মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৫

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৫
তানিশা সুলতানা

তন্নি চমকে তাকাঁয় অর্ণবের দিকে। সে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্নির দিকে। যে’নো মূল্য’বান কিছু খুঁজে পেয়েছে তন্নির মুখটাতে।
তন্নি চোখ নামিয়ে নেয়। এই চোখে তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা তার নেই।
অর্ণব এগিয়ে আসে তন্নির দিকে। লোকটা সুদর্শন। ঝাঁকড়া চুলের জন্য একটু বেশিই সুদর্শন লাগে।
নিজের একদম সামনে অর্ণবের অস্তিত্ব টের পেয়ে তন্নি দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলে ওঠে

“আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড বা বউ নই। আমাকে কেনো ছুঁয়ে দিবেন?
অর্ণব বাঁকা হাসে। তন্নির মাথার ঘোমটাটা পড়েই যাচ্ছে প্রায় অর্ণব দুই আগুলে টান দিয়ে একেবারে কপাল পর্যন্ত এনে দেয়। তন্নি বেশ খানিকটা পিছিয়ে যায়।
অর্ণব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে দুই হাত পুরে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তুমি দেখতো এতো বিশ্রী যে তোমায় ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। মনে হয় আস্ত একটা মায়া’র ক্ষণীর পাশের এক টুকরো ডাস্টবিন। তোমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার।

তন্নি মুখ বাঁকিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। বিয়ে যেহেতু হচ্ছেই না সেহেতু আর নানু বাড়ি গিয়ে কাজ নেই। বরং এভাবে হুট করে ওই বাড়িতে গেলে তারা কারণ জিজ্ঞেস করবে। আর তন্নি মিথ্যে কথা বলতে পারে না। সে কথায় কথায় বলেই দিবে সত্যি কথা। এতে মামারা বাবাকে দোষারোপ করবে। ঝামেলা হবে।
অর্ণব তন্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু তো একটা আছে এই মেয়ের মধ্যে। নাহলে কাছাকাছি থাকলে হার্টবিট লাফাবে কেনো? নিধিকে দেখলে তো এমন হয় না?

এই মেয়েকে দেখলে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। আর নিধির দিকে তাকালে নিষিদ্ধ সব চিন্তা মনের মধ্যে জেগে ওঠে।
অর্ণব মাথা চুলকে মুচকি হাসে।
তন্নি বাড়ি গিয়ে বুঝতে পারে কতো বড় ভুল করলো। ইতি বেগম আর তার বাবার বাড়ির লোকজন ভীষণ রেগে আছে। হাবু সব বলে দিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে সাথে টাকাও নিয়ে গেছে।

তন্নি আল্লাহর নাম নিয়ে বাড়িতে পা রাখতেই ইতি বেগম ঝাঁড়ু নিয়ে তেড়ে আসে। ইচ্ছে মতো মা*র*তে থাকে। তন্নি ইতি বেগমের পা জড়িয়ে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে
“মে*রো না মা। আমাকে মে*রো না মা।
ইতি বেগমের পাষাণ মন গলে না। সে চুলের মুঠি ধরে তন্নিকে মারতে থাকে। আর তাকে উৎসাহ দিতে থাকে তার মা বোন ভাই ভাবি।

তিন্নি আর তামিম দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। তিন্নি মজা পেলেও তামিমের কষ্ট হয়। সে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তন্নি৷ দুটো ঝাঁটার বাড়ি তামিমের পিঠেও পড়ে। তবুও তামিম ছাড়ে না৷ তন্নিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে মাকে অনুরোধ করতে থাকে তন্নিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

ইতি বেগমের ভাই তামিমকে টেনে সরিয়ে নেয়। ৭ বছরের ছোট্ট তামিম মামার শক্তির সাথে পেরে ওঠে না।
যখন ইতি বেগম বুঝতে পারে তন্নি নেতিয়ে পড়ে যাচ্ছে তখনই থামে সে।
চিৎকার করে ওঠে। মেরে ফেললো না কি? এ মরে গেলে ইতি বেগমকে সারাজীবন জেল খাটতে হবে।
ঝাঁড়ু ফেলে সে তন্নির নাকের কাছে হাত দিয়ে চেক করে। নাহহ শ্বাস চলছে। সারা শরীরে ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে গেছে। ঝাঁড়ু ভেঙে তন্নির শরীরে ঢুকে গেছে।

ভাইয়ের সাহায্যে তন্নিকে রুমে নিয়ে যায় ইতি বেগম। তারপর খাটে ফেলে রেখে চলে যায়।
তামিম তন্নির পাশে বসে কাঁদতে থাকে। শরীর থেকে ঝাঁরু বের করার চেষ্টা করতে থাকে। একটা বের করে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে তাই আর সাহস পায়। না। তন্নির কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
তামিম চেনে অথৈকে। কয়েকবার এসেছে তন্নির সাথে। স্কুলে যাওয়ার পথে-ই পড়ে অথৈয়ের বাড়ি। অথৈ ছাড়া তো কেউ নেই আর।

তামিম কান্না করতে করতে দৌড়াতে থাকে।
দারোয়ান দাঁড়ানো গেইটে। তামিম দারোয়ানকে বলে
“আংকেল অথৈ আপুকে ডেকে দিবে একটু?
দারোয়ান হাঁটু মুরে বসে তামিমের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে
” কাঁদছো কেনো?

ফুঁপাতে ফুঁপাতে জবাব দেয় তামিম
“আমার সময় নেই। আপুনি ব্যাথা পাচ্ছে৷ অথৈ আপুনি কোথায়?
দারোয়ান তামিমের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। অর্ণব অথৈ আর্থি সবেই খেতে বসছে। তাদের খেতে দিচ্ছে আশা বেগম৷ অর্ণব অথৈয়ের সাথে ঝগড়া করছে। এই দুজনের দুই মিনিটও বোনে না। সারাক্ষণ ঝগড়া করে। আবার দুজন দুজনকে ছাড়া দুই মিনিটও থাকতে পারে না।

তামিম দরজা ওবদি আসতেই দারোয়ানের হাত ছেড়ে এক দৌড়ে অথৈয়ের কাছে যায়।
তামিমকে এভাবে এখানে দেখে ভীষণ অবাক হয় অথৈ।
তামিমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” ভাই কি হয়েছে তোমার?
তামিম এবার আর নিজেকে আটকাতে পারে না। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে বলে
“আপুনি ম*রে যাচ্ছে।

অথৈ যেমন ছিলো তেমনভাবেই দৌড় দেয়। আশা অর্ণব আর্থি ডাকে অথৈকে। পেছন ফিরে তাকায় না।
অর্ণব এবার তামিমকে ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করে। তামিম সবটা বলে ওদের।
অর্ণবের ভীষণ রেগে যায়। সে তামিমকে কোলে তুলে আশাকে চিন্তা করতে বারণ করতে বেরিয়ে যায়।
অর্ণব তন্নিদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। অথৈ তখনই বাড়ির ভেতরে ঢোকে। অর্ণবও পেছন পেছন ঢোকে।
তন্নির রুমে গিয়ে অথৈয়ের আত্না কেঁপে ওঠে। ইতি বেগম তন্নির শরীরে বিঁধে যাওয়া ঝাঁড়ু গুলো টেনে বের করছে আর তন্নি চিৎকার করে কাঁদছে।

অথৈ ইতি বেগমকে টেনে বিছানা থেকে সরায়।
তন্নিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” আমি এসে গেছি তন্নি।
অর্ণব ইতি বেগমের দিকে এক পলক তাকিয়ে অথৈকে সরিয়ে তন্নি আলতো করে কোলে তুলে নেয়। তাতেও মেয়েটা ব্যাথা কাতরে ওঠে। অর্ণব খেয়াল করে তার বুক কাঁপছে।
ইতি বেগম এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ণব তামিমকে শান্ত গলায় বলে

“বাবু কেঁদো না। তোমার আপুনি ঠিক হয়ে গেলে তোমাকে দেখা করাবো। ভালো থেকো
তোমার আপুনি এই বাড়িতে আর কখনোই পা রাখবে না।
বলেই সে চলে যায়। অথৈ ইতি বেগমকে বলে

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৪

” আংকেল ফিরলে তন্নিকে আনতে পাঠিয়ে দিবেন। আপনিও সাথে যাইয়েন।
বলেই অথৈ চলে যায়। ইতি বেগম এবার কেঁদে ফেলে। টাকার শোকে বড্ড বড় ভুল করে ফেললো। এবার তার যে স্বামীর ভাত জুটবে না খুব ভালো করে বুঝতে পারছে৷ লোভ তাকে এবার রাস্তায় নিয়ে দাঁড় করাবে৷ দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবে সে?

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৬