কোন কাননের ফুল গো তুমি পর্ব ২১

কোন কাননের ফুল গো তুমি পর্ব ২১
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একা রুমে আবিষ্কার করল মিতুল। আড়মোড়া ভেঙে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল সে। রূপক কি রুমে নেই? ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দও আসছে না। সে সময় বিলম্ব না করে জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। একা শাড়ি পরতে পারে না বিধায় থ্রি-পিস পরেছে সে। গোসল সেরে এসে দেখে রূপক বিছানা গোছাচ্ছে। মিতুল অবাক হয়ে বলে,

“একি! আপনি কেন বিছানা গোছাচ্ছেন? সরুন। আমি করছি।”
রূপক না তাকিয়েই বলল,
“আমি পারব। তুমি রেডি হয়ে নাও। ভাবি কিন্তু অনেকবার নাস্তা করার জন্য ডেকে গেছে।”
“আমার সময় লাগবে না। সরুন তো।”
রূপককে জোর করেই সরিয়ে দিল মিতুল। এতক্ষণে মিতুলের দিকে তাকাল রূপক। অবাক হয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তুমি থ্রি-পিস পরেছ কেন?”
“তাহলে কী পরব?”
“শাড়ি পরবে না?”
“আমি একা শাড়ি পরতে পারি না।”
“ভাবিকে ডেকে দিচ্ছি আমি। শাড়ি পরো।”
“এখনই পরতে হবে?”
“হ্যাঁ।”

টুম্পা দরজায় টোকা দিয়ে ডাকছে,
“মা ডাকছে খেতে।”
রূপক দরজা খুলে দিল। টুম্পা ভেতরে এসে মিতুলের হাত টেনে ধরে বলল,
“তুমি এখন কাজ কেন করছ বলো তো? আগে খাবে চলো।”
“দাঁড়াও, দাঁড়াও। তোমার ভাইয়া বলেছে শাড়ি পরে যেতে।”
টুম্পা রূপকের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

“কেন? শাড়িই যে পরতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তুমি চলো তো।”
মিতুল কোনো রকম মাথায় ওড়না দিয়ে টুম্পার সাথে ডাইনিংরুমে গেল।
রাজকুমার টেবিলের ওপর বসে ছিল। মিতুলকে দেখে বলল,
“শুভ সকাল মুতু।”

মিতুল মেজাজ ঠিক রাখল। সঙ্গে হাসিও পেল তার। এত সুন্দর করে মর্নিং উইশ করলে কি রাগ করা যায়? মিতুল বসেছিল শ্বশুরের পাশে। টিয়া বেগম পরোটা, ভাজি, মাংস তুলে দিলেন মিতুলের প্লেটে। এত খাবার দেখে তার মাথা ঘুরে যায়। সে কখনোই একটার বেশি পরোটা খেতে পারে না। তার ওপর আবার শ্বশুর এটা, ওটা এগিয়ে দিচ্ছেন। সবাই পারে না শুধু মিতুলের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মিতুল অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল রূপকের দিকে।
রূপক মুচকি মুচকি হাসলেও মুখে কিছু বলল না। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া সম্ভব নয় বলে মিতুল মুখটা অসহায়ের মতো করে বলল,

“আমি আর খেতে পারব না।”
টিয়া বেগম বললেন,
“জোর করে খেতে হবে না। যতটুকু পারো খাও। আর শোনো, একটা কথা আজই বলে দিচ্ছি। তুমি এই বাড়িতে টুম্পার মতোই বাড়ির মেয়ে হয়ে থাকবে। যেভাবে থাকতে তুমি পছন্দ করো সেভাবেই থাকবে।”
মিতুলের বুকের ওপর থেকে যেন একটা ভার নেমে গেল। সে শুরু থেকেই টিয়া বেগমকে ভীষণ ভয় পেত। কিন্তু এখন তার কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি ততটাও ভয়ংকর মহিলা নন। খাওয়ার পাট চুকিয়ে রুমে গিয়ে মিতুল রূপককে বলল,

“আমি একটু আমাদের ফ্ল্যাটে যাই?”
“যাও। জিজ্ঞেস করার কী আছে?”
“কেউ কিছু বলবে না তো?”
“আরে না! মা তখন কী বলল শোনোনি?”
“তবুও ভয় লাগছে।”
রূপক মিতুলের হাত ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“ভয়ের কিছু নেই। আচ্ছা চলো আমি সাথে যাচ্ছি। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে বাইরে যাব।”

“সকাল সকাল বাইরে কী?”
“এমনিই। বিশেষ কোনো দরকার নেই।”
“কোনো মেয়ে অপেক্ষা করছে নাকি?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ আমার কাজই তো শুধু মেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়ানো।”
“ত্যাড়াব্যাকা কথা বলবেন না। বাইরে যাচ্ছেন যান। তবে খবরদার! কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না।”
“রাইট। আমার কাজই শুধু মেয়েদের দেখা।”

“আবার বাঁকা কথা!”
রূপক হেসে ফেলে। বলল,
“আচ্ছা এখন চলো। আমি কোনো মেয়ের দিকেই তাকাব না। তাছাড়া যার ঘরে এত সুন্দর একটা বউ আছে সে কেন বাইরে অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে যাবে?”

মনে মনে খুশি হলেও মুখে ভেংচি কাটল মিতুল। নিজেদের ফ্ল্যাটে গিয়েও তার মনে হলো না যে গতকাল রাতেই তার বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই খুব স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। মিতুলও তাই এটা নিয়ে আর মাথা ঘামাল না। বরং সে এই সময়টাকে ইনজয় করছে। রূপককে নিজের করে পাওয়ার আনন্দটাই তার সবচেয়ে বেশি। কিছুদিন পরই তো আবার রূপক চীনে চলে যাবে। এটা মন পড়লেই তার বুক ভেঙে কান্না চলে আসে। কিন্তু রূপককে সেটা বুঝতে দেয় না সে।

রিনভীর সাথে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে নিজের রুমে এলো মিতুল। কত স্মৃতি তার নিজের রুমে। নিজের রুম মানেই তো আলাদা কিছু। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। প্রথমে ভেবেছিল রূপক হয়তো কল করেছে। কিন্তু পরে দেখে আননোন নাম্বার। নাম্বার আননোন হলেও কে কল করেছে মিতুল সেটা জানে। এর আগেও এই নাম্বার থেকে অনেকবার ফোন এসেছিল। মানুষটিও মিতুলের পরিচিত। কিন্তু নওশাদ স্যার কেন তাকে এখন ফোন করবে?

ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেল। দ্বিতীয়বার আবার রিংটোন বাজতেই ফোন রিসিভ করল মিতুল। তবে হ্যালো বলার ফুরসতটুকুও সে পেল না। এর পূর্বেই রুমে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করল রূপক। কোনো বাক্য বিনিময় ছাড়াই মিতুলের পাশে শুয়ে মিতুলকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে, মুখে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে শুরু করে। মিতুল কিছু বলার সুযোগও পাচ্ছে না। ফোন হাত থেকে বিছানার ওপর পড়ে আছে। এদিকে যে রূপককে ছাড়াবে সেটাও পারছে না। আঠার মতো লেগে আছে রূপক। সে মিতুলের দুই হাত মুঠোবন্দি করে বলল,

কোন কাননের ফুল গো তুমি পর্ব ২০

“বিয়ে করেছি অথচ ঘরে বউ নেই। এই কষ্টের মানে জানো তুমি?”
“না জানি না। হাত ছাড়ুন।”
“কেন ছাড়ব না? হাত তো ছাড়ার জন্য ধরিনি। সারাজীবন হাত ধরে রাখব বলেই তো বিয়ে করেছি। এত ভালোবাসার বউ আমার। এত সহজেই ছেড়ে দেবো?”

কোন কাননের ফুল গো তুমি শেষ পর্ব