মায়াবতী সিজন ২ গল্পের লিংক || তানিশা সুলতানা

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ১
তানিশা সুলতানা

“আসতাগফিরুল্লা”
অনুষ্ঠান বাড়িতে প্রচুর আলোড়ন বলে অর্ণব তার গার্লফ্রেন্ড নিধিকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসেছে৷ গেইটের এই দিকটা ফাঁকা। গেস্টরা সব ভেতরে। দুজন একান্তে কিছুখন সময় কাটাবে। দুজন দুজনকে অনুভব করার জন্য ফাঁকা জায়গা খোঁজা। তো ফাঁকা জায়গা পেয়ে দুজনই খুশি হয়।

সময় নষ্ট না করে একে অপরকে জড়িয়ে সবেই ঠোঁটে ঠোঁট মেলাতে যাবে তখনই পেছন থেকে কেউ বলে ওঠে। অর্ণব আর নিধি ছিঁটকে দুজন আলাদা হয়ে যায়। তন্নি চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। হাত পা কাঁপছে তার। ছি ছি কি দেখলো সে এটা? মানুষ এতোটা নিলজ্জ কি করে হতে পারে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অর্ণব ভ্রু কুচকে তন্নির পা থেকে মাথা অব্দি দেখতে থাকে। একে চেনে না অর্ণব। পোশাক দেখে মনেও হচ্ছে না যে সে গেস্ট। কারণ ওদের সব গেস্টরা খুবই গর্জিয়াস সেজে এসেছে। আর এই মেয়ে নরমাল থ্রি পিছ। খানিকটা রং চটা। মাথায় ইয়া লম্বা ঘোমটা। হাতে একটা প্যাকেট আর পায়ে স্যান্ডেল।
নিধি অর্ণবের হাত ধরে নেকা গলায় বলে

“বেবি হু ইজ সী?
অর্ণব বলে ওঠে
” আই ডোন্ট নো। মেবি ভিখারি টিখারি হবে।
তন্নি এবার চোখ তুলে তাকায়।
নিধির ফোন বেজে ওঠে
“জাস্ট টু মিনিটস জান।
বলেই নিধি অন্য দিকে চলে যায়
“এই মেয়ে কে তুমি?

বাড়িতে কেনো ঢুকছো? কার থেকে পারমিশন নিয়েছো তুমি? না কি অনুষ্ঠান বাড়ি দেখে খাওয়ার জন্য ঢুকেছো?
গেইটের বাইরে গিয়ে দাঁড়াও দারোয়ান চাচা তোমায় খাবার দিয়ে আসবে।
অর্ণবের ঝাঁঝালো গলার কথা শুনে থমকে যায় তন্নি। অপমানে গা রিনরিন করে ওঠে। হাতে থাকা গিফটের প্যাকেট শক্ত করে চেপে ধরে। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছে না সে।
মেয়েটাকে চুপ থাকতে দেখে অর্ণব বিরক্ত হয়। বা হাতে বড়বড় ঝাঁকড়া চুলগুলো পেছনে ঠেলে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে

” শুনতে পেলে না কি বললাম? আবার বলতে হবে?
কোথা থেকে আসে এসব
ডিজগাস্টিং
তন্নি দু পা পিছিয়ে যায়।
তখনই অথৈ ভাড়ি গাউনটা দুই হাতে ধরে দৌড়ে আসে তন্নির কাছে। তন্নির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে
“জান তুই এসেছিস? কখন থেকে ওয়েট করছি তোর জন্য। তুই না আসলে আমি কেকই কাটতাম না।

অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে অথৈ চেনে?
তন্নি কথা বলে না। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে।।
তন্নির থেকে জবাব না পেয়ে অথৈ ছেড়ে দেয় তন্নিকে। তন্নির চোখে পানি দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে। দুই হাত তন্নির দুই গালে রেখে বলতে থাকে
” কি হয়েছে তন্নি তোর? কেউ কিছু বলেছে? কে কি বলেছে বল আমায়? কাঁদছিস কেনো তুই? আমি কি ভুল করেছি? আই এম সরি জান। প্লিজ কাঁদিস না।
অথৈকে বিচলিত দেখে অর্ণব বলে ওঠে

“হু ইজ সী?
” মাই বেস্টফ্রেন্ড
ইসরাত জাহান তন্নি
অর্ণব মুখ ফসকে বলে ওঠে “ওহহ শীট”
অথৈ ভ্রু কুচকে তাকায়। তার বোঝা হয়ে গেছে তার নাক উঁচু ভাই তন্নিকে কিছু বলেছে। অপমান করেছে। তাই তন্নি কাঁদছে।

অথৈ এক হাতে তন্নিকে জড়িয়ে নিয়ে শক্ত গলায় অর্ণবকে বলে ওঠে
“তোর সাহস হয় কি করে আমার বন্ধুকে কিছু বলার?
অর্ণব পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলে

” বললেই হতো সে গেস্ট। আমি ভেবেছিলাম বাইরের কেউ
এনি ওয়ে
তোমার ঠিক হয় নি হাবলার মতো চুপ করে থাকা।
বলেই অর্ণব ফোন কানে দিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। অথৈ তন্নির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে
“আমাকে ক্ষমা করে দে তন্নি। ভাইয়ার হয়ে আমি সরি বলছি। প্লিজ চলে যাসস না। তুই চলে গেলে আমিও তোর সাথে যাবো। বলে দিলাম
তন্নি নাক টেনে একটু হাসার চেষ্টা করে।

” যাবো না
অথৈ খুশি হয়ে যায়। আবারও জড়িয়ে ধরে তন্নিকে।
“ভালোবাসি তোকে ভীষণ।
তন্নি অথৈয়ের পাগলামি দেখে শব্দ করে হেসে ফেলে।
” আমিও ভালোবাসি।

এই প্রথম বার অথৈয়ের বাড়িতে এসেছে তন্নি। অথৈরা বড়লোক জানতো। কিন্তু এতোটা বড়লোক জানা ছিলো না।
অথৈ তন্নিকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। কেক কাটতে এখনো কিছু সময় বাকি আছে। অথৈয়ের বাবা আনোয়ার বিদেশ থেকে ফিরছে। আর কিছুখন সময় লাগবে। এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে বেশ কিছুখন আগেই।
সে আসলে কেক কাটবে।

“তন্নি তুই বস। আমি যাবো আর আসবো।
অথৈ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তন্নি অথৈয়ের রুমটা দেখতে থাকে।
অথৈ রুম থেকে বের হতেই অর্ণব অথৈয়ের হাত টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
” আমাকে এখানে আনলি কেন?
অর্ণব অথৈয়ের দুই কাঁধ জড়িয়ে বলে
“সরি ইয়ার আমি বুঝতে পারি নি।
অথৈ অর্ণবের হাত ছাড়িয়ে দেয়

” কি বুঝতে পারিস নি তুই? তন্নি একটা মানুষ এটা? গেস্ট বাদ দিলাম। আমার বেস্টফ্রেন্ড সেটাও বাদ দিলাম। এটলিস্ট একটা মানুষ তো ও। কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হয় এটাও জানিস না তুই।
“সরি তো
নেক্সট টাইম এমন হবে না।
অথৈ কথা বলে না। অর্ণব বুঝতে পারে বোনের রাগ খুব সহজে পড়বে না।

” বোনু শোন। তোর বেস্টফ্রেন্ড তন্নি না কি
ওকে তোর একটা ড্রেস পড়িয়ে দে। কেক কাটার সময় ও পাবলিক প্লেসে বেরুবে। আমার ফ্রেন্ডরা থাকবে নিধি থাকবে। ওরা কি বলবে বল? তোর বেস্টফ্রেন্ডেরই তো অপমান হবে।
অথৈ অবাক হয়ে অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে
“ড্রেসআপ দিয়ে মানুষত্ব বোঝায় ভাইয়া? তোর চিন্তা ধারা এতোটা নিচু কেনো?

তোর গার্লফ্রেন্ড বা ফ্রেন্ডদের সাথে আমার তন্নিকে কখনোই মিট করাবো না। যারা ড্রেসআপ দেখে মানুষকে সম্মান দেখায় তাদের আমার ভালো লাগে না। আর সেরকম হলে আমি কেকই কাটবো না। আমার কাছে কেক কাটার থেকেও বেশি ইমপটেন্ট আমার তন্নি। মাইন্ড ইট

অথৈ বেরিয়ে যায়। অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টানে। নিধি এই মেয়েকে দেখলে কি রকম রিয়েক্ট করবে? ড্রেসআপ চেঞ্জ করানো গেলে নিধিকে বোঝানো যেতো সে মেয়ে এটা না।
সবটা ওই মেয়েটার জন্য। কি সুন্দর রোমান্টিক একটা মুডে ছিলো। সবটা নষ্ট করে দিলো। নেক্সট টাইম সামনে আসলে দুই গালে দুটো থা*প্প*ড় বসিয়ে দিতে হবে।

মায়াবতী সিজন ২ পর্ব ২