মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৬

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৬
তানিশা সুলতানা

অর্ণবের মেজাজ চটে আছে। সব কিছুই বিরক্ত লাগছে তার। তন্নিকে নিয়ে হাস-পাতালে আসার সময় নিধিকে একটা ছেলের সাথে দেখেছে। অর্নব জেলাস হয় না কখনোই। প্রতিটা মানুষেরই একটা স্বাধীনতা আছে। বন্ধু রিলেটিভস থাকতেই পারে। ইটস- নরমাল।

কিন্তু তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়াও কি স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে?
বয়ফ্রেন্ড হিসেবে অর্ণবকে এটা মেনে নিতে হবে?
এটা নিয়ে দু-বার নিধিকে এভাবে দেখলো। প্রথমবার নাইট ক্লাবে ড্রাংক অবস্থায় দেখেছিলো একটা ছেলের সাথে। আজকে একই ছেলের সাথে দেখলো।
বন্ধুরা অর্ণবকে প্রায়ই বলে তোমার নিধিকে এখানে দেখলাম ওখানে দেখলাম। অর্ণব পাত্তা দেয় না। দেখতেই পারে। তাতে রিয়েক্ট করার কিছু নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু আজকে না চাইতেও সন্দেহ হানা দিচ্ছে মনের মধ্যে।
অথৈ তন্নির পাশে বসে আছে। তন্নিকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে। আশা, আনোয়ার, আর্থি হাসপাতালে চলে এসেছে তন্নিকে দেখতে। তন্নির জন্য খারাপ লাগে তাদের।
মানুষ কখনো মানুষকে এভাবে মারতে পারে? মায়া-দয়া কিছুই কি নেই?

এই পাষাণ মানবীয়কে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে আশা বেগমের।
তিনি তন্নির আরেকপাশে গিয়ে বসে। অথৈয়ের মুখে অনেক শুনেছে তন্নির কথা কিন্তু কখনোই তন্নিকে দেখার সুযোগ হয় নি। জন্মদিনের দিন তন্নির ওইভাবে চলে যাওয়া কিঞ্চিৎ রাগ হয়েছিলো তন্নির ওপর। কিন্তু আজকে এই শুকনো মুখটা দেখে রাগ পড়ে গেছে।
আনোয়ার বলে ওঠে

“ওকে তো আর ওই বাড়িতে যেতে দেওয়া উচিত নয়। যখন তখন মে*রে ফেলবে।
আশা বেগম বলে
” আমাদের বাড়িতেই না হয় থাকবে।
অথৈ এবার তেঁতে উঠে বলে

“আমাদের বাড়িতে পা ও রাখবে না তন্নি। তোমার বড়লোক ছেলে তন্নিকে সেই দিন কথা শুনিয়েছে। ভিখারি বলেছে।
আনোয়ার কপাল কুঁচকে ফেলে। তার ছেলে একটু বেশিই পিট-পিটে স্বভাবের কিন্তু তাই বলে এভাবে বলছে? রাগ হয় খানিকটা তার। তবে কিছু বলে না।
আর্থি বলে ওঠে

” ঘুম ভাঙলেই তো ওকে রিলিজ দিয়ে দিবে। কোথায় নিবি তাহলে?
অথৈ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে ওঠে
“ওর বাবাকে কল করেছি। তিনি আসছেন। আসুক দেখি কি বলে।
তাছাড়াও আর ওর তেমন আপন কেউ না৷ ওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের সোভা পায় না।
আর কেউ কিছু বলে না। চুপচাপ থাকে।

অর্ণব নিধির বাড়িতে চলে যায়। সন্দেহ দূর না করা পর্যন্ত তার শান্তি হবে না। নিধির সাথে খোলামেলা কথা না বলা পর্যন্ত মনটাও শান্ত হবে না। এভাবে চলে না।
নিধির বাড়ি অর্ণবের চেনা। বেশ অনেকবার এসেছে সে এই বাড়িতে। নিধির বার্থডে ওর বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী। প্রতিটি অনুষ্ঠানে অর্ণবকে ইনভাইট করা হতো।

হাসপাতাল থেকে নিধির বাসা খুব বেশি দূরে না। পাঁচ মিনিট লাগে গাড়ি চালিয়ে আসতে।
বাড়ির মেইন দরজা খোলা। অর্ণব খানিকটা অবাক হয়। এভাবে দরজা কেনো খুলে রেখেছে?
আস্তে আস্তে পা ফেলে নিধির রুমের সামনে দাঁড়াতেই অর্ণবের বুক কেঁপে ওঠে। চোখ দুটো আপনা-আপনি বড়বড় হয়ে যায়।

নিধির সাথে রাস্তার ওই ছেলেটা ঘনিষ্ঠ অবস্থায়।
অর্ণব আর এক মিনিটও দাঁড়ায় না। বড়বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। দরজাটা আটকে রেখে যায়।
গাড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে নিজের চুল টানতে থাকে অর্নব। নিজের পছন্দের ওপর ঘৃণা হচ্ছে। কি করে এই মেয়েকে সে পছন্দ করেছিলো? বিয়ে করবে ভেবেছিলো? এই মেয়েটার জন্য অর্ণব শাড়ি কিনেছে।

এই তো সামনের মাসেই অনার্স ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম। এক্সাম শেষেই বাসায় বিয়ের কথা বলবে ভেবে রেখেছিলো।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে অর্ণব। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে গাড়ি স্ট্রার্ট দেয়।
তন্নির ঘুম ভেঙেছে। সে এখন মোটামুটি সুস্থ। শরীরের কিছু জায়গায় ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছে। সারা শরীর ব্যাথা।

অথৈসহ অথৈয়ের পুরো পরিবার এখানেই বসে ছিলো।
তারেক এসেছে কিছুক্ষণ আগেই। তাকে আনোয়ার অনেক কথাই বলেছে। তারেক জবাব দেয় নি। চুপচাপ শুনেছে। তন্নির ওপর ইদানীং তারও মায়া কমে এসেছে। বাড়িতে অশান্তি হয় শুধুমাত্র তন্নির জন্যই।
ইতির সাথে আজ ওবদি তার কখনোই ঝগড়া হয় নি।
তন্নি বাবার দিকে এক পলক তাকায়। তন্নিকে তাকাতে দেখে অথৈয়ের মুখে হাসি ফুটে।

“ভালো লাগছে?
তন্নি মাথা নারিয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
তখনই হুরমুরিয়ে অর্ণব কেবিনে ঢুকে পড়ে। আনোয়ারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে
” পাপা আমি ওকে বিয়ে করবো।
তন্নির দিকে ইশারা করে বলে। সবাই হতদম্ভ হয়ে যায়। বড়বড় চোখ করে অর্ণবের দিকে তাকায়। তন্নি রেগে তাকায় অর্ণবের দিকে।

তারেক তাকিয়েই আছে।
সবার নজর তার দিকে। অর্ণব বিরক্ত হয়। সবার দিকে তাকিয়ে বলে
“হোয়াট?
আনোয়ার শুকনো ঢোক গিলে বলে
” বাবা কি বলছো তুমি? এখনো পড়ালেখা শেষ করলে আগেই বিয়ে? তন্নিকে পছন্দ করো?
ঠিক আছে আমরা বসে কথা বলবো।

অর্ণব চিৎকার করে ওঠে। তন্নির পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলে কিছু জিনিস ছিলো তা ফেলে দেয়। সকলে ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। আশা বেগম কেঁদে ফেলে। ছেলের রাগ জানে তিনি।
কাঁচের গ্লাস ভর্তি পানি ছিলো। অর্ণব গ্লাসটা হাতে তুলে নেয়। শক্ত করে মুঠো করে ধরে ভেঙে ফেলে। হাত কেটে রক্ত ঝড়তে থাকে।

কেউ অর্ণবকে থামানোর সাহস পাচ্ছে না। এবার আর্থি আর অথৈও কেঁদে ওঠে। তন্নি ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
“আমি বিয়ে করবো মানে করবো। এখনই করবো মানে এখনই করবো। কোনো বসে টসে কথা হবে না। বুঝেছো তুমি?
আনোয়ার অনবরত মাথা নারায়। বুক কাঁপছে তার।
সে এগিয়ে এসে অর্ণবের হাত ধরে

” এখনই বিয়ে হবে। আব্বু তুমি পাগলামি করো না। বসো এখানে।
অথৈ উঠে পড়ে। অর্ণবকে তন্নির পাশে বসানো হয়। অথৈ দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার ডেকে আনে।
ডাক্তার অর্ণবের হাত ধরতে গেলে অর্ণব ঝাড়া দিয়ে ডাক্তারকে ফেলে উঠে দাঁড়ায়।
“আগে বিয়ে তারপর বাকি কাজ।

আশা কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ারের হাত ধরে
” আমার আব্বা যা বলছে তাই করো তুমি। তাড়াতাড়ি করো।
তখনই তন্নি বলে ওঠে
“আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি ওনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
আরেক দরফা সকলে চমকায়। তারেক নিরব দর্শক। অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে তন্নির দিকে তাকিয়ে আছে। আর্থি ভাইয়ের নজর বুঝতে পেরে তন্নির হাত ধরে

” বোন প্লিজ
না করো না।
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে
“আমাকে মাফ করে দিন আপনারা। সম্ভব না।
অর্ণব তেড়ে এসে তন্নির দুই কাঁধ শক্ত করে ধরে চিৎকার করে বলে
” আমি দেখতে খারাপ? অর্ণব চৌধুরীর টাকা কম আছে? আমাকে রিজেক্ট করা হচ্ছে? আমাকে ধোঁকা দেওয়া? জানে মে*রে দিবো আমি।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৫

তন্নির বুক কাঁপছে। লোকটার প্রতিটা কথা তন্নির মুখে এসে পড়ছে। হাত দুটো ব্যাথা করছে।
অথৈ অর্ণবকে টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অর্ণবের শরীর কাঁপছে। আর্থি এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে
“ভাইয়া প্লিজ শান্ত হও।
কাঁদতে কাঁদতে বলে দুইবোন।
অর্ণব অথৈয়ের মাথায় হাত রেখে বলে

” আমি ওকে বিয়ে করবো। আজকেই করবো। অর্ণব চৌধুরী হারতে শিখে- নি৷ অর্ণব চৌধুরীকে কেউ ঠকাতে পারবে না।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৭