মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৮

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৮
নূন মাহবুব

-” স্যার ও শিক্ষা।আমার বোন মিতুর ফ্রেন্ড ।আমি শতভাগ নিশ্চিত ওর জ্ঞান বুদ্ধি, বিচক্ষণতা দিয়ে আপনাদের এই কাজে হেল্প করতে পারবে। ”

-” আই নো এবাউট শিক্ষা। আমাদের সিনিয়র অফিসার সাহিত্য শিকদারের কাজিন ও। আমি শিক্ষা কে সাদামাটা একটা মেয়ে ভাবতাম। কিন্তু ওর পাওয়ার সম্পর্কে আমার জানা ছিলো না। তুমি আজ নতুন এক শিক্ষার সাথে আমার পরিচয় করালে নিতু।এর‌ই মধ্যে নম্রতা এসে বললো, আরে এ তো সেই মেয়েটা যে কয়েক মাস আগে আমার জন্মদিনের পার্টিতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো চুরি করার জন্য।আর চুরি করে হাতেনাতে ধরা ও পড়েছিলো। আমার ড্যাড অনেক দয়ালু বিধায় তিনি ব্যাপার টা হাইড করে নিয়েছিলেন।আমার ড্যাডের জায়গায় অন্য কেউ হলে নিশ্চিত ওকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” নম্রতার কথায় নিতু রাগান্বিত হয়ে বললো,এক মিনিট নম্রতা মির্জা। হ্যাঁ শিক্ষা কয়েক মাস আগে তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো।তবে সেটা আমার কথায় গিয়েছিলো, চুরি করার জন্য নয়। তুমি তো কয়েক বছর ধরে সিআইডি তে রয়েছো। কিন্তু আমার মনে হয় না তুমি কখনো কোনো কেসের সাথে ঠিক মতো ইনভলব হয়েছো। তুমি তো শুধু নিজের সাজগোজ , মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত থাকো। বিনিময়ে মাস গেলে সরকারি টাকা পাও।

কিন্তু এই যে এই মেয়েটা কে দেখছো যাকে তুমি চুরির অপবাদ দিয়েছো সে কিন্তু সরকারের থেকে কোনো টাকা পায় না। তবু ও সেই মেয়েটা তোমাদের অজান্তে তোমাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করছে।বাচ্চু বিল্লা কে ধরিয়ে দিয়েছে। সেদিন তোমার জন্মদিনের পার্টিতে বাচ্চু বিল্লা ও উপস্থিত ছিলো। বাচ্চু বিল্লা কোনো এক স্মাগলারের সাথে ডিল করতে গিয়েছিলো। শিক্ষা বাচ্চু বিল্লার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সেখানে উপস্থিত হয়েছিলো।আর তোমরা সবাই ভেবেছিলে শিক্ষা হয়তো এসিপির ছবি চুরি করার জন্য তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো।আরে ও তো এসিপি কে চেনে ও না।যাকে চেনে না জানে না তার ছবি কেন চুরি করতে যাবে?”

-” তুমি একটা বাইরের মেয়ের জন্য এইভাবে আমাকে অপমান করতে পারো না নিতু।”
-” আমি তোমাকে অপমান করছি না নম্রতা।যেটা সত্যি সেটা বলেছি।”
-” যাকে নিয়ে এতো গর্ববোধ করছো সে দেখো আবার এই কাজের কথা শুনে পালোনোর রাস্তা খুঁজে না বেড়ায়।”
-” হু শিক্ষা পালানোর রাস্তা খুঁজে না, রাস্তা তৈরি করে নেয়। আশা করি বিষয় টা বুঝতে পেরেছো?”

-” এসিপি নিতু আর নম্রতার কথা কা’টা’কা’টি দেখে দেখে এগিয়ে এসে বলে,কি হচ্ছে টা কি? তোমরা নিজেদের মধ্যে শুধু শুধু ঝগড়া কেন করছো?আর নম্রতা তুমি খুব ভালো করে জানো শিক্ষা কে আমি এইখানে ডেকেছি। তোমার সাহস হয় কি করে আমার বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষা কে অপমান করার? এইখানে শিক্ষা কে অপমান করে তুমি আমাকে অপমান করলে। অবশ্য তোমার থেকে এর চেয়ে বেশি আর কি বা আশা করা যায়।”

-” সরি স্যার।”
-” সরি আমাকে না, শিক্ষা কে বলো।”
-” নম্রতা এসে শিক্ষা কে বললো, সরি শিক্ষা আমার ভুল হয়েছে।আমাকে ক্ষমা করে দাও বলে নম্রতা শিক্ষা কে জড়িয়ে ধরে বললো,তোর প্রতি আগে থেকেই আমার ক্ষোভ ছিলো। তুই আমার সাহিত্যের সাথে এক‌ই বাড়িতে এক‌ই ছাদের নিচে থেকে আমার বুকে আ’গুন জ্বালিয়ে দিয়েছিস। আর আজ আবার এসিপি স্যারের কাছে আমাকে ছোট করলি।এর ফল ভালো হবে না। ফিনিশ হয়ে যাবি তুই।তোর কোনো ধারণা নেই আমি ঠিক কি করতে পারি।ভালোই ভালোই বলে দিচ্ছি সাহিত্যের বাড়ি থেকে দূরে কোথাও চলে যা।না হলে তুই বাঁচতে পারবি না।আমি তোকে কে’টে টুকরো টুকরো করে নদী তে ভাসিয়ে দিবো। মাইন্ড ইট।”

-” ঠিক আছে ম্যাম। আপনার কথাটা আমার মাথায় থাকবে। অতঃপর শিক্ষা এসিপি স্যারের উদ্দেশ্য বললো, আমি এখন আসি স্যার?”
-” ঠিক আছে মা যাও।তবে একটু সাবধানে থেকো। আগামীকালের ব্রেকিং নিউজে থাকবে তুমি।তবে শিক্ষার পরিচয়ে নয়। এসিপি রায়হান মীরের মেয়ে উষ্ণতা মীরের পরিচয়ে।আর খু’নি’র আসল উদ্দেশ্য যদি উষ্ণতা হয় , তাহলে নিশ্চয় তোমার উপর অ্যাটাক হবে।একটু সাবধানে থেকো মা। আমাদের জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হোক এটা আমরা চাই না।”

-” ডোন্ট ওয়ারি স্যার।আমি আমার নিজের প্রোটেক্ট নিজে করতে পারি।”
-” দ্যাটস গ্ৰেট। শুনেছি তুমি একজন মার্শাল আর্টিস্ট। কিন্তু আমার জানা মতে সাদ্দাম শিকদার তোমাকে মার্শাল আর্ট শেখায় নি। তাহলে তুমি মার্শাল আর্ট কবে, কোথা থেকে শিখলে?”

-” আমি জানি না স্যার। মার্শাল আর্ট শেখার ব্যাপারে আমার কিছু মনে নেই। আমার এটুকুই মনে আছে যে আমি হয়তো ঘুমিয়ে ছিলাম আর চোখ খোলার পর বড় আব্বু আর বড় আম্মু কে দেখতে পেয়েছিলাম। বড় আব্বু আমাকে বলেছিলো আমি তার ভাইয়ের মেয়ে।ব্যাস এইটুকুই আমার পরিচয়। আমার নিজের সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানি না আমি।”

-” কখনো জানতে চাও নি তোমার পরিবার সম্পর্কে?”
– “বড় আব্বুর কাছে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি আমার বাবা মায়ের কথা। কিন্তু বড় আব্বু কোনো উত্তর দেয় নি।যার কারণে এক পর্যায়ে আর জানার ইচ্ছা জাগে নি। শিকদার ভিলার সবাই আমাকে এতোটা ভালোবাসা দিয়েছে যে কখনো আমার বাবা মায়ের কথা মনেই পড়ে না।আমি ও তাদের কে বড্ড ভালোবাসি। তাদের ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না।তবে আমার বাবা মায়ের সন্ধান অবশ্যই পেতে চাই।”

-” আমাদের এই কেস টা সলভ হয়ে যাক। এরপর আমাদের সিআইডির পুরো টিম তোমাকে সহযোগিতা করবে তোমার বাবা মাকে খুঁজে পেতে।”
-” ধন্যবাদ স্যার।”
-” ঠিক আছে মা। তুমি এখন আসতে পারো।”
-” থ্যাংক ইউ স্যার বলে শিক্ষা আর নিতু তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটে চললো।”

-” শিক্ষার যাওয়ার পানে তাকিয়ে নির্জন বিরবির করে বললো, মেয়ে তো নয় , যেন‌ আগুনের ফুলকি। যাই হোক আমি ভুল মানুষ কে ভালোবাসি নি। নির্জন কে বিরবির করতে দেখে সাহিত্য বললো, নিজে নিজে পাগলের মতো কি বলছিস ভাই?”
-“তেমন কিছু না ভাই। ঐ শিক্ষার কথা ভাবছিলাম।”

-” আমার মনে হয় শিক্ষা কে নিয়ে তুই একটু বেশি চিন্তা করিস। শিক্ষার কথা ছাড় আর নম্রতা মির্জার কথা ভাব। একবার যদি মন্ত্রীর জামাই হতে পারিস,তাহলে রাজত্ব পাবার সাথে সাথে রাজকন্যা ও পাবি।”
-” আমার রাজত্ব , রাজকন্যা চাই না ভাই। আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে যার বসবাস সে হলেই চলবে।ব্যাস আর কিছু চাই না আমি।”

-” সাহিত্য মনে মনে বললো,আমি জানি তুই শিক্ষা কে অনেক বেশি ভালোবাসিস।তোর চোখে আমি শিক্ষার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। তোর সামনে আমি কিভাবে আমাদের বিয়ের কথাটা বলবো বুঝতে পারছি না। খুব শীঘ্রই আমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা তোকে জানিয়ে দিবো।জানি কথাটা শুনে তুই অনেক কষ্ট পাবি। কিন্তু কিছু করার নেই। শিক্ষা আমার বিবাহিত স্ত্রী। যদিও দাদুর কথাতে আমি শিক্ষা কে বিয়ে করেছি।

কিন্তু এই তিন মাসে শিক্ষার প্রতি আমি দূর্বল হয়ে পড়েছি।হয়তো এটা বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কের জন্য এমনটা হয়েছে। আমি জানি না শিক্ষা কে আমি ভালোবাসি কি না? কিন্তু শিক্ষার পাশে আমি সহ্য করতে পারি না। সেদিন ভার্সিটি তে শিক্ষা যখন অন্য ছেলের হাত ধরে ছিলো আমার মাথায় র’ক্ত উঠে গিয়েছিলো।মনে হচ্ছিল ঐ শা’লা কে ঐ জায়গায় জ্যান্ত পুঁতে দেই।এই মুহূর্তে তোকে ও আমার সহ্য হচ্ছে না নির্জন।কি করবো আমি বুঝতে পারছি না ।

একদিকে বন্ধুত্ব অন্যদিকে স্বামীর দায়িত্ব ।কোনটা পালন করবো আমি? আমি জানি শিক্ষার কাছে আমি কখনো ভালো স্বামী হতে পারবো না।আমি শুধু শুধু সন্দেহের বশে শিক্ষা কে ক্রি’মি’না’ল খু’নি ভেবেছি। আমি ভেবেছিলাম এই কেসের সাথে শিক্ষা ইনভলব আছে।

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৭

কিন্তু এখন দেখছি শিক্ষা নিজে এই কেস সলভ করতে আমাদের কে সহযোগিতা করছে। অথচ আমি ওকে নানা ভাবে অপমান, অবহেলা করেছি।তার মানে নিতু সেদিন যে মেয়েটার কথা বলেছিলো সে আর কেউ নয়।সে শিক্ষা। এতো দিন ভুল ছিলাম আমি।আমার শিক্ষা কে যেভাবেই হোক সরি বলতে হবে।ওকে স্পেশাল ভাবে থ্যাংকস জানাতে হবে তবেই আমি শান্তি পাবো।

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৯