অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৪

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৪
ইরিন নাজ

(প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
আয়ানাদের বাড়ির সবাই কে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বাড়ির পথ ধরলো আদ্রিশ এবং আহিল। যতোই যাই হোক জামাই হিসেবে তাদের কিছু দায়িত্ব তো আছে। আর দোষ তো সারার। অন্য কেউ তো দোষী নয়।

— “বউ কে গিয়ে এখন ঠান্ডা করতে হবে। যেই রা’গ দেখালো আজ! এখনো রে’গে আছে কিনা কে জানে। রে’গে থাকলে বাকি রা’গ আমার উপর ঝা’ড়’বে নিশ্চিত।”
আহিলের কথায় তার দিকে একবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো আদ্রিশ। তারপর আবার সামনে তাকিয়ে হাঁটায় মনোযোগ দিলো। ভাইয়ের কাছ থেকে পাত্তা না পেয়ে ও থামলো না আহিল। পুনরায় বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “ভাই আমাদের বউয়ের গায়ে ভালোই জোর আছে মানতে হবে। যেই থা’প্প’ড় দুই বোন মিলে দিয়েছে না! আমার তো সারার মুখ টা দেখে হাসি পাচ্ছিলো। বেচারির গাল জোড়ায় কেমন লাল হয়ে আঙুলের ছাপ বসেছে, দাঁত নড়ে গিয়েছে মনে হয়। কপাল ফু’লে আলু ও বের হয়েছে দেখলাম।”

কথাগুলো বলে ফিক করে হেসে দিলো আহিল। আলতো হাসলো আদ্রিশ ও। আসলেই তো, আজ আয়ানা যেভাবে প্রতিবাদ করেছে, র’ণ’চ’ন্ডি রূপ ধারণ করেছে সবটাই অবাক করেছে আদ্রিশ কে। তার নরম স্বভাবের বউ টা যে এমন বা’ঘি’নী রূপ ধারণ করবে ভাবনার বাহিরে ছিলো তার।

আরও টুকটাক কথা বলতে বলতে বাড়ি ফিরলো আদ্রিশ, আহিল। আহিল নিজের রুমে চলে গেলো। আদ্রিশ ও চলে আসলো নিজের রুমে। কিন্তু রুমে প্রবেশ করার পর আয়ানা কে কোথাও দেখতে পেলো না আদ্রিশ। কিছু একটা ভেবে বেলকনিতে উঁকি দিলো সে। আয়ানার দেখাও পেলো। মেয়ে টা এক কোণে ফ্লোরে হাঁটু তে মুখ গুজে বসে আছে। আয়ানা কে এভাবে বসে থাকতে দেখে দ্রুত তার কাছে এগিয়ে গেলো আদ্রিশ। হাঁটু গেড়ে বসলো আয়ানার সামনে। ওমনি আয়ানার ফুঁ’পি’য়ে কা’ন্না’র শব্দ এসে কানে ঠেকলো তার। চমকালো সে, অ’স্থি’র হলো মন। আয়ানার মাথায় হাত রাখলো আদ্রিশ। নরম কণ্ঠে শুধালো,

— “এই মেয়ে কাঁদছো কেনো, হু?”
জবাব দিলো না আয়ানা। শুধু কা’ন্না’র তী’ব্র’তা আরও বৃদ্ধি পেলো। আদ্রিশ জো’র করে আয়ানার মুখ টা উপরে তুললো। কেঁ’দে চোখ, মুখ লাল করে ফেলেছে আয়ানা। সারা মুখে চোখের পানি লেপ্টে আছে। আয়ানার অবস্থা দেখে বুকে কেমন যেনো ব্য’থা অনুভব করলো আদ্রিশ। সে দাঁড়িয়ে ফট করে কোলে তুলে নিলো আয়ানা কে। ওকে কোলে নিয়েই বিছানায় বসে পড়লো। দুই হাতে আদ্রিশের গলা জড়িয়ে ধরলো আয়ানা। বুকে মুখ গুজে ফুঁ’পি’য়ে ফুঁ’পি’য়ে কাঁ’দ’তে লাগলো। আদ্রিশ আয়ানার চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে পুনরায় শুধালো,

— “বউ, এই বউ, কাঁদছো কেনো? বলবে না?”
আয়ানা আদ্রিশের গলা আরও শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, বুকের মাঝে মিশে যেতে চাইলো যেনো। ভা’ঙা স্বরে বললো,
— “ও আমার পছন্দের সবকিছু কে’ড়ে নেয় ডাক্তার সাহেব, আপনাকেও কে’ড়ে নেবে। আপনি শুধু আমার না বলুন? আপনি তো শুধুমাত্র আমার। ও আপনাকে স্পর্শ ও করেছে। কেনো করেছে? আপনাকে স্পর্শ করার অধিকার তো আমার, শুধুমাত্র আমার।”

আয়ানার মনে যে তাকে হা’রা’নোর ভী’তি জন্মেছে সেটা আয়ানার জবাবে স্পষ্ট বুঝতে পারলো আদ্রিশ। তাকে হা’রি’য়ে ফেলার ভ’য়ে মেয়ে টা এভাবে কাঁ’দ’ছে, তাকে অন্য কোনো নারী স্পর্শ করেছে বলে মেয়ে টা ভীষণ ক’ষ্ট পেয়েছে। আয়ানার মাথায় অধর ছুঁয়িয়ে গভীর ভাবে চুমু খেলো আদ্রিশ। আদুরে কণ্ঠে বললো,

— “কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে কে’ড়ে নিতে পারবে না বউ। আমি শুধুমাত্র তোমার। এই আদ্রিশ আহসান শুধুমাত্র আয়ানা রহমানের। আর আমার বউ টা তো ভীষণ সাহসী, বা’ঘি’নী একটা। সে তার ডাক্তার সাহেবের আশেপাশে কোনো মেয়ে কে ঘেঁ’ষ’তেই দিবে না। আর রইলো স্পর্শ, আমাকে স্পর্শ করার অধিকারটাও শুধুমাত্র আমার বউয়ের। আজ যা হলো, সবটাই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও স্পর্শ যেহেতু করেছে, এখন সেই স্পর্শ তোমার স্পর্শ দ্বারা ধুয়ে, মুছে মিটিয়ে দিবে তুমি।”

কথাগুলো বলে আয়ানা কে কোলে নিয়েই উঠে দাঁড়ালো আদ্রিশ। সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার এর নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো আয়ানা কে। এক টা’নে নিজের পরনে থাকা টি-শার্ট খুলে ফেললো সে। শাওয়ার অন করতেই একরাশ পানি এসে ভিজিয়ে দিলো দুজন কে। আয়ানার কোমর পেঁ’চি’য়ে তাকে কাছে টে’নে নিয়ে আসলো আদ্রিশ। বললো,
— “নাও এবার মিটিয়ে ফেলো অন্য নারীর স্পর্শ…”

লাল, ফোলা চোখে একবার আদ্রিশের দিকে চাইলো আয়ানা। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সারার আদ্রিশ কে জড়িয়ে ধরার মুহূর্ত টা। সমস্ত হুঁশ, জ্ঞান হারিয়ে আদ্রিশের বুকের কাছটায় এক নাগাড়ে ঘ’ষ’তে লাগলো আয়ানা। আদ্রিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে তার শান্ত বউয়ের অ’শান্ত রূপ টা দেখতে লাগলো। আয়ানা মুখে প্রকাশ না করলেও তাকে যে উ’ম্মা’দের ন্যায় ভালোবাসে তা আজ আয়ানার আচরণে স্পষ্ট টের পেয়েছে আদ্রিশ। সে ও তো চায় মেয়ে টা সারাজীবন তাকে এভাবেই ভালোবাসুক, তার জন্য এভাবেই পা’গ’লা’মি করুক। সেও নিজের সব টা দিয়ে মেয়েটাকে আগলে রাখবে, তার ভালোবাসাময় পা’গ’লা’মিগুলো আজীবন উপভোগ করে যাবে।

ঘ’ষ’তে ঘ’ষ’তে এক সময় হা’পি’য়ে উঠলো আয়ানা। খেয়াল হতে দেখলো আদ্রিশের বুকের কাছটায় ঘ’ষে ঘ’ষে লাল করে ফেলেছে সে। সেখানে আলতো করে হাত বুলিয়ে শব্দ করে কেঁ’দে ফেললো আয়ানা। কি করে ফেললো সে! আদ্রিশ কে ক’ষ্ট দিয়ে ফেললো! সে এভাবে ঘ’ষে ঘ’ষে লাল করে ফেলেছে। নিশ্চয়ই আদ্রিশ ব্য’থা পেয়েছে, লাল হওয়া স্থান টা ও জ্ব’ল’ছে! কা’ন্না ভেজা চোখে একরাশ অ’প’রা’ধবোধ নিয়ে আদ্রিশের দিকে চাইলো আয়ানা।

আয়ানা তাকাতেই এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো আদ্রিশ। আয়ানার কোমর জড়িয়ে তাকে আরও নিকটে নিয়ে আসলো। চোখের পলকে তার ভেজা অধর পল্লবে অধর ছোঁয়ালো। কা’ন্না থেমে গেলো আয়ানার। কয়েক সেকেন্ড থম মে’রে রইলো সে। কি হচ্ছে বুঝতে পেরে আপনাআপনি চোখ বন্ধ হয়ে আসলো তার। ততক্ষনে আদ্রিশের স্পর্শ আরও গভীর হয়েছে। গভীর ভাবে আয়ানার অধরে আদর দিতে ব্যস্ত আদ্রিশ।

চুম্বনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নিজের শরীরের ভর আদ্রিশের উপর ছেড়ে দিলো আয়ানা। আদ্রিশের ঘাড়ের কাছটায় খা’ম’চে ধরলো সে। প্রিয়সী বউ কে সামলে নিলো আদ্রিশ। পুনরায় মনোযোগ দিলো চুম্বনে। কিছু সময় যাওয়ার পর শ্বাস আ’ট’কে আসায় মুখ টা ঘুরিয়ে ফেললো আয়ানা, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। কয়েক সেকেন্ড আগে যা হলো তা ভেবে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো সে।

তবে আদ্রিশের নে’শা যেনো এখনো কা’টে নি। আয়ানার সারা মুখে ছোট, ছোট করে আদর দিতে লাগলো সে। আরও কিছু টা সময় অতিবাহিত হবার পর আদ্রিশ খেয়াল করলো আয়ানা খুব করে কাঁ’প’ছে। তাই থেমে গেলো সে। আয়ানার দিকে নে’শা’লো দৃষ্টিতে তাকালো। ভেজা শাড়িতে ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে তার বউটাকে। আদ্রিশের ইচ্ছে হলো মেয়েটা কে আরও আদর দিতে। কিন্তু আয়ানার কাঁ’পা’কাঁ’পি অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে নিলো সে। শাওয়ার অফ করে আয়ানা কে দেয়াল ঘেঁ’ষে দাঁড় করিয়ে দিলো। কপালে চুমু খেয়ে ধীর স্বরে বললো,

— “কাপড় দিয়ে যাচ্ছি। জলদি চেঞ্জ করে ফেলো বউ। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
আদ্রিশ বেরিয়ে যাওয়ার পর দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো আয়ানা। ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি ভেসে উঠলো তার।

বসে বসে গালে, কপালে বরফ ড’ল’ছে সারা আর মায়ের ব’কা শুনছে। এমনিতেই ব্য’থা’য়, য’ন্ত্র’নায় কা’ন্না পাচ্ছে সারার, তার উপর আবার সাহেরা বানুর ব’কা’ঝ’কা। সাহেরা বানু চোখের পানি ফেলতে ফেলতে লাগেজে নিজেদের সবকিছু ভরছেন আর সারা কে কথা শুনাচ্ছেন। উনার চোখে পানি আসার কারণ উনার আরাম আয়েসের দিন শেষ।

মাহমুদ সাহেব বাড়ি ফেরার পর ক’ড়া কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন কাল সকালে যেনো তারা মা-মেয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সাহেরা বানু অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ভাই কে যে সারা আর এমন করবে না কিন্তু কিছুতেই মানেন নি মাহমুদ সাহেব। বোন আর বোনের মেয়ের জন্য উনার মান-সম্মান আজ ধুলোয় মিশেছে। উনি কিছুতেই আর ওদের রাখবেন না।
সাহেরা বানু পুনরায় দাঁতে দাঁত চে’পে সারা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

— বে’য়া’দব, ব’দ মেয়ে জন্ম দিছি একটা। আমার মান-সম্মান কিছু রাখলো না। আমার যেই ভাই কোনোদিন আমার মুখের উপর একটা কথা বলতো না, আমি যা বলতাম তাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো সেই ভাই আজ তোর জন্য আমারে ঘর থেকে তা’ড়া’য় দিচ্ছে।

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৩

সাহেরা বানু শুধু ভাবছেন এখান থেকে গেলে উনার ফাই-ফরমাশ কে পূরণ করবে! এতগুলো বছর উনি শুধু পায়ের উপর পা তুলে বসে আদেশ করে গেছেন। একটা কাজেও হাত লাগান নি। এমন কি এক গ্লাস পানি ও নিজে ঢেলে খান নি। সমস্ত কাজ করিয়েছেন আয়ানা এবং অনামিকা বেগম কে দিয়ে। উনি জানেন যেই পরিমান কাজ উনি বিনা পয়সায় আয়ানা এবং অনামিকা বেগম কে দিয়ে করিয়েছেন, তা কোনো কাজের লোক কে মাসে মোটা অংকের টাকা দিলেও করবে না, উনার এতো এতো ফাই-ফরমাশ ও পূরণ করবে না।

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৫