সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৫

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৫
রাউফুন

সুপ্রিয় ঘর কাঁপিয়ে হো হো করে হাসলো। বিউটি ধুমধামে সুপ্রিয়র বুকে কিল বসালো৷ হিসহিসে গলায় বললো,
‘অসভ্য, বেয়াদব লোক, এতো খারাপ কেন আপনি?খালি ফাজলামো। এভাবে কেউ মজা করে? খুব খারাপ আপনি। খুব, খুব, খুব!

‘তো কিভাবে করে ফাজলামো? আমাকে শেখাবি? এই মুহুর্তে তোর মুখটা দেখার মতো ছিলো।’
বলেই সুপ্রিয় আবারও শব্দ করে হাসলো। বেশ বুঝেছে সে, বিউটি কতটা ঘাবড়ে গেছিলো। বাকি দুই রুমের এখনো তালা লাগানো আছে। সেগুলো খোলা হয়নি এখনো! বিউটি মুখ গোমড়া করে সুপ্রিয়র থেকে দূরে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আবার হাসছেন? খালি ফাজলামো? আমাকে ভয় দেখানো বের করে দিবো আগে বাসায় যেয়ে নিই।’
‘বাসায় গিয়েই বিয়ে করবো। ছোঁয়ার পার্মিশান থাকবে তখন।’
‘আমি কিন্তু কা’টা’যুক্ত ফুল। ছুঁতে এলেই কা’টাই দংশিত হবেন।’
‘বার বার দংশিত হলেও ফুল তো ছোঁবই।’
‘দেখা যাবে হুহ্!’

‘মুখে বড় বড় কথা বললেও ঠিকই ভয় পাস আমাকে।’
বিউটি সুপ্রিয়র কথা পাত্তা দিলো না। বললো,
‘আচ্ছা বাকি দুই রুম কেন খোলা হয়নি? ওগুলো কি পরিষ্কার নেই? থাকা যাবে না?’
‘কেন, বাকি রুম পরিষ্কার দিয়ে কি করবি তুই?’

‘কি করবো। এমনিতেই জিজ্ঞেস করছিলাম।’
‘এমনিতেই না, তুই এখনো ভয় পাচ্ছিস আমাকে! ভাবছিস আমার সঙ্গে এক রুমে থাকতে হয় যদি?’
‘না আমি মোটেও এরকম ভাবছিলাম না!’
‘তাহলে তোর মুখে ভয়ের ছাপ কেন?’
বিউটি জিহবা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।

সুপ্রিয় ভুল বলেনি। সে সত্যিই ভয় পাচ্ছে। রাতে যদি সুপ্রিয় তার সঙ্গেই একই রুমে থাকতে চাই? ভুল করেও যদি কিছু অনর্থ হয়ে যায়? ভাবলেই গায়ে কা’টা দিচ্ছে!
‘কি হলো বল? আমাকে এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি কি কিছু করেছি?’
‘নাহ। উফফ বেশি কথা বলছেন আপনি!’

‘শোন মেয়ে, এক ঘরে কেন, এক বিছানাতেও যদি তোর সঙ্গে থাকি, তবুও তুই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিস। তোর সুপ্রিয় ভাই তোকে ছুঁয়ে অপবিত্র করবে না।’
‘সে আমি জানি। অযথাই আপনার ভয় দেখানোতে ভয় পেয়েছি। আর এমন করবেন না।’
‘ঠিক আছে আর এমন হবে না।’

‘আমি বাকি রুম গুলো দেখতে চাই।’
‘এখন না পরে। রুম গুলো পরিষ্কার করিনি। আমি যখন চাইবো তখন খুলে ভেতরে যাবো। তার আগে ঐ রুমের দিকে পা দিবি না তুই!’

বাকি দুই রুম নিয়ে বিউটির কৌতূহলের শেষ নেই। সুপ্রিয় ভাই এতো লুকোচুরি কেন করছে? কেন রুম গুলো খুলতে দিতে চাইছে না? সুপ্রিয় এই রুম পরিষ্কার করলেও বাকি দুই রুম কেন পরিষ্কার করান নি? এখন কেন এতো লুকোচুরি করছে সুপ্রিয় ভাই?

সুপ্রিয় জানে বিউটির মনে অনেক প্রশ্ন৷ সে এসব এক্ষুনি তাকে বলতে পারবে না। হ্যাঁ সে এর আগেও রাতের অন্ধকারে এখানে এসেছে, তখনকার বিষয় ছিলো সম্পুর্ন অন্য। সে বেশি হলে দশ মিনিট থাকতে পেরেছে রুমে ঢুকে। আর দিনের বেলাতে এখানে আসলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। বিউটি সঙ্গে থাকাই অনেক কিছুই সহজ হয়েছে। এখানে এসে অনেক প্রমাণ খুঁজে গেছে সে। তার চোখে এখনো অব্দি কিছু পড়েনি। কিন্তু যা তার চোখে পড়েনি, সেটা তো অন্য একজনের চোখে পড়তেই পারে। তার বিশ্বাস আজ সে আর বিউটি কিছু না কিছু অবশ্যই পাবে। হতেই তো পারে বিউটির চোখে আলাদা কিছু পড়লো।

যথা সময় মুসা চেয়ারম্যান তাদেরকে ডেকে নিয়ে গেলো। বাড়ির কাছে গিয়ে চেয়ারম্যান মুসা বললেন, ‘মা জননী, কিছু মনে করো না। আমি একটু বাজারে যাবো। বাজার থেকে একেবারে টাটকা দই আনবো। ফ্রেশ দই। এখানকার দই খুবই ভালো৷ যাও ভেতরে যাও। আমি এক্ষুনি আসছি। চিন্তা নাই তোমাদের চেনে আমার স্ত্রী!’
‘সমস্যা নেই আংকেল।’ সুপ্রিয় বিনয়ের সঙ্গে বললো।
‘এই খোকন, এই মেহমানদের ঘরে নিয়া যা।’

রাতের খাবার আয়োজন টা বেশ জমজমাট করে করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের একটি মেয়ে একটি ছেলে আছে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেটা রাজনীতি করে বেড়ায় গ্রামে। বলা যায়, বাবার ক্ষমতা আর টাকায় ফুটানি করে এলাকায় মস্তানি৷ সব কিছুর খোঁজই আছে সুপ্রিয়র কাছে।

খোকনের নজর তখন সম্পুর্ন বিউটির দিকে। অল্প বয়সী ছেলে, মনের বাসনা, কামনা অত্যন্ত বা’জে। চোখ মুখে যেনো লালসার ছাপ স্পষ্ট! সুপ্রিয় সবটাই অবলোকন করলো। কিন্তু এখন আপাতত সয়ে নিলো। কার দিকে তাকিয়েছে এই ছোকরা তা-তো জানে না। জানলে এই ভাবে কু’দৃষ্টি দেওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজ করতো না। চেয়ারম্যান মুসার স্ত্রী মুনিয়া বেগম ব্যস্ত হয়ে তাদের কাছে এলো। পান খাওয়ায় টকটকে লাল ঠোঁট আর তরমুজের বীজের মতো দাঁত গুলো হাসার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হলো।

‘আহেন আম্মা আহেন। তিঁনি আমারে কইছে আউজকা মেহমান আইবো। আপনারাই যে তারা দেইখা বুঝলাম। বাজান আহেন। এইহানে বহেন গরীবের বাড়িতে আপনাদের মতো মানুষের পা পড়ছে। কত যে খুশি হইছি।’
‘এতো ব্যস্ত হবেন না আন্টি। আমরা খুবই সাধারণ মানুষ।’
‘উনি কই গেলেন?’
‘আন্টি, উনি কে?’

মুনিয়া লজ্জা পেলেন। সুপ্রিয় বিউটিকে খোঁচা দিয়ে বললো, ‘উনি আংকেলকে উনি বলছেন গর্ধব!’
বিউটি সপ্রতিভ হেসে বললো, ‘ওও আংকেল তো দই আনতে গেছেন!’
‘দেহো তো মানুষডার কাম। ঘরে তো দই আছেই টাটকা ভালো দই। তোমরা একটু বহো আমি আইতাছি।’
বিউটির কেমন যেনো অস্বস্তি হচ্ছে। কেমন সন্দেহ হচ্ছে তার। খোকনের চাহনি এখনো তার দিকে। বিউটি রেগেমেগে তাকাতেই খোকন বিশ্রি হেসে বললো,

‘আরে আপা, আপনের সঙ্গে তো পরিচয়ই হইলো না। আমি খোকন। এই বাড়ির ছোটো পোলা! আব্বা আম্মার এক মাত্র পোলা হওয়াই আদর যত্ন অনেকটাই বেশি।’
‘এই যে এখানে কিন্তু আমিও আছি সালাবাবু! আমার সঙ্গেও পরিচিত হও। খালি আপার সঙ্গে পরিচিত হলেই হবে? দুলাভাইয়ের সঙ্গেও তো পরিচিত হতে হবে!’ সুপ্রিয়র শীতল অথচ ঠান্ডা কন্ঠঃস্বর!

খোকন যেনো শিউরে উঠলো সেই কন্ঠ শুনে। সুপ্রিয় উঠে এসে হাত বাড়িয়ে দিলে খোকন অপ্রতিভ ভাবে হাসলো। হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে বুঝলো তার হাত জ্বলছে। সুপ্রিয় খোকনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,’অল্প বয়স, এতো রক্ত গরম স্বাভাবিক? গ্রামে যা করো, করে বেড়াও এসব কিন্তু আমার অজানা নয়৷ এতো ছ্যাবলামো করো না হ্যাঁ? ফল ভালো হবে না। কু’দৃষ্টি দেওয়ার আগে ভাবা উচিত, কার দিকে সেই দৃষ্টি রেখেছো!

নিজের কামনাকে বেশি ছলকাতে দিও না কেমন? সামলাও নিজের চোখ আর মনষ্কামনাকে। তুমি যে আমার বউয়ের দিকে ত্রিশ বার তাকিয়েছো আমি দেখবো না ভেবেছো? এই সুন্দর হাত, পা, চোখ, হৃদপিন্ড, কখন, কোথায়, কিভাবে খোয়া যায় বলা তো যায় না! সাবধানে হ্যাঁ?’

সুপ্রিয় খোকনের শার্টের কলার ঠিক করে দিয়ে সরে এলো। খোকন যেনো ততক্ষণে জমে গেছে। ভয়ে পাংসুটে বর্ণ ধারণ করেছে তার মুখ। সে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে যেনো।
বিউটি কিছু বুঝলো না। সুপ্রিয় ভাই কি এমন বললো যে খোকন এভাবে ভয় পেলো? এই লোকটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। উফফ! এই অসভ্য ধরনের ছেলের সঙ্গে এতো কথা বলতে হবে কেন তার?
মুনিয়া বেগম টেবিলে খাবার সাজিয়ে তাদের ডাকতে এলো। তার মধ্যেই মুসা চেয়ারম্যান এসে উপস্থিত হয়েছে। বিউটি আর সুপ্রিয় খেতে বসলো। দুজনেই খুবই অল্প খেলো। খেতে খেতে অনেক গল্পও হলো। শেষ পাতে মুনিয়া বেগম দই নেওয়ার কথা বললেন।

‘আসলে আন্টি, এতো খেয়েছি যে আর কিছুই মুখে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আপনি খুব ভালো রান্না করেন আন্টি।’
মুনিয়া বেগম খুশি হয়ে গেলো সুপ্রিয়র কথায়। গদোগদো হয়ে বললো, ‘তোমরাই বুঝলা বাবা, আমার রান্নার কদর তো আর কেউ-ই করে না। সারাডা জীবন মানসের কাছে নাম পাইলাম না।’

‘আহা, মুনিয়া বেশি কথা বলিও না। ওদের দই দাও।’
সুপ্রিয় ইশারায় দই খেতে বারণ করলো। বিউটি তড়িঘড়ি করে বললো,
‘না, না আংকেল খাবো না। অনেক খেয়েছি!’

‘তা বললে তো হবে না মা। তোমাদের জন্যই তো দই আনা। তোমরা না খেলে আমরাও যে খেতে পারবো না।’
মুনিয়া বেগম দই নিয়ে সুপ্রিয়র দিকে গেলেন। যখনই সুপ্রিয়র যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন মুনিয়া বেগম, সুপ্রিয় পা আটকে দিলো। পা আটকে গিয়ে মুনিয়া বেগমের হাত থেকে দই টপাশ করে নিচে পড়ে গেলো। বিউটি তাকালো সুপ্রিয়র দিকে।

মুসা চেয়ারম্যান রাগে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে সুপ্রিয় আর বিউটির সামনেই স্ত্রীর গালে চ’ড় বসিয়ে দিলেন। মুনিয়া বেগম টলমলে চোখে তাকালো বিউটি আর সুপ্রিয়র দিকে। লজ্জায় মাথা নত করলেন তিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় সুপ্রিয় আর বিউটি হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সুপ্রিয় মনে মনে নিজেকে হাজারটা গা’লি দিলো নিজের ভুলের জন্য। তার সন্দেহের কারণেই সে ইচ্ছে করে পা বাড়িয়ে দই দেওয়া থেকে বাঁধা দিলো মুনিয়া বেগমকে।

‘একটা কাজ ঠিক করে করতে পারো না। মেহমানের সামনে আমার মান সম্মান শেষ করে দিলে একদম!’
মুসার গর্জনে পুরো বাড়ি যেনো কেঁপে উঠলো৷ মুনিয়া বেগম অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে প্রস্থানের আগে বলে গেলেন, ‘ঘরের মধ্যে গায়ে হাত উডান ঠিক আছে, তাই বইলা মেহমান গো সামনেও? আল্লাহর কাছে বিছাড় দিলাম, কোনোদিন আপনের ভালা হইবো না।’

বিউটির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। তাদের জন্য অসহায় মুনিয়া বেগমের এতো অপমান সইতে হলো। সুপ্রিয়র ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে রাগে, দুঃখে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে বিউটি আর সুপ্রিয় চলে এলো। আসার আগে বিউটি মুনিয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলে ক্ষমাও চেয়েছে। বিষয়টা অত্যন্ত পীড়া দিচ্ছে তাকে। বাড়ি এসেও তার মনটা গুমোট হয়ে ছিলো। বিউটি সুপ্রিয়র কাধে হাত রেখে বললো, ‘এই মুসাকে তো ভালো মানুষ মনে হচ্ছিলো, আর দেখলেন সে স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে কেমন আচরণ করলেন? ছিঃ ছিঃ মানুষের সামনে ভালো মুখোস পড়ে ঘুরে এই লোক? সামান্য দইয়ের হাড়ির জন্য আমাদের সামনেই গায়ে হাত তুললেন?’

সুপ্রিয়র বিচক্ষণ মস্তিষ্কে তখন ঘুরছে অনেক কিছু! সে কপাল, ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,
‘উঁহু সামান্য ব্যাপার ছিলো না এটা। একবার ভেবে দেখ, উনার বাড়িতে দই ছিলো, তবুও তিনি দই আনতে বাজারে গেলেন। কারণ উনি মনে মনে অন্য কিছু চাইছিলেন৷ তারপর সামান্য দই ফেলার জন্য কিভাবে মাড়লেন নিজের স্ত্রীকে।

দই নিয়ে খটকা আমার তখন হয় যখন শুনলাম বাড়িতে দই থাকা সত্ত্বেও মুসা চেয়ারম্যান দই আনতে গেছেন। তুই হইতো লক্ষ্য করিস নি, আমি পা লাগিয়ে দিয়ে ফেলে দিয়েছি মুনিয়া বেগমকে। যেনো ঐ দই আমাদের খেতে না হয়। আমার সন্দেহ দইয়ে কিছু মেশানো ছিলো। আর কোনো কার্যসিদ্ধি করার জন্যই মুসা চেয়ারম্যান আমাদেরকে সরাতে চাইছিলেন।’

সব কিছু যেনো বিউটির মাথার উপর দিয়ে গেলো। জটলা পেঁ’কে গেলো। এর একটা ব্যবস্থা করতেই হয় তবে! সুপ্রিয় বিউটিকে স্বস্তি দিতে বললো,
‘আচ্ছা এতো ছোট মাথায় এতো চাপ দিস না৷ আমি দেখছি ব্যাপারটা।’

রাত দুটো কিংবা তিনটা। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। বিউটি আর সুপ্রিয় বাকি দুই রুমে ঢুকে কিছু খুঁজে চলেছে। এর মধ্যেই বিউটির কাছে পরিষ্কার কেন সুপ্রিয় ভাই তাকে খুলতে দেইনি তখন রুম দুটো। এই ঘর দুটোতেই সেদিন র’ক্তার’ক্তি হয়েছিলো। রুমের কোনো জিনিসে হাত লাগানো হয়নি এতো বছরেও৷ আহ কি বিমর্ষ আর মুমুক্ষু ঘটনা ঘটেছিলো সেদিন। সুপ্রিয়র বাবা মায়ের খু’ন করা হয়।

এখনো সেদিনের কথা মাথায় এলে সুপ্রিয় দিশাহারা হয়ে পড়ে। খু’নি যতোই চালাক হোক না কেন, কোনো না কোনো ভুল করেই যাবে। সুপ্রিয়র মনে আছে ঐ মুখোশধারী লোক গুলোর হাতে, এবং পিঠে বেশ কিছু খঞ্জর ছিলো। সেই সময় হাত থেকে সটকে পড়েছিলো একজনের খঞ্জর। সেই খঞ্জর অনেক খোঁজা খুঁজির পরেও সুপ্রিয় পায়নি। কোন জায়গায় পড়েছে সেটাই মনে পড়ছে না সুপ্রিয়র।

বিউটি আর সুপ্রিয় এভিডেন্স খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে গেছে। দুটো রুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও তেমন কিছু পেলো না৷ একটা ভ্যাপসা গন্ধে রুম জুড়ে বিরাজমান। দেয়ালের আস্তর খুলে খুলে রুমের আশেপাশে পড়ে আছে। বেশ অনেকক্ষন খুঁজেও যখন তারা কিছু পেলো না সুপ্রিয় তখন হতাশ হয়ে বসে পরলো৷ বিউটি তখনো হাল ছাড়েনি। সে আরেক দফায় খোঁজ চালাতে লাগলো। হঠাৎই বিউটির পায়ে কিছু বিঁধলো। তীব্র ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো বিউটি।

‘আহ, সুপ্রিয় ভাই, এদিকে আসুন৷ আমার পায়ে কিছু একটা দিয়ে লেগেছে।’
হন্তদন্ত তৎক্ষনাৎ সুপ্রিয় এগিয়ে এলো। বিউটির পা চেপে ধরে পায়ে সাদা রুমাল বেধে দিলো।যেনো রক্ত পড়া বন্ধ হয়৷

‘বাসায় গিয়ে পরিষ্কার করে দেবো। এখন একটু কষ্ট কর প্লিজ!’
বিউটি মাথা নাড়লো। তাদের দুজনের হাতেই গ্লাভস। বিউটির পায়ের গোড়ালির কাছে সরু কিছু দিয়ে গুতো লেগেছে। সুপ্রিয় লাইট এগিয়ে ধরলো৷ রুমের একদম কোণার কাছে সরু ছু’রির মাথা দেখা যাচ্ছে। সুপ্রিয় নিজের কাছ থেকে একটা ছুরি বের করলো। বেশি উঁচু মতো মাটি পড়ে ওখানে গেঁথে আছে জিনিসটা। খঞ্জর খানা উদ্ধার করে পরবর্তীতে চিরুনি তল্লাশি করে একটা চুম্বক আর চু’ড়ি পেলো। চুড়িটা তার মায়ের। চুড়ি আর চুম্বক বুকে চেপে ধরলো সুপ্রিয়৷

এরকম চুম্বক দিয়ে কত খেলেছে সুপ্রিয়। স্টিলের থালায় বালি তুলে তার নিচে চুম্বক রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে চুম্বকের সাহায্যে ক্ষুদ্র চুম্বকের গুড়ো উদ্ধার করেছে বালি থেকে। শৈশবের কতশত স্মৃতি। তার মায়ের তাড়া খেয়েছে কত শত দুষ্টুমির কারণে৷ আজ সেই বাবা মায়ের লা’শ কোথায় আছে তাও জানে না সে।

তার বুকের বাম পাশে তীব্র থেকে তীব্র ভাবে ব্যথা অনুভব করলো। সুপ্রিয়র চোখে পানি চিকচিক করছে। ধপ করে বসে পরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সুপ্রিয়। বিউটির ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে সুপ্রিয়র এই অবস্থা দেখে। সে নিজের হাতে চোখ মুছে দিলো সুপ্রিয়র। হাঁটু মুড়ে বসে সুপ্রিয়র মাথা নিজের বুকে চেপে ধরলো বিউটি। সে বুঝতে পারছে
সুপ্রিয়র বুকের ভেতর চাপা কষ্টটা কতটা তীব্র।

সুপ্রিয় বিউটিকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষন কাঁদলো। বিউটিও বাঁধা দেইনি। এতো বছরের চাপা কষ্টটা একটু লাঘব হওয়া প্রয়োজন।
সুপ্রিয় কিছু একটা আন্দাজ করে আরও বেশ কিছু জোড়ালো প্রমাণ সহ ভালো ভাবে সুরক্ষিত করে বিউটিকে নিয়ে বাইরে বের হলো। তার মনে হচ্ছে এখানে থাকাটা আর সেইফ হবে না। তাদের সঙ্গে আসার সময় যা কিছু এনেছিলো তার সবকিছুই সঙ্গে নিয়ে নিলো সুপ্রিয়।

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৪

বিউটি অবাক হয়ে শুধু দেখছে সুপ্রিয়কে। এ যেনো অন্য একজন। তার হাতটা সুপ্রিয় ভাই এতোটাই তীব্র ভাবে চেপে ধরেছে যেনো সে এক্ষুনি পালিয়ে যাবে। তারা তাদের গাড়ি রাখার স্থানে গিয়ে বড়সড় একটা ঝটকা খেলো তারা। গাড়িটা যথাস্থানে নেই। গাড়ির চাবি তো সুপ্রিয়র কাছে। গাড়ি গেলো কোথায় তবে? তার মানে শত্রু পক্ষ টের পেয়ে গেছে তারা কে!
‘ওওওহ শিট! বিউটি, আর এক মুহুর্ত না! চল দ্রুত!

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৬