মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৭

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৭
তানিশা সুলতানা

অর্ণব ছোট থেকেই রেগে গেলে ভয়ংকর। কিন্তু হুটহাট সে রেগে যায় না। অতিরিক্ত আঘাত না পেলে কখনোই সে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে না। বুদ্ধিমতি অথৈ ঠিক ধরে ফেলে ভাইয়ের মনের অবস্থা। রিলেশনশিপের সে জানে। গতকালই দুই ভাইবোন মিলে প্লানিং করেছে নিধির বার্থডেতে তাকে সারপ্রাইজ দিবে।
তাহলে নিধিই কিছু করেছে?

অর্ণবের হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে। পাশেই ডাক্তার নার্স আর পরিবারের সবাই দাঁড়িয়ে আছে। কারো কথাই শুনছে না অর্ণব। যতখন না বিয়ে হবে ততখন অর্ণব কিছুতেই হাত ছুঁতে দেবে না কাউকেই।
তন্নি হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে৷ তার জীবনে আবার নতুন ঝড় আসতে চলেছে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সে।
এই ঝড় কি করে সামাল দিবে সে? কি করে বাঁচবে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আনোয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে হাসপাতালেই উকিল ডেকে রেজিস্ট্রি করাবে। তন্নির এখনো আঠারো হয় নি। আঠারো হলে না হয় ইসলামিক শরিয়ত মেনে বিয়েটা দিবে।
তিনি তারেকের কাছে যায়। তারেক সম্মতি দিয়ে দেয়।
আশা বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে। একমাত্র ছেলেকে এইভাবে বিয়ে করাবে? রাজপুত্রের মতো ছেলে তার। এই ছেলের জন্য রাজকন্যা আনার স্বপ্ন দেখেছিলো তিনি। কিন্তু তার ছেলে কাকে বেছে নিলো?

তন্নি চোখের পানি মুছে সরাসরি বলে ফেলে
“আমি বিয়ে করবো না। ওনাকে তো একদমই না। একটুও পছন্দ না ওনাকে আমার।
তন্নির কথা শুনে সবাই তাকায় তন্নির দিকে।
অর্ণবের চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিধির সেই রূপ। এমনটা নিধি কেনো করেছে? নিশ্চিয় অর্ণবকে তার পছন্দ না বলে। অর্ণবের থেকেও ওই ছেলেটা বেশি সুন্দর বলে।

চোখদুটো জ্বলে ওঠে অর্ণবের।
ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় তন্নির দিকে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলে উঠেছে মেয়েটার। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। দেখতে মন্দ লাগছে না।
অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নরম গলায় বলে

” পাপা আমি বিয়ে করবো মানে করবোই৷ এখনই মানে এখনই। এই মেয়েটাকে মানে এই মেয়েটাকেই।
এবার সিদ্ধান্ত তোমার। আমি একে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো না কি তুমি সুস্থ ভাবে বিয়েটা দিবে।
আধ ঘন্টা সময় দিলাম তোমায়।
বলেই নিজের হাতের দিকে নজর দেয় অর্ণব। এক টুকরো কাচ এখনো ঢুকে আছে৷ এক টানে বের করে ফেলে। খানিকটা রক্ত বেরিয়ে আসে।

“ঠিক আছে বাড়িতে চলো। এটা হাসপাতাল। এখানে তো বিয়ে সম্ভব
বাকিটা বলার আগেই অর্ণব দাঁড়িয়ে যায়। তন্নির হাত থেকে এক টান দিয়ে কেনেলো খুলে তাকে কোলে তুলে নেয়। সবাই হতদম্ভ হয়ে যায়। তন্নি ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে ফেলে। অর্ণবের হাতের রক্ত তন্নির জামায় লেগে যাচ্ছে।
অর্ণব বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। তার পেছন পেছন দৌড়ে যায় অথে আর আর্থি। আনোয়ার কপালে হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলে
” ছেলে আমার বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে।

অর্ণবের নির্দেশনায় ড্রাইভার গাড়িটা সোজা কাজি অফিসে নিয়ে আসে। বিয়েতে যা যা লাগবে সব কিছু আনতে বলেছে অথৈকে। অন্য গাড়িতে করে অথৈ বাড়িতে চলে গেছে।
অথৈ আসতেই গাড়ি থেকে নামে সবাই। এবার অর্ণব তন্নিকে কোলে নেয় না। আর্থি ধরে ধরে নিয়ে যায় তন্নিকে।
তন্নির জীবনের মোড় ঘুরে যায়। নতুন অধ্যায় শুরু হয় তার। তন্নি জানে অভাগা যেদিকে তাকায় সাগর শুকিয়ে যায়। তার কপালে সুখ লেখা থাকবে না এটা তার ছোট মস্তিষ্কে ভালো ভাবেই গেঁথে গেছে। মন বলছে এতোদিন ভালোই ছিলি। এবার তুই দেখবি দুঃখ কাকে বলে।

ক্ষণে ক্ষণে বুক কেঁপে উঠছে।
তারেক বেশ খুশি। তার দুটো কারণ আছে। একটা হচ্ছে তন্নিকে নিয়ে আর বাড়িতে অশান্তি হবে না। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে রাজপুত্রের মতো বর পেয়েছে তন্নি।
কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে আনোয়ার বলে ওঠে

“বিয়ে করতে চেয়েছো বাঁধা দেই নি। মেয়েটা ছোট। তুমিও খুব বড় না। পড়ালেখা শেষ করো। একটা চাকরি ধরো তারপর তন্নিকে বাড়িতে তুলবো। ততদিন সে বাবার বাড়িতে থাকবে৷
আর্থি তন্নিকে নিয়ে গাড়িতে বসেছে। অর্ণব দরজা খুলে বসতে যাচ্ছিলো আনোয়ারের কথায় থেমে যায়। বাবার দিকে তাকিয়ে বলে

” বিয়ে করেছি এক সাথে থাকার জন্য। যথেষ্ট বড় আমি। বউ সামলানোর বয়স হয়েছে আমার।
বলেই সে তন্নির পাশে বসে পড়ে। আনোয়ার শুকনো ঢোক গিলে। কি নিলজ্জ ছেলে তার। লজ্জায় তন্নির কান গরম হয়ে ওঠে। মাথা নিচু করে ফেলে। এসি গাড়িতেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
অথৈ আর আর্থি মিটমিট করে হাসছে। অথৈ অর্ণবের পাশে বসে তার হাতের রক্ত পরিষ্কার করছে। অর্ণব আর বাঁধা দিচ্ছে না। সে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে আছে। রাগ কমেছে কিন্তু মনটা শান্ত হচ্ছে না।
বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মাগরিবের আজান পড়ে যায়। তারেক চলে গেছে। তাকে কেউ ভেতরে আসার জন্য বলেও নি৷
তন্নিকে অথৈ তার রুমে নিয়ে গেছে৷

“ভাবি হয়ে গেলি জানু
তন্নিকে বিছানায় বসিয়ে বলে অথৈ।
তন্নি তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” আমি তো পুতুল অথৈ। আমার নিজের কোনো মতামত নেই৷ যার যেটা মনে হবে আমার ওপর চাপিয়ে দিবে। তোর ভাইয়ের বউ হওয়ার এতোটুকুও ইচ্ছে নেই আমার৷ উনি তো মানুষকে স
বাকিটুকু বলতে পারে না তন্নি। অর্ণব হনহনিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে। তন্নির পাশে বসে বলে
“তোমাকে বিয়ে করাও কোনো ইচ্ছে ছিলো না আমার। তুমি একটা মেয়ে হলে? মহিলা তুমি। পঁচা পদ্ম ফুলের মতো চোখ। ডাইনোসরের মতো দাঁত। টিকটিকির মতো শরীর।

তোমাকে তো আমার ভালোই লাগে না।
আস্ত একটা ভালো না লাগার গোডাউন তুমি।
গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে গেছে। সে আরেক বেডার সাথে রোমাঞ্চ করছে। তাই তাকে দেখানোর জন্য তোমায় বিয়ে করেছি।
এবার কাছাকাছি এসো। তোমার সাথে দুটো সেলফি তুলে তাকে পাঠিয়ে দেই।
তন্নি তেঁতে উঠে বলে

” ওহহহ তার মানে তাকে দেখানো হয়ে গেছে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন?
তন্নির সাথে ততখনে অর্ণবের সেলফি তোলা শেষ। তন্নি কথা বলতে ছিলো বলে মুখ বাঁকা উঠেছে
অর্ণব পিক দেখতে দেখতে বলে

“ডিভোর্স বানান করতে পারো তুমি? বলোতো ডিভোর্স বানানে ডি আছে কি না?
তন্নি অথৈয়ের দিকে তাকায়। অথৈ অর্ণবের দিকে তাকায়।
” ভাই যা তো তুই। আমাদের একটু রেস্ট নিতে দে।
“তুই যা ডাইনি। বিয়ে করলাম না? পেন্সিল দিয়ে সাইন করেছি তাতে কি? তবুও বউ তো।
আমাদের প্রাইভেসি দে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৬

” আম্মু আম্মু তোমার ছেলেকে যেতে বলো
অথৈ চিল্লিয়ে বলে
অর্ণবও চিল্লিয়ে বলে
“মাম্মা তোমার মেয়েকে যেতে বলো। বউয়ের কাছে থাকতে দেয় না।
তন্নি দুই হাত চেপে ধরে বসে থাকে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৮