অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৩

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৩
ইরিন নাজ

— “আমি আপনাকে ভালোবাসি আদ্রিশ। প্লিজ আমার ভালোবাসা গ্রহণ করুন। আপনি ঐদিন আসার পর থেকে এক মুহূর্তের জন্য ও আপনাকে ভুলতে পারি নি আমি। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন…”
আদ্রিশ কে পেছন থেকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বললো সারা। রা’গে ইতোমধ্যে চোখ, মুখ র’ক্তি’ম বর্ণ ধারণ করেছে আদ্রিশের। সে দাঁতে দাঁত চে’পে মৃদু চি’ৎ’কার করে বললো,

— “ভালোয় ভালোয় ছেড়ে দিতে বলছি আপনাকে। আমি যদি ছাড়াই এমন অবস্থা করবো ভাবতেও পারবেন না।”
কিন্তু নাছোড়বান্দা সারা। সে আরও শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিশ কে। কাঁ’দো কাঁ’দো কণ্ঠে বললো,
— “কি আছে ওই আয়ানার মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই? বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমি আপনাকে অনেক সুখে রাখবো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর স’হ্য করতে পারলো না আদ্রিশ। সারার হাত শ’ক্ত করে চে’পে ধরলো সে। ব্য’থা’য় হাতের বাঁধন ছুঁটে আসলো সারার। সুযোগ বুঝে স’জো’রে ওকে ধা’ক্কা দিলো আদ্রিশ। সামনের ফুলদানিতে বা’রি খেয়ে ফ্লোরে আ’ছ’ড়ে পড়লো সারা। ব্য’থা’য় কুঁ’ক’ড়ে উঠলো সে। ফুলদানি লেগে কপাল খানিকটা কে’টে ও গেছে তার। কপালে হাত রেখে কেঁ’দে ফেললো সে।
আদ্রিশ রা’গে লাল হয়ে আরও কিছু করতে যাবে তার পূর্বেই তার চোখ পড়লো দরজায়। আয়ানা কে দেখে থমকালো সে। চোখ, মুখ লাল হয়ে আছে মেয়েটার। কেমন শ’ক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার ফ্লোরে পড়ে থাকা সারার দিকে। বুকের ভিতর ধক করে উঠলো আদ্রিশের। মেয়ে টা তাকে ভুল বুঝবে না তো ভেবে আ’ত’ঙ্কি’ত হলো সে।

আদ্রিশ কে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাকে অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকালো সারা। আয়ানা, মীরা কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ’য় পেয়ে গেলো সে। ভ’য়ে শুকনো ঢো’ক গি’ল’তে লাগলো বারংবার। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে পুনরায় কেঁ’দে উঠলো সে। বসা থেকে উঠে দৌড়ে আয়ানা, মীরার কাছে গেলো। আয়ানার হাত জড়িয়ে ধরে কেঁ’দে কেঁ’দে বলে উঠলো,

— “আমি একটু তোদের বাড়ি টা ঘুরে দেখবো বলে উঠে এসেছিলাম। কিন্তু তোর হাসব্যান্ড আমাকে এখানে এনে আমার সাথে জো’র…”
স’জো’রে থা’প্প’ড় পড়লো সারার গালে। আর একটা শব্দ ও উচ্চারণ করতে পারলো না সে। থা’প্প’ড় এতোটাই জো’রে ছিলো যে তার গাল টা জ্ব’লে যাচ্ছে, মাথা ঘুরে উঠেছে, কানে শো শো শব্দ হচ্ছে। সারা মাথা তুলে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে সামনের দিকে চাইলো।

থা’প্প’ড় টা আর কেউ নয় বরং আয়ানা ই দিয়েছে তাকে। আয়ানার দিকে তাকাতেই রূহ কেঁ’পে উঠলো সারার। মেয়েটার সারা মুখ লাল হয়ে আছে, চোখ দিয়ে যেনো আ’গু’ন ঝ’র’ছে। আয়ানার এমন রূপ সে এর আগে কখনো দেখে নি। আদ্রিশ ও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আয়ানার দিকে। এই কি সেই শান্ত, কোমল স্বভাবের আয়ানা যে কারোর গায়ে হাত তোলা তো দূর, একটা কথা বলতেও একশো বার ভাবে!

আয়ানা তাকে থা’প্প’ড় মে’রে’ছে ভাবতেই ভ’য় উড়ে গেলো সারার। ভেতর ভেতর রা’গে ফু’লে উঠলো সে। কতো বড় সা’হ’স হয়েছে মেয়েটার! আগে সারাদিন লা’ত্থি, থা’প্প’ড় দিলেও ‘টু’ শব্দ করতো না। আর আজ কিনা তার গায়ে হাত তুলেছে। সারা রা’গে ফু’স’তে ফু’স’তে বললো,

— তুই আমার গায়ে হাত তুললি বে’য়া’দব! তোর এতো বড় সা’হ’স হয়েছে! নিজের স্বামীর অ’প’রা’ধ ঢাকতে….
কথা শেষ করার পূর্বেই সারার অপর গালেও স’জো’রে আরেকটা থা’প্প’ড় পড়লো। দুই গালে হাত রেখে ফুঁ’পি’য়ে কেঁ’দে উঠলো সে। সব তে’জ বেরিয়ে গেলো মুহূর্তেই। সারার অবস্থা দেখে মীরার ভেতর টা শান্ত হলো। এটাই প্রাপ্য ছিলো এই ফা’ল’তু মেয়ের। কিন্তু শান্ত হলো না আয়ানা। আরেকটু সামনে এগিয়ে সারার চুল খা’ম’চে ধরলো সে। ব্য’থা’য় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে সারার। কিন্তু সেসবে পাত্তা দিলো না আয়ানা। রা’গে কাঁ’প’তে কাঁ’প’তে বললো,

— আমার হাসব্যান্ড কে নিয়ে আর একটা ফা’ল’তু কথা উচ্চারণ করলে তোর জিভ টে’নে ছিঁ’ড়ে ফেলবো আমি। অনেক সম্মান দেখিয়েছি, আর না। এতো বড় নোং’রা তুই বুঝতে পারি নি আমি। ছোটবেলা থেকে যেই জিনিসটাই আমার খুশির কারণ হয়েছে সেটাই ছি’নি’য়ে নিয়েছিস। এমন কি আমার মা কে পর্যন্ত আমার কাছে ঘেঁ’ষ’তে দিতি না তোরা মা-মেয়ে। কম অ’ত্যা’চা’র করিস নি আমার উপর।

আর এখন কিনা,,, এখন কিনা শেষমেষ যেই দেখলি স্বামীর ঘরে ভালো আছি ওমনি আমার স্বামীর পেছনে ও লেগে গেলি! তাকেও আমার কাছ থেকে ছি’নি’য়ে নেয়ার চেষ্টা করছিস! এতোটা জ’ঘ’ন্য কেউ হয়! এতদিন অনেক ছাড় দিয়েছি। কিন্তু এবার তুই স’হ্যে’র সকল সীমা পার করে ফেলছিস। আর ছাড় দিবো না। চল, নিচে চল। তুই আজ যা করেছিস তা সকলের জানা উচিত।”

সারার চুলের মুঠি ধরেই ওকে টে’নে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো আয়ানা। সারা বারবার চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়ানোর, অনুরোধ করছে যেনো সবার সামনে কিছু না বলে। কিন্তু কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না আয়ানার। চোখের সামনে শুধু কিছুক্ষন আগের ঘটনা ভাসছে, কানে বারংবার আদ্রিশ কে বলা সারার কথাগুলো বা’জ’ছে।

আয়ানার পেছন পেছন মীরা এবং আদ্রিশ ও দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসলো। মেয়ে টা কে আজ স্বাভাবিক লাগছে না। কি থেকে কি করে ফেলবে বলা যায় না! নিচে নেমে সারা কে সবার সামনে সর্বশ’ক্তি দিয়ে ধা’ক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো আয়ানা। চমকে দাঁড়িয়ে গেলো সবাই। সারার অবস্থা দেখে ভ’য় পেলো। কপাল কে’টে জায়গা টা ফু’লে আছে, হালকা র’ক্ত বের হচ্ছে, দুই গালে আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। সারার এমন বি’দ্ধ’স্ত অবস্থা দেখে কেঁ’পে উঠলেন সাহেরা বানু। দ্রুত পায়ে মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়ে কে উঠালেন। বুকে জড়িয়ে নিলেন। মা কে পেয়ে আরও জো’রে কেঁ’দে উঠলো সারা। সাহেরা বানু দাঁতে দাঁত চে’পে আয়ানা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

— “এই মেয়ে তোর সা’হ’স তো কম না আমার মেয়ে কে এভাবে ছুড়ে ফেলিস…”
— “সা’হ’স কম ই ছিলো মিসেস সাহেরা বানু। তবে আজ বেড়ে গিয়েছে। আপনার মেয়ে কে শুধু ছুঁ’ড়ে’ই ফেলি নি, দুটো থা’প্প’ড় ও মে’রে’ছি। দেখুন গালে কতো সুন্দর দা’গ ও পড়েছে।”
শান্ত কণ্ঠে সাহেরা বানুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললো আয়ানা। এতে সাহেরা বানু যেনো আরও রে’গে উঠলেন।

— “তোকে তো আমি…”
বলে আয়ানা কে থা’প্প’ড় মা’র’তে চাইলেন সাহেরা বানু। কিন্তু উনার হাত শ’ক্ত করে চে’পে ধরলো আয়ানা। ছি’ট’কে দূরে ফেলে দিলো। বসার ঘরের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ানার দিকে। এ কোন আয়ানা? এমন ব্যবহার করছে কেনো সে? মাহমুদ সাহেব এবার এগিয়ে আসলেন। রা’গী কণ্ঠে বললেন,

— “এই মেয়ে বড্ড বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি…”
— “আমি বাড়াবাড়ি করছি নাকি আপনার বোনের মেয়ে বাড়াবাড়ি করেছে?”
— “কি করেছে ও?”
— কি করে নি সেটা বলুন। ছোটবেলা থেকে আমার পছন্দের সবকিছু তো ছি’নি’য়ে’ছেই, এখন যেই দেখলো স্বামী, সংসার নিয়ে সুখে আছি ওমনি আমার স্বামীর পেছনে ও লেগে গেলো। এখন আমার স্বামীকেও তার চাই।”
আয়ানার কথায় উপস্থিত সবাই হতভম্ব হলো। মাহমুদ সাহেব এবং সাহেরা বানু চমকালেন। মাহমুদ সাহেব সারার দিকে তাকিয়ে শুধালেন,

— “সারা, এসব কি বলছে এই মেয়ে?”
কেঁ’পে উঠলো সারা। ভাবলো একটা শেষ চেষ্টা করবে। তাই কেঁ’দে কেঁ’দে বললো,
— “ও মিথ্যা বলছে মামা। নিজের স্বামীর দো’ষ লুকাতে আমাকে ফাঁ’সা’চ্ছে। ওর স্বামী ই আমাকে রুমে নিয়ে…”
কথা শেষ করার আগেই আরও একটা থা’প্প’ড় পড়লো সারার গালে। তবে এবার থা’প্প’ড় আয়ানা নয় মীরা মে’রে’ছে। মীরা রে’গে চি’ৎ’কা’র করে বললো,

— “বে’হা’য়া, নি’র্ল’জ্জ, চরিত্রহীন মেয়ে কোথাকার! নিজের দো’ষ ঢাকতে নিষ্পাপ একজনের উপর দো’ষ চা’পা’তে লজ্জা হলো না তোর! ও লজ্জা হবে কি করে, লজ্জা বলতে তো কোনো কিছু তোর মধ্যে নেই। আয়ানা নাহয় নিজের স্বামী কে বাঁচাতে মিথ্যা বলছে। কিন্তু আমি! আমি যে তোকে দেখলাম আদ্রিশ ভাইয়া কে জো’র করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে, আমি যে নিজের কানে শুনলাম তুই আদ্রিশ ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে নিজের ভালোবাসার কথা বলছিস। তুই না আদ্রিশ ভাইয়া কে অনেক ভালোবাসিস, তাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারিস না, তুই নাকি আদ্রিশ ভাইয়া কে অনেক সুখী করবি! এখন বল আমিও মিথ্যা বলছি…

মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো সারা। সে বুঝে গেছে আর কোনো কিছু বলে কোনো লাভ হবে না। বা’জে ভাবে ফেঁ’সে গেছে সে। সারার কর্মকান্ড শুনে লজ্জায় মাথা নিচু হলো মাহমুদ সাহেব এবং সাহেরা বানুর। অনামিকা বেগম এতক্ষন চুপচাপ সব শুনলেও এবার আর চুপ থাকতে পারলেন না। এগিয়ে এসে সারা কে ধা’ক্কা দিয়ে ঘৃ’ণা’মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,

— “আর কতো নিচে নামবে তোমরা মা-মেয়ে! যতদিন ওই বাড়িতে ছিলো কম তো ক’ষ্ট দাও নি আমার মেয়ে কে। আর এখন কিনা এসব!”
অনামিকা বেগম থামতেই মীরা ক’ড়া কণ্ঠে মাহমুদ সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— “আজ যা হলো এরপরেও যদি তোমার বোন এবং বোনের মেয়ে কে তোমার বাড়িতে রাখো তাহলে আমি আর কোনোদিন ও ওই বাড়িতে পা রাখবো না কথা দিলাম। সে আমার শ্বশুরবাড়ির সম্মান নিয়ে টা’না’টা’নি করেছে, আমার বোনের সংসার ন’ষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এসব করে এই বাড়ির মানুষগুলোর সামনে আমাকে ছোট করেছে। আর বলা তো যায় না কোনদিন আবার আমার সংসারেও নজর দিয়ে বসবে, আমার সংসার ন’ষ্ট করার চেষ্টা করবে। এসব মেয়েদের উপর বিশ্বাস নেই।”

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১২

কথাগুলো বলে গ’জ’গ’জ করতে করতে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো মীরা। সারা মেয়ে টা এতো নিচে নামবে ভাবনার বাহিরে ছিলো তার। মেয়ে টা আয়ানা কে হিং’সা করে জানতো সে। কিন্তু তাই বলে এতো নিচে নামবে!

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৪