যদি তুমি বলো পর্ব ৩১

যদি তুমি বলো পর্ব ৩১
আফনান লারা

ইশানের কথায় আর চুলের টান খেয়ে তিথি উঠে বসে।হঠাৎ মনে পড়ে যায় তাদের এখন চলে যাবার সময়।
সে উঠেই তাড়াহুড়ো শুরু করে দেয়।কি থেকে কি করবে এসব নিয়ে পেরেশান হয়ে ওঠে।কিন্তু ইশান তাকে বুঝিয়ে দিলো তাদের দেরি হচ্ছেনা,এত পেরেশানির কিছু নেই।

মা,বোন সবাইকে বিদায় দিয়ে তারা দুজনে এয়ারপোর্টে পৌঁছায় অবশেষে।
তিথিদের বাসার সবাই এসেছে ওকে বিদায় দিতে।রিদম তো প্রায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।টুকু তার খুব আদরের কিনা তাই!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি কান্না করেনি,কারণ সে ইশানকে ফোন কলে বলতে শুনেছে তারা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
এই শুনেই তার জাপান যেতে কোনো ভয় কাজ করছিল না।আনন্দে আনন্দে সে প্লেনে উঠে বসেছে।
তার এত আনন্দর মানে ইশান জানতে চাইলে সে কিছুই বলেনা,কারণ বললেই তো ইশান আবার তারিখ পিছিয়ে আনবে।
তার চেয়ে ওর অজানাই থাকুক।জাপানে ফিরে তিথি ইশানের পাওয়ারের এক অন্য রুপের সাথে পরিচিত হলো।ইশানকে যতটা সম্পদশালী সে ভেবেছিল সে তার চেয়ে দশগুণ বেশি।

এয়ারপোর্টে তার পাঁচজন কর্মচারী রিসিভ করতে দাঁড়িয়ে ছিল।তারা সকলেই জাপানি।
তিথিকে দেখেই তারা ফুলের তোড়া হাতে ধরিয়ে দেয় আর জাপানি ভাষায় কত কি বলে।তিথি কিছুই বুঝেনা তাই ইশানের দিকে তাকায় বুঝার জন্য।

ইশান জানে এর উত্তর কি, তাও সে তিথিকে রাগাতে বললো,’ওরা বলেছে ভাবী ভুটকি’
এটা শুনে তিথি রেগে বললো,’তোমরা ভুটকি!তোমাদের গাল দেখছো?একেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতোন’
কর্মচারীরা কিছুই বুঝলোনা।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে তাদের একজনের থেকে তার এখানকার কারের চাবিটা নিয়ে তিথিকে কারে গিয়ে বসতে বলে।তিথি কারে বসতে গিয়ে দেখে কারের মধ্যে ইশানের নুডুলসের লোগো।
সে কারে অনেকক্ষণ বসে থাকে।ইশান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঐ লোকগুলোর সাথে কথা বলছিল।যেন এখানেই সে মিটিং শুরু করে দিয়েছে।

তিথি কারের ফ্রণ্ট মিররে নিজেকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে সে কি আসলেই এত মোটা!
তিথি ইশানকে ডাকতে যাবে তখনই একটা সুন্দরী মেয়ে এসে ওদের কারের পেছনে উঠে বসে।সে তিথিকে দেখেই জাপানি ভাষায় কিসব বলে গেলো ফটাফট। তিথি কিছুই বুঝলোনা।কিন্তু মেয়েটাকে তার সুবিধার লাগলোনা,এভাবে না বলে কারোর কারে ওঠা কোন ধরনের অসভ্যতামি!

কিছুক্ষণ পর ইশান কারের সামনে এসে বললো,’আরেহ আমার কার এটা নয় সামনের টা।তুই আরেকজনের কারে উঠে বসে আছিস কেন?’
‘ওহ তাহলে এই মেয়েটার কার এটা।তাই তো বলি চাং চুং বলতেছে কেন!’
তিথি সরি বলে কার থেকে নেমে দিলো এক দৌড়, তার কিছু সময় পর থেমে বললো,”ওটা আপনার কার না হলে তাতে আপনাদের নুডুলসের লোগো কেন?’

‘ওটা আমার কোম্পানির জেনেরাল অফিসারের কার।’
‘তাহলে আপনি কি?’
‘আমি ওনার!বুঝছিস? আমার কারে লোগো নাই,স্টাম্প লাগানো আর গ্লাসের নিচে কোম্পানির নাম’
‘এটা কোম্পানির নাম?আমি ভাবছি সাপ একটা শুয়ে আছে’

ইশান তিথির গাল টিপে ধরে বললো,’এখন থেকে এই সব চাং চুং,সাপের মতন লেখাই তোকে মুখস্থ করতে হবে।বুঝেছিস?এখন চুপচাপ বস।এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে’
‘আপনার অফিসারের বউটা খুব সুন্দর’
‘ওটা বউ না,মেয়ে ‘

‘পাগল হয়ে যাবো মনে হয়।আবহাওয়া ভাল না।মাথাটা কেমন করছে। সব ভুলভাল দেখছি আর বলছি’
তিথি গাড়ীর ভেতরে বসে পড়ে একবার পেছনে তাকালো তারপর জিজ্ঞেস করলো অফিসারের মেয়ে ওর সাথে আলাপ করতে আসেনি কেন।

ইশান এর উত্তর দিলোনা।তিথি আবারও জিজ্ঞেস করে কিন্তু এইবারও ইশান কিছু বলেনা।
ইশানের বাসা Suwa city তেই।মিউজিয়ামের একটু পরে।
তাই খুব একটা দেরি হলোনা তাদের।বাসায় ফিরে তিথি তো অবাক।আসলেই তাদের পাশে শুধু একটাই বাসা এর ধারের কাছেও কোনো বাসা নেই।

বাসার দরজা খুলে দিয়ে ইশান কাকে যেন ফোন করতে করতে পুল সাইডের দিকে চলে গেছে।তিথি ভেতরে এসে অবাক হয়ে গেলো।সিনেমা গুলোর বাসার মতন সাজানো সব।
তিথি দেখতে দেখতে একেবারে সোজা ইশানের রুমে চলে এসেছে।আসার সময় তানিয়া বলেছিল তার এক জাপানি বন্ধু বলেছিল সে তোষকের নিচে অনেক কিছু মূল্যবান লুকিয়ে রাখে।

এটা তো তারাও করে।কথাহলো জাপানি মূল্যবান জিনিস খুঁজে পাওয়ার আলাদা আনন্দ।তিথি দাঁত কেলিয়ে তোষকটা উল্টে দেখে তাতে কিছু খাতার পৃষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই নেই।
লেখা গুলাও জাপানি,কিন্তু লাল লাল লাভের ইমুজি আঁকা দেখে ওর মনে ঘটকা লাগলো তাই সে পৃষ্ঠা গুলো গুছিয়ে তার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেই ইশানকে দেখে ওখানে সে দাঁড়িয়ে আছে।তার এই কার্য অবশ্য ইশান দেখেনি।
ইশান ওর কাছে জানতে চাইলো সে ইশানের রুম চিনেছে কি করে।

‘এত বড় রুম আর কার হতে পারে!’
এই বলে তিথি পুলটা দেখতে চলে যায়।ইশান বিছানায় বসে মাথায় হাত দিলো। তার মাথা অনেক বেশি ব্যাথা করছে।ফ্লাইট করে আসলেই এই অবস্থা হয়।
তিথি সব ঘুরে দেখে রুমে এসে দেখলো ইশান শুয়ে আছে।
সে ওর খুব কাছে এসে দেখতে লাগলো ব্যাপারটা কি।হঠাৎ এরকম কাতলা মাছের মতন শুয়ে আছে কেন।

অনেক দেখেও কিছু বুঝতে না পেরে সে নিজের ব্যাগটা টেনে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।এরপর সেই কাগজগুলো বের করে ছবি তুললো তারপর তানিয়াকে হোয়াটসএপে সেগুলো পাঠিয়ে বললো ওর বন্ধুকে দিয়ে ট্রান্সলেট করে পাঠাতে।
এই কাজটা রেখে এবার সে ইশানের রান্নাঘরে এসে হাজির।আগের মতন,নুডুলসের প্যাকেট ছাড়া কিছুই নেই।

তিথির খুব খিধা পেলো কিন্তু নুডুলস খেতে মন চাইছেনা,হঠাৎ তার মনে আসলো পাশের বাসার কথা।ওদের কাছে যাবে?না না!কি ভাববে তারা।আর ওদের ভাষাও তো ওর জানা নেই।
অনেক চিন্তাভাবনা করে ইশানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে তিথি।ওর উঠা অবধি আর কোনো সুযোগ নেই কিছু খাবার।

তিথি সময় কাটানোর জন্য মেসেঞ্জারে মাকে একটা কল দেয়।
মা সবার আগে বললেন,’কিরে কিছু খেয়েছিস? ‘
‘কি খাবো মা!নুডুলস ছাড়া আর কিছু নাই’
‘মানে কি!ওখানে যাবার পর থেকে কিছুই খাসনি?’
‘নাহ’

‘ওখানকার কোনো রেস্টুরেন্টের নাম্বার নোট করে রেখেছে কিনা ইশান।চেক কর তো,থাকলে অর্ডার করে দে।’
‘কিভাবে করবো।ওরা তো জাপানি ভাষায় কথা বলবে’
‘আচ্ছা তুই কি বোকা?ইংরেজীতে তো কথা বলতে পারিস।সেভাবে বলবি’

মায়ের ঝাড়ি খেয়ে তিথি সেই নোটবুক খুঁজে বের করে।এরপর খুঁজতে থাকে রেস্টুরেন্টের নাম্বার।বেশ কিছু সময় পরও সে নাম্বার না পেয়ে নোটবুকটা ছুঁড়ে মারলো কিন্তু ইশান এসে সেটা ধরে ফেললো সঠিক সময়ে।নোটবুকটা গুছিয়ে রেখে সে বললো,’কিসের এত রাগ?’

‘আমায় না খাইয়ে মারতে এনেছেন?জার্নি করে আসলে খিধা লাগেনা মানুষের?’
ইশান তিথির হাত ধরে রান্নাঘরে নিয়ে আসে তখন তিথি চেঁচিয়ে বললো,’এখানে নুডুলস ছাড়া কিছু নেই’
তখন ইশান নিচু হয়ে একটা ডেস্ক টান দেয়।সেটাতে চিপস আর বিসকুটের প্যাকেট ছিল।ডেস্কটা হাইড করা ছিল বলে তিথি খুঁজে পায়নি।

চিপস দেখে তিথি ছোঁ মেরে এক প্যাকেট নিয়ে বললো,’চিপসে কি আর পেট ভরে?’
ইশান তখন তিথির দুপাশ দিয়ে দু হাত নিয়ে তাকের উপর রেখে বলে,’তবে কিসে ভরবে?আদরে?’
তিথি ইশানকে সরিয়ে দিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো,’জাপানি কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম জমিয়েছিলেন?সারা বাসায় মেয়েলি গন্ধ’
‘মেয়েলি গন্ধ তো থাকবেই।নিজের গায়ের গন্ধ চিনিস না?”
এই বলে ইশান তিথির হাত ধরে নোটবুকটার কাছে এনে আঙ্গুল দিয়ে বললো,’তরমুজের ইমুজি দেয়া এটা রেস্টুরেন্টের নাম্বার বুঝেছিস?’

‘ওহ তাহলে এই ব্যাপার?তবে এখানে গোলাপের ইমুজি দেয়া নাম্বারটা কার?’
‘রোজ ফাইভ স্টার হোটেলের।সংক্ষেপে রোজ’
তিথি তাও সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।ইশান তখন ঘাড় চাপতে চাপতে বলে গেলো চিপস খেয়ে এসে একটু ওর গায়ে গরম তেল মালিশ করে দিয়ে যেতে।ওর খুব খারাপ লাগছে।শরীর টানছেনা।
তিথি এবার রান্নাঘরে ঢুকে ভাবছে সামান্য দেয়াল টেনে ফাস্ট ফুডের কর্ণার বের করা গেলে বাকি দেয়াল টেনে আরও অনেক কিছু বের করা যাবে।

তাই ভেবে সে একটা দেয়ালে হাত দিয়ে এক টান দিতেই বড় একটা কর্ণার খুলে গেলো।এতে সব মসলাপাতি সাজানো ছিল।তেল ছিল না।

যদি তুমি বলো পর্ব ৩০

তিথি এক এক করে এবার সব কর্ণার খুলে খুলে দেখছে।সর্বশেষে একটা কর্ণার থেকে সে তেল খুঁজে বের করলো।
ইশান গায়ের জামা খুলে অনেকক্ষণ শুয়ে ছিল।তিথি দেরি করছে বলে অনেক কষ্টে উঠে এসে দেখে তার গুণধর বউ রান্নাঘরের বারোটা কর্ণার খুলে বসে আছে।

যদি তুমি বলো পর্ব ৩২