যদি তুমি বলো পর্ব ৩৫

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৫
আফনান লারা

সকাল সকাল ইশানের আজ অফিস যাবার দিন ছিল।ফ্যাক্টরির কি অবস্থা দেখতে হবে।রেডি হবার পরেও যখন সে খেয়াল করে তিথি উঠছেনা তখন সে ওর কাছে এসে হাত ধরে ডাকে।হাত ধরার পর বুঝলো এতবার করে পানি ঢেলে ভেজানোর কারণে মহারানীর জ্বর হয়েছে।এদিকে ফ্যাক্টরিতে যাওয়া খুবই জরুরি।

নোটবুকটা বের করে ইশানের বাসার পুরোনো মেইডদের কল করে সে।তারা আসতে আধ ঘন্টা সময় লাগবে,তাই সে বসে বসে অপেক্ষা করে।অফিস থেকে তাড়াতাড়ি আসবে,কিন্তু আজকে যাওয়া খুবই জরুরি।তিথিকে একা রেখে যাওয়া উচিত না বলে মেইডদের কল করেছে।তারা বাসার যাবতীয় কাজ করবে প্লাস তিথির খেয়াল ও রাখবে।
ঠিক সময়ে সেই দুজন মেইড চলে আসে।ইশান তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি ইশান চলে যাবার ঘন্টাখানেক পর জেগে ওঠে। ইশান কোথাও নেই দেখে বিছানা ছেড়ে নামে।
পায়ের ব্যাথাটা তীব্র সাথে জ্বর তো আছেই।তিথি ২য় কদম দেবার আগেই একজন মেইড এসে তিথিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হাতের উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে ওর মুখটা মুছিয়ে দেয়।এরপর ওর হাতে ঔষুধের পাতা আর এক গ্লাস পানি দেয়।
তিথি আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলোনা।ইংরেজীতে প্রশ্ন করলো সে।ভাগ্য ভাল মেইডরা ইংরেজী জানতো।তারা ইংরেজীতে তিথিকে উত্তর দেয় তাদের ইশান পাঠিয়েছে।

তিথি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।সে তো ভেবেছিল আজও ভাত তরকারির আশায় তাকে যুদ্ধ করতে হবে।ঔষুধটা রেখে তিথি আগে কিছু খেতে চাইলো।ওরা কত কি আইটেম তৈরি করে ফেলেছিল অল্প সময়ের মধ্যেই।সেগুলো এনে হাজির করে তিথির সামনে।

তিথি খাবার,ঔষুধ সব খেয়ে শুতে যেতেই কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পায়।কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কে এসেছে।একটা মেয়েলি গলা শুনে তিথি অনেক কষ্টে উঠে দেখতে যায়।উঁকি দিয়ে দেখে সেদিনের কারে বসা মেয়েটা।হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছে।

যে মেইড দরজা খুলেছে সে জাপানি ভাষায় কি যেন বললো।তখন মেয়েটা হয়ত বলেছে সে বাসায় অপেক্ষা করবে।এই বলে সে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ে।
তিথি ব্রু কুঁচকে মেয়েটার কাছে এসে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা ওকে দেখে হাসলো না,বরং গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বসে থাকলো।

তিথির রাগ হলো ভীষণ।সে রুমে ফেরত এসে গায়ের জামা খুলে ইশানের শার্ট একটা পরে আবার ঐ মেয়ের কাছে এসে হাজির হলো।এরপর বললো,’কুয়িনা?’
মেয়েটা মাথা নাড়ায়।তার মানে এই সেই কুয়ারা!
মেয়েটা ইশানের শার্ট তিথির গায়ে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকলো। রাগে ফুঁসছে সে।

পরেরদিন সকাল সকাল পিংকি স্কুলে চলে যায়।এদিকে পান্নাও আজ স্কুলে যাবার কথা ছিল কিন্তু বাবা তাকে রিকশাভাড়া দিতে ভুলে গেছিলেন।যার কারণে সে হেঁটে হেঁটে স্কুলের দিকে যাচ্ছে।পিংকি বাবার বাইকে করে চলে গেছে কারণ তার মর্নিং শিফট।
পান্নাদের ক্লাসে একটা ছেলে আছে।নাম সানিম।
সানিম অত্যন্ত বাজে স্বভাবের একটা ছেলে।সাত বছরের একটা ছেলে এতটা বাজে হতে পারে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো সানিম।

পরশুদিন ক্লাসে সানিম হোমওয়ার্ক করে আসেনি।যার কারণে তাকে ম্যাম পানিশমেন্ট হিসেবে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল।পান্নার সাথে সানিমের ঝগড়া বলে সে মিটমিট করে হাসছিল।যেটা সানিম দেখে ফেলে।আর তাই পান্না একা আসছে এটা দেখে সে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়,হাতে আবির নিয়ে।পান্নাকে সে রঙ দিয়ে চুবাবে।যাতে ও আজ স্কুলে যেতে না পারে।

পান্না তো ভয়ে শেষ।সানিমের হাতের রঙ দেখেই বুঝেছে।সে ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে রিদম সাইকেল দিয়ে বাজারে যাচ্ছিল টমেটো আনার জন্য।পান্না বিপদে পড়েছে দেখে সে থামে।এরপর সাইকেল রেখে সে এগিয়ে এসে সানিমের হাত থেকে রঙের পলিথিনটা কেড়ে নিয়ে সব ওর মুখে সব মাখিয়ে দিলো মূহুর্তের মধ্যেই।
‘কিরে ভাল লাগছে?’

সানিম ভয়ে আর রাগে ছুটে পালালো।পান্না হাসি দিয়ে বলে,’টুলাভাই আপনি এখানে?’
‘টমেটো আনতে যাচ্ছি,তুমি স্কুলে যাচ্ছ?’
‘হু’
‘হেঁটে?চলো আমি তোমায় দিয়ে আসি’
রিদম সাইকেলে উঠে পান্নাকেও উঠতে বলে।পান্নাও রাজি হয়।সে রিদমকে শক্ত করে ধরে বসে।
যেতে যেতে পান্না অনেক কথা বলে।সানিম তাকে যে শুধু বিরক্ত করে এসব ও বলে।রিদম তাকে ভয় পেতে না বলে।সাহস দেখিয়ে লড়তে বলে।

‘হ্যালো ইশান ভাইয়া?’
‘আমি তোর ভাইয়া হলাম কবে থেকে? ‘
‘ভাইয়া আপনার প্রাক্তন+বর্তমান গার্লফ্রেন্ড এসেছে বাসায়।তাকে কি খাইয়ে আপ্যায়ন করবো?’
‘প্রাক্তন+বর্তমান কি আবার?’
‘মানে সে আপনার আগেও ছিল,পরেও আছে।কুয়ারা নাম তার।আপনার জন্য বসে আছে,দেরি করে এসে উদ্ধার করেন আমায়’

‘কুয়িনা?দেখি ওকে ফোনটা দে’
‘ইহহহহ!ঠ্যাকা পড়েনি আমার।নিজের কুয়ারাকে নিজে কল দিয়ে প্রেমালাপ করেন’
এই বলে তিথি কলটা কেটে কুয়িনার কাছে এসে বললো,’আমি ইশানের বউ। আমাদের পঁচিশবার বাসর হয়েছে।
私はイシャーンの妻です。私たちは25回生きました。
Watashi wa ishān no tsumadesu. Watashitachi wa 25-kai ikimashita.”””””

তিথি গুগল দেখে জাপানি ভাষায় কথাটা শুনিয়ে দিলো কুয়িনাকে।কুয়িনা তো রেগে আগুন।তাও কিছু করতে পারছেনা,বলতেও পারছেনা।শুধুমাত্র ইশানের অপেক্ষায় আছে সে।ইশান আসলেই এর একটা বিহিত হবে।
তিথি ইশানের কালো রঙের শার্টটা পরে পায়চারি করছে।কখন ইশান আসবে আর কখন সে ইশানের গলা ধরে ঝুলে যাবে কুয়িনাকে দেখিয়ে।

এক ঘন্টার মধ্যেই ইশান চলে আসে।দরজা খুলে দিতেই তিথি ছুটে এসে ইশানের কোলে উঠে গিয়ে বললো,’ওলে আমার জামাই বাবুটা।অফিসে খুব চাপ ছিল?’
‘তোর কি মাথা গেছে?’

‘মাথা নয়,পুরা দেহটাই গেছে।রুমে নিয়ে চলো না আমায়,আহ পায়ে ব্যাথা!’
‘আমাকে দেখে যে স্পীডে ছুটে এলি।আদৌ তোর পায়ে ব্যাথা আছে?’
কুয়িনা এসে দাঁড়ালো ওখানে।তিথি তখনও ইশানের কোল থেকে নামছিল না।ইশান জোর করেই নামিয়ে দিলো ওকে।এরপর ওর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে তিথির হাতে দিয়ে কুয়িনাকে বসতে বললো।কুয়িনা একবার ইশানকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো কিন্তু তিথি কোল থেকে নামার পরপরই ইশানের বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল।যেন সে আগ থেকে জানতো কুয়িনা ইশানকে জড়িয়ে ধরতে চায়।

‘ভাই,,,,এ ভাই? এদের বাড়িতে তো কোনো অলঙ্কার পাইলাম না।তবে কি আজ রাইতে খালি হাতেই ফিরতে হইবো?’
‘না রে।শুনছি এদের ছাদে নাকি কোটি টাকার জিনিস আছে,বিদাশি কমলা।ঐ কমলা নাকি একটাই আছে আর এইডা নাকি গাছ থেকে নিলে সেদিন গিয়াস উদ্দিন পুরা এলাকারে দাওয়াত দিয়া খাওয়াইবো’
‘তাই নাকি!তাইলে চলো আজ আমরা উদ্বোধন টা সারি ফেলি’
‘চল ছোটো!’

দুইটা চোর এই পরিকল্পনা করে ছাদে ওঠে।রাত তখন ২:৪৫বাজে।
সবাই ঘুমে।পিংকিদের বাসায় কোনো দামী কিছু তারা পায়নি কারণ গিয়াস সাহেব বাসায় এসব রাখেন না।চোর তো আর এসব জানতোনা।তারা দুজনে ছাদে এসে কমলা গাছে তালা দেখে দুজনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।
চোর নং ১ বললো,”ভাইয়ে দেখো কি বেকুবের ঘরের বেকুব।ফলের মধ্যে তালা লাগাইয়া রাখছে!হাহাহাহা!’

‘আর হাসিস না।তালাটা খুলমু কেমনে?’
‘ভাই কি যে কন!ঢাল টান দিলেই তো হয়’
‘ঢাল নাহয় ছিঁড়মু।ফলের মধ্যে যে স্টিলের দড়ি পেঁচিয়ে তালা লাগাইছে সেটা ছুটামু কেমনে?’
‘এটা তো ভাববার বিষয়।’

দুজনে ঢাল ছিঁড়ে দড়িটা ছুটানোর জন্য ব্যাগ থেকে করাত বের করে দড়িটায় লাগিয়ে ঘঁষা দেয়ার আগেই দড়িটা গড়িয়ে পড়ে গেলো।এটা দেখে দুজনে আবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।
অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ছুরি দিয়ে কমলাটাকে দুভাগ করে দুজনে মুখে পুরে কিছুক্ষণ চিবিয়ে সব ফেলে দিলো।
‘ভাইয়ে এইডা তো দেশী নাশপাতি তাও জঘন্য কাঁচা আর সব কষ!’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৪

দুজনে জামা দিয়ে জিভ আর ঠোঁট মুছে নেয় এরপর গিয়াসউদ্দিনকে মনমত গালি দেয়।
চোর নং ২বলে, ‘বিলাতি কমলা আসলে নাশপাতি সেটা মানুষকে দাওয়াত করার পর জানতে পারলে গিয়াসউদ্দিন হার্ট এটাক করে মরেই যেতো তার চেয়ে বরং হার্ট এটাকটা আমরাই পেলাম🐸’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৬