এই মন তোমারি পর্ব ১৪

এই মন তোমারি পর্ব ১৪
নুজাইফা নূন

-” শাফায়াত, শফিকুল দেওয়ান দুজনে একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছেন। নাজমা দেওয়ান তাদের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে কিচেনে সূরার পছন্দের জাও ভাত আর আলু ভর্তা করছেন।মেয়েটা সবার মতো পরোটা ,আলু ভাজি, ডিম ভাজি, ডাল, এসব খাবার খেতে পারে না। নাজমা দেওয়ান ও তাকে জোর করে না এসব খাবার খাওয়ার জন্য।

বরং তিনি সূরার পছন্দের খাবারের লিস্ট তৈরি করেছেন। তিনি চেষ্টা করেন সূরার পছন্দের খাবার তৈরি করে দিতে।নুজাইফার প্রাইভেট আছে বিধায় সে চা বিস্কুট খেয়ে পড়তে চলে গিয়েছে। এখন টেবিলে রয়েছে শুধু শাফায়াত আর শফিকুল দেওয়ান। দুজন দুজনের মতো করে খাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।যেনো কেউ কাউকে চেনে না। ডাইনিং টেবিলে পিনপতন নিরবতা কাজ করছে। নিরবতা ভেঙ্গে শফিকুল দেওয়ান বললেন, হ্যাঁ রে শাফি তুই কি ঐ গাইয়া মেয়েটাকে তোর ব‌‌উ হিসেবে মেনে নিয়েছিস?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” হঠাৎ এই কথা কেনো বাবা?”
-” না মানে আমি লক্ষ্যে করছি তুই মেয়েটার অনেক কেয়ার করছিস। থানা থেকে ফিরে এসে নিজে ফ্রেশ না হয়ে মেয়েটার পেছনে সময় ব্যয় করছিস। আবার এক ঘরে এক বিছানায় রাত্রি যাপন করছিস।তোর মতিগতি তো আমার ভালো ঠেকছে না শাফি।”

-” মেয়েটা অনেক অসুস্থ্য বাবা। আমার কথায় কষ্ট পেয়ে মেয়েটা বাড়ি ছাড়া হয় ।মেয়েটার বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে।আজ যদি মেয়েটার সাথে আরো খারাপ কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না বাবা। আম্মি আমার উপর ভরসা করে মেয়েটা কে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আমার জন্যই মেয়েটার আজ এই অবস্থা। আমি তার সেবা যত্ন করছি তার মানে এটা নয় যে আমি মেয়েটাকে আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি।তাকে ব‌উ হিসেবে মানি বা না মানি তার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় সে একটা মানুষ।আর মানুষ মানুষের জন্য।”

-” তবু ও তোর মেয়েটা কে এতো সময় দেওয়া উচিত নয়। মেয়েটাকে দেখাশোনা করার জন্য তোর আম্মি, নুজাইফা , মাজেদা সবাই রয়েছে। তোর কেনো মেয়েটার দায়িত্ব নিতে হবে? যেখানে তুই বিয়েটা’ই মানিস না।”
-” মাজেদা খালা গ্ৰামে গিয়েছে ।ফিরতে একটু দেরি হবে। তার গ্ৰামের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান রয়েছে। অনুষ্ঠান শেষ করে তারপর তিনি আসবেন।নুজাইফা বাচ্চা একটা মেয়ে।ও কিভাবে আর একটা মেয়েকে সামলাবে বাবা? আর র‌ইলো আম্মির কথা। আপনি নিশ্চয় ভালো করে জানেন আম্মি অসুস্থ্য। তারপর আবার রাত জাগলে তিনি আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়বেন।যেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।তাই আম্মির জন্য হলেও আমাকে মেয়েটার সেবা শুশ্রূষা করতে হচ্ছে।তার পেছনে সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।”

-” মেয়েটার সাথে সময় কা’টা’তে কা’টা’তে কখন যে তার মায়ায় পরে যাবি নিজে ও বুঝতে পারবি না।আর মায়া এক অদ্ভুত জিনিস।তোকে না দিবে ভালো থাকতে আর না দিবে ভুলে থাকতে।তাই সময় থাকতে সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত তোর।আর যাই হোক এমন গাইয়া অশিক্ষিত মেয়ে নিয়ে কখনো সংসার হয় না। তুই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি। আমি আমার ফ্রেন্ড হারুন কে কথা দিয়েছি তার মেয়ে তরী কে আমি এই পরিবারের পুত্রবধূ করে নিয়ে আসবো।

মেয়েটা দেখতে যেমন মিষ্টি তেমনি অনেক স্মার্ট , অনেক শিক্ষিত। কিছুদিনের মধ্যে তার গ্ৰাজুয়েশন শেষ হয়ে যাবে। আমাদের পরিবারের পুত্রবধূ হ‌ওয়ার সব যোগ্যতা রয়েছে তরীর মধ্যে। আমি চাই তরীর গ্ৰাজুয়েশন শেষ হলে মহা ধুমধাম করে তোদের চার হাত এক করে দিতে। তোদের বিয়ের ব্যাপার টা যেহেতু এখনো পাঁচ কান হয় নি ,তাই আমার মনে হয় যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েটা কে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত।যদি ও তোর আম্মি এই ব্যাপারে সম্মতি দিবেন না। তবু ও আমাদের হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।”

-” শফিকুল দেওয়ান এর কথার পিঠে কি বলা উচিত বুঝতে পারে না শাফায়াত। শাফায়াতের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে শফিকুল দেওয়ান বললেন, বাইরের একটা মেয়ের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের কি অবস্থা হয়েছে একবার ও আয়না তে দেখেছিস? সেলুনে যাস না কতোদিন? চুল বড় বড় হয়ে গিয়েছে , দেখতে কেমন বাঁদরের মতো লাগছে।”

-” ঐ ব্যস্ততার জন্য সেলুনে যাওয়ার সময় হয় না।আজ শিওর সেলুনে যাবো বাবা।”
-” ঠিক আছে ।তবে মেয়েটার থেকে দূরে দূরে থাকবি। একদম পাত্তা দিবি না।আমি তরীর সাথে খুব শীঘ্রই তোকে মিট করাবো। মেয়েটাকে একবার দেখলে তুই আর না করতে পারবি না।”
-” শাফায়াত কিছু না বলে থানায় চলে আসে। শাফায়াত নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে এমন সময় শাকিল একটা ফাইল নিয়ে এসে শাফায়াতের হাতে দিয়ে বললো,

-” স্যার এই ফাইলে ভিক্টিমের সমস্ত তথ্য রয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে সন্দেহ জনক কিছু পাওয়া যায় নি। ধারণা করা যাচ্ছে এটা একটা এক্সিডেন্ট কেস। জানা গিয়েছে এই মহিলা একজন রাতের প্রজাপতি ছিলো।আই মিন নাইট ক্লাবে নাচ গান করতো। মহিলার লাশ ‌সকালে নদীর তীরে পাওয়া গিয়েছিলো।নাইট ক্লাবের মালিক সুজনের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো। তিনি রাতে ক্লাবে নাচ গান শেষ করে অতিরিক্ত ড্রিঙ্ক করে মাতাল অবস্থায় সুজনের গাড়ি চালাচ্ছিলেন।যার দরুন নিজের ব্যালান্স ঠিক রাখতে পারেন নি।মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য তার এক্সিডেন্ট হয় ।আর তিনি সিটকে নদীর তীরে গিয়ে পড়ে।”

-” মহিলাটার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছো তার মৃত্যুর ব্যাপারে?”
-” তার পরিবার বলতে শুধু মাত্র নিজের একটা বোন রয়েছে।যিনি হসপিটালে এডমিট রয়েছেন।বোনের চিকিৎসার খরচ জোগাতে’ই তাকে নাইট ক্লাবে নাচ গান করতে হতো।”
-” তুমি এখানে থাকো আমি হসপিটাল থেকে একবার ঘুরে আসি।”
-” ঠিক আছে স্যার আসুন।”

-” শাফায়াত থানা থেকে বেরিয়ে নিজের বাইক নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে আসে। শাফায়াত ডক্টরের সাথে কথা বলে জানতে পারে পেশেন্টের নাম মিলি। ক্যান্সারে আক্রান্ত। কিছুক্ষণ আগে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।যার কারণে শাফায়াত মহিলাটার সাথে দেখা করতে পারে না।সে সোজা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে সেলুনে চলে যায়। সেলুনে গিয়ে চেয়ারে বসতে’ই নাপিত শাফায়াতের চুলে কাঁচি চালাতে চালাতে বললো, স্যার আপনি কি বিবাহিত?”

-” নাপিতের প্রশ্নে চমকে উঠে শাফায়াত।সে মনে মনে বললো, আশ্চর্য! আমি কি আজ বাসা থেকে বিবাহিতদের ট্যাগ লাগিয়ে বেরিয়েছি? অতঃপর শাফায়াত তার সামনে থাকা আয়নায় ভালো করে নিজেকে দেখে বললো, না! শরীরের কোথাও কোন প্রকার আঁচড়ের চিহ্ন নেই। তাহলে লোকটা কিসের ভিত্তিতে অনুমান করলো যে আমি বিবাহিত?”

-” শাফায়াতের থেকে রেসপন্স না পেয়ে নাপিত আবারো বললো, স্যার আপনি নিশ্চয় নতুন নতুন বিয়ে করেছেন? নতুন নতুন বিয়ে করলে ছেলেদের সাথে একটু আধটু হয় এরকম। আমার সাথে ও এমন হয়েছিলো স্যার।”
-“শাফায়াত নাপিত কে ধমক দিয়ে বললো, তখন থেকে কি যা তা বকে যাচ্ছো। আমি কি একবারও বলেছি যে আমি বিবাহিত?”

-” নাপিত তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের মাথা থেকে কিছু একটা নিয়ে শাফায়াতের হাতে দিয়ে বললো , তাহলে এটা কি স্যার।”
-” শাফায়াত বড়ো বড়ো চোখ করে বললো , উকুন! আমার মাথায় উকুন আসলো কোথা থেকে?”

এই মন তোমারি পর্ব ১৩

-” আমারো ঠিক একই প্রশ্ন। সাধারণত মেয়েদের মাথায় উকুন থাকে।আর নতুন নতুন বিয়ের পর উকুন বাবা ব‌উয়ের মাথা থেকে জামাইয়ের মাথার রক্তের স্বাদ নিতে আসে। এখন আপনি যদি বিবাহিত না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মাথায় উকুন আসলো কোথা থেকে?”

এই মন তোমারি পর্ব ১৫