মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৩

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৩
তানিশা সুলতানা

অর্ণবের নজরে পড়ে তন্নীর গলায় এবং হাতে। মাইরের দাগ। কপাল কুঁচকে ফেলে অর্ণব৷ কে মেরেছে?
তন্নীর গাল থেকে হাত সরিঁয়ে নেয়। তন্নী মাথা নিঁচু করে দু পা পিছিয়ে যায়।
নাক টেনে বলে

“জানি না আপনার কি ক্ষতি করেছি। তবুও সরি। ক্ষমা করে দিন আমায়। আর কখনো আপনার সামনে আসবো না।
অর্ণব তন্নীর কথা শুনে বিরক্ত হয়। মেয়েটা প্রতিবাদ করতে জানে না। জানলে অবশ্য এরকম মারের দাগ থাকতো না শরীরে।
অর্ণবের কৌতুহল আরও বেরে যায়। নিশ্চিত শরীরে আরও দাগ আছে। হাত এগিয়ে দিতেই তন্নী ছিঁটকে খানিকটা দূরে সরে যায়। ভয়াত্মক চোখে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের দিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তোমায় চুমু খেতে চাইছি না। জাস্ট তোমার পেছনটা দেখবো।
তন্নীর চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় দেখবে মানে?
অর্ণব মাথা চুলকে বলে
“আই মিন কাঁধটা। কেউ মেরেছে তোমায়? গলা টিপে ধরেছিলো? গলায় আঁচড়ের দাগ + আঙুলের দাগ বসে গেছে। তো শরীরেও থাকবে নিশ্চয়। সেটাই দেখবো।
বলে আবারও অর্ণব ধরতে যায়। তন্নী কাচুঁমাচু হয়ে যায়। ভয়ে কাঁপছে রীতিমতো। অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টানে।
নজর বুলোয় তন্নীর পুরো শরীরে।

” রিলাক্স
টার্চ করছি না। জাস্ট বলো কে মেরেছে?
তন্নি জবাব দেয় না । অর্নব কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়
“নাম কি তোমার? নামটা তো বলতে পারবে?
তন্নী শুকনো ঢোক গিলে বলে
” তন্নী।

“ইডিয়েট কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে পুরো নাম বলতো হয়। বাই দ্য ওয়ে কাল চলে কেনো গিয়েছিলে? তোমার জন্য আমার বোনু কেক কাটে নি। রাতে কিছু খায় নি পর্যন্ত। আমার চুল টেনে ছিঁড়ে দিয়েছে। ভেবে তো ছিলাম আজকে তোমাকে এই পুকুরে চুবিয়ে রাখবো।
তন্নি মাথা নিচু করে শুনছে। কি জবাব দেবে জানা নেই।
” ওকে যাও

নেক্সট টাইম এমন কিছু করবা না যাতে কেউ হার্ট হয়। অথৈ তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
তন্নী অর্ণবের দিকে এক পলক তাকিয়ে ছোট ছোট পা ফেলে চলে যায়। অর্ণব পুকুর পাড়ে বসে পড়ে। এখনো তার বুক টিপটিপ করছে। কি ছিলো মেয়েটার চোখে? একেবারে হার্টে আঘাত করে দিয়েছে চোখ দুটো।
অথৈ দাঁড়িয়ে ছিলো। তন্নি আসতেই জিজ্ঞেস করে কোথায় গিয়েছিলো। তন্নী পেটে কথা রাখতে পারে না। সব কথাই অথৈকে বলে দেয়। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। গড়গড় করে বলে দিয়েছে সব।
অথৈ দুই বিনুনি ধরে ঢুলে ঢুলে হাঁটতে হাঁটতে বলে

“কোথায় কোথায় টাচ করেছে তোকে?
” পেছনে দেখতে চেয়েছিলো। আর হাতে মুখে।
অথৈ চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে।
“পেছনে দেখতে চেয়েছিলো?
” হুমমম
“আজকে ওর খবর আছে।
” একটু বেশি করে বকে দিস।
“ঠিক আছে

কলেজ ছুটির পরে দুই জন হাত ধরে গেইটের কাছে আসতেই অবাক হয়। অর্ণব গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অথৈ রেগে তন্নীকে ফেলেই অর্ণবের কাছে চলে যায়
” তুই তন্নীর পেছনে দেখতে ক চেয়েছিস কেনো? লজ্জা নেই তোর?
“দেখতে চেয়েছি দেখি নি তো।
বলেই অর্ণব গাড়ির দরজা খুলে দেয়।
” দেখতে গেলে আমি তোর হাত ভেঙে দিবো। আমার তন্নীকে টার্চ করবি না একদম।
“ঠিক আছে চুমু খাবো।

তন্নী পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণবের কাঠকাঠ গলার কথা শুনে লজ্জা পাচ্ছে সে। লোকটা কেনো আসলো এখানে?
অথৈ রেগে বলে
” তোর ঠোঁট আমি শেলাই করে দিবো। আমার বান্ধবীর সাথে ফ্লাট করা শিখিয়ে দিবো তোকে।
অর্ণব অথৈয়ের চুল টেনে দিয়ে গাড়িতে বসতে বসতে বলে
“তুই শিখিয়ে দিলে তো মিটেই গেলো।
অথৈ শুধু দাঁত কটমট করে কিছু বলে না।

” অথৈ আমি যাচ্ছি। কাল দেখা হবে।
“আমার সাথে চল। একই রাস্তা তো
” প্লিজ না অথৈ।
অথৈ এক পলক অর্ণবের দিকে তাকায়।
অর্ণব ততক্ষনে আবার গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে
“উঠছিস না কেনো? আমি কি ড্রাইভার না কি যে ওয়েট করবো?
অথৈ উঠে পড়ে। তন্নী উল্টো দিকে হাঁটতে থাকে

” ওই অথৈয়ের তন্নী তুমি কোথায় যাচ্ছো?
তন্নি এক পলক পেছন ঘুরে তাকায়।
“ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি যেতে পারছি না।ভালো থাকবেন।
বলেই তন্নী বড়বড় পা চালিয়ে যেতে থাকে। অর্ণব তাকিয়েই থাকে।
অথৈ বলে ওঠে

” ও কখনোই আমাদের গাড়িতে ওঠে না। বাড়িতে নিয়েছিলাম অনেক কষ্টে কিন্তু তুই অপমান করলি। আর কখনোও আসবে না বাড়িতে।
অর্ণব বাঁকা হেসে গাড়িতে বসে পড়ে।
“হাই লেভেলের এটিটিউট দেখছি।

তন্নী বাড়ি যেতেই দেখতে পায় বাড়িতে কিছু অপরিচিত মানুষ এসেছে। তাদের হাসিমুখে আপ্যায়ন করছে ইতি বেগম। তারেককে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
বাড়িতে মেহমান আসলে সাধারণত তারেক আর তন্নীই আপ্যায়ন করে। আজ হঠাৎ উল্লোটা হলো?
তন্নী মাথার ঘোমটাটা আরেকটু টেনে এগিয়ে যায়।
ইতি বেগম তন্নিকে দেখেই হাসি মুখে বলে

” ওই তো আমার মেয়ে চলে এসেছে।
“আমার মেয়ে” কথাটা বুকে বিঁধে তন্নির। মা কখনোই এভাবে আদর করে কথা বলে নি৷ আজকে হঠাৎ কি হলো?
ওনাদের মধ্যে একজন মহিলা বলে ওঠে
“মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ
মেয়ে তো ভালোই।
ইতি আবারও বলে

” বলেছিলাম না আমার মেয়েকে পছন্দ হবেই।
এতোক্ষনে তন্নী বুঝতে পারে। আসলে তারা তন্নীকে দেখতে এসেছে। বিয়ের কথাবার্তা চলছে তার। সবার দিকে চোখ বুলায় তন্নী। নজর পড়ে এক পাশে বসে থাকা হাবলার মতো রোগাপাতলা একটা ছেলের দিকে। হা করে তাকিয়ে আছে তন্নীর দিকে। তন্নী বুঝে যায় এই ছেলেটার জন্য তন্নীকে দেখতে এসেছে।
তন্নীর চোখ দুটো ভিজে ওঠে। ব্যাগ শক্ত করে ধরে দৌড়ে রুমে চলে যায। শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ২

জীবন এতো কঠিন কেনো?
বেঁচে থাকা এতো কষ্টের কেনো?
মা ছাড়া দুনিয়া অন্ধকার কেনো?

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৪