যদি তুমি বলো পর্ব ৩৪

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৪
আফনান লারা

তিথি তার মায়ের সাথে কথা বলছে।নালিশ করছে ইশানকে নিয়ে।তার মতে ইশান যত নষ্টের গোড়া।তার কারণেই একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটছে ওর সাথে। কিন্তু মাকে যেন ইশান বশ করে রেখেছে।
মা এক কান দিয়ে কথা ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে ফেলে।
শেষে বিরক্ত হয়ে তিথি ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো।ইশান এসে ফোনটা কানে ধরে শুনতে পেলো তিথির মা বলছেন,’ইশান ছেলেটা কোটিতে একটা!’

ইশান কিছু না বলে মুচকি একটা হাসি দিলো।তিথি বুঝতে পারছে মা এখনও প্রশংসা করে যাচ্ছে তাই তো ইশানের এত হাসি!
নিজের পা ধরে তিথি দেখতে নিলো সেই সময় কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে ইশান ফোনে কথা বলতে বলতে ওদিকটায় যায়।রাত তখন সাড়ে দশটা বাজে এ সময় অতিথি আসার কথা না,তাও কে আসলো!
দরজা খুলে ইশান দেখে মিঃ বারি আর তার ওয়াইফ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

ইশান ওনাদের সোফায় বসতে বলে তিথির মায়ের সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখে।
মিসেস বারি উঠে তিথিকে খুঁজতে গিয়ে দেখলেন তিথি পা ধরে বসে আছে।
মিসেস বারি জাপানি ভাষায় দশ লাইন কথা বললেন।তিথি তার কিছুই বুঝলোনা।ও চুপ করে তাকিয়ে আছে দেখে মিসেস বারি বুঝে গেলেন সে তার কথা বুঝতেছেনা।তাই তিনি হাসি দিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে জানতে চাইলেন তিথির পায়ে কি হয়েছে।
তিথি বললো,’ইয়ে আসলে আমার পায়ে পেরেক চাংচুংচাং হয়ে গেছিলো।তারপর আপনার ভাইয়া পংপুং করে ব্যান্ডেজ বাংদিং দিছে’

মিসেস বারি যা ইশারায় বুঝতেছিলেন, তিথির জাপানি বাংলা মিক্সারে সব গুলিয়ে শুধু তাকিয়ে রইলেন।তিথি ও বুঝলো সে পুংপাং দিয়ে কিছুই বোঝাতে পারেনি।তাই সে মাথায় হাত রেখে বসে থাকলো।একটা বছর এই বেডির সাথে কথাবার্তা শেয়ার কিভাবে করবে সে!

পিংকি পড়া বাদ দিয়ে লিপস্টিক লাগাচ্ছিল,সেসময় পান্না পিংকির নতুন ওড়নাটা পরে ঘুরছিল বারান্দায়।আজ সে বউ সেজেছে।বারান্দায় পায়চারি করছে তার বরের অপেক্ষায়।
রিদম কদম ফুলের ডাটা ঠোঁট দিয়ে কামড়ে ধরে পিংকিদের বাসার সামনের সুপারি গাছটা বেয়ে বেয়ে উঠছে।সে পিংকির সাথে দেখা করবে।

প্রেম টেম কিছুনা।পিংকি যে নোট গুলা করেছে ওগুলা নেয়ার জন্যই তার এখান দিয়ে আসা।
এদিকে সদর দরজা দিয়ে ঢোকা নিষেধ,কারণ পিংকির বাবা আছেন।জানতে পারলে কষিয়ে চড় মেরে দিবেন।রিদমকে তার একেবারে অপছন্দ।
‘হুশহুশ!হুশহুশ!’

পান্না পায়চারি বন্ধ করে বারান্দার গ্রিল ধরে বললো,’কে ওখানে?সাপ ভাইয়া?ফুসফুস করছেন কেন?সাপ ভাইয়া তো ফুসফুস করেনা,ফিসফিস করে!’
‘পান্তুয়া! আমি দুলাভাই’
‘এ্যাঁ!টুলাভাই!আপনি হুশপাশ করছেন কেন!এখানেই বা কি করছেন?’
‘তোমার বোনকে বলো ইংরেজী নোটস দিতে।আমি সেটা নিতে এসেছি’

পান্না মাথা নাড়িয়ে পিংকির কাছে গিয়ে রিদমের কথা বললো।পিংকি তখন ঠোঁটে লিপলাইনার দিয়ে আর্ট করছিল।সে ব্যস্ত বলে খাতাটা পান্নাকে ধরিয়ে দেয়।পান্না ছুটে এসে খাতাটা রিদমকে দিলো।রিদম তখন বললো,’অনেক ধন্যবাদ পান্তুয়া! এই নাও ফুল’
‘টুলাভাই একটা কথা বলবো?’
‘হ্যাঁ বলো!’

‘আপনি যে গাছটাকে সুপারি গাছ মনে করে উঠেছেন সেই গাছটা বাবা সকালেই কেটে বিক্রি করে দিছিলো।এক দাম তিনশ টাকা দিয়ে।এখন আপনি যেটা বেয়ে উঠেছেন এক তলায়!সেটা আসলে সুপারি গাছ না,শুকনা বাঁশ!’
‘কিহ!তাই তো বলি এত পিছলা কেন!’

ওমনি বাঁশের মাঝখান ভেঙ্গে বিকট এক আওয়াজ হলো।রিদম ধপাস করে নিচ তলার উঠানে পড়ে গেছে।এরকম আওয়াজ শুনে গিয়াস সাহেব সদর দরজা খুলে দিলেন এক দৌড়।উঠানে এসে লাইট মেরে দেখলেন তার সকালে কেনা বাঁশটা দুভাগ হয়ে পড়ে আছে।এটা দিয়ে পেয়ারা পাড়ার জন্য এনেছিলেন। এভাবে ভাঙ্গলো কেন!
পান্তুয়া দোতলা থেকে চেঁচিয়ে বললো,”আব্বু আমি এটা ধরে দুষ্টামি করছিলাম, আমার হাত থেকে পড়ে দুভাগ হয়ে গেলো। সরি আব্বু’

‘তোর বোন কি করে রে?’
‘আপু পড়ছে! ‘
গিয়াস সাহেব একবার গেট অবধি গিয়ে রোডটা দেখে চলে আসলেন।রিদম ওখানেই ছিল।পেয়ারা গাছে উঠে বসে ছিল।হাঁটুতে কিঞ্চিত ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।নিচে খড়ের গদি থাকায় খুব একটা ক্ষয় ক্ষতি হয়নি।
পিংকিদের গরু আছে একটা।ওটা ঘুমায় মনে হয়,নাহয় রিদমকে দেখলেই শুধু হাম্বা হাম্বা করে সে।
রিদম যাবার সময় পান্নাকে হাত বাড়িয়ে টাটা দিয়ে চলে গেলো।

শপিং করতে না পেরে তানিয়ার মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। সে রকিবের কল রিসিভ করছেনা কিছুতেই।
রকিব বাসায় গিয়ে তানিয়ার জন্য কেনা সব কিছুর পিক একটা একটা করে পাঠিয়ে দেয় তানিয়ার কাছে।
তানিয়া রাগ করে ছিল তাও মেসেজের সাউন্ড শুনে আর থাকতে না পেরে সিন করে দেখে সব কেনা শেষ।
ছবিগুলো ঘেঁটে দেখার পর সে বুঝতে পারলো আসলেই যা যা কেনা হয়েছে তার সবটাই ওর পছন্দের।একটাও মন্দ নাহ।অবশেষে তার রাগ কিছুটা হলেও কমে গেলো।সে একটা ইমুজি রিপ্লাই করে দেয় রকিবকে।
রকিবের ও মনে শান্তি হলো তানিয়ার রাগ ভেঙ্গেছে বলে।

তানিয়া যখন মিটমিট করে হাসছিল তখনই দেখে তার গুনধর ভাই রিদম গরমে,ঘামে চুপসে বাসায় ঢুকছে।যেন ক্ষেতে হালচাষ করে এসেছে।
‘কিরে?কই গেছিলি?এই হাল কেন?’
‘ধান রোপন করা শিখতে গিয়েছিলাম। ভাবছি বড় হয়ে কৃষক হবো’
‘ওহহো!তো আমাদের এইদিকে ক্ষেত আসলো কবে থেকে?পিংকিদের ঐদিকে নাকি?’
রিদম ফ্যানের নিচে বসে বললো,’হুম’

‘পিংকি কেমন আছে?’
‘পান্তুয়া ভাল আছে’
‘জানিস!পান্তুয়া দেখতে খুব কিউট।একেবারে মিষ্টি’
‘হুম’
‘কিন্তু তোর তো ঐ ন্যাকামোটারেই বেশি ভাল লাগে’

মিঃ বারি তার বউকে নিয়ে চলে গেলো।এরপর ইশান দরজা লক করে রুমে ফিরতেই দেখে তিথি পা ধরে বসে আছে,ওকে দেখেই বললো,’এখন থেকে আমার পা থেকে দূরে দূরে থাকবেন।বুঝছি তো!আমার পায়ের সাথে আপনার শত্রুতা আছে কোনো।তা নাহলে ঘুরে ফিরে পায়ের পেছনেই কেন লাগা হচ্ছে!’
ইশান কাছে এসে নিচু হয়ে বললো,’ওকে!পা থেকে দূরে থাকছি কটাদিন।’

এটা বলেই সে তিথির কপালে আলতো করে চুমু এঁকে পাশে শুয়ে পড়ে।তিথি কপালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো এরপর বলে উঠলো,’প্রতিশোধ শেষ?’
তিথির এমন কথায় ইশান ল্যাম্পশেডের পাশ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে তিথির মাথায় ঢেলে বললো,’নাহ!কিন্তু শুরু’
তিথি হতভম্ব হয়ে বসে থাকলো।আর ভুলেও কোনোদিন সে প্রতিশোধের নাম নিবেনা।

পিংকি শুয়ে শুয়ে পান্নাকে রিদমের কথা বলছে।রিদম ওর জন্য কত পাগল এসব বলছে। পান্নাও বেশ মনযোগ সহকারে শুনছে।
রিদমকে তার খুব ভাল লাগে।এ বয়সে প্রেমের আবেগ না জমলেও এ বয়সে কাউকে ভাল লাগা যায়।

কাউকে পছন্দ করা যায়।এটা কেবলই ছোট বয়সের একটা ভাল লাগা,এটাতে প্রেমের বাতাস নেই।কিন্তু বন্ধুত্বের বাতাস আছে। পান্না আর রিদমের সম্পর্কটাও ঠিক এরকমই। নাহয় আজ পান্না নিজের উপর দোষ চাপিয়ে রিদমকে বাঁচাতো না।
গিয়াস সাহেব উঠানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার আনা বাঁশটা আলো জ্বালিয়ে দেখছেন এই রাতের আড়াইটার সময়।
গিয়াস সাহেবের স্ত্রী সিমু এসে হাই তুলতে তু্লতে বললেন,’আপনি কি ঘুমাবেন না?’

‘সিমু দেখো!বাঁশটা উপর থেকে পড়লে দুভাগ হতো লম্বালম্বি। অথচ এটা মাঝ বরাবর ভেঙ্গেছে।এর মানে দাঁড়ায়,,, এটাতে কেউ উঠার চেষ্টা করেছে,তবে সেটা কে!পিংকির বারান্দায় উঠে তার কাজটাই বা কি!নাকি সে ছাদে উঠতে চেয়েছে।আচ্ছা ছাদে তো আমার বিলাতি কমলার গাছটা।সে কি গাছটার প্রথম কমলাটা চুরি করে নিয়ে গেলো?’

ওমনি তিনি এক দৌড় দিলেন ছাদের দিকে।গাছের মাঝের ঢালে একটা কমলা ধরে আছে।তার এই গাছটায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এই প্রথম একটা কমলা ধরেছে। এই কমলা পাকলে গাছ থেকে ছিঁড়ে অনুষ্ঠান করে উদযাপন করবেন তিনি।এসে দেখলেন কমলায় তালা ঝুলছে। মানে কেউ চুরি করে নাই।

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৩

তালাটা তিনি কমলায় স্টিলের দড়ি পেঁচিয়ে ঐ দড়িতে লাগিয়েছেন।
চোর নিতেই পারবেনা।
অথচ তিনি জানেন ও না কমলা গাছের ঐ ঢালটা ছিঁড়ে হাতে নিয়ে নিলে তালা-টালা কোনো কাজে আসবেনা🤭।

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৫