মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ২

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ২
তানিশা সুলতানা

শরীরের ক্ষতর চেয়ে মনের ক্ষত বেশি পিড়া দেয়। শরীরের ক্ষত একসময় সেরে যায় কিন্তু মনের ক্ষত কখনোই সারে না। অর্ণবের অথৈকে বলা কথা গুলো শুনে ফেলে তন্নি। সে বেরিয়েছিলো আশেপাশটা এক পলক দেখতে। তখনই শুনে ফেলে। এক মুহুর্তও দেরি করে না। দুই হাতে মুখ চেপে দৌড়ে বেরিয়ে যায় রাজপ্রাসাদ ছেড়ে। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলে এই বাড়িতে আর জীবনেও পা রাখবে না।

গেইটের বাইরে এসে থেমে যায় তন্নি। পেছন ঘুরে বড় রাজপ্রাসাদটা এক পলক দেখে নেয়।
“আই এম সরি অথৈ। ভেরি সরি
এতোখন আটকে রাখা কান্না আর চেপে রাখতে পারে না। দুচোখ বেয়ে কয়েকফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে বাড়ির পথে হাঁটতে থাকে। রাত হয়েছে নয়টা কি সাড়ে নয়টা। হাতে ঘড়ি না থাকায় সময়টা দেখতে পারলো না। এটাই তন্নির কাছে অনেক রাত।
বাড়ির দুরত্ব খুব বেশি না। তবে রাস্তা অন্ধকার। হেডলাইন গুলোও জ্বলছে। তন্নি একটু বেশিই ভীতু। কথা ছিলো অথৈ দিয়ে যাবে তন্নিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তন্নি ভয়ে সিঁটকে পা বাড়াচ্ছে। ঘাম ছেড়ে দিয়েছে শরীরে। আজেবাজে নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ফোনও নেই তন্নির কাছে।
হঠাৎ একটা বাইক থামে তন্নির সামনে। ভয়ে খানিকটা চিৎকার দিয়ে ওঠে তন্নি। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। হাত পা কাঁপছে তার।
সাগর তারাহুরো করে হেলমেট খুলতে খুলতে বাইক থেকে নামে।

” হেই তন্নি আর ইউ ওকে?
পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে তন্নি পিটপিট করে চোখ খুলে। সাগরকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। লোকটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে তন্নি।
তন্নির মুখে হাসি ফুটে ওঠে
“সাগর ভাইয়া আপনি এখানে?
সাগর তন্নির কলেজের বড় ভাই। সে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। আর তন্নি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
সাগর বলে

” তোমাকে একা একা অথৈয়ের বাড়ি থেকে বের হতে দেখলাম তাই আসলাম। একা কেনো তুমি? আর এখনো তো কেক কাটা হয় নি। তুমি আগেই চলে আসলে যে?
তন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না। আমতা আমতা করতে থাকে।
সাগর বুঝে যায়। তাই চট করে কথা ঘুরিয়ে বলে
“চলো তোমার নামিয়ে দেই।
” না না ভাইয়া লাগবে না।
“পাকনামি করো না। চলো জলদি।

তন্নি আর না করে না। এমনিতেই সে ভয় পাচ্ছিলো। এখন এই আশ্রয় টুকু সে হাত ছাড়া করতে চায় না।
সাগর বাইকে উঠে মাথায় হেলমেট পড়ে নেয়। তন্নি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে সাগরের পেছনে বসে পড়ে। সাগরের কাঁধে হাত রাখে না। কাচুমাচু হয়ে বসেছে। সাগর বুঝতে পারে তন্নি তাকে ছুঁতে চাচ্ছে না। তাই সে আস্তে আস্তে বাইক চালাতে থাকে।
তন্নির বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে বাইক থামাতে বলে তন্নি। সাগর থামিয়ে ফেলে। তন্নি নেমে যায়।

” এখানে নামলে কেনো?
“এটুকু আমি একাই যেতে পারবো। মা দেখলে ভীষণ মা*রবে আমায়। ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।
সাগর মুচকি হাসে।
” আচ্ছা যাও। আমি দাঁড়িয়েছি। তুমি বাড়িতে ঢুকলেই চলে যায়।

তন্নি মাথা নারিয়ে হাঁটতে থাকে। সাগর দেখতে থাকে তন্নিকে। এই মেয়েটা ভীষণ ভালো লাগে সাগরের। বোকা টাইপের। কথা কম বলে। কেউ ধমক দিলে পাল্টা জবাব না দিলে তাকে সরি বলে চলে আসবে।
তন্নি বাড়িতে ঢোকার আগে এক পলক তাকায় সাগরের দিকে। হাত নাড়িয়ে বাই বলে তাকে। সাগরও হেসে হাত নাড়ায়।
টিনের গেইট সরিয়ে ভেতরে ঢোকে তন্নি।

ইতি বেগম চেঁচামেচি করছে তারেকের সাথে। তন্নি বেশ বুঝতে পারছে এখন সব ঝড়ঝাপটা তার ওপর এসে পড়বে। ভয়ে আত্না কাঁপছে তার। মায়ের হাতের মা*ই*র যে খুব কঠোর। আজকে আর খাওয়াও হবে না।
চোখ দুটো টলমল করে ওঠে তন্নির।
মাথা নিচু করে মায়ের রুমের সামনে যায়।
ইতি বেগমের চোখ পড়ে তন্নির ওপর।

“এখানে কি চাই? মজা দেখতে এসেছিস? সংসারে আগুন লাগিয়ে এখন শান্তি পাচ্ছিস? ম*রতে পারিস না তুই? কতো মানুষ ম*রে যায়। তুই কেনো ম*রিস না?
তন্নির দুই গাল বেয়ে পানি পড়তে থাকে। মাথা নিচু করে ফেলে। ইতি বেগম যেতে দিতে চাইছিলো না তন্নিকে। তারেক যেতে বলেছে। সেই থেকে দুজনের ঝগড়া চলছে৷ অথৈয়ের মন রাখতে সে মায়ের কথা না শুনেই গিয়েছিলো।
তারেক উঠে চলে যায়। কিছুই বলে না ইতি বেগমকে। ইতি বেগম সুযোগ পেয়ে যায়। সে কথাবার্তা ছাড়া তন্নিকে মা*রতে থাকে।

যতখনে তার রাগ না কমে ততখন মারতে থাকে৷ তন্নি চুপচাপ মাইর খায়। কোনো প্রতিবাদ করে না।
সেই রাতে সত্যিই তন্নির খাওয়া হয় না। সে নিজের ছোট্ট রুমের ছোট বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
এই দুনিয়াতে যার মা নেই তার কেউ নেই। মা ছাড়া দুনিয়া অন্ধকার।

পরের দিন তন্নি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সব কাজ করে ফেলে৷ রাত না খাওয়ার ফলে প্রচন্ড খিধে লেগেছিলো। তাই রান্না শেষ করে খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষে কলেজ ড্রেস পড়ে বেরিয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে।
অথৈদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হয় কলেজে। প্রতিদিন তন্নি অথৈদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। অথৈ বের হলে দুজন এক সাথে কলেজে যায়।

আজও তন্নি অথৈদের বাড়ির সামনের বিশাল বট গাছটার ছায়ায় দাঁড়ায়। সকালেই ঝাঁঝালো রোদ উঠেছে যা একদম শরীরে বিঁধছে। রোদ থেকে বাঁচতেই দাঁড়িয়েছে আড়াল।
অর্ণব জগিং করতে সবেই বাড়িতে ঢুকছিলো। তখনই তার নজর পড়ে তন্নির দিকে। রাগে শরীর জ্বলে ওঠে। এই মেয়েটার জন্য অথৈ কালকে কেক কাটে নি। এতোগুলো গেস্টদের সামনে অপমানিত হতে হয়েছে ওদের। অথৈ রাতের খাবারটাও খায় নি। কেঁদেছে সারা রাত। কাল অথৈ যতটা কেঁদেছে আজকে এই মেয়েটাকেও ততটা কাঁদাবে অর্ণব। ভাব দেখানো ছোটাবে।

চোয়াল শক্ত করে তন্নির দিকে এগিয়ে যায়। ধপ করে তন্নির হাত ধরে টানতে থাকে। তন্নি চমকে ওঠে। অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে
“আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? সমস্যা কি আপনার? এমন করছেন কেনো?
অর্ণব তন্নির কথায় কান দেয় না। তাকে টানতে টানতে বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়।
এই দিকটা একদম নিরিবিলি। মানুষজনের চলাচল খুবই কম। পুকুর পাড়ের সিঁড়ি ডিঙিয়ে একদম কিনারায় এসে হাত ছেড়ে দেয় তন্নির। এখান থেকে ফেলে দেবে এই মেয়েকে।

তন্নির কান্না করে ফেলেছে৷ বড়বড় চোখের বড়বড় পাপড়ি গুলো পানি ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেছে।
অর্ণব তন্নির দিকে তাকাতেই থমকে যায়। হার্টবিট লাফিয়ে ওঠে তার।
তন্নি দুই হাতে চোখের পানি মুছে অনুনয়ের সুরে বলে
” প্লিজ আমাকে যেতে দিন। এখানে কেনো আনলেন? আমি কি কোনো ভুল করেছি? করে থাকলে সরি।
তন্নির কথা অর্ণবের কানে ঢুকলো কি না বোঝা যাচ্ছে না। তবে তন্নির ঠোঁট নারিয়ে কথা বলা গুলো ঝুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে অর্ণব।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১

তন্নি অর্ণবের থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে চলে আসতে নেয়। অর্ণব তন্নির হাত ধরে তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে তন্নির দুই গালে হাত রেখে আনমনে বলে ওঠে
“মায়াবতী

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ৩