যদি তুমি বলো পর্ব ৩৩

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৩
আফনান লারা

পান্নাকে সাথে নিয়ে পিংকি ছাদে এসে দেখে রিদম মোমবাতির মাঝখানে ঘুমাচ্ছে। পিংকি ছুটে এসে বললো,’ও মাই ছাদ!!হাউ সুইট!ওওওওওওউ’
রিদম চোখ খুলে পান্নাকে সবার আগে দেখে বললো,’পান্তুয়া ভাল আছ?’

‘জ্বী টুলাভাই’
পিংকি বললো,’তুমি এসব আমার জন্য করেছো রিদেমন!’
‘হ্যাঁ বউ!’
‘উফ!বউ বলবেনা।আমার ভীষণ ভীষণ ভাল লাগে’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

পান্না গাল ফুলিয়ে দূরে চলে গেলো।এবার চলতে থাকবে পূর্ণ দৈর্ঘ্য সিনেমা!’
রিদম উঠে বসে বললো,’বিশ্বাস করো,অনেক চেষ্টা করেও আগুন জ্বালাতে পারলাম না।শুধু নিভে যায়!’
‘নিভে দিয়ে একটা গান মনে পড়লো।কিন্তু লাইনটা মনে করতে পারছিনা!কি যেন ছিল’
পান্না ছাদের রেলিং ধরে বলছে,’তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া,আমি অন্ধকারে মইরা যামু ছাদ থেকে পইড়া

‘ইয়া রাইট!কিন্তু কেমন যেন লাগলো।পান্না তুই কি ভুল বলছিস?লাইনটা কি এমন ছিল?’
‘ঐ পুচকুকে এসব শেখায় কে?তুমি ওর খেয়াল রাখোনা কেন!’
‘আমি এই গানটা শুনছিলাম তখন বোধহয় ও আমার পাশে থেকে মুখস্থ করে নিয়েছে।জানোই তো!বাচ্চারা যা দেখে,যা শুনে তাই মুখস্থ করে ফেলে!’

তিথি ঘোড়া বেচে ঘুমাচ্ছে দেখে ইশান ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে তিথির গায়ে ঢেলে দিতেই ও লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লো।গায়ের ভেজা পোশাকের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে বললো,’ঘুম থেকে ওঠানোর আরও অনেক ওয়ে আছে!’

‘ওকে ফাইন!তবে আজ থেকে গরম পানি ঢালবো’
তিথি রেগে মেগে ভেতরের রুমের দিকে চলে গেছে।ইশানের কি যে মজা লাগে তিথিকে এরকম অত্যাচার করতে!
সে হাসতে হাসতে নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে বসে।তিথি ভেতরের রুম থেকে পোশাক বদলে তেড়ে এসেছিল ইশানের সাথে লড়াই করার জন্য।কিন্তু এসে দেখে ইশান কাজে ব্যস্ত।
তিথির হঠাৎ করে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।সে এক বালতি পানি এনে ইশানের পিছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,’এই ল্যাপটপে কি কি আছে?’

‘কি আছে!আমার অফিসের সব ডকুমেন্টস।আর কি!’
‘যদি বাই চান্স ওগুলা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি কোনো ক্ষতি হবে?’
‘নাহ,কিন্তু ওগুলা আবার রেডি করতে আমার এক বছরের বেশি সময় লেগে যাবে’
‘তাই?’

‘আচ্ছা তুই এসব কেন জিজ্ঞেস করছিস?’
এই বলে ইশান পেছনে তাকাতেই তিথি তার হাতের বালতির পানি ইশানের গা সহ ল্যাপটপে ঢেলে দিলো।
ইশান তব্দা হয়ে বসে আছে।এটা কি ঘটে গেলো!
তিথি হাসতে হাসতে বলছে,’সেই কবে কি না কি করেছি তাই বলে রোজ রোজ বালতির পানি দিয়া ঘুম ভাঙ্গাইয়া দাঁত কেলাইয়া হাসবেন!তা তো হয়না!’

ইশান মুখ মুছে ল্যাপটপটা সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো।তিথি তখন পিছিয়ে গিয়ে বললো,’যদি আমার কিছু করছেন তো জাপানের পুলিশ স্টেশনে চলে যাবো।কাছেই আছে’
ইশান গায়ের টি শার্টটা খুলে তিথির দিকে ছুট লাগালো।

তিথিও দিছে এক দৌড়।পুরো বাসায় ছোটাছুটি করতে গিয়ে এক সময়ে পা পিছলে তিথি ভেসমেন্টের সিড়িতে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেছে।ইশান শুরুতে হাসলেও তিথি নিজ থেকে উঠতে পারছেনা দেখে তার হাসি থামলো।নিজেও নেমে ওর হাত ধরে উঠানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারলো তিথির পায়ে একটা পেরেক ঢুকে গেছে।ব্যাথার কারণে তিথি বুঝতে পারেনাই তার পায়ে পেরেক ঢুকেছে।সে শুধু বলছিল তাকে উঠাতে।

ইশান তখন তিথির পা থেকে পেরেকটা ধরার চেষ্টা করতেই তিথি সেটা দেখে ফেলে ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো।
‘থাম!আমি ঠিক করে দিবো’
‘কি ঠিক করবেন!আপনার কারণে এমন হয়েছে।আপনার সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই সব আমার পা আর শরীরের উপর দিয়ে দখল যাচ্ছে।একবার সিড়ি থেকে পড়ে এক মাস ল্যাংড়া ছিলাম। এখন আবার এইটা।আপনি সিড়ি দিয়ে প্রতিশোধ নিতে চান আমার থেকে?’

‘চুপ!’
তিথিকে ধমকে ইশান এক টান দিয়ে পেরেকটা উঠিয়ে নেয়।এরপর ওকে কোলে তুলে নিলো।তিথি চুপ করে আছে,ধমক খেয়ে আর কিছু বলছেনা সে।

রকিব খুবই মা,খালা ভক্ত ছেলে।তার মায়ের কথা হলো বিয়ের সব শপিং তিনি আর তার বোন গিয়ে করবেন।অন্য কাউকে নিবেন না।
এদিকে তানিয়ার অনেক শখ সে নিজের বিয়ের শপিং নিজে দেখে করবে,রকিব ও তা চায় কিন্তু মায়ের এমন সিদ্ধান্তে সে টানাপোড়নে পড়ে গেছে।শেষে তানিয়াকেই সেক্রিফাইস করতে বললো।
তানিয়াও কম না।সে জেদ ধরে বসে আছে সে শপিংয়ে যাবেই!
রকিব ও তাকে মানা করে বসে আছে।

আজ শপিং করার দিন ছিল।কথামতন রকিবের মা এবং খালা এসেছেন শপিংমলে।তারা একটা দোকানেও বসেছেন।শাড়ী বের করা হলো।রকিবের মায়ের ফার্স্ট চয়েস শাড়ী।কিন্তু তানিয়ার প্রিয় হলো লেহেঙ্গা।
ওনারা শাড়ী দেখছিলেন সে সময়ে তাদের পাশে বোরকা পরা একটি মেয়ে এসে বসলো।মেয়েটি চোখে চশমা ঠিক করতে করতে কণ্ঠস্বর মোটা করে বললো,’লেহেঙ্গা দেখান তো।এসব শাড়ী টাড়ী দেখাবেন না!মিডেল ক্লাস রা শাড়ী কিনে কিনে শাড়ী লাটে উঠিয়ে দিয়েছে।লেহেঙ্গা কত সুন্দর দেখতে হয়।রাণী রাণী ফ্লেভার!’

এ কথা শুনে রকিবের মা চোখ বড় করলেন তারপর দোকানদারকে বললেন তাদের ও লেহেঙ্গা দেখাতে।বোরকা পরা মেয়েটা ছিল তানিয়া।তার পছন্দে পানি ঢালা কারোর সাধ্যে নেই।
তানিয়া মুচকি হাসি দিয়ে তার পছন্দের একটা লেহেঙ্গা নিয়ে বললো,’এটা আলিয়া ভাট পরছিল।এটার কপি লেহেঙ্গা তাই না?

আমি নিলে এটাই নিবো।কেউ আটকাতে পারবেনা।যত টাকা লাগে আমি দিব।তারপর দেখিয়ে দিবো বিয়ে কাকে বলে!’
রকিবের মা লেহেঙ্গাটা দেখে বললেন ‘আপা দেখেন তো!কি সুন্দর এটা!’
‘হো ঠিক কইছস।এখন এই মাইয়া তো এই লেহেঙ্গা ছাড়বেনা মনে হয়।কথা বলে দেখ তো’
‘এই যে মেয়ে শুনো’

‘আপনি কি শাহরিয়ার শান্ত?এই যে মেয়ে শুনো বলছেন কেন?’
‘না আমি আহানার ভোলার খালা।শুনো না!লেহেঙ্গা টা কি কোনোভাবে আমাদের দেয়া যায়?’
‘কেনো কেনো!কেনো দিব আমি?আমার এটা লাগবেই’
‘আহা!তুমি আরেকটা দেখো!দিপিকা যেটা পরছে ওটা দেখো ‘

‘রানভীরের বউয়ের লেহেঙ্গা লাগবে আমার,ওর এক্সের না’
‘নাও না।আচ্ছা চা নাস্তার জন্য এই এক হাজার টাকা রাখো’
‘দিলে ভাল দাম দিবেন।এক হাজার টাকায় তো আমি ১০ডজন ডিম ও পাবোনা।’

রকিবের মা বললেন,’আমি আমার ছেলের হবু বউকে খুব ভালবাসি।কিন্তু তাকে আজ শপিংয়ে আনিনি কারণ শুনেছি সে খুব কিপটা।ছেলের টাকা বাঁচানোর জন্য কম দামী সব কিনবে।কিন্তু আমি সেটা চাইনা বলেই তাকে আনিনি।তুমি কত টাকা রাখবে এটা দিয়ে দেয়ার জন্য?আমি ততটাই দিবো।আসলে আমি তো জানিনা আজকালকার মেয়েদের পছন্দ কিরকম!’
তানিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো।সে নিকাব উঠিয়ে রকিবের মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’চাচুমা!আইলাবু!’
‘একি তানিয়া তুমি!’

খালা বললেন,’দেখছস বইন!আমি তোরে কইছিনা গলা চিনা চিনা লাগে!এটাই তানিয়া। আমার কথা মিলছেনি?’
রকিবের মা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো ‘তোমার আসল রুপ বের করতে এই নাটক করলাম।এত করে মানা করছি শপিংয়ে আসিওনা।তাও আসলে!আমাদের বংশের নিয়ম আছে বিয়ের আগে বউ তার শাড়ী,গহনা দেখতে পাবেনা।তাহলে বউয়ের নজর লাগে সব চাইতে বেশি! উফ!তুমি তো খুব ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে!’

তানিয়া জিভে কামড় দিয়ে বললো,’আরে এইসব বাদ দেন।আমার নজর লাগবেনা।লেহেঙ্গায় থুথু দিয়া দিবোনে!’
‘ইহহহহহ।বিয়ের লেহেঙ্গা বউয়ের স্পর্শের বাহিরে থাকতে হয়।নাহয় অমঙ্গল হবে! ‘
তানিয়া বিড়বিড় করে বললো,’তবে বিয়ার দিন এই লেহেঙ্গা রকিবের খালারেই পরাইয়া দিয়েন!’
‘কিছু বলছো তুমি?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩২

তখন রকিবের খালা বললেন,’আমি শুনছি!ওয়ে কইছে আমি পরতাম এইটা’
তানিয়া তখন দাঁত কেলিয়ে বললো,’মাশাল্লাহ!মাশাল্লাহ!খালার দেখি কানের পর্দাই নাই।তাই পর্দা ফাটার চান্স ও নাই,তাই তো যাই বলি তাই শুনে ফেলে!আসলে আমি বলছি আপনিও একটা শাড়ী নেন।বিয়েতে আপনাকে সবার চাইতে বেশি সুন্দর লাগতে হবে!’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৪