না হলে আমি তোমাকে ছোট থাকতেই তোমার আম্মার কাছে,ভাই-বোনদের কাছে নিয়ে আসতাম।কিন্তু তোমার মা তোমার মাঝে নিজের জগৎ তৈরি করে নিয়েছিল।সে তার পরিবার থেকেও বিতাড়িত ছিল।আমি কিভাবে পারতাম তাকে তোমার থেকেও আলাদা করতে।আমি তোমাকে ভালোবাসি মা।”

মায়া এবার হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে বাবার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে,”তাহলে আমি দোষ করলে আমাকে বকো না কেন?মারো না কেন?সাবিহা আর সাব্বির কে সে বকা দাও।আমি কোনো জিনিস চাইলে কখনো না করো না কিন্তু ওদের কে তো মাঝে মাঝে না করো।

আমাকে সবসময় এমন ভাবে রাখো,যেন আমি এখানে এসেছি অতিথি হয়ে।অতিথিরা কোনো কিছু চাইলে যেইরকম না করা যায় না,সেইরকম আমার সাথেও করো।আগে আম্মাও এমন করতো।আমার অনেক কষ্ট হতো।মনে হতো,এটা আমার পরিবার না।কিন্তু আম্মা এখন আমাকে মারতেও পারে।সাবিহা সাব্বির দুষ্টুমি করলে যেভাবে মারে।তুমি তো আমাকে বকোও না।কেন বকো না বাবা?”

রিজভী মেয়েকে বুকের সাথে চেপে ধরে। এতো অভিমান নিয়ে মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে?মায়েরা সহজে সন্তানের সাথে মিশে গেলেও বাবারা কেন পারেনা?সে তো ভেবেছিল মায়া যা চাইবে তাই তার সামনে হাজির করবে।কোনো কিছুর অভাব রাখবে না।কিন্তু মায়া তো একটা স্বাভাবিক পরিবার চেয়েছিল।যে পরিবারের বাকি বাচ্চাদের মতো তাকেও ট্রিট করা হবে।কিন্তু রিজভীর মায়াকে অতিরিক্ত প্রায়োরিটি দেওয়াটা তাহলে ভুল ছিল?

মায়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমার মা কে ক্ষমা করে দাও বাবা।আমার জন্য হলেও ক্ষমা করে দাও।আমি জানি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে মা।কিন্তু সে তোমাকে শুধু ভালোবেসেছিল।তোমার জন্যই এইসব করেছিল।আমি জানি সে অনেক বড় অন্যায় করেছিল।তবুও প্লিজ আমার মা কে ক্ষমা করে দাও।আমার মা যে তাহলে মরেও শান্তি পাচ্ছেনা।”

সাগরিকা মায়াকে নিজের কাছে নিয়ে বলে,”এইভাবে বিয়ের দিন কাঁদতে হয় নাকি মা?কাঁদবি না ভুলেও।হাসিমুখে বাবার বাড়ি ছেড়ে বের হবি।আর এতো সুন্দর করে সেজেছিস।সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তো।কাঁদিস না।কাব্য অনেক ভালো একটা ছেলে।তোকে অনেক ভালো রাখবে।”
“আমার মা কে ক্ষমা করে দাও আম্মা।”

সাগরিকা মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, “তোর মা আমাকে একটা ডায়েরি দিয়েছিল।মনে আছে?আমাকে বলেছিল তোর বাইশ বছর বয়সের জন্মদিনে যেন সেটা তোকে দিই।কিন্তু আমি আজই দিয়েছি তোকে।তোর ব্যাগে রেখে দিয়েছি।শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছিস।এখন কি আর আমাদের বাড়িতে চাইলেও আসতে পারবি?আমিই বা বেঁচে থাকবো তোর বাইশ বছর পর্যন্ত তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তুই ডায়েরিটা তোর ২২ বছরের জন্মদিনের দিনেই কিন্তু খুলবি।প্রমিস কর আমাকে।”

“প্রমিস আম্মা।”
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মরিয়ম।মায়া মেয়েটার প্রতি তার অন্যরকম একটা মায়া কাজ করে।যেন তার নিজের আপন বোন।মেয়েটা তার বিয়েতে গ্রামে গিয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছিল।প্রায় ডুবন্ত মায়ার মুখে সেদিন কি একটা মায়া দেখেছিল মরিয়ম জানে না।নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরিয়ম পানিতে নেমে মায়াকে বাঁচিয়েছিল। মায়ার দিকে তাকালে মনে হয় যেন একটা দুঃখী রাজকন্যা।

মেয়েটা তাকে তার জীবনের সব কথাই তারপর নির্দ্বিধায় বলেছিল।যেটা গ্রামে আর একজন মানুষকেও বলেনি।সে শুনতে পায় মায়া কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে।কাঁদতে কাঁদতে বলছে,”আমার মা কে ক্ষমা করে দাও তোমরা।প্লিজ ক্ষমা করে দাও।”

সাগরিকা মায়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে তার ঘোমটা টেনে দিয়ে বলে,”আমরা তোমার মা কে ক্ষমা করে দিয়েছি মায়া।তোমার মা আমাদের জীবনে না আসলেও আমরা তোমায় পেতাম কোথায়?”

“মামা আসেনি খালামনি?”
মায়ার করা প্রশ্নের কোনো জবাব দেয় না তার খালামনি।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।সে উত্তর না দিলেও মায়া বুঝে যায় তার মামা আসেনি।মায়া ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলেও সেটা বাইরে প্রকাশ করেনা। পাশে বসে থাকা বান্ধবীদের সাথে গল্পে মেতে উঠে।আজ তার বিয়ে।আম্মা বলেছে আজকে না কাঁদতে।

তাহলে সে কষ্ট পাবে।আম্মার জন্য সে কাঁদবে না।একটুও কাঁদবে না।তবুও মনের কোথাও একটা নিজের আপন মানুষের জন্য খারাপ লাগছে তার।সে ভেবেছিল অন্তত বিয়ের দিন তার মামা আসবে।কিন্তু আসেনি।মায়ার মন খারাপ হলেও আমলে নিলো না সেটা।এই জীবনে সবাই যে তাকে ভালোবাসবে,এটা সে আশা করেনা।কেউ তোমাকে ভালোবাসবে,আবার কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না।তুমি তোমাকে ভালোবাসো কি না,সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সেন্টারের একটা ঘরে মায়ার সব বান্ধবী সহ সে বসে ছিল।আত্মীয়স্বজনরা এসে তাকে দেখে যাচ্ছিল।সাবিহা একটু পর পর এসে কারো থেকে সাহায্য নিয়ে শাড়ি ঠিক করছে।বেচারি শাড়ি সামলাতে পারছেনা।কিন্তু মোটেও এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে নেই সে।হঠাৎ কেউ একজন এসে বলে বর এসেছে, বর এসেছে।সবাই হুড়মুড় করে উঠে ছুটে যায় সেদিকে।

মায়ার মাথায় তার খালামনি হাত রেখে বলে,” আমরা সবাই তোমার পাশে আছি মায়া।একজন না আসলে খুব একটা ক্ষতি হবে না।বরং খাবার বেঁচে যাবে।আমি বরং প্যাকেট করে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিব।অনেক দিন গরম করে করে খেতে পারবো।” কথাটা নিজে বলেই একবার হাসার চেষ্টা করেও মায়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় তার খালামনি।

মায়া স্তব্ধ হয়ে যায়।তার খালামনি তার মায়ের মতোই দেখতে। মা একটু রোগা ছিল।খালামনি একটু গুলুমুলু।মায়া আরও আশ্চর্য হয়ে যায় যখন তার খালামনি তাকে জড়িয়ে ধরে।তার মায়ের শরীরের গন্ধ।হ্যাঁ।তার মায়ের শরীর দিয়েও এমন গন্ধই আসতো।দুনিয়ার সব সন্তানই তাদের মায়ের কান্না আর গন্ধ চিনতে পারে। মায়া দুহাতে আগলে নেয় তার খালামনিকে।তার খালামনি কান্না করলেও সে কান্না করেনা৷সে যে তার মাকেই খুঁজে পেয়েছে আজ।

“তুমি ঠিক আছো মায়া?”
“হুমম। ”
মায়া কাব্যর কাঁধে মাথা রাখে।আম্মা কথা রাখেনি।তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।আম্মা বলেছিল মায়াকে না কাঁদতে।কিন্তু আম্মা নিজেই কেঁদেছে বিদায়ের সময়।সবচেয়ে বেশি সেই কেঁদেছে।সাব্বির কোনো কিছু না বুঝে কেঁদেছে।সাবিহাও নিজের ক্রাশের সামনে হাউমাউ করে কেঁদেছে।অথচ তার কিছুক্ষন আগেও কত ঢং করেই না তার সামনে কথা বলেছে।খালামনি আর নানীও কেঁদেছে।

বাবা কাঁদেনি।একটুও কাঁদেনি।কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া বুঝতে পেরেছে সেও ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।মায়া গাড়িতে বসে এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।কাব্য তাকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু একটা মেয়েকে এমন সময়ে কি বলে স্বান্তনা দিবে সে বুঝতে পারছে না।অনেকক্ষন সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন মায়ার কান্না থামার কোনো নিশানাই দেখা যাচ্ছিল না,তখন সে বলেই ফেলে,”এই কাঁদুনি,এখন যদি আর একবারও কান্না করো তো আমিও কিন্তু গলা ছেড়ে হাউমাউ করে কান্না করবো।তখন বুঝবে মজা।সবাই কি ভাববে বলোতো?”

কাব্যর কথা শুনে মায়া না চাইতেই হেসে ফেলে।কি আজব একটা মানুষ। একজন মানুষ কান্না করছে আর সে তাকে এইভাবে হাসানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু কাব্যর কথা শুনে তার প্রচুর হাসি পেয়ে যায়।তাই সে এবার হাসতে থাকে।আর কাব্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে তার সহধর্মিণীর দিকে।

ঘর অন্ধকার করে বসে আছে রিজভী।মায়াকে হুট করেই তার দেখতে ইচ্ছে করছে।তাই সে তাদের ফ্যামিলি ফটো বের করে দেখছে।সাবিহা,সাব্বির দুজনেরই ছোট বেলার ছবি আছে।কিন্তু মায়ার একটা ছবিও নেই।তার হঠাৎ মনে হয়,কেমন কেটেছে মায়ার শৈশব বাবাকে ছাড়া? একটা ছবিও কি নেই মায়ার?মায়ার প্রতি কি তবে সে অন্যায় করেছে?সে তো চেয়েছিল মায়াকে নিয়ে আসতে।ঐ বাজে মহিলাই তাকে দেয়নি।

রিজভী হঠাৎ হাউমাউ কিরে বাচ্চাদের মতো করে কেঁদে উঠে। সাগরিকা এসে তাকে দুহাতে আগলে নেয়।রিজভী সাগরিকার কোলে মাথা রেখে বলে,”জানো,আমি যখন শুনলাম আমার মেয়ে হয়েছে,তখন মনে হয়েছিল আমি শুনলাম আমার মা হয়েছে।আমি চেয়েছিলাম ওকে দেখতে যেতে।কিন্তু ওর মা তোমাকে তাড়াতে তোমার ঘরে লোক পাঠিয়েছিল।আমি ওর মায়ের উপর রাগ করে ওর কাছে যাইনি।

ওকে আদর করিনি।কোলে নিইনি।ভালোবাসিনি।ও একা একা বড় হয়েছে।আমাকে কাছে পায়নি।কথা বলা শিখার পর এটা সেটা আবদার করতো।আমি সব নিয়ে যেতাম।কিন্তু তখন ও আমাকে ছাড়তো না।আমাকে থাকতে বলতো।প্রথমদিকে আমি একটা খেলনাও কিনে দিতে পারতাম না।আমি জানিনা ও কিভাবে আমাকে ছাড়া বড় হয়েছে।ও কবে বসতে শিখেছে, কবে দাঁড়াতে শিখেছে,কবে হাঁটতে শিখেছে।

আমি কত মাস পরপর গিয়ে ওকে নতুন ভাবে দেখতাম।আমার কাছে একবার একটা বোন চেয়েছিল।সেইবার আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম ঐ বাজে মহিলার সামনেই।সাবিহার তখন বয়স ৭ মাস।আমি সাবিহাকে কোলে নিলে কত রকম আওয়াজ দিতো।কত আনন্দ করতো।ভাবতাম এতো মায়াবী একটা বোনের কথা মায়া কি কখনোই জানতে পারবে না?আমার মেয়েটা,আমার অভাগী মেয়েটা।

আমি এখানে নিয়ে এসেও ওকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারিনি।কিন্তু তুমি পেরেছো।কিভাবে পারলে সাগরিকা?আমি তো ওর নিজের বাবা।আমি বাবা হয়ে কেন বুঝলাম না?আমি তো ভেবেছিলাম ও যা চাইবে তাই ওকে দিলে ও ভাববে আমি ওকে ভালোবাসি।১৬ বছরের না পাওয়া সবকিছু আমি ওর আবদার পূরণ করে মিটাতে চেয়েছিলাম। আমি ঐ বাজে মহিলাকে কোনোদিনও ক্ষমা করবো না।আমার জীবনকে,মায়ার জীবনকে,তোমাদের জীবনকে ও নষ্ট করে দিয়ে গেছে।”

সাগরিকা চুপ করে শুধু শুনেই যাচ্ছে রিজভীর কথা।রিজভী আবার বলে,”আমরা কত জায়গায় ঘুরতে যেতাম।আমার মায়ার কথা মনে পড়তো।ওকে ছেড়ে আমার ভালো লাগতো না।আমি তো ওর বাবা।হাজার হোক, ও আমার মেয়ে।আমার রক্ত।ও কখনো বায়না করেনি কোথাও যাওয়ার।শুধু ওর বন্ধুরা কোথায় কোথায় গেছে আমাকে জানাতো।আমি ভয়ে ভয়ে থাকতাম।

আমার কাছে আবার আবদার করে বসে কিনা ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। সেটা যে সম্ভব ছিল না।ওকে দেখে এসে আমি আমার বাচ্চা দুটোকে জড়িয়ে ঘুমাতাম।ওদের মধ্যে মায়াকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতাম।মেয়েটাকে নিয়ে আমি কখনো ঘুমুই নি।কখনো ঘুম পাড়ানির গান শুনাইনি।ও কিভাবে বেড়ে উঠলো সাগরিকা?মেয়েটা আমার আজকে আবার বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলেও গেল।আমি এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ওকে বিদায় করে দিলাম।ও কতোটা কষ্ট আর অভিমান নিয়ে আমার ঘর ছেড়ে চলে গেল।আমি আমার মেয়ের অভিমান ভাঙাবো কিভাবে?

ছোটবেলায় বলতাম তোমার জন্য পুতুল কিনতে যাচ্ছি।আমাকে ছেড়ে দাও।আমাকে যেতে দাও।ও ঐ মহিলার হাত ধরে মায়াভরা কান্না কান্না চোখে আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতো।আমি ভুলেও ফিরে তাকাতাম না।ওর ঐ মায়াভরা চোখের দৃষ্টি উপেক্ষা করে সামনে এগুনোর ক্ষমতা তো আমার ছিল না।আমি যে ওর বাবা।ওর নিজের বাবা।ওর জন্মদাতা বাবা।কিন্তু আমি ওর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।সাগরিকা,আমার না বুকের এখানে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।অনেক কষ্ট হচ্ছে।সাবিহা আর সাব্বিরকে ডাকবে?আমি ওদের জড়িয়ে ধরে একটু ঘুমুবো।ডাকো না একটু।”

সাগরিকা উঠে যায় না।রিজভীকে শক্ত করে ধরে বসে থাকে।সাগরিকা জানে,এই ব্যথা অন্য কারো মধ্যে মায়াকে খুঁজে দূর করা যাবে না।সে শুধু বলে,”শুয়ে পড়ো মায়ার বাবা।কিংবা, মায়া নিজের নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে।তোমার মতে,তুমি মায়ার জন্য কিছুই করতে পারোনি।আজকে তাহলে ওর নতুন জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও।যাতে ও ভালো থাকে।”

রিজভীর হুশ ফিরে।সে তড়িঘড়ি করে উঠে ওজু করে এসে জায়নামাযে বসে পড়ে।সাগরিকা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।আজ তার নিজের বাবার কথা মনে পড়ে।কেমন লাগছিল বাবার,যখন সে তার মুখে চুনকালি মেখে রিজভীর সাথে চলে এসেছিল?

এই লোকটা মেয়ের সাথে তেমন ভালো কোনো মুহুর্তও কাটায়নি।আর সাগরিকা ছিল তার বাবার জান।তাহলে বাবার কেমন লেগেছিল?সেও উঠে পড়ে।ওজু করে এসে জায়নামাযে বসে পড়ে।তীব্র অনুশোচনায় আজ সে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।তার এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য আল্লাহর কাছে দু হাত তুলে ক্ষমা চায়।আর তার বাবার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে যেন আল্লাহ তার বাবাকে জান্নাত নসিব করে।

“আগে নামাজ পড়বে মায়া?আমার এক হুজুর বন্ধু বলেছে নতুন জীবন শুরু করার আগে দু রাকাত নামাজ নাকি পড়তে হয়।”
কানের দুল খুলতে খুলতে মায়া বলে,”আগে খেয়ে নিবো।আম্মা বলেছে খাবার খেয়ে নামাজ পড়লে খাবারও নাকি আমার জন্য দোয়া করবে।”

“কি বলো?আর আমি আর কবিতা তো কিছু হলেই খাবারের উপর রাগ করে বসে বা শুয়ে থাকি।”
মায়া মুচকি হেসে বলে,”আমিও আগে করতাম।কিন্তু যেদিন জানলাম,আমার জন্মই হয়েছে খাবারের জন্য, সেদিন থেকে আর খাবারের উপর রাগ করে থাকি না।”

কাব্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,”মানে?তোমার জন্ম খাবারের জন্য হবে কেন?”
“আমার বাবা আমার খালামনি কে প্রাইভেট পড়াতো।মা বাবাকে ভালোবেসে ফেলেছিল।তাই বাবাকে খাবার খাওয়াতো নিজের হাতে।যেদিন রাতে আমি আমার মায়ের গর্ভে আসি,সেদিন বাবাকে মা দাওয়াত দিয়েছিল খাবারের জন্য।বাবা একবেলা খাবার বাঁচানোর জন্য গিয়েছিল সেখানে।”

আজ মায়া আর কাব্যর বাসর রাত।কাঁচা গোলাপের গন্ধে রুমটা ভরে উঠেছে।একটু আগে সবাই মায়াকে এই রুমে বসিয়ে রেখে গেছে।কাব্যকে এই রুমে ঢুকার জন্য ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে সবাইকে।তারপর মা এসে মায়া আর তার জন্য খাবার দিয়ে গেছে।এই রাতে কাব্যর ইচ্ছে করছে না মায়ার মায়ের কাহিনি শুনতে।কিন্তু মায়া বলেই চলেছে।

“জানেন তো,বাবার অবস্থা তখন ছিল অনেক খারাপ।মা বাবার খাবারে নেশার মেডিসিন দিয়েছিল।তাই তো আমার জন্ম হয়েছিল।আপনার কি মনে হয়,আমি খাবার খুব তৃপ্তি নিয়ে খাই?”
কাব্য আঁতকে উঠে।তার মনে হয় মায়া স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।ও আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করে,”তুমি এইসব কিভাবে জানো মায়া?কেউ তোমাকে জানিয়েছে?”

“নাহ।কলেজে থাকাবস্থায় বাবার পুরোনো বইয়ের ভান্ডারে একটা চিঠি পেয়েছিলাম।বাবা চিঠিটি খুলেও দেখেনি জানেন?আমি চিঠিটি মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীর দিন বাবার ফাইলের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম বাবার মনে পড়বে যে আজ তার প্রাক্তন স্ত্রীর মৃত্যু বার্ষিকী। কিন্তু জানেন তো,আমার বাবার আমার মায়ের কথা মনেও পড়েনি।”
কাব্য মায়াকে কি বলে স্বান্তনা দিবে বুঝে উঠতে পারেনা।কিন্তু এটা বুঝে,শুধুমাত্র ভালোবাসা পেলেই মায়া তার এই অতীত থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।কাব্য কথা এড়িয়ে গিয়ে বলে,”খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে মায়া।খেয়ে নাও।”
মায়া বাধ্য মেয়ের মতো খাবার খেয়ে নেয় কাব্যর হাত থেকে।

দুজনে একসাথে নামাজ শেষ করে একে অন্যের দিকে চোখাচোখি হলে মায়ার আজকের রাতের কথা মনে হতেই লজ্জারা এসে ভীর করে মনে।জায়নামাজ গুটিয়ে চোখ নামিয়ে কাব্যকে বলে,”আমি একটু বারান্দায় যাই?”
“ওকে।তুমি যাও।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।”

অনুমতি পেয়ে মায়া ছুটে আসে বারান্দায়।কি করবে ভেবে পায়না সে।কাব্যর সামনে কিভাবে এখন যাবে?গাড়িতে আবার কাব্য তাকে বলে দিয়েছে এখন থেকে যেন তাকে তুমি করে ডাকা হয়।আকাশের দিকে তাকায় মায়া।অনেকগুলো তারা পুরো আকাশ জুড়ে আছে।সে ছোটবেলায় মায়ের কাছে গল্প শুনেছিল মানুষ মরে গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়।

একটা সময় সে বিশ্বাস করলেও তারপর আর করেনি।কিন্তু আজ তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।কোনো একটা তারা হয়তো তার মা।তাকে হয়তো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।আর বলছে,”হ্যাঁ রে মায়া,বিয়ে করে নিলি?আমার কথা বুঝি মনে পড়েনি?কাঁদিস নি আমার জন্য?আমি তো কেঁদেছি।মেয়েটা এখন আমায় ভাবার জন্য আরও সময় পাবে কম।তার যে এখন বরও আছে।”

মায়া নিজের মনে বিরবির করে বলে,”তোমায় কখনোই ভুলবো না মা।তুমি যতো খারাপই হওনা কেন,তুমিই যে আমার মা।আজ সব ভুলের দিন।মায়ার এইসব আজগুবি চিন্তা করতে ভালো লাগছে।আজ আম্মা কথা রাখেনি।সে মায়াকে কান্না করতে মানা করে নিজেই কেঁদেছে।এতোদিন খালামনির গায়ে মায়ের গন্ধ না পেলেও আজ সেই গন্ধ পেয়েছে।রিজা নিজের কথা না ভেবে নিজের মায়ের কথাও ভেবেছে।মায়া প্রতিজ্ঞা করে,ফুপিকে যে করেই হোক না কেন,বিয়ে দিবেই সে। এর জন্য যা যা করতে হয়,সেটা সে করবে।

“কি এতো ভাবছেন ম্যাডাম?”
কাব্যর ডাকে পিছনে ফিরে কাব্যর দিকে তাকায় সে।তার এখন লজ্জায় নুইয়ে পড়ার কথা।কিন্তু তার মনে পড়ে আম্মা কথা।আম্মা বলেছে,স্বামীকে কখনোই দূরে সরিয়ে রাখবে না।মায়া জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছে। অনেক কিছু পায়নি।এই জীবনে তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে কাব্য। কাব্যকে সে কোনোভাবেই হারাতে চায় না।কাব্যর দিকে ফিরে মুখে হাসির রেখা টেনে তার কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”কি আর ভাববো এই রাতে তোমায় ছাড়া? আমি যে তোমায় ছাড়া দিশেহারা।”

কাব্য হাসে।এই প্রথম মায়া তার এতো কাছে।দুজনের শরীরই কাঁপছে কোনো এক আদিম আকর্ষনে।কাব্য তাকিয়ে দেখে মায়ার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে।কাব্য মায়ার কোমড় জড়িয়ে নিজের দিকে টেনে নেয়।মায়া আরও একবার শীতল শিহরণ অনুভব করে সারা শরীরে। কাব্যর দিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে কাব্যর ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায়।কাব্য অনেকটা থ হয়ে যায়।

এ কোন মায়াকে দেখছে সে?কিন্তু চুমু খাওয়ার আগেই কাব্যর চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে তাকে ছেড়ে কোনোমতে ছুটে রুমের দিকে।এতোক্ষণে মায়ার সাহসের পরিমান দেখে যতোটা অবাক হয়েছিল,এখন মায়ার এই কাজে ততোটাই তার হাসি পায়।হাসতে হাসতে রুমে ঢুকে দেখে,মায়া বিছানার এক পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কাব্য হাসিমুখে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে মায়াকে মিশিয়ে নেয়।মায়া মাথা নিচু করে বলে,”ছাড়ুন আমায়।”

“একটু আগেই না তুমি করে বলেছিলে মায়া?এখনও তুমিই বলো।”
মায়া চোখ বন্ধ করে বলে,”উহু।”
“উহু না।বলো।”
“নাহ।”

“আমি তো ভেবেছিলাম তুমি অনেক সাহসী।তখন কিছু একটা করেই ফেলবে।কিন্তু তুমি তো যেই ভীতু ছিলে,সেই ভীতুই আছো।সেই আমার লজ্জাবতী মায়াবতীর মতোই।”
মায়া চট করে কাব্যর দিকে তাকায়।আবার তার গলা জড়িয়ে ধরে চোখ টিপে হেসে বলে, “#আমি_মায়াবতী? ”

আমি মায়াবতী পর্ব ৪৫

অবশেষে শেষ করতে পারলাম।জানিনা শেষটা কেমন হয়েছে।গত ১০ দিন আগে থেকে আমার ফোন প্রায় নষ্টই বলা চলে।চার্জ উঠছে না।কোনোভাবে শেষ করে দিলাম।জানিনা মায়াকে আমি কতোটা তুলে ধর‍তে পেরেছি আপনাদের কাছে।তবে,সাগরিকা কে নিয়ে আমার কোনো কনফিউশান নেই।তাকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি।আমি জানিনা মায়াকে সে সত্যিই ভালোবেসে মায়ার জন্য সবকিছু করেছে নাকি শুধু দায়িত্ববোধ থেকে।তবে,যেভাবেই করুক না কেন,সৎ মায়ের দায়িত্ব কয়জনই বা এতো ভালোমতো পালন করে?

সমাপ্তি