যদি তুমি বলো পর্ব ৬২

যদি তুমি বলো পর্ব ৬২
আফনান লারা

পিংকিকে দরজা খুলে দেবার পর পিংকি সবার আগে নিজের শাড়ীটা ভাল ভাবে দেখে নিচ্ছে তাতে কোনো ছেদ কিংবা ত্রুটি আছে কিনা যা দিয়ে এখন পান্নাকে আচ্ছামতো বকা যাবে।কিন্তু নাহ,শাড়ী যেমন করে ছেলেপক্ষ পাঠিয়েছিল তেমনই আছে,রঙটা বেশ দারুণ।লাল জবা ফোটার আগে কলি অবস্থায় যে রঙটা থাকে,একেবারে সেই রঙের শাড়ী তারা পাঠিয়েছে।এটা অবশ্য পিংকির কথায় নয়।

পান্না বলেছিল এই রঙে পিংকিকে অসাধারণ লাগবে। পিংকির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পান্নার কথায় প্রাধান্য দেয়,তার কারণ পান্নাকে তাদের অনেক পছন্দ,এদিকে পিংকিকেও পছন্দ।অন্যদিকে তাদের আবার দুটো ছেলে অবিবাহিত।বড় ছেলের বিবাহ সম্পন্ন হলেও বাকি দুজন এখনও আবিয়াতি।তাই মেজোকে দিয়েই তারা নামলো।মনে মনে অবশ্য ভেবে রেখেছে,ছোট টার বউ হয়েই পান্না এ ঘরে আসবে।তাকে হাতছাড়া করা যাবেনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

কানাঘুষোয় বাবা জানতে পারে পিংকির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পান্নাকেও তাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চায়।তিনি জানতেন ইশানের প্রস্তাবের সেই ছেলের কথা। কিন্তু হঠাৎই মত বদলে ফেললেন।দুটো মেয়েকে চোখের সামনে দেখে রাখতে চান আর যতটা সময় তার কাছে বাকি আছে।আদরের পান্নাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিলে বছর বছরেও তার দেখা পাওয়া যাবেনা।তাই তিনিও মনে মনে রাজি।

পিংকি শাড়ীটা দেখা শেষ করে খেয়াল করলো পান্নার গাল দুটো লাল লাল হয়ে আছে।পিংকি ওমনি ওর গাল টিপে ধরে বললো,’কিরে কি হলো তোর?আমার ব্লাশ লাগিয়েছিস?’
‘না তো’
‘দেখি? ‘

পিংকি পান্নার গায়ের গন্ধ শুঁকে বললো,’কি রে!এত সুন্দর ঘ্রাণ আসছে কেন!উমমম এটা তো দেশি পারফিউম মনে হচ্ছেনা। কে দিলো তোকে বিদেশী পারফিউম? ‘
‘আহা বুবু,তৈরি হয়ে নাও না!দেরি হয়ে
যাচ্ছে।আমাকে নিয়ে ইনভেস্টিগেশন না করে নিজের কাজে মন দাও তো”
পিংকি ব্রু কুঁচকে শাড়ীটা তুলে চলে যায়।পান্না দম ফেলে ছুটে বারান্দায় এসে দেখে নিচে রিদমের সাথে একটা লোক কথা বলছে।মনে হয় রিদমকে চিনে ফেলেছে।
পান্না মিটমিট করে হাসছিল ওকে দেখে।

‘তোর আদরের ছোট ভাই,কাউকে কিছু না বলে বাংলাদেশ চলে গেছে।ঐ টুকুন ছিল,এখান থেকে ওখানে একা যেতে পারতোনা।আর সে এখন একা একা ফ্লাইট ধরে দেশে পৌঁছে গেছে’
‘পৌঁছাবেই তো!পিংকির বিয়ে শুনলাম’
‘তো?রিদম তো পান্নাকে ভালবাসে,ওর কেবিনে পান্নার ছোটকালের ছবি দেখতে দেখতে আমি তিক্ত হয়ে ওর কেবিন চেঞ্জ করিয়েছি এক মাস হলো।’

‘বুঝেন নাই,সেই বলদ মনে করেছে হয়ত পান্নার বিয়ে’
‘ভেরি ইন্টারেস্টিং,আমাদের উচিত আগুনে তুষ ঢেলে দেয়া’
‘আপনার আর কাজ নেই?’

‘নেই তো তিথি, আপাতত কোনো ব্রিফিং নেই।হাতে ছুটি আছে।আওনের হাতে কাজটা সঁপে কদিনের জন্য সাপলুডো খেলে আসতে চাই,যাবি আমার সাথে?’
‘যেতে পারি,পান্নাকে দেখার ইচ্ছা করে।রিদম তো মনে হয় এই প্রথম দেখবে।এত গুলা বছরে আমরা গিয়ে গিয়ে ঘুরে আসলেও সেই গাধাকে একবারও নিতে পারিনি।সে পণ করেছিল গেলে চাকরি পেয়েই যাবে।কথাটা রেখেই ছেড়েছে।’

তানিয়া মাকে নিয়ে শপিং করতে এসেছে,পিংকির বৌভাতে পরার জন্য একটা শাড়ী কিনবে বলে।তার সব ওকেশানে নতুন শাড়ী লাগে।
‘ভাইয়া এটার দাম কত?’
‘এটা নিয়ে নিন ম্যাম,বিল পে হয়ে গেছে’
‘ওমা কে দিলো?রকিব?কিন্তু সে তো অফিসের কাজে কুষ্টিয়া গেছে।ওহ হো আমার কোনো গুপ্ত প্রেমিক আসলো নাকি?🙈’🐸

‘না ম্যাম,লোকটা আপনার ভাইয়ের বয়সী ছিল’
‘ভাইয়ের বয়সী!আমাকে কি আপনার আন্টি মনে হয়?আমার ভাই কি লোক হবে?আমার ভাই হবে পাঁচ বছরের শিশু,বুঝেছেন?’

‘তানিয়া চুপ করবি?তোর সিজারের পরে পেট যতটা বের হয়েছে,তার উপর তাড়াহুড়া করে বাসার জামা পরে এসেছিস।তোকে তো আমার চাইতেও বেশি বুড়া লাগছে দেখতে।’
দোকানদার মুখে হাত দিয়ে হাসছিল।
‘আপনারা হাসি বন্ধ করেন,নাহয় শাড়ী ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবো’

শাড়ীটা প্যাকেট করে তানিয়া ওর মাকে নিয়ে শপিং মল থেকে বের হতেই দেখে একটা ক্যাব দাঁড়িয়ে আছে,ড্রাইভার ওদের বসতে বলছে।
‘না ভাই,আমরা এরকম উড়ে এসে জুড়ে বসা ক্যাবে উঠিনা।আপনি অন্য লোক দেখেন।’
‘আরে উঠ না,কত দেরি হয়ে গেলো। ভুলুকে ডে-কেয়ার থেকে আনতে হবে’
‘ঠিক আছে চলো,অবশ্য আমাকে আর কিডন্যাপ করেই বা কি হবে।আমার কাছে তো কিছুই নাই’
দুজনেই গাড়ীতে উঠতে গিয়ে দেখলো আগে থেকে একজন বসে আছে মুখের সামনে খবরের কাগজ ধরে।
কি আর করবে চেপেচুপে বসলো দুজন।লোকটা আসলে রিদম ছিল।

‘মা দেখো,ছেলেটার চুল আমাদের রিদমের মতন কাট করা দেখো ‘
‘এত জোরে ফিসফিস করিস না,ড্রাইভার ও শুনছে’
“ওহ আচ্ছা,মা দেখো ছেলেটার হাতের আঙ্গুল ও রিদমের মতন চিকন চিকন’
‘তুই মাইকিং করা বন্ধ করবি?লোকটা কি ভাববে?’
‘আচ্ছা ভাইয়া আপনার মুখটা দেখতে পারি?’
‘সরি টুকু’
‘আচ্ছা’

তানিয়া আচ্ছা বলে ভাবতে থাকে,টুকু নামটা তার খুব পরিচিত । এতই পরিচিত যে!
ও মাই গড!
তানিয়া এক লাফে জড়িয়ে ধরে রিদমকে।এরপর কান্না করতে থাকে।মা তখনও কিছু বুঝতে পারলেন না।
‘কিরে?লোকটা কে?’
‘তোমার অকর্মার ঢেঁকি!’

এটা শুনে মাও জড়িয়ে ধরলেন কাঁদতে কাঁদতে’
ড্রাইভার লুকিং গ্লাসে এই অবিশ্বাস্য চিত্র দেখে আপলুত হয়ে বললেন,’কি আস্টচ্ছ!কি আস্টচ্ছ!’
তানিয়া কান্না থামিয়ে বলে,’আস্টচ্ছ না আশ্চর্য হবে!’

‘ভাল আছেন? ‘
‘জ্বী’
‘আমার বউ না হয়েই এত ভাল আছেন?’
‘আপনার বউ না হলে আরও বেশি ভাল থাকবো।’
‘আচ্ছা পান্না আমাকে দিয়ে তোমার এত কি সমস্যা? ‘

‘যে ঘরে আমার বোন বউ হয়ে গেছে,সেই ঘরে আমাকেও যেতে হবে এমন তো কোনো বিধিবিধান নেই’
‘অবশ্যই আছে,কিরোরেট বিবাহ করিবো আমরা দুজন’
‘কিরোরেট বিবাহ কি আবার?সরোরেট শুনেছিলাম’
‘কিরোরেট মানে ভাবীর ছোট বোনকে বিবাহ’
‘মা দেখোনা,এইই লোকটা আমাকে জ্বালাচ্ছে’
পান্না বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।এক পাগলের ভাত নাই আর নতুন পাগলের আমদানি!

‘ভাইয়া তোমার শালিকে পটানো আমার পক্ষে সম্ভব নাহ,এমন ভাবে কথা বলে যেন তার বিয়ে হয়ে গেছে,তাই চোখে মুখে সর্ষেফুল দেখছে।আর কোনো ছেলের প্রতি তার আগ্রহ কাজ করছেনা,করবেও না’
‘এত অধৈর্য্য হলে কি করে হবে সাবিদ?আমরা আছি তো।হয়ত সে লজ্জা পাচ্ছে’
পান্না গাল ফুলিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে হাতে বাটি নিয়ে সামনের দিকে চলছিল,মা বলেছে রুবি আন্টির বাসা থেকে কাঁচা হলুদ আনতে।কি কাজে যেন লাগবে।

সেটা নেয়ার জন্য পথ চলছিল পান্না হঠাৎ ওড়নায় টান লাগায় চেঁচিয়ে উঠে পান্না বলে,’আপনি এত বেয়াদব কেন? ছেসড়ার মতন পিছে পিছে ঘুরতে লজ্জা করেনা আপনার?’
এই বলে ওড়না ছাড়িয়ে পিছনে চেয়ে দেখলো রিদম দাঁড়িয়ে আছে’
‘আপনি?’
‘কাকে বললে এসব?কে বিরক্ত করে?’
‘নাহ কেউ না,’
‘বলো আমায়’

‘নাহ কেউ না।আপনি তানিয়া বুবুর সাথে বিয়েতে আসবেন না আজকে?বরপক্ষ তো এসে গেছে’
‘আসছিনা,আমার একটু কাজ আছে।তার আগে বলো কে বিরক্ত করে?’
‘কেউ না’
রিদম পান্নার কোমড়ে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলে,’আসলাম সবে,এখনই যাই যাই করছো?’
‘মানুষ দেখলে কি বলবে?’

‘বলবে ঐ দেখো রিদমের বউ যাচ্ছে,রিদমকে নিয়ে’
পান্না মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে।রিদম চলতে চলতে বলে,’যেই বিরক্ত করুক,অনুরক্ত করতে পারবেনা।বহুকাল আগে রিদম অনুরক্ত করে রেখে গেছে।’
‘খামোশ!!!!!’
পান্না আর রিদম থেমে গেছে।সামনে গিয়াস সাহেব দাঁড়িয়ে।
পান্নার চোখ কপালে,
রিদম ওর কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সেও রোবট হয়ে আছে।মনে হয় মাটির তলার পা থুক্কু পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।

‘উহঃ!চশমাটা কই!এই মেয়ে আমার চশমাটা খুঁজে দেবে?’
রিদম ফিসফিস করে বলে,’একি?আঙ্কেল তোমায় চেনেন না?’
‘বাবার চোখে ভাল দেখেন না দু বছর হলো,চশমা না থাকলে কিছুই দেখেন না’
রিদম দাঁত কেলিয়ে কাছে এসে গিয়াস সাহেবকে খপ করে ধরে চুমু একটা দিলো কপালে,এরপর চশমাটা তুলে ওনাকে পরিয়ে দিলো।

যদি তুমি বলো পর্ব ৬১

‘একি তুমি কে!বড় চেনা চেনা লাগছে।আচ্ছা এখানে তো একটা মেয়েও ছিল মনে হয়’
পান্না পালিয়েছে ততক্ষণে।
রিদম পান্নার ওড়না টান দিয়ে রেখে দিয়েছিল,মুচকি হাসি দিয়ে সে বললো,’নাহ তো!আমিই ছিলাম।এই যে আমার ওড়না’
‘এই ওড়নাটাও চেনা চেনা লাগছে।’

যদি তুমি বলো পর্ব ৬৩