যদি তুমি বলো পর্ব ৩২

যদি তুমি বলো পর্ব ৩২
আফনান লারা

ইশানকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিথি চটজলদি তেলের বাটিটা নিয়ে বলে তার কাজ হয়ে গেছে।
ইশান তখন হেঁটে হেঁটে সবকয়টা কর্ণার বন্ধ করে চলে গেলো নিজের রুমে।তিথি ও পিছু পিছু এসে ওর পাশে বসে ঘাড়ে তেলগুলো লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,’আমি আসার আগে এই কাজটা কে করতো?’
‘কেউনা,প্রতি বছরে প্রতি মাসে প্রতি সপ্তাহে যতবার মালিশ করবার প্রয়োজনবোধ মনে করেছি ততবার গুনেছি।বউ আসলে শোধ হবে’

‘এই কাজ আন্টিকে দিয়ে করালেই হতো’
‘মায়ের বয়স হয়েছে।আর তাছাড়া এসব বউরাই করে।’
তিথি মালিশ করে দিতে দিতে দেখে ইশান আবার ঘুমিয়ে গেছে।তাই সে আগেরমতন চিপস খেতে খেতে রুম থেকে বের হয় ওমনি তার হোয়াটসএপে একটা মেসেজ আসে।তানিয়া লিখে রেখেছে তিথির পাঠানো চিঠির ছবিটা দেখে ওর বন্ধু বলেছে এটা একটা প্রেমপত্র। আর যে লিখেছে তার নাম ‘কুয়িনা’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি জানতে চাইলো মেয়েটি কাকে চিঠিটা লিখেছে।তখন তানিয়া বললো এসব লেখা ছিল না।
এরপর তিথি ইশানের রুমে ফেরত এসে অনেকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।আসলেই কি এতগুলা সময়ে ইশান এখানকার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল?
জড়ালেও বা কি!সে নিজেও তো আদিলের সাথে প্রেম করেছে।

তিথি ভাবতে ভাবতেই শুনতে পেলো ইশানের এই বাসার টেলি ফোনের আওয়াজ।সে বাহিরে বেরিয়ে সেই ফোনের কাছে এসে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি গলা শোনা গেলো কিন্তু মেয়েটা কি কি বললো তার কিছুই তিথি বুঝলোনা।
বুঝার জন্য তিথি ইংরেজীতে জানতে চায় মেয়েটি কে,কি তার পরিচয়,ইশানকে কেন ফোন করেছে।

কিন্তু মেয়েটি যখন বুঝলো কলটা ইশান ধরেনি,বরং ধরেছে অন্য কেউ তাই সে সাথে সাথে কলটা কেটে দেয়।
তিথির মাথা ঘুরছে।গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে সে।নতুন নতুন এসব ঝামেলায় পড়তেই হবে তাকে। তানিয়া বলেছিল দ্রুত ওদের ভাষা শেখার প্রেক্টিস করে নিতে।মাথা চুলকে তিথি আবার ইশানের কাছে এসে দেখে সে বিছানায় নেই।পুলের দিকে ওকে দেখা যাচ্ছে।তিথি সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সেই চিঠিটা নিয়ে ইশানের পাশে এসে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখ খোলে।সে জানতে চায় চিঠিটা কার।

তখন ইশান এক নজর চিঠিটা দেখে বলে,’কুয়িনার’
‘কে এই কুয়ারা?’
‘কুয়ারা নয়,কুয়িনা’
‘একই।বলেন সে কে?আপনাকে প্রেম পত্র পাঠাতো কেন?’
ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ওসব কিছুনা।যাই হোক,তুই কি তোর শাস্তির কথা ভুলে গেছিস?’
‘কিসের শাস্তি?’

ইশান আবারও হাসে।এরপর তিথির হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলে,’মনে নেই?’
‘না তো!’
ওমনি ইশান এক ধাক্কায় তিথিকে পুলে ফেলে দিয়ে বলে,’এই তো এই শাস্তি’
তিথি মুখ মুছে মুখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে বললো,”আপনাকে আমি দেখে নিবো’
ইশান তখন পুলের পাশে বসে বললো,’নে দেখ।প্রাণ ভরে দেখ।আমি এখানেই আছি’

তিথি বিড়বিড় করে হাতের চিঠিটা পানিতে ভাল করে চুবিয়ে সেটাকে ভর্তা বানিয়ে বললো,’সব নষ্ট করে দিব’
‘আলমারিতে আরও আছে।যা খুশি কর’
‘তার আগে আমাকে উঠান,আমি পেট পুরে সাদা গরম ভাত আর ডাল,মাংস খাবো এইসব চিপস টিপসে আমার পেট ভরবেনা’

‘খাবার নিয়ে আসবে আমার সেক্রেটারি।আর হ্যাঁ,আমি কিন্তু উঠাচ্ছিনা।নিজেই উঠ।আমি উঠালে সেটা শাস্তি হলো কি করে?’
তিথি অনেক কষ্টে ঝুলে, ল্যাংড়িয়ে উঠে বসে এখন হাঁপাচ্ছে,সেই সময় পাশের বাসার সেই দম্পতির মধ্যে যিনি ছিলেন মিঃবারি তিনি তার বাসার ছাদ থেকে বললেন,’কি খবর ইশান?কতদিন পরে!’
ইশান হাত নাড়িয়ে হাই দিলো।তখন তিথি হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,’উনি বাংলা জানে?’

‘হ্যাঁ’
‘আপনি যে বললেন ওরা জাপানি?’
‘উনার বউ জাপানি’
‘ওহ!ধুর!কোথায় ভাবলাম পাশের বাসার ভাবীর সাথে কুটনামি করবো!তা আর হবেনা মনে হয়!এই বেডার সাথে তো আর কুটনামি করতে পারবোনা!’

ইশান চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালেটা নিয়ে তিথির গায়ে দিয়ে ভেতরে যেতে বললো।তিথি ও উঠে দিলো এক দৌড়।
ইশান পুল সাইডের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে ভাবছে এটাকে কভার করে দিবে,নাহয় মিঃ বারি হুটহাট কথা বলতে ছাদে উঠলে তিথিকে এরকম অবস্থায় দেখে ফেলবে।এরপর তো সে তিথিকে এই পুলে আরও চুবাবে।
তিথি গায়ের জামাটা বদলে অন্য একটা জামা পরে নিয়ে সোফায় বসে আছে।খাবার আসলেই খেয়ে নিবে।
বাংলাদেশে তার চোখের সামনে কত খাবার থাকতো,তখন ইচ্ছাও থাকতোনা কিছু খাওয়ার।আর এখানে খাবার নেই বলে তার এত খিধে পাচ্ছে।

পা দোলাতে দোলাতে তিথি সোফাতেই মাথাটা এলিয়ে দেয়।
মূহুর্তেই তার চোখ লেগে আসে।সন্ধ্যা গিয়ে রাত হয়।ইশান বাহিরে থেকে মিঃ বারির সাথে এত সময় ধরে আড্ডা দিয়েছিল,এরপর সে ভেতরে এসে দেখে তিথি ঘুমায়।ততক্ষণে ওর সেক্রেটারি ও আসে খাবার নিয়ে।ইশান খাবারগুলো রেখে দিলো এরপর তিথির কাছে এসে কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো।

নিস্পাপ চেহারা!
হাহ!এরকম নিষ্পাপ চেহারা ওর ও ছিল একসময়।অথচ তিথি কোনো তোয়াক্কা না করে যাচ্ছেতাই অপমান করে গেছে,তাহলে সে কেন এখন দয়া দেখাবে?
ইশান খাবার গুলো লুকিয়ে রাখতে চাইলো তখনি ওর মনে পড়ে সকাল থেকে ভারী কিছুই খায়নি তিথি,এখন কিছু না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

অন্যভাবেও কষ্ট দেয়া যেতে পারে।
এই ভেবে সে আর খাবার লুকালোনা।তিথির কাছে এসে অন্যমনা হয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।যাকে সবচাইতে বেশি ঘৃনা করে সেই আবার ওর মনের মানুষ!
কে বলেছে ঘৃনা আর মনের মানুষ আলাদা হতে হয়?

এই যে ইশানের কাছের মানুষটা একাধারে তার ঘৃনার এবং মনের মানুষ দুটোই।
তিথির কপালে হাত বুলাতে বুলাতে ইশান মাথা নিচু করে ওর কপালে চুমু দিতে যেতেই আবারও তার বাসার সেই নাম্বারে কল আসে।
ইশান তিথিকে রেখে এসে কলটা রিসিভ করতেই শুনতে পায় কুয়িনার গলা।ওমনি সে ফোনটা রেখে দেয় এরপর তিথির দিকে তাকায়।তিথি জেগে যায়নি,তবে কুয়িনার একটা ব্যবস্থা করতে হবে,তা নাহলে তিথিকে ভুল বুঝাতে পারে।

রিদম পিংকিদের ছাদে এসে মোমবাতি সাজাচ্ছে।আজ পিংকির জন্মদিন।
ফেসবুকে দেখেছে এক ছেলে অনেক বছর প্রেম করে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পেরেছে।তার শুরুটা হয়েছিল এভাবেই ছাদে মোমবাতি জ্বালিয়ে জন্মদিনের উইশ করার মধ্য দিয়ে।

কিন্তু সব তো আর মন মত হয়না।মোমবাতি একটা জ্বালিয়ে রেখে বাকিগুলো জ্বালাতে গিয়ে বাতাসে জ্বালানো সব মোমবাতি নিভে যাচ্ছে।এমন করে দেড় ঘন্টা সে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মেনে সেই মোমবাতির মধ্যেই চিটপটাং হয়ে শুয়ে পড়েছে।

এই সব দেখলো পিংকির ছোট বোন পান্না।বেশ নাদুসনুদুস দেখতে,আর তাই রিদম ওর নাম দিয়েছিল পান্তুয়া।তার বয়স সাড়ে সাত বছর।
পান্তুয়া রিদমের এমন অবস্থা দেখে পিংকির কাছে ছুটলো।পিংকি তখন চুলে বিনুনি করছিল,পান্না ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’বুবু!টুলাভাই তো মরে গেছে’
‘তোকে কতদিন বলেছি ওটা টুলাভাই নয়,দুলাভাই’
‘আহা শুনো না!’

‘আচ্ছা মরে গেছে?আমার কেমন রিয়েক্ট করা উচিত?
না নাহ!সেকি!কিভাবে?এ হতে পারেনা,না না না’
পান্না গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে পড়লো ধপ করে।

পিংকি তার সদ্য কাজল দেয়া চোখ ডলে কাজল লেপটে বললো,’আজ আমি রিধবা হলাম!মরা রিদমের বউ রিধবা!তা কিভাবে মরলো সে!আমি ফাঁসি চাই!আমার নিজের।কারণ আমি তাকে ভালবাসতে পারলাম না!’
‘উফঃ!কি দেখে যে রিদম ভাই তোমাকে গেইট ফুল দিয়ে প্রোপোজ করেছিল!’
‘আমার অভিনয় নিয়ে তোর হিংসা হয়?আগে বল কিভাবে অজ্ঞান হইছে।ঐ বলদটা মরার মতন না!’

‘দেখলাম মোমবাতির মাঝখানে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে’
”মোমবাতি? ওহ হো!আজ তো আমার জন্মদিন। হাহ!আমি ভুলে গেলাম!’
‘আবার শুরু করছো অভিনয়!মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে টুলাভাইকে বলি তোমাকে রেখে আমাকে বিয়ে করে নিতে।অন্তত ওনার জীবনটা এই ন্যাকামি দেখে শেষ করতে হবেনা!’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩১

‘কিছু বললি?’
‘না বললাম কেমন আছো🐸!

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৩