ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৬

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৬
Raiha Zubair Ripte

সুমনা বেগম মা’রা গিয়েছে আজ সাতদিন হলো। সুহাসিনী ও সুভাষিণী ঘরকুনো হয়ে গেছে। ঘর থেকে দু বোন বের হয় না খুব একটা। এক রুমেই দু বোন থাকে। মাঝেমধ্যে দু বোন জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে।
সুমনা বেগম মা’রা যাওয়ার তিনদিন পর পুলিশ এসেছিল বাড়ি। সুভার থেকে কিছু ইনফরমেশন নিতে। সুভাষিণীকে ইন্সপেক্টর শরাফত উল্লাহ জিজ্ঞেস করেছিল,,

” সুভাষিণী সেদিন ঠিক কি ঘটেছিল। আপনার মায়ের এমন অবস্থা আর আপনারই বা ওমন অবস্থা হলো কি করে?
সুভাষিণী ইন্সপেক্টরের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” মায়ের সাথে ওসব কি করে হয়েছে আমি জানি না। আমি তো ঘুমিয়েছিলাম দরজা চাপিয়ে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরক্ষণেই বিড়াল মনে করে আর উঠি নি। আবার ঘুমিয়েছিলাম। এরপর হটাৎ ওয়াশরুমের চাপ আসলে শোয়া থেকে উঠে ফ্লোরে পা রাখতেই তরল কিছুর সাথে পা পিছলে পড়ে যাই। মা কে অনেক ডেকেছিলাম কিন্তু মায়ের সাড়াশব্দ পাই নি। তার বেশ কিছুক্ষণ পর হয়তো সুহা ফিরে বাসায়।
রুদ্র মনযোগ দিয়ে পুরো কথা টা শুনে। চট করে বলে উঠে,,

” ভাবি সেদিন কি বাসায় কেউ এসেছিল?
” আমার যতোদূর মনে পড়ে আমি জেগে থাকা কালীন কেউ আসে নি। ঘুমানোর পর কেউ এসেছিল নাকি জানি না।
অভ্র ইন্সপেক্টরের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” শুনা শেষ এখন সুভাকে রুমে যেতে দিন। দেখছেন তাো ওর শরীরের কন্ডিশন ভালো না।
ইন্সপেক্টর শরাফত উল্লাহ হাত কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,,

” উনা কে নিয়ে যান। উনার ছোট বোনের সাথে কথা আছে।
অভ্র সুভা কে রুমে রেখে সুহা কে নিয়ে আসে। সুহা যা যা দেখেছে সব খুলে বলে দেয়। ইন্সপেক্টর সব শুনে চলে যায়।
ইন্সপেক্টর শরাফত উল্লাহ বাসা থেকে বের হতেই তার ফোনে ফোন কল আসে। ফোনের ওপাশ থেকে কনস্টেবল শেখর ফোন দিয়ে জানায় পোস্টমর্টেমের রিপোর্টের কথা। যেটা আজ এক দিন ধরে এসেছে অথচ ইন্সপেক্টরের সেদিকে খেয়াল নেই।

শেখর বুঝতে পারে না এই শরাফতের কি দেখে সরকার চাকরি দিছে।
শরফাত ফোন রেখে বিরক্তি নিয়ে চলে যায়। সে চাইছে কেসটা না আগাক আর তার কনস্টেবল তার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে। এই কনস্টেবল কে দ্রুত বদলিয়ে অন্য কোথাও পাঠাতে হবে।

সুহাসিনীর নানি সিমরান ফরিদি রফিক সাহেবের কাছে বলে দিয়েছে সে তার নাতনি কে নিজের সাথে নিয়ে যাবে। তার কথা কয়েকদিন পর রফিক অফিসে চলে যাবে সুভা তার শশুর বাড়ি আর ফাঁকা বাড়িতে সুহা একা থাকবে!
সুমি বেগম ও কথায় তাল মেলায় মায়ের সাথে। রফিক সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। শাশুড়ী শালির সাথে তর্কেও যেতে চাইছে না। নীলীমা বেগম ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে বলে,
” খালা আপনি সুহা কে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার বাড়ি তো পাশেই। সুহা না হয় আমার বাড়ি থাকবে নীলার সাথে।
সিমরান ফরিদি নীলীমার কথা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,

” সে তো তোমরা বাড়ির পাশেই থাকো। কিন্তু থেকেই বা কি হলো? আমার মেয়ের সাথে কি ঘটে গেলো টের ও তো পেলে না। আমার নাতনীর সাথে হলেও টের পাবা না। আর তাছাড়া তোমার বাড়ির বিয়ের বয়সী ছেলে আছে ভুলে গেছো?
নীলীমা বেগমের মুখটা চুপসে যায়। তিনি কিছু বললেন না। সুহা এসেছিল বাবা কে ঔষধ খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু নানির মুখে এমন কথা শুনে শুধায়,,

” নানি আমি কোথাও যাবো না বাবা কে ছেড়ে। আমি চলে গেলে বাবাকে দেখবে কে? আমার বাবা একা হয়ে যাবে।
” কিন্তু সুহা দিদি ভাই,,,
” কোনো কিন্তু না নানি। আমি আমার বাড়ি আমার বাবা ছাড়া কোথাও থাকতে পারবো না। বাবা চলো কিছু খেয়ে ঔষধ খাবা।

কথাটা বলে বাবার হাত ধরে টেবিলে নিয়ে যায়। ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে ভেজে দুটো পরোটা বানিয়ে দেয়।
রফিক সাহেব একটা পরটা খেয়ে আর বাকিটা সুহা কে খাইয়ে দেয়।
” সুহা তোমার নানি ভুল কিছুতো বলে নি মা। আমি অফিসে চলে গেলে তো তুমি বাসায় একা হয়ে যাবা।
” আর বাবা আমি চলে গেলে যে তুমি একা হয়ে যাবা। রান্না করতে পারো না। অফিস থেকে এসেই না খেয়ে শুয়ে থাকবে। আমি কাছে থাকলে তোমার দেখভাল করতে পারবো।
রফিক সাহেব আর কথা বাড়ালেন না।

রুদ্র ক্লাবে বসে আছে তার মাথায় ঢুকছে না কে এমন টা করলো?
” আচ্ছা পাবেল এমন টা কে করতে পারে?
” আচ্ছা সুহা দের কি কোনো শত্রু ছিল আই মিন কারো সাথে ঝগড়া?
” আমার জানা মতে নেই কারন আঙ্কেল আন্টি খুব সহজ সরল স্বভাবের তাদের অন্য কারো সাথে ঝামেলা ইম্পসিবল।
” পুলিশ কি বললো?
” এখনো কোনো ক্লু পায় নি।
” কাল কিন্তু ইলেকশন মাহতাব রা ফাঁদ পেতে থাকবে। সাবধানে থাকতে হবে রুদ্র।
” হুমম।

মায়ের রুমে বসে আছে সুহা। দৃষ্টি তার দেওয়ালে টাঙানো মায়ের ছবির দিকে৷
” বলেছিলাম মা তুমিহীনা বাঁচতে পারবো না কিন্তু দেখো দিব্যি তুমি ছাড়া বেঁচে আছি। আচ্ছা মা কেমন আছো ঐ অন্ধকার কবরে? খুব কষ্ট হয় জানো মা যখন ঘরে এসে দেখি তুমি নেই। মা মা গন্ধ আর নাকে ভেসে উঠে না। রোজ সকালে রান্না ঘর থেকে রান্নার সুভাষ আর টিং টং আওয়াজ ভেসে আসে না।

খোলা লম্বা চুল শাড়ি পড়ে কেউ সোফায় বসে চুল শুকায় না। কেউ আর বলে না সুহা তরকারি টা নাড়া দিয়ে আয় তো। সব কেমন একদিনের মধ্যে উলটপালট হয়ে গেল।
সেদিন দিনটা অন্য রকম হলেও তো পারতো। আমি এক্সাম হল থেকে ফিরে এসে দেখতাম তুমি আর আপু সোফায় বসে আছো আমার অপেক্ষায়।

আমায় দেখে তোমাদের দুজনের মুখে হাসি ফুটে উঠত। এগিয়ে এসে কপালে চুম্বন দিয়ে বলতে,, এই তো এসে গেছে আমার মা টা। আর আমিও মা মা গন্ধ টা পাওয়ার জন্য তোমায় জড়িয়ে ধরতাম। কিন্তু কি হলো মা ছেড়ে চলে গেলে না ফেরার দেশে।
কথাটা বলতেই কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে। আলমারি খুলে মায়ের শাড়ি গুলো তে হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। মা নেই কথাটা ভাবলেই বুক চিঁড়ে কান্নারা বেরিয়ে আসে।

” পুলিশ কি এখনো কিছু বের করতে পারলো না বাবা? তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুরে? মায়ের মৃত্যুর দশ দিন হতে চললো তারা তো কোনো ক্লু খুঁজে পেলো না।
হঠাৎ নিচ থেকে বোনের আওয়াজ পেয়ে সুহা কাপড় গুলো আলমারি তে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
” তাই তো বাবা আপু তো ঠিক বলেছে। উনাদের তো কেস টা নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখছি না।
রফিক সাহেব সোফায় বসে কপালে হাত ঠেকিয়ে বলেন,,

” রুদ্র দেখবে বলেছে বিষয় টা।
” উনি কি করে দেখবে বাবা। উনি কি প্রশাসনের লোক?
” তা নয় কিন্তু রুদ্র বলেছে উপর মহলের সাথে কথা বলবে বিষয় টা নিয়ে।
রুদ্র রেগে আছে পুলিশদের এমন অনিহা দেখে। যা করার তাকেই করতে হবে। আজ ইলেকশন আগে সেটা ঠিক মতে হয়ে যাক পরে দেখবে বিষয় টা।

ইলেকশন মাঠে মাহতাব বার বার রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র সেদিকে চেয়েও না চাওয়ার ভান করে থাকে। হঠাৎ এক লোকের সাথে ধাক্কা লাগে রুদ্রর। লোকটার মুখ ঢাকা মাথায় ক্যাপ। সরি রুদ্র বলে লোকটা একটা কালো ব্যাগ নিয়ে চলে যায় ভেতরে। রুদ্র ইট’স ওকে বলে হাঁটতে শুরু করে। পাবেল দৌড়ে রুদ্রর নিকট আসে হাঁপাতে হাঁপাতে।
” রুদ্র এখানে কোথাও একটা বোম লাগানো আছে। আমি আসার পথে মাহতাব কে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে দেখলাম।

” কি বলছো হ্যাঁ এতো সিকিউরিটি থাকা শর্তেও কি করে,,
” শ’য়তানরা সব রকম পরিস্থিতিতে ফাঁদ পাতার জন্য বসে থাকে।
” এখন এই বোমা কোথায় সেটা কি করে বুঝবো হাজার হাজার মানুষ এখানে। এতো বড় জায়গা। এক কাজ করো পুলিশদের জানাও সাধারণ লোকদের কানে যেনো বোমার নিউজ না যায়। আর আমি এদিক টা দেখছি, কুইক।
রুদ্র হন্নে হয়ে এদিক ওদিক খুঁজছে বোমা কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। মাহতাব রুদ্রর অস্থিরতা দেখে হেঁসে উঠে। রুদ্র অস্থিরতা কে আরেকটু বাড়ানোর জন্য বলে,,

” হেই রুদ্র আর জাস্ট টেন মিনিটস দ্যান সব শেষ। বাই বাই।
কথাটা বলে মাহতাব চলে যায় বাইক নিয়ে। রুদ্র হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে আর নয় মিনিট আছে। কি ভাবে কি করবে এই টুকু সময়ে। মাথার চুল গুলে বা হাত দিয়ে খামচে ধরে।

এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে মাস্ক পড়া লোকটার কথা। সে রুদ্রর নাম বলেছিল। তার হাতে কি বোমা ছিল? দৌড়ে সিসিটিভি রুমের দিকে যায়। পুরো সিসিটিভি চেক করে দেখে লোকটা ব্যাগ হাতে নিয়ে অফিস রুমে ঢুকে আবার ব্যাগ সমেত বের হয়। রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে অফিস রুমে ঢুকে হন্নে হয়ে সব খুঁজে কিন্তু কিছু পায় না।
ঘড়িতে সময় দেখে আর মাত্র এক মিনিট আছে।

সব শেষ হয়ে যাবে তাহলে! এতো গুলো মানুষের প্রান। কথাটা ভাবতেই অফিস রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরে আসে যেখানে গাড়ি পার্ক করা। হঠাৎ জোরে বিস্ফোরণের শব্দে রুদ্রর মস্তিষ্ক নাড়া দিয়ে উঠে। কিছুটা দূরে এক গাড়ি ব্লাস্ট হয়। মূহুর্তে চারিদিকে হইচই ছুটাছুটি শুরু হয়। রুদ্রর ফোনে ফোন আসতেই রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আছে,,

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৫

” দেখবি না রুদ্র গাড়িতে কে ছিল? তোর খুব কাছের কেউ। যাকে নিজের চাইতেও অনেক ভালোবাসিস। হয়তো তার দেহ টা এতোক্ষণে আ’গুনে পু’ড়ে ভস্ম হচ্ছে খুব কষ্ট পাচ্ছে। যা দেখ কত যন্ত্রণা পাচ্ছে।
কথাটা বলে মাহতাব ফোন রেখে দেয়। রুদ্রর মাথা হ্যাঙ হয়ে গেছে। মাহতাব কার কথা বললো। কে ছিলো গাড়িতে?

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৭