মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৪

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা

তারেক কয়েক দিনের জন্য ঢাকা গিয়েছে গতকাল বিকালে। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে ইতি বেগম। একবার বিয়ে হয়ে গেলে তারেক আর কিচ্ছু করতে পারবে না। আর কালকের আসা পাত্রপক্ষও তন্নিকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে। এখানে আর কোনো কথা থাকতেই পারে না। আগামীকাল শুক্রবার। কালকেই বিয়ে দিয়ে দেবে তন্নির। ঝামেলা মিটে যাবে। এই মেয়েটাকে ইতি বেগমের বোঝা মনে হয়। তাদের সুখের সংসারে এই একটাই আগাছা। এই আগাছা উপড়ে ফেলতে পারলেই তাদের জীবন সুন্দর হয়ে যাবে। কোনো অশান্তি থাকবে না। খরচ কমে আসবে। তারেক তার বাচ্চাদুটোকে আদর করবে।

তন্নি সেই গতকাল বিকেলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে। এখন পর্যন্ত খুলে নি। তাকে কেউ ডাকেও নি। তাকে ডাকার মতো কেউ নেই। বাইরে থেকে হইচইয়ের শব্দ আসতেই ঘুম ভেঙে যায় তন্নির। চোখ খুলে খানিকক্ষণ সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে থাকে। গতকালের ঘটনা গুলো মনে পড়তেই বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।
পেট গুড়ুম গুড়ুম করতেই বুঝতে পারে প্রচন্ড খিধে পেয়েছে । জামাকাপড়ও পাল্টায় নি।
বিছানার এক কোণায় বসে দেয়াল ঘড়িতে নজর রাখে। আটটা বেজে গেছে৷ কলেজে যেতে হবে। তন্নি তারাহুরো করে দরজা খুলে কল পাড়ে দৌড় দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হাত মুখ ধুয়ে রুমে আসতে নিলেই দেখতে পায় বাড়িতে অনেক মানুষ এসেছে। তন্নির কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। ভালো করে খেয়াল করে দেখে কয়েকজনকে চেনে তন্নি। তামিমের নানা, নানু আর মামা। বাকিদের চেনে না।
এই মানুষ গুলো তন্নিকে পছন্দ করে না। তাই আর ওইদিকে যায় না। নিজের রুমে যায়। দরজা আটকানোর আগে শুনতে পায় পাশের রুম থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। সে কাউকে বলছে “কাল তন্নির বিয়ে। তারেক বাড়িতে নেই। ঢাকা গিয়েছে এই সুযোগেই আপদ বিদেয় করবো। পাশের গায়ের হাবু আছে না অটো চালায় তার সাথেই বিয়ে দিচ্ছি।
সকাল সকাল চলে এসো।

আকাশ ভেঙে পড়ে তন্নির মাথায়। সে বিয়ে করবে না। কিছুতেই বিয়ে করতে চায় না সে। ওই হাবলাকান্ত ছেলেকে তন্নি একদম বিয়ে করবে না।
কি করবে তন্নি? কি করে বিয়েটা আটকাবে? কে শুনবে তন্নির কথা? কেউ শুনবে না।
তন্নি দুই হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে।

তন্নির কোনো ফোন নেই যে বাবাকে বা অথৈকে কল করবে। কাউকে জানাতে পারছে না নিজের দুর্দিনের কথা।
হঠাৎ তন্নির মাথায় আসে নানুবাড়ির কথা। মা মারা যাওয়ার পরে তারেক আর সেখানে তন্নিকে যেতে দেয় না বা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে দেয় না। এটা অবশ্য ইতি বেগমের কথায়। ইতি বেগম তারেককে বুঝিয়েছে ” তন্নিকে ওদের সাথে যোগাযোগ রাখতে দিলে ওরা তন্নিকে নিয়ে যাবে। এমনিতেই ওই বংশে মেয়ে নেই৷”

তন্নির মাথায় একটাই চিন্তা আসে পালাতে হবে। এখান থেকে পালাতে হবে। নাহলে জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।
তন্নি জামা পাল্টে মাথায় ওড়ঁনা দিয়ে চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ওর দিকে কারোরই নজর নেই। সবাই য়ে যার কাজে ব্যস্ত।

রাস্তায় এলোমেলো পায়ে হাঁটছে তন্নি। দু চোখ বেয়ে আপনা-আপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে। তন্নির কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার। বাবা ঢাকা গেছে এই সুযোগেই মা বিয়ে দিতে চাচ্ছে। এতোটাই বোঝা তন্নি? সে তো বাড়ির সব কাজ করে। ছোট ভাই বোন দুটোকে পড়ায়। খুবই কম টাকা খরচ করে পড়ালেখা চালাচ্ছে। তবুও মা বোঝা মনে করে?
রাস্তার পাশে থাকা ডাস্টবিন এটা তন্নি খেয়ালই করে নি৷ সে আপন মনে চিন্তা করতে করতে হাঁটছে।
হঠাৎ তন্নির হাতে টান পড়ে। তন্নি চমকে তাকায়। অর্ণব জোরে জোরে শ্বাস টানছে। বোঝাই যাচ্ছে দৌড়ে এসেছে।
তন্নি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকে

“ইডিয়েট দেখে চলতে পারো না? চোখ কোথায় থাকে তোমার?
তন্নি জবাব দেয় না। মাথা নিচু করে ফেলে। অর্ণব তন্নির চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারে সে কান্না করেছে। আরও বকতে চাইছিলো। কিন্তু পারলো না।
” সরি

তন্নি নরম গলায় বলে চলে যেতে নেয় তখনই তন্নির সামনে এক গাল হেসে দাঁড়ায় হাবু।
তন্নি চমকে ওঠে। এ এখানে কেনো?
হাবু তার চুল গুলো ঠিক করতে করতে তন্নিকে জিজ্ঞেস করে
“ভালো আছো তন্নি?

তন্নি জবাব দেয় না। মাথা নিচু করে চুপচাপ থাকে। এই লোকের সাথে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধছে তার।
অর্ণব পকেটে হাত গুঁজে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। এই হাবলাকান্তর সাথে তন্নির কি সম্পর্ক থাকতে পারে?
তন্নির থেকে জবাব না পেয়ে হাবু আবারও বলে ওঠে

” ওহহ বুঝতে পেরেছি। কেনাকাটা করতে যাচ্ছো বুঝি? তোমাকে মায়ের কাছে টাকা পাঠিয়েছি কেনাকাটা করার জন্য। সব দামি দামি জিনিস কিনবে কিন্তু।
অর্ণব এবার চুপ থাকতে পারছে না। ধপ করে মাথা গরম হয়ে যায়। এই লোকটার টাকায় তন্নি কেনো কেনাকাটা করবে?
অর্ণব এগিয়ে আসে

“আপনি কে?
হাবু অর্ণবের দিকে তাকায়।
” আমি ওর হবু জামাই। কাল আমাদের বিয়ে। তাই না তন্নি?
বলতে বলতে তন্নির হাত ধরতে যায়। তন্নি দু পা পিছিয়ে আসে। অর্ণবের বুকের সাথে তার পিঠ ঠেকে যায়। তন্নি অর্ণবের পেছনে চলে যায়।
হাবু চোয়াল শক্ত করে কিছু বলতে যায় অর্ণব বলে ওঠে

“তুমি যাকে বিয়ে করবে কাল সে অলরেডি ম্যারিড। বরের সাথে ঝগড়া করে বাবার বাড়িতে এসেছে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে ওর বাড়ির লোকজন। তুমি এমনিতেই হাবলা। কম বোঝো। দেখতে তো মাশাআল্লাহ হিরো। তো তোমার সাথে মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারলে তারা জিতে যাবে। হিরো জায়েদ খানকে বাড়ির জামাই বানাতে পারবে।
কিন্তু বেচাঁরা তুমি ফেঁসে যাবে। একটা বিবাহিত মহিলাকে নিয়ে সংসার করতে হবে।
তাও আবার সেই মহিলা দুই মাসের প্রেগন্যান্ট।

হাবু ভাবনায় পড়ে যায়। তন্নির বিয়ে হয়েছিলো? হাবু এমনিতেই নিজেকে হিরো ভাবে। আজকে অর্ণবের কথায় কনফার্ম হয়ে গেলো সে আসলেই হিরো। শার্টের কলার সোজা করে হাবু বলে
” ওর সত্যিই বিয়ে হয়েছিলো?
অর্ণব মেকি হেসে বলে।
“১০০% সত্যি।

এই যে তোমার হিরো মার্কা কিউটনেসের দিকে তাকিয়ে বললাম। আমার কথা মিথ্যে হলে তোমার উঁচু দাঁত গুলো ঝড়ঝড় করে পড়ে যেতো।
হাবু যা বোঝার বুঝে যায়। এই বিয়ে সে করবে না। তার মতো হিরো সুন্দরী অবিবাহিত মেয়ে ডিজার্ভ করে। এরকম বিবাহিত মেয়ে না।
অর্ণব আবারও বলে

” এখনও ডাউট আছে? আরে ইয়ার আমি নিজে চোখে ওদের বাসর করতে দেখছি৷ আমি কি মিথ্যে বলতে পারি?
এতোক্ষণে তন্নি মিটমিট করে হাসছিলো। কিন্তু এবার চোখ বড়বড় করে তাকায় অর্ণবের দিকে।
হাবু তন্নির দিকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে
“এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না।
বলেই সে চলে যায়। অর্ণব হেসে ঝাঁকড়া চুল গুলো ঠিক করতে করতে তন্নির দিকে তাকায়। মেয়েটা মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে। গাল দুটো কেমন লাল লাল হয়ে গেছে।
তন্নি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে

” আ-আপনি ককি করে দেখলেন? আআমার তো
বাকিটা বলতে পারে না তন্নি৷ অর্ণব জানেও সে বলতে পারবে না।
“স্বপ্নে দেখেছি।
তন্নি আবারও তাকায় অর্ণবের দিকে। অর্ণব তন্নিকে চোখ টিপ দিয়ে বলে

” ছিহহহ অথৈয়ের তন্নি তুমি আমার সামনেই?
আমি তো লজ্জায় বলতেও পারবো না তোমায়।
অর্ণব লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে। তন্নি মুখ বাঁকিয়ে হাঁটতে শুরু করে। উপকার করেছে তা কখনোই তন্নি ভুলবে না। সুযোগ পেলে শোধ করে দিবে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৩

হঠাৎ পেছন থেকে কোমল একটা সুর ভেসে আসে
“মায়াবতী তোমাকে একটুখানি ছুঁতে চাই আমি।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৫