ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ২

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ২
Raiha Zubair Ripte

“ বাবা প্লিজ আমি এখনই কোনো আকদ টাকদ করতে চাই না। তুমি কিছু একটা করে আটকাও। আর এমনিতেও উনাকে জাস্ট বোনের দেবর হিসেবেই চিনি। উনার সাথে আমার সেভাবে কখনো কথাবার্তা বা মিলমিশ হয় নি। আমার সময় চাই।
রফিক সাহেব মেয়ের পানে চাইলো। মেয়ের কথাটাও ফেলে দেবার মতো নয়। সত্যি এই সম্পর্ক গড়ার আগে সময় চেয়ে নেওয়া উচিত ছিলো। মেয়ের মাথায় হাত রাখলো রফিক সাহেব।

” আচ্ছা বেশ তুমি যা চাইছো তাই হবে। তোমার সময় চাই। এক্সামের তো আরো ছয়-সাত মাস আছে। সেই ছয় সাত মাস পর কি বিয়ে করতে আপত্তি আছে?
সুহাসিনী সময় নিলো। কিছু একটা ভেবে বলল,,
” না বাবা নেই।
রফিক সাহেব স্মিত হাসলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ড্রয়িং রমে চলছে পিনপিনে নীরবতা। কারো মুখে কোনো টু শব্দ নেই। রুদ্র তাকিয়ে আছে শীতল চোখে সুহাসিনীর দিকে। সুহাসিনীর দৃষ্টি ফ্লোরে। রুদ্র তপ্ত শ্বাস ফেললো। সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,
” আচ্ছা বিয়ে আকদ যাই হোক না কেনো সুহাসিনীর এইচএসসি পরীক্ষার পরেই হবে। এখন জাস্ট সুহাসিনী আমার সামনে সম্মতি দিলেই চলবে।
সুহাসিনী মাথা খানিক উঁচু করে। লুৎফর রহমান গলা ঝেড়ে নেয়। সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” এখন কি তোমার অমত আছে সুহা মা?
সুহাসিনী লুৎফর রহমানের দিকে তাকায়। মুখ দিয়ে বললো না। কিন্তু মাথা নাড়িয়ে বললো। যার অর্থ তার কোনো অমত নেই এক্সামের পরে বিয়ে বা আকদ হলে।
স্মিত হাসলো রুদ্র। বিকেলের দিকে সুহাসিনী ও তার বাবা মা চলে গেলো। রুদ্র নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সুভাষিণী দরজা নক করে। বেলকনি থেকে রুদ্র জিজ্ঞেস করে,,কে?

” আমি সুভাষিণী রুদ্র।
রুদ্র বেলকনি থেকে রুমে আসে। দরজা খুলে সুভাষিণী কে রুমে ঢোকার জন্য সরে দাঁড়ায়। সুভাষিণী বিছানায় গিয়ে বসে।
” ধন্যবাদ ভাবি?
” কিসের জন্য?
” তখন আপনি আমায় না বোঝালে হয়তো অনেক বড় ব্লান্ডার করে ফেলতাম। রাগের মাথায় নিজের সিদ্ধান্ত কে সুহাসিনীর উপর চাপিয়ে দিয়ে ফেলেছিলাম।
সুভাষিণী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাতে থাকা ছোট কাগজটা রুদ্রর হাতে ধরিয়ে দেয়। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে,, কি এটা?

” সুহার ফোন নম্বর। সুহার ফোনে তোমার নম্বর সেভ করে দিয়েছি। আর ভাই রুদ্র রাগ কমানো চেষ্টা করো। তোমার রাগ কে সুহা ভয় পায়। সুহা ভয় পায় এমন কোনো কাজ বা কথা তার সামনে করো না বা বলো না।
” চেষ্টা করবো ভাবি। কিন্তু একটা মেয়ে যে এতো ভয় পায় তা আপনার বোন কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না ভাবি বিলিভ মি।

” সুহা একটু ভিতু প্রকৃতির চুপচাপ ইন্টোভার্ট। তার সাথে তোমার সফটলি কথা বলতে হবে রুড হয়ে না।
” আচ্ছা।
” তাহলে আসি। ফোন দিয়ে কথা বলবে। আর সুহা কে স্বাভাবিক করবে যেনো সে তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে অপ্রস্তুত না হয় বারবার।
রুদ্র মাথা নাড়ায়। সুভাষিণী রুদ্রর রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুদ্র নম্বর টা ফোনে সেভ করে সুহা নাম দিয়ে। আজ আর ফোন দিবে না সুহা কে। খাটের পাশে রাখা গিটার টা নিয়ে আবার বেলকনিতে চলে আসে রুদ্র। গিটারে টুংটাং সুর তুলে।

সুহাসিনী বাসায় আসার পর থেকেই এটা ওটা জিজ্ঞেস করে পা’গল বানিয়ে ফেলছে সুহার থেকে চার মাসের ছোট নীলা। নীলা সুহাসিনীর ফুফুর মেয়ে সুহাসিনী দের বাসার পাশেই তাদের বাসা। সুহাসিনী বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। কিছুটা রাগ নিয়ে বলে,,
” সমস্যা টা কি তোর এভাবে আমার পেছন পেছন ঘুরছিস কেনো যা বাসায় যা রাত হয়েছে অনেক।
” যাবো না বাসায়। তার আগে বল রুদ্র কেমন আছে? আর তোরা ও বাড়ি যাবি আমাকে বলিস নি কেনো? তাহলে আমিও যেতাম।

” তুই যেয়ে কি করতি? আর তাছাড়া আপু তো কয়েক দিন পর আসবেই।
” ধুর আমি তো যেতাম সুভা আপুর দেবর কে দেখতে। ইশ কি এটিটিউড, কি ড্যাশিং,দেখতে জুশশশ টাইপের,আহ যখন আড় চোখে তাকায় না তখন একদম চাহনি টা বুকের ঠিক এইখানে এসে লাগে। বুকের বাম পাশে হাত দেখিয়ে বলে নীলা।
সুহাসিনী দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। মনে মনে বলে,, ভাগ্যিস নীলা কে নেওয়া হয় নি। আমার আর উনার বিয়ের কথা শুনলে নিশ্চিত সেই রকমের ছ্যাকা খেতো।

” এই সুহা উনার নাম্বার আনিস নি?
সুহাসিনী বিছানায় থাকা ফোনটার দিকে তাকায়। আসার সময় তার বোন রুদ্রর নম্বর সেভ করে দিয়েছিল। চোখ ফিরিয়ে নীলার দিকে তাকায়। কেনো জানি নাম্বরের কথা বলতে ইচ্ছে করছে না সুহাসিনীর।
” না আনি নি।
নীলার মুখ চুপসে যায়।
” কেনো?

” তোর দরকার তুই গিয়ে নিয়ায়। আর তাছাড়া উনার ফেসবুক একাউন্ট না তোর কাছে আছে?
নীলা বিছানায় শুয়ে পড়লো। ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নার অভিনয় করে বলে,,
” ব্যাটা আমায় ঝুলিয়ে রাখছে তিন মাস ধরে। আমার আইডি কি চিনে না বল?
” হয়তো চিনে না। আর তোর আইডিতে তো তোর পিক নেই। হয়তো অপরিচিত ভেবে এক্সসেপ্ট করেন নি।
” তোর ফোন টা দে তো সুহা।
” কেনো?
” আহা দে না। আমার কয়েকটা জুশ জুশ পিক আছে তোর ফোনে সেগুলো নিবো।

সুহা নিজের ফোনটা সরল মনে নীলার দিকে এগিয়ে দেয়। নীলা ফোন টা নিয়ে গ্যালারি তে না ঢুকে সোজা সুহার ফেসবুক একাউন্টে ঢুকে। সুহার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” সুহা বোন একটু পানি খাওয়া না।
” নিজে খেয়ে আয়।
” দেখছিস তো পিক নিচ্ছি। একটু যা না।

সুহা ভ্রুকুটি করে চলে যায়। এদিকে নীলা সুহাসিনীর ফেসবুকে ঢুকে সার্চ দেয় রুদ্র মাহতাব লিখে। সাথে সাথে সবার প্রথমে রুদ্রর ফেসবুক একাউন্ট চলে আসে। নীলা দেরি না করে রিকুয়েষ্ট পাঠায়। সার্চ অপশন থেকে রুদ্রর নাম রিমুভ করে দেয়। আর নিজের ফোনে ঢুকে তার আর সুহাসিনীর একটা পিক নিয়ে প্রোফাইলে দেয়। রুদ্র কে দেওয়া নীলার ফোন থেকে রিকুয়েস্ট সেটা ক্যান্সেল করে আবার রিকুয়েষ্ট পাঠায়।

দরজা দিয়ে সুহাসিনী কে আসতে দেখে তড়িঘড়ি করে নীলা সুহাসিনীর ফোন টা রেখে দেয়। সুহাসিনী পানির গ্লাস টা নীলার দিকে এগিয়ে দিলে নিলা সেটা ঢকঢক করে খেয়ে সুহাসিনী কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায়।
সুহাসিনী অবাক হয় নীলার এমন ব্যাবহারে।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১

রুদ্র ফেসবুক স্ক্রোল করছিলো হঠাৎ পরপর দুটো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসে। একটা নামে চোখ আটকে যায় রুদ্রর সুহাসিনী রহমান নামের আইডি তে। সুহাসিনী ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছে রুদ্রর বিশ্বাস হচ্ছে না। খানিক উপরে তাকাতেই দেখে নীলা রহমান নামের আইডি পিকের দেখে নীলা আর সুহাসিনীর শাড়ি পরিহিত ছবি। যা মিনিট পাঁচেক আগে আপলোড দেওয়া হয়েছে। সুহাসিনীর আইডিতে সুহাসিনীর কোনো পিক নেই। অথচ নীলার আইডিতে তার পিক। রুদ্র নীলার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সসেপ্ট না করে সুহাসিনীর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সসেপ্ট করে। নীলাকে ঝুলিয়ে রাখে।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ৩