এই মন তোমারি পর্ব ৩০

এই মন তোমারি পর্ব ৩০
নুজাইফা নূন

-” সূরা একটা চিরকুট লিখে টেবিলের উপর রেখে আলমারি থেকে কিছু টাকা নিজের হ্যান্ডপার্সে নিয়ে রাতের আঁধারে চুপিচুপি নাজমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে পড়ে। দরজা খট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রেণুর।সে বাইরে এসে দেখে মেইন ডোর খোলা রয়েছে। রেণু অনেক রাত পর্যন্ত জেগে সিরিয়াল দেখে।তাই রেণু ভাবলো হয়তো তারি ভুল হয়েছে।সে হয়তো সিরিয়াল দেখার নেশায় দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।এমনটা সে প্রায়ই করে থাকে। তাই আর রেণু এই ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের মতো গিয়ে শুয়ে পড়ে। ”

-” ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় শাফায়াতের। শাফায়াত তড়িঘড়ি করে উঠে অযু করে মসজিদে চলে যায় ফজরের সালাত আদায় করার জন্য।সালাত আদায় করে মসজিদ থেকে ফেরার সময় শাফায়াত মনে মনে বললো, তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমার লজ্জাবতী ললিতা। আমি জানি আমার প্রতি তোমার অনেক রাগ , ক্ষোভ, অভিমানের সৃষ্টি হয়েছে।আজ সব রাগ ক্ষোভ অভিমানের অবসান ঘটিয়ে তোমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

অন্য এক সুখের রাজ্যে নিয়ে যাবো তোমাকে। আজকের রাত একান্তই আমাদের দুজনের রাত।আজ রাতে তোমাকে আপন করে নিবো। ঠিক ততোটা আপন যতোটা আপন হলে কেউ কারো থেকে দূরে যেতে পারবে না।তোমাকে আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশিয়ে নিবো ললিতা।আজ আবার তুমি নতুন করে ব‌উ সাজবে ।আর আমি সাজবো বর। শাফায়াত খুশি মনে বাড়িতে ফিরে কিচেনে উকি দেয়। কিন্তু সূরা কে পায় না। রেণু চা করছে দেখে শাফায়াত বললো, তুই চা করছিস কেনো? তোর ব‌উমনি কোথায়? ও কি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি?”

-” আমি ক‌ইবার পারুম না ভাইজান।ভাবি তো হগ্গলের আগে উঠে সব কাম একা হাতে করে।আমারে তো কিচ্ছুটি করবার দেয় না। কিন্তু আজ তো তার কোনো খোঁজ খবর নেই। আমি ভাবছি হয়তো ভাবির গতর খারাপ করছে।তাই আর তারে বিরক্ত করি নি।”

-” ঠিক আছে তুই কাজ কর।আমি গিয়ে দেখছি মহারানীর কি হয়েছে? বাবাগো তার যে রাগ! আমাকে সামনে পেলে কাঁচা চিবিয়ে না খেয়ে ফেলে আবার।”
-” আপনে পুলিশ হয়েও ব‌উ রে ডরান ভাইজান ভাবা যায়।”

-” শাফায়াত প্রতিত্তরে কিছু না বলে নাজমা দেওয়ান এর রুমে এসে দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়।যার কারণে শাফায়াত একটু অবাক হয়ে যায়।সে মনে মনে বললো, আশ্চর্য ! দরজা খোলা রয়েছে অথচ সূরা নিচে যায় নি কেনো? শাফায়াত তৎক্ষণাৎ রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু ভেতরে গিয়ে সূরা কে পেয়ে আরেক দফা চমকে উঠে। শাফায়াত ওয়াশরুম , বেলকনি সব জায়গায় দেখে বাট কোথাও সূরা কে পায় নি। শাফায়াত হতাশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে ,তখনি টেবিলের উপর রাখা চিরকুটের দিকে তার নজর যায়। শাফায়াত কালবিলম্ব না করে চিরকুট পড়তে শুরু করে ।চিরকুটে লেখা ছিলো,

-” আমি জানি যখন আপনি আমার এই লেখাটা হাতে পাবেন তখন আমি কোথায় থাকবো আমি নিজেও জানি না।কারণ আমার যে নির্দিষ্ট কোনো থাকার জায়গা নেই।বাবা মাকে হারোনোর পর ছোটবেলা থেকে চাচির সংসারে নির্যাতিত হয়ে বড় হয়েছি। এরপর আপনাদের সংসারে গিয়ে মায়ের , বোনের ভালোবাসা পেয়েছি। কিছু সময়ের জন্য বরের ভালোবাসা ও পেয়েছি।

জানেন সুন্দর ব্যাডা মানুষ আপনি যখন আমার আশেপাশে থাকতেন , আমাকে ছুঁয়ে দিতেন ,তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হতো। কিন্তু আমি যে অনেক লোভী। অতটুকু সুখে আমার পোষায় নি‌। আমি আরো সুখের নাগাল পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মূহূর্তে একটা দমকা হাওয়া এসে আমার জীবন টা পাল্টে দিলো। আমার থেকে আমার সব টুকু সুখ কেড়ে নিলো।

আপনি হয়তো ভেবেছিলেন আরাব ভাই কে আমি পছন্দ করি। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন পুলিশ আমি আরাব ভাই কে পছন্দ করা তো দূরের কথা , তার চেহারার দিকেও তাকিয়ে দেখি নি সে দেখতে কেমন।কারণ আমার মনটা যে সবসময় আমার সুন্দর ব্যাডা মানুষের কাছে পড়ে থাকতো। আমার মনটা যে আপনারি । আপনার মন আপনার অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়ার কোনো অধিকার যে আমার নেই।বড্ড ভালোবাসি আপনাকে।আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনাকে’ই ভালোবেসে যাবো।

আমার ভালোবাসার গভীরতা অনেক বেশি ছিলো পুলিশ। আমি আপনার পাশে কাজের মেয়ে রেণু কেও সহ্য করতে পারতাম না। সেইখানে তরীর আপু কে কিভাবে সহ্য করতাম বলুন।আপনি চিরদিনের জন্য অন্য কারো হবেন এটা আমি সহ্য করতে পারতাম না পুলিশ।আমি হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতাম।তাই তো আমি আপনার থেকে দূরে চলে এলাম।আমি না হয় আপনাকে দূর থেকে আপনাকে ভালোবেসে যাবো।ভালো থাকবেন পুলিশ। নিজের শরীরের যত্ন নিবেন।মা , নুজাইফা , আব্বা সবার খেয়াল রাখবেন।আপনারা ভালো থাকলেই যে আমি ভালো থাকবো।”

-” চিরকুট টা পড়ে শাফায়াত ড্রেসিং টেবিলে ঘুষি মেরে দেয়।যার ফলস্বরূপ ড্রেসিং টেবিল ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যে শাফায়াতের হাত থেকে গলগল করে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসে। কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই শাফায়াতের। শাফায়াত চিৎকার করে বললো, এটা তুই কি করলি সূরা? তোকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে দেখি তুই নিজেই আমার জন্য সারপ্রাইজ রেখেছিস।

তোর সুন্দর ব্যাডা মানুষ কে এই চিনতে পেরেছিস তুই? আমার উপর একটুও বিশ্বাস ছিলো না তোর? কিভাবে পারলি আমার ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো দুঃসাহস দেখাতে? কিভাবে পারলি বলে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে শাফায়াত। শাফায়াতের চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে রুমে এসে শাফায়াতের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। শফিকুল দেওয়ান এর সাহস হয় না শাফায়াতের কাছে যাওয়ার।

কারণ সে খুব ভালো করে জানে সূরা শুধু মাত্র তার জন্য এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। শফিকুল দেওয়ান নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললো, আমার আম ও গেলো আর সাথে বস্তাও গেলো। ভেবেছিলাম তরীর সাথে শাফির বিয়ে দিয়ে আমি কোটি কোটি টাকার মালিক হবো। কিন্তু ঐ বেয়াদব মেয়ে আমার পাকা ধানে ম‌ই দিয়ে রাতে তার বয়ফ্রেন্ড তাসিনের সাথে পালিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করে নিয়েছে।

এদিকে আবার গাইয়া মেয়েটা বোকামি করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো। নাজমা রাগারাগী করে গ্ৰামের বাড়িতে চলে গেলো।আমি টাকা দিয়ে সেলিমের এক্সিডেন্ট করালাম। নিজের ‌স্বার্থে কখন যে এতো গুলো অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছি নিজেও বুঝতে পারি নি।শাফি যখন জানতে পারবে সবকিছুর পেছনে আমি রয়েছে বাবা বলে সে আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না

।আমার জেলের ঘানি টানতে হবে।জেলে পচে মরতে হবে আমাকে।না ,না আমি কিছুতেই এটা হতে দিতে পারি না।আমাকে অন্য কোনো চাল চালতে হবে।যাতে সাপ ও মরে আর লাঠি ও না ভাঙ্গে। শফিকুল দেওয়ান শাফায়াত কে অনেক বুঝিয়ে নুজাইফার সাথে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে নাজমা দেওয়ান এর লকার থেকে সমস্ত টাকা, পয়সা গয়না খুব সাবধানে অন্যত্র সরিয়ে নিচে এসে বললো, সর্বনাশ হয়ে গেছে রে শাফি।”

এই মন তোমারি পর্ব ২৯

-” কেনো বাবা কি হয়েছে।”
-” ঐ গাইয়া মেয়েটা তো পাক্কা একটা চোর রে। মেয়েটা নাজমার লকার থেকে সমস্ত টাকা, পয়সা,গহনা চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে।আমি আগেই জানতাম মেয়েটা এমন কিছু একটা করবে।সবাই তো মাথায় করে রাখতো মেয়েটাকে।কত্তো ভালোবাসাতো।তোদের সেই ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপ মেয়েটা সবকিছু চুরি করে নিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেলো।”

এই মন তোমারি পর্ব ৩১