যদি তুমি বলো পর্ব ৩৬

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৬
আফনান লারা

কুয়িনা এখানে এসেছিল ইশানের সাথে দেখা করতে।অনেকদিন পর তাদের দেখা হবার পরেও এয়ারপোর্টে ঠিকমত কথা তারা বলতে পারেনি।এখন সেই সুবাদেই সে ইশানের সাথে দেখা করতে সোজা তার বাসায় চলে আসে।
তিথি ইশানকে বললো,’মেয়েটা কি একাই পাগল নাকি আপনিও তার জন্য এক কালে পাগল ছিলেন?’
‘তোর কি জ্বলে?যদি তাই হয় তবে হ্যাঁ।আমরা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা ছিলাম’

এটা শুনে তিথি রাগ করে ইশানের বুক থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়।যত প্ল্যান তার করা ছিল,ইশানের এই একটা কথায় সব কিছু মাটি হয়ে গেলো।সে রাগ করে রুমে চলে এসে ইশানের শার্টটা গায়ের থেকে খুলে নিজের জামা পরে নেয় এরপর গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
ইশান মেইডদের বললো কুয়িনাকে নাস্তা দিতে এরপর সে তিথির কাছেই আসতেছিল তখন কুয়িনা তার পথ আটকে দাঁড়ায় এরপর ওর সাথে বসতে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

ইশান তখন তাকে বাধা দিয়ে বলে তার ফ্রেশ হতে হবে আগে।অফিস থেকে তো মাত্রই এসেছে।
এরপর সে রুমে এসে দেখে তিথি রাগ করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।
ইশান চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নিয়ে তিথির কাছে এসে ওর পা ধরে দেখলো ক্ষতটা ভাল হয়েছে কিনা।এরপর সে কুয়িনার কাছে আসে।

তিথি চুপিচুপি নেমে দেয়ালে কান পেতে শুনছে আসলেই তারা কি বলে।
কিন্তু তিথির দূর্ভাগ্য ইশান আর কুয়িনা জাপানি ভাষায় কথা বলছিল।সে কান পেতে সব শুনেও কিছুই বুঝতে পারলোনা।
ইশাব কুয়িনাকে চলে যেতে বলে।তার সাথে কুয়িনার কখনওই প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।আসলে কুয়িনা এক তরফাই ইশানকে ভালবেসে এসেছে।শত চেষ্টা করেও সে ইশানের মন গলাতে পারেনি।ইশানের মনে তো কেবল তিথিই বাস করে।তিথি যদি সেটা বুঝতো!

কুয়িনা তাও জেদ করে বসে থাকে।সে যাবেইনা।সে মানতে নারাজ তিথি যে ইশানেরই বউ।সে বিশ্বাসই করছেনা উল্টে জেদ বাড়াচ্ছে।
তিথি এইটুকু বুঝতে পারলো যে কুয়িনা ন্যাকা কান্না করে তার কোনো অনুরোধ ইশানের উপর করছে যেটা ইশান মানতে নারাজ।

ইশান কুয়িনার উপর বিরক্ত হয়ে ডানে মাথা ঘুরাতেই তিথিকে দেখতে পেলো,সে লুকিয়ে লুকিয়ে ওদেরকেই দেখছে।
তখন ইশানের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।সে চট করে উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা টেস্ট হজমীর প্যাকেট বের করে সেখান থেকে একটা ট্যাবলেট তুলে তিথিকে ধরে খাইয়ে দিলো এরপর ওকে এনে বাহিরে দাঁড় করিয়ে দুই আঙ্গুল ওর মুখে ঢুকিয়ে সে কুয়িনার কাছে ফেরত চলে আসে আবার,যেন কিছুই হয়নি।

এদিকে মুখে আঙ্গুল দেয়ায় তিথি ওয়াক্ ওয়াক্ করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে চলে গেছে।আর ইশান কুয়িনাকে বোঝালো তার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।
কুয়িনা এক মিনিটের জন্য হতবাক হয়ে ছিল।তার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।এটা কি করে হয়!

তিথি বমি করে এসে ইশানের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে মনমত গালি দিলো।কুয়িনা কিছুই বোঝেনি উল্টে ইশান উঠে তিথির কপালে চুমু খেয়ে এরপর পেটে চুমু খেয়ে ওকে যেতে বললো কুয়িনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে।
‘এই আপনি আমার পেটে চুমু খেলেন কেন?পেটে কি বাচ্চা আছে নাকি?’
‘ট্রিপল’
‘এই ট্রিপল মানে কি?’

পান্না ক্লাসে বসে দারুণ খোঁশ মেজাজে ছিল।এ প্রথম বার সে সানিমকে ভয় পাচ্ছেনা উল্টে মন চাইছে সানিমকে ইচ্ছেমত পেটাতে।তার পরেও সানিম কিচ্চু করতে পারবেনা কারণ তার ছায়া হিসেবে রিদম আছে।
পিংকি ক্লাস থেকে ফেরার সময় পান্নাকে সাথে নিয়ে ফিরছে আজ।
যেতে যেতে সে বললো আজ তারা রিদমদের বাসায় যাবে আগে।পান্না তো অবাক হলো,তারা রিদমের বাসায় কেনো যাবে?

তখন পিংকি জানায় রিদমের বোন তানিয়া রিদমকে দিয়ে নাকি ওদের যেতে বলেছে।গেলেই শুনবে।
পান্না ভীষণ খুশি হলো।রিদমদের বাসায় যাবার তার অনেকদিনের ইচ্ছা।আজ তা পূরণ হবে।
বাসার কলিংবেল চাপ দিয়ে পিংকি পান্নাকে জিজ্ঞেস করে তার চোখের কাজল ঠিক আছে কিনা।পান্না মাথা নাড়ায়।
দরজা খোলে তানিয়া।

সে পান্না আর পিংকিকে দেখে অনেক খুশি হয়ে যায়,সেবার রাস্তায় তাদের দেখেছিল প্রথম।সে ওদের হাত ধরে ভেতরে এনে সোফায় বসায়।পিংকি তো শুরুতেই কথা জুড়ে দেয় তানিয়ার বিয়ে প্রসঙ্গে।
পান্না এ সুযোগে উঠে রিদমকে খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে সে তিথির রুমটা পায় যেটার দরজায় কাগজে লেখা ছিল”Ronaldor রুম এটা।দূরে থাকো! ‘

পান্না মুচকি হাসি দিয়ে দরজাটা আলতো করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।সে দেখে রিদম শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখছে।পান্না ও এসে বসে।পান্না বসতেই রিদম বললো,’টুকু যাও তো।কার্টুন দেখার সময় ডিস্টার্ব করবেনা’
‘আপনি এত বড় ছেলে হয়ে কার্টুন দেখেন?’
এটা শুনে রিদম লাফ দিয়ে ঠিক হয়ে বসে পড়ে আর ল্যাপটপ টা অফ করে দেয়।পান্না ফিক করে হেসে বলে ‘কাউকে বলবোনা,প্রমিস’

‘তুমি এখানে কি করো!’
‘আপনি নাকি আপুকে আসতে বলেছিলেন এখানে’
‘ওহ হ্যাঁ!পিংকি কোথায়?’
‘তানিয়া আপুর সাথে গল্প করে।আপনিও চলুন’
‘নাহ,আমি এখানেই ঠিক আছি।কিছু খাবে?জুস?কোক?’
‘নাহ!ভাত খাবো ‘

রিদম মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে উঠে যায় বাহিরে। পান্নাও পিছু পিছু আসে।রিদম একটা প্লেটে ভাত,মুরগীর রোস্ট নিচ্ছে।
পান্না বলে,’আমরা যখন বাসায় ঢুকেছি তখনি আমি রোস্টের ঘ্রাণ পেলাম।তাই ভাত খাবো বলেছি। ঠিক করেছি না?’
রিদম ওকে খাবারের টেবিলে বসিয়ে খাবার দিয়ে পিংকির কাছে আসে।কিন্তু পিংকি তানিয়ার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিল।
তাই রিদম আবার পান্নার কাছে চলে আসে।এসে দেখে পান্না খাচ্ছেনা।
‘কি হলো খাও না কেন?’

‘আমি দুপুরে স্কুলের থেকে এসে নিজের হাতে ভাত খাইনা।আম্মু খাইয়ে দেয়।’
‘আমার আম্মু তো বাসায় নেই আচ্ছা দেও আমি খাইয়ে দিই’
এটা বলে রিদম হাত ধুয়ে এসে পান্নাকে এক লোকমা খাইয়ে দিয়ে বললো,’ঐ ছেলেটা তোমায় আর কিছু বলেছে?’
‘নাহ।সে খুব ভয়ে আছে’
‘বেশ হয়েছে।এরপর আবার তোমায় জ্বালাতন করলে আমায় বলবে। আমি ঠিক করে দিবো’

কুয়িনা কেঁদে ফেললো তিথির বাচ্চা হবে শুনে।ইশান পড়ে গেলো মহাঝামেলায়।
মেয়ে মানুষ কাঁদলে ছেলেদের ভাল লাগার কথা না।এখন ইশান কি করলে ও কাঁদবেনা তাই ভেবে চলেছে তখন কুয়িনা ইচ্ছে করে এগিয়ে ইশানকে ঝাপটে ধরলো শক্ত করে।

তিথি লুকিয়ে সব দেখলো।মেয়েটা ইশানকে জড়িয়ে ধরেছে দেখে তিথির যেন পায়ের তলার মাটিটাই সরে গেছে।
সে হনহনিয়ে আসতে যেতেই পায়ে ব্যাথা পেয়ে নিচে বসে গেলো।ইশান ওকে পড়তে দেখে কুয়িনাকে ছাড়িয়ে ছুটে এসে তিথির পা দেখতে থাকে আর জানতে চায় আবার কিসের সাথে চোট পেয়েছে।
কুয়িনার কাছে এটা খুব খারাপ লাগে।সে কাউকে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো বাসা থেকে।সে যাবার পর তিথি চেঁচিয়ে বলে,’সব মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে হবে?’

‘আর কাকে ধরলাম?আর ওকে আমি ধরিনি,সে আমাকে ধরেছে।তোকে ধরলে তো চেঁচিয়ে ঘর মাথায় তুলোস’
তিথি তখন মুচকি হাসি দিয়ে ইশানকে জড়িয়ে ধরে বলে,’এই নিন ধরলাম’
ইশান হঠাৎ তিথিকে ছাড়িয়ে বলে,’তোর শাস্তি এখনও শেষ হয়নি’
এটা বলে সে তিথিকে কোলে নিয়ে রুমে চলে যায় এরপর ওকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বলে,’নে শুয়ে পড়’
‘এত তাড়াতাড়ি?’
‘হুম।আর এটাই আজকের শাস্তি’

পান্নাকে রিদম খাইয়ে দিচ্ছে দেখে পিংকি পান্নাকে অনেক বকলো,এভাবে কারোর বাসায় এসে ভাত খাওয়ার জন্য।
তখন রিদম তাকে বুঝায় যে পান্না তো ছোট মানুষ।
‘আচ্ছা রিদম তোমার রুম দেখাবেনা?’

রিদম এবার পিংকিকে নিয়ে তার রুম দেখাতে চলে যায়।পান্না তখন পানি খাচ্ছিল,সে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তাদের দিকে।তানিয়া মিষ্টির বাটি ওর সামনে ঠেলে দিয়ে বলে,’পান্তুয়া মিষ্টি খাবে?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৫

পান্না হাসি দিয়ে চামচ দিয়ে মিষ্টিটা কেটে দুভাগ করে চুপচাপ।তখন তানিয়া ওকে বলে,’তুমিও যাও,রিদমের রুমটা দেখে আসো।সে ইউনিকভাবে সাজিয়েছে।ভাল করে দেখে আসো,বাটিটা সহ নাও, যাও’
পান্না খুশি হয়ে বাটি নিয়ে চলে গেলো ওদের পিছু পিছু।

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৭