মনের পিঞ্জরে পর্ব ১৭+১৮+১৯ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ১৭+১৮+১৯
Ariyana Nur

৪দিন পর…..
ইশফা ভার্সিটিতে এসে করিডোর দিয়ে ক্লাশরুমের দিকে যাওয়ার সময় সান, নিরব ইশফার সামনে পরলো।নিরব ইসফাকে দেখে মুখের মধ‍্যে বড় একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল…..
—হাই ।কেমন আছো তুমি?
ইশফাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। আপনি?
নিরবঃএইতো বেশ যাচ্ছে দিনকাল।
সান ইশফার সামনে দাড়িয়ে এদিন ওদিক তাকাচ্ছে।ইশফাকে এতোদিন পর সামনা-সামনি দেখে কথা বলার লোভটা আটকাটে পারছে না।কিন্তু ভিতরে সেদিনের ব‍্যপারটা নিয়ে একটা জরতা কাজ করছে।
ইশফা ব‍্যাগ থেকে একটা স‍ানগ্লাস বের করে সানের সামনে ধরে বলল…..

—এটা আপনার।সেদিন বাড়িতে ফেলে চলে এসেছিলেন।
স‍ানগ্লাসটা সান কাপাকাপা হাতে ধরে মুখে জোর পূর্বক একটু হাসি টেনে বলল…..
—ধন‍্যবাদ।
ইশফা সান এর এমন ভিতু ফেস দেখে মনে মনে হাসতে লাগলো।
নিরবঃবলতে হবে তোমার খুব সাহস আছে।যার সাথে প্রথম দিন কথা বলার সময় কাদো কাদো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো তাকে মারার জন‍্যই তার কাছে ব‍্যাট,স্টেম্প ধার চাচ্ছিলে।ও মাই গড ভাবা যায় এসব।তা কি বলো,ব‍্যাট,স্টেম্প জোগাড় করে দিব।তুমি চাইলে আমি কিন্তু দু’টোই জোগাড় করতে পারি।
ইশফাঃলাগবে না।দরকার পরলে আমিই জোগাড় করে নিতে পারবো।আসি।
কথাটা বলে ইশফা সামনে দু’কদম বাড়ানোর পর সান পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—ইশফা শোন……
ইশফা ঘুড়ে সান এর দিকে তাকিয়ে বলল…..
—কিছু বলবেন ভাইয়া?
ইশফার মুখে ভাইয়া সুনে সান তার রুপে ফিরে আসলো।রাগি গলায় বলল…..
—এই এতো ভাইয়া,ভাইয়া করো কেন?আমি তোমার কোন কালের ভাইয়া হই।একটু সাইয়া,সাইয়া করলেও তো পারো।(শেষের কথাটা সান আস্তে করে বিরবির করে বলল)
ইশফা সানের শেষের কথাটা বুঝতে না পেরে সানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।
সানঃতোমার সাথে কিছু কথা আছে।
ইশফাঃজ্বি বলুন।

সানঃসেদিনের ব‍্যপারটা নিয়ে তুশিকে কিছু বলো না।ও এমনিতে অনেক ভয়ে রয়েছে।যা হয়েছে তাতে তুশির কোন দোষ নেই।আমিই তুশিকে ব্ল‍্যাকমেইল করে তুশির সাথে গিয়েছিলাম।
ইশফাঃএতো কষ্ট করে ছদ্মবেশে না গেলেও পারতেন।
সানঃযাওয়ার কারন তোমার কাছে অজানা নয়।তারপেরও যদি তুমি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করো তাহলে কিছু করার নেই।তুমি খুব বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে।কারো মনের কথা না বুঝলেও, চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা তোমার আছে।না কোন অন‍্যায় আবদার করবো আর না অন‍্যায় সইবো।আমি ভালো কিন্তু আমার রাগ অনেক খারাপ।যা আমার তা কিভাবে আমার করে রাখতে হয় তা আমি খুব ভালো করে জানি।
কথাটা বলেই সান চলে যেতে লাগলো।কয়েক কদম সামনে হেটে যাওয়ার পর পিছন দিকে ঘুড়ে বলল…..

“মুখের কথা মিথ‍্যে হতে পারে”
“কিন্তু চোখের নয়।”

কথাটা বলে সান আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সেখান থেকে গটগট করে হেটে চলে গেলো।আর ইশফা সান এর যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।এতোক্ষন সানের সব কথা ইশফার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু সান যে সান্ত ভাবে ইশফাকে ছোটখাট একটা ওয়ার্ণিং দিয়ে গেলো সেটা ইশফার মাথায় ঠিকই ঢুকেছে।

ইশফাকে দেখে রিধি ঝাপিয়ে পরলো ইশফার উপর।ইশফাকে টাইট করে জরিয়ে ধরে বলল…..
—ইফু….কেমন আছিস তুই?পায়ের ব‍্যাথা কমেছে?জানিস কত মিস করেছি তোকে?আই মিস ইউ ইফু…….
ইশফাঃবোইন আমি চ‍্যাপটা হয়ে যাচ্ছি।আগে ছাড় আমায়।তার পরে তোর উওর দিচ্ছি।
রিধি ইশফাকে ছেড়ে দিয়ে বলল……
—বল এবার কেমন আছিস?

ইশফাঃআছি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।পা দুদিন আগেই ভালো হয়ে গেছে।তার পরেও বাবা ভার্সিটিতে এ দুদিন আসতে দেয়নি।
রিধিঃযাক ভালো হলেই আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তোকে অনেকদিন পর পেয়েছি।তোর সাথে বলার জন‍্য অনেক কথা পেটে জমে আছে।তাই আজ কোন ক্লাশ হবে না।আজ শুধু ঘুরাঘুরি।
তুশি রিধির মাথায় গাট্টা মেরে বলল…….
—মাথা ঠিক আছে তোর?দুদিন আগে পা ভালো হয়েছে।এ পা নিয়ে বেশি হাটাচলা করলে পরে পা ব‍্যাথা করবে না।
রিধি তুশির কথা সুনে জিভে কামড় দিয়ে বলল…..

—তাইতো।আমি তো অতোটা ভেবে বলিনি।যা ঘুরাঘুরি বাদ।পেট পুরে খাওয়া-দাওয়া তো করতে পারবো।
তুশিঃপেটুপুরে খেতে খেতে একদিন দেখবি তোর টামি ফেটে গেছে।
রিধিঃএকদম আমার খাবার নিয়ে কথা বলবি না।আই লাভ খাবার।
ইশফাকে অন‍্য মন‍্যস্ক দেখে তুশি কাদো কাদো ফেস করে বলল…….
—ইফু তুই কি এখনো আমার উপর রেগে আছিস?
ইশফার মাথায় এতোক্ষন পযর্ন্ত সান এর কথাই ঘুরঘুর করছিলো।তুশির কথায় ইশফা চোখ রাঙিয়ে বলল…..
—তোর কি মনে হয় তোরে আমি এমনে এমনে ছাইরা দিমু।কিছুই ভুলি নাই আমি।সব সুদে আসলে উসুল করুম।
রিধি সন্দেহর চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল…..

— কি হয়েছে রে তোদের?তোদের কথায় আমি কেমন যেন রহস‍্য রহস‍্য গন্ধ পাচ্ছি।
ইশফাঃতোকে সব পরে বলব।এখন কথা না বাড়িয়ে আমার কথা শোন।খাওয়া-দাওয়া,ঘুরাঘুরি সব হবে।কিন্তু আজ না পরে।আজ এমনিতেই অনেক দিন পর ভার্সিটিতে এসেছি।এভাবেই অনেক ক্লাশ মিস হয়েছে।
ইশফার কথার উপরে কেউ আর অন‍্য কোন কথা বললো না।কেননা ওর দুজন ভালো করেই জানে ইশফা পড়াশুনা নিয়ে কতটা সিরিয়াস।

মাঠের এক কোনে ইশফা,তুশি,রিধি বসে আছে।তুশির মুখে সব শোনার পর রিধি মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর রিধি আসফোসের সুরে বলল……
—এতোকিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানলাম না।
ইশফাঃআগে জানালে তোর এই চেহারাটা দেখতাম কেমনে।
তুশিঃরিধু তুই সুইন্নাই এমন করতাছোস।বোঝ এবার আমার কি হাল হয়েছিলো।আমি তো সামনে ছিলাম।
রিধিঃসব ঠিক আছে কিন্তু ইফু তুই বুঝলি কেমনে ঐইটা সান ভাইয়া ছিলো।
ইশফাঃতার হাতে একটা পোড়া দাগ আছে।যেটা আমি আমার পায়ে ম‍্যাসেজ করে দেওয়ার সময় লক্ষ করছিলাম। তুশরে আমতা আমতা করতে দেখে বাব বার হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছিল।কন্ঠ সুনে আমার প্রথমেই কেমন সন্দেহ হইছিলো হাতের পোড়া দাগ দেখে সিউর হয়ে গেছি।
রিধিঃবলতে হবে ইফু তোর বুদ্ধি আছে।
ইশফা ভাব নিয়ে বলল……

—আই নো।
তুশিঃভাব পরে নাও।এখন ক্লাশে চল।ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে।
রিধিঃমাত্রই না আসলাম।এতো তাড়াতাড়ি টাইম শেষ হলো কিভাবে?
ইশফাঃবকবক করার সময় তোর আবার টাইমের খবর থাকে নি।চুপচাপ এবার উঠ।ক্লাশে যেতে হবে।

ইশফা ভার্সিটি থেকে বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হতে না হতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো।ইশফা ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এল……
—বাহ্ ভালোই তো আজ-কাল প্রপোজ পাওয়া হচ্ছে।আবার বাড়িতে এসেও নাকি খবর নেওয়া হচ্ছে।তা আমার কথা কি ভুলে গেছো?বলেছিলাম না,সান এর থেকে দূরে থাকবে।সান কোন সাহসে তোমার বাড়িতে এসে তোমার সাথে দেখা করে ?আর তুমি ওকে কেন কিছু বলোনি?তোমার বাড়িতে আসার পর ওকে বিনা অপমানে কিভাবে তুমি যেতে দিলে?
অপর পাশের লোকটার গম্ভীর কথা সুনে ইশফার চিনতে একটুও ভুল হয়নি লোকটা কে।ইশফা লোকটার কথা সুনে রাগে রি-রি করছে।ইশফা রাগি গলায় বলল…….

—আমি কি করবো না করবো সেটা আমার ব‍্যাপার।বাড়িতে মেহমান আসলে তাদের সাথে কেমন ব‍্যবহার করতে হয় তা আমার বাবা,মা আমাকে শিখিয়েছে।আপনার কাছ থেকে আমাকে শিখতে হবে না।আর আমার যার সাথে ইচ্ছে দেখা করবো কথা বলবো।তাতে আপনার সমস‍্যা কোথায়?
— তুমি আবার ঐ সানের প্রেমে পরে যাওনি তো?সানের জন‍্য এতো দরদ দেখাচ্ছো কেন?
—আপনার মত ফালতু লোকের সাথে কথা বলার সময় আমার নেই।
কথাটা বলেই ইশফা কল কেটে দিয়ে বেডের উপর তার ফোন ছুড়ে মারলো।রাগে তার হাত-পা কাপছে।ইশফা ভেবে পায়না কে এই লোক?কিভাবে ওর সব খবরা-খবর পেয়ে যায়?
বাসার মধ‍্যে পিনপনতা নিরবতা।কিচেন থেকে শুধু টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে।মিসেস খান কিচেনে কাজ করছে।ইশফা,ইশরা ঘুমিয়ে রয়েছে।মিঃখান নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে।মিসেস খান রান্নাবান্না শেষ করে ডাইনিং টেবিলে রাতের খাবার সাজিয়ে সবাইকে খাবার খাওয়ার জন‍্য ডাকতে গেলো।

ইশফা,ইশরা দুজন একসাথে গল্প করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পান্তা ভাত হয়ে গিয়েছিলো।মায়ের ডাকে ঘুম ঘুম চোখে খাবার টেবিলে এসে বসল।খাবার খাওয়ার ইচ্ছে একজনেরও নেই।তারপরেও মায়ের বকুনি থেকে বাচতে দুজনই খাবার টেবিলে এসে হাজির হয়েছে।কেননা মিসেস খান রাতের খাবার না খেয়ে কাউকে ঘুমোতে দেয় না।যদি কেউ ঘুমিয়েও যায় তাকে টেনে তুলে রাতের খাবার খাওয়াবে।আর যতক্ষন ঘুম থেকে না উঠবে ততক্ষন কানের সামনে ঘ‍্যানঘ‍্যান তো আছেই।
ইশরা,ইশফা দুজন মিঃখান এর দুপাশে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।মিসেস খান কিচেন থেকে গোশতের বাটি হাতে করে নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো।দুই মেয়েকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে বলল…..

—হাত গুটিয়ে বসে না থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।যতই বাহানা করো না কেন আমি কিন্তু না খেয়ে ঘুমোতে দিব না।
কথাটা বলে সে আবার কিচেনে চলে গেলো।
মিসেস খান কিচেন থেকে ফিরে এসে দেখে মিঃখান দু মেয়েকে বাচ্চাদের মত রুপকথার গল্প বলে খাইয়ে দিচ্ছে।মেয়েরাও আয়েস করে বসে খাচ্ছে।
মিসেস খানঃ এই তোদের কি কান্ড জ্ঞান নেই?মানুষটা সারাটা দিন খাটাখাটি করে কত দূর জার্নি করে এসেছে।এখন তার তোদের কে খাইয়ে দিতে হচ্ছে।তোদের কি হাত নেই?
মিঃখানঃআহ্ তুমি আমার পরিদেরকে বকছো কেন?ওদের খাইয়ে দিচ্ছি দেখে কি তোমার হিংসে হচ্ছে?একদম আমার পরিদের কে বকবে না।

মিসেস খানঃকি উল্টাপাল্টা বলছো।আমার হিংসে হতে যাবে কেন?(রেগে)
মিঃখানঃমেয়েদের কে খাইয়ে দিচ্ছি অথচ তোমাকে দিচ্ছি না।
মিসেস খানঃআরো মেয়েদের কে আদর দিয়ে বাদর করো।তোমার আশকারা পেয়েই মেয়েরা দিন দিন এমন হচ্ছে।
মিঃখানঃমোটেও না মেয়েরা এসব গুন তোমার কাছ থেকেই পেয়েছে।তুমি ওদেরকে পেটে নিয়ে যে সব অভ‍্যাস করিয়েছো ওরা তাই শিখেছে।
মিসেস খানঃওহ এখন সব দোষ আমার।
মিঃখানঃতোমারি তো। তুমিই তো প্রতিদিন রাতে বায়না ধরতে খাইয়ে দেবার জন‍্য।সেই অভ‍্যাসই ওরা পেয়েছে।তোমাকে খাইয়ে দিতে গিয়ে ভাবীর সামনে কত লজ্জায় না পরতে হয়েছিলো আমার।

মিঃখান মেয়েদেরকে খাইয়ে দিচ্ছে আর মিসেস খানকে ইচ্ছে এটা সেটা বলে রাগাচ্ছে।ইশফা,ইশরা তাদের বাবা,মায়ের খুনসুটি ঝগড়া দেখে মিটমিট করে হাসছে। ইশরা,ইশফা এসব দেখতে দেখতে অভ‍্যস্থ।এমন প্রায় দিনই মিঃখান ইচ্ছে করে মিসেস খানকে এটা সেটা বলে রাগিয়ে দেয়।তার পরে তার মান ভাঙায়।এই হয়তো তাদের ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ।
মিসেস খান,মিঃখানকে কয়েক কথা সুনিয়ে রাগ করে সেখান থেকে চলে গেলো।মিসেস খান তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিঃখান মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

ইশরাঃআব্বু তুমি হাসছো?মা কিন্তু অনেক রেগে গেছে।
ইশফাঃমাকে না রাগালে কি আব্বু তোমার হয় না।
মিঃখানঃতোরা তোদের খাবার শেষ কর।তোদের মাকে আমি দেখছি।আমি যেমন রাগিয়েছি রাগ ভাঙার দায়িত্বও আমার।তোদের এই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
ইশফা,ইশরা কোন কথা না বাড়িয়ে নিজেদের পেটের চিন্তা করতে লাগলো।কেননা তারা জানে তাদের আব্বু তাদের মাকে ঠিকই মানাতে পারবে।
ইশফা,ইশরা তাদের বাবা,মায়ের এই খুনসুটি ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়।বিয়ের এতো বছর হয়ে যাবার পরেও তাদের মধ‍্যে কি সুন্দর ভালোবাসা বিদ‍্যমান রয়েছে।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো বেশ কিছু দিন।জিদান ইশরাকে মানানোর জন‍্য নানান ভাবে চেষ্টা করছে কিন্তু কোন ভাবেই জিদান ইশরাকে মানাতে পারছে না। ইশরা সবার সাথে দুষ্টুমি,হাসি খুশিতে মেতে থাকলেও জিদানের সামনে সে একবারে গম্ভীর টাইপ হয়ে যায়।ভদ্র ভাবে জিদানের ক্লাশ করে।সপ্তাহে তিনদিন জিদানের কাছে টিউশন নিতে ইশিতা বেগম এর বাসায় যায়।মাথা নিচু করে জিদানের সামনে পড়তে বসে আবার মাথা নিচু করেই পড়া শেষে উঠে চলে আসে। ইশরা পড়ার বাইরে একটা কথাও জিদানের সাথে বলে না।এমনকি একবারের জন‍্যও জিদানের দিকে তাকায় না।ইশরার এমন ব‍্যবহারে জিদান মনে মনে খুব কষ্ট পায়।তারপরেও মুখ ফুটে কিছু বলে না।

ইশরা কলেজে ঢুকতেই তার চোখ যায় দূরে দাড়িয়ে থাকা জিদান এর দিকে।জিদান এক পাশে দাড়িয়ে দু’জন স্টুডেন্ট এর সাথে হাসি মুখে কথা বলছে।তা দেখেই ইশরার মাথা গরম হয়ে গেলো।জিদানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ধুপধাপ পা ফেলে নিজের ক্লাশরুমের দিকে চলে গেলো।
ইশরার ক্লাশ এখনো শুরু হয়নি।ক্লাশ যে যার মত গল্প করছে, হৈ-হুল্লোড় করছে।ইশরা চুপচাপ মুখ গোমড়া করে বসে রয়েছে।ইশরাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে লিপি ভ্রু কুচকে বলল……

—আজ এমন হট হইয়া রইছোস ক‍্যান?কার সাথে কি নিয়া আবার ঝামেলা করছোস ।
লিপির কথায় ইশরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল…..
—তোর কি মনে হয় আমি সব সময়ই ঝামেলা করি?
—চেতোস ক‍্যান?কি হইছে সেটা আগে বল।
ইশরা বিরবির করে কিছু একটা বলল।লিপি বুজতে না পেরে বলল……
—বিরবির না করে কি কইতাছোস জোরে বল।আমি কিছুই সুনি নাই ।
ইশরা কাঠ কাঠ গলায় বলল……
—আজকে ইংলিশ ক্লাশ করুম না।সাথে তুইও করবি না।
লিপি হালকা চেচিয়ে বলল…..

—কিহহহ…..ইংলিশ ক্লাশ মিস করুম!
ইশরা লিপির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই লিপি ঢোক গিলে বলল……
—না মানে তুই তো জানিস আমার ইংলিশ ক্লাশ করতে কত ভালো লাগে।ইংলিশ আমার প্রিয় একটা সাবজেক্ট।আই লাভ……
লিপিকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে ইশরা বলল……..
—ক্লাশ না স‍্যার?
লিপি ঘাবড়ে গিয়ে বলল…..
—মানে?
ইশরা দাতে দাত চেপে বলল…..
—দাদারে আদা পরা খাওয়াইতে আইসো না।তোমার যে ইংলিশ ক্লাশ কত পছন্দ তা আমার জানা আছে।আগে তো দেখলাম না ভালোমত ক্লাশ করতে।যেই দিন ঐ বদের হাড্ডি জিদান স‍্যার আসলো সেদিন থেকেই তোমার ইংলিশ ক্লাশ পছন্দ হয়ে গেছে।
—ঐ তুই স‍্যাররে বদের হাড্ডি বলস ক‍্যান?
—কেন?স‍্যারকে বদের হাড্ডি বলাতে লাগলো বুঝি?(রেগে)
—লাগবেই তো।স‍্যার কত ভালো তারে বদের হাড্ডি বললে লাগবো না।আমি বুঝি না স‍্যার এর সাথে তোর কি শক্রতা।স‍্যার আসার পর থেকেই তুই স‍্যারকে দেখতে পারিস না।কি করেছে স‍্যার তোকে?আমার কেন যেন মনে হয় স‍্যারকে তুই আগে থেকেই চিনোস।
ইশরা রাগি গলায় বলল…….

—হ’ চিনি তো।তারে খুব ভালো করেই চিনি।
লিপি খুশি হয়ে বলল……
—সত‍্যি তুই স‍্যারকে আগে থেকে চিনিস।কিছু হয় তো?মানে আত্মীয়-তাত্মীয়?
—হ লাগে তো।
লিপি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল….
—সত‍্যি! কি হয় স‍্যার তোর?
ইশরা দাতে দাত চেপে বলল…..
—আমার জামাই লাগে হইছে।
ইশরার কথা সুনে লিপি চোখ বড় বড় করে বলল…..
— কিহহহ?
—কি কি করোস ক‍্যান।যা জানতে চাইছোস তাই বলছি।এবার চুপ থাক। আর একটা কথা বলবি তাইলে তোর খবর আছে।
ইশরার চোখ রাঙানো রাগি গলার কথা সুনে লিপি দমে গেলো।লিপি বুঝতে পারলো ইশরা এখন অসম্ভব রেগে আছে। তাই কথা না বাড়িয়ে চুপ করে বসে রইল।

উদাস মনে সান তার বন্ধুদের সাথে বসে রয়েছে।সেদিনের পর থেকে যে ইশফা,সানকে এরিয়ে চলে তা সান ভালোই বুঝতে পেরেছে।নিরব নিজ ইচ্ছায় কথা বলতে গেলেও ইশফা কোনমত হু হা করে চলে যায়।সানও ইশফাকে কোন বিরক্ত করে নি।নিজের মত ছেড়ে দিয়েছে।কেননা ইশফার সব খবরা-খবর তো সে পায়ই।আর চোখের দেখা সে তো প্রতিদিনই সে দেখে।
হুট করে এলি এসে সান এর হাত জড়িয়ে ধরলো।সান ঝাড়া দিয়ে এলির থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল……
—হুটহাট এমন গায়ে এসে পরিস কেন?বলেছিনা গায়ে হাত দেয়া আমার পছন্দ না।
এলি হাসি মুখে বলল…..

—ওহ্ জান আজ বাদে কাল তো আমার হাত ধরেই ঘুড়বে।তাই আগের থেকে অভ‍্যাস করে নাও।
সান ভ্রু কুচকে বলল…..
—প্রথমত আমাকে এই জান ডাকা অফ কর।আর পাগলের মত কি বলছিস তুই?তোর হাত ধরে ঘুড়তে যাবো কেন?
এলি লাজুক হেসে বলল……
—তুমি জানো আমি বাপিকে তোমার আর আমার কথা বলেছি।বাপি আমাদের বিয়ের জন‍্য রাজি।আজ সে তোমার পাপার সাথে কথাও বলতে যাবে।জানো আমি আজ খুব খুশি।ভাবতেও অবাক লাগছে দুদিন পরে আমি মিসেস সানজান হয়ে যাব।(খুশি হয়ে)
এলির কথা সুনে সবাই হা করে এলির দিকে তাকিয়ে রইল।সান এর চেহারার রং মুহূর্তের মধ‍্যে পাল্টে গেছে।চোখগুলো অসম্ভব লাল হয়ে গেছে।সান রাগি গলায় বলল……
—হেনা এদিকে আয়।
হেনা সান এর থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিল।সান এর এমন রাগি গলার ডাক সুনে ভয়ে তার হাত-পা কাপছে।কাপা কাপা পায়ে সানের সামনে এসে দাড়াতেই সান রাগি গলায় বলল……

—তোর এই আধা পাগল বান্ধবীকে আমার সামনের থেকে নিয়ে যা।তোর কথামত ওকে আমাদের সাথে এলাও করেছি।কিন্তু আজকের পর আর করবো না।একে বলে দিস দ্বিতীয় বার যেন আমার সামনে না আসে।
এলিঃসান তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?হবু বউ এর সাথে কেউ এমন ব‍্যবহার করে বল।তুমি জানো আমি হেনার মত একটা মিডেলক্লাস,ড্রাইভারের মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছি শুধুমাত্র তোমার জন‍্য।তা না হলে এর সাথে বন্ধুত্ব কে করতো।দেখো আমাদের বিয়ের পর কিন্তু এসব বন্ধু চলবে না।
এলির কথা সুনে হেনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো।হেনা ভাবতেও পারেনি এলি ওকে এভাবে কথা শোনাবে।হেনাকে কান্না করতে দেখে সান চেচিয়ে বলল…..
—আর এক ফোটা জল তোর চোখ দিয়ে বের হলে ঠাটিয়ে এক চর বসাবো ।তোকে আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়ের চাল-চলন আমার ভালো লাগে না।এর সাথে বন্ধুত্ব করিস না।সুনেছিস আমার কথা।এখন কেন কষ্ট পাচ্ছিস।
সান এলিকে উদ্দেশ্য করে বলল…..

—হাউ ডেয়ার ইউ।তোর সাহস কি করে হয় আমার সামনে আমার বন্ধুকে অপমান করার? তুই মেয়ে দেখে আমি এখন অব্দি নিজেকে কন্টল করে রেখেছি।তা না হলে আমার বন্ধুকে আপমান করার জন‍্য যে তোকে আমি কি করতাম তুই ভাবতেও পারতি না।
এলিঃতুমি আজ আবার এর জন‍্য আমার সাথে উচু গলায় কথা বললে?কাজটা কিন্তু একটুও ঠিক করলে না।এমনিতেই আমি তোমার উপর আপসেট সেদিনের ব‍্যবহারের জন‍্য।তুমি সেদিন আমাকে সবার সামনে বকেছো।আজ অব্দি সরিও বলোনি।
সানকে অতিরিক্ত রেগে যেতে দেখে নিরব আর শিপন সানকে টেনে সেখান থেকে দুরে নিয়ে গেলো।
নিরবঃভাই মাথা ঠান্ডা কর।এতো রাগলে চলবে না।রাগলে তুই এমনিতেও নিজের মধ‍্যে থাকিস না।মেয়ে মানুষ ছেড়ে দে না।
সান রাগে গজগজ করতে করতে বলল…..

—ছেড়ে দিব ওকে।দেখছিস কি ব‍্যবহার করছে ও।তার পরেও বলছিস ছেড়ে দিতে।
শিপনঃসান সান্ত হ তুই।তুই তো জানিসই ও বড় লোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তান।মনে হয় কাল পেটে মাল পানি পরেছে তার নেশা এখনো কাটেনি।নয়তো বিয়ের খুশিতে সকাল সকাল মাল-পানি খেয়ে এসেছে।দেখছিস না কেমন ঢুলে ঢুলে কথা বলছে।
নিরবঃআমার তাই মনে হচ্ছে।তুই মাথা ঠান্ডা কর সান।আমরা ব‍্যপারটা দেখছি।
সান ওদের থেকে ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলল……
—তোদের যা খুশি কর।
কথাটা বলেই সে গটগট করে হেটে চলে গেলো।

ভার্সিটির পিছন দিকের জায়গাটা খুব নিড়িবিলি।মানুষ জন বেশি সেদিকে যাতায়াত করে না।সেখানে এক বেঞ্চের মধ‍্যে বসে রয়েছে সান।ভার্সিটিতে জরুরী কিছু কাজ থাকায় রাগ করে আর বাড়িতে চলে যায়নি।কাজ শেষ করে এখানে বসে রয়েছে।ভিতরে ভিতরে এলির উপর রাগে সে ফেটে পরছে।হেনাকে অপমান করার জন‍্য এলিকে দুটো চড় লাগাতে পারলে তার সান্তি হত।মেয়ে মানুষ দেখে সানের চড় খাওয়া থেকে বেচে গেছে এলি।
হেলা সানদের ডাইভার এর মেয়ে।ছোটবেলা থেকে হেনার সানদের বাড়িতে যাতায়াত থেকেই তাদের বন্ধুত্ব।সান সব সময় হেনাকে সব ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে।এমনকি এই ভার্সিটিতে যে পরছে তাও সান এর সাহায্যে।এসব কথা সান আর হেনার পরিবারের লোক ছাড়া কেউ জানে না।

সান মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।কেউ একজন সানের সামনে এসে পানির বোতল ধরল।সান কিছুক্ষন থ’ মেরে বসে থেকে লোকটাকে দেখার জন‍্য মাথা উচু করতেই অবাক হয়ে যায়।
চারোদিকে হালকা মৃদু বাতাস বইছে।বাতাসের তালে তালে গাছের পাতাগুলোও মৃদু নড়ছে।মানুষজন,কোলাহল না থাকায় পরিবেশটা বেশ মনোমুগ্ধকর লাগছে।
সান কিছুক্ষন অবাক চোখে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…..
—তুমি এখানে?
সান এর প্রশ্ন শুনে সামনের মানুষটা একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলল……
—স্পেশ‍্যাল কেউ আসবে নাকি?ডিস্টাব করলাম নাতো?

সামনের মানুষটা আর কেউ নয় ইশফা। ইশফাকে দেখই সান এর সকল রাগ পানি হয়ে গেছে।সান মুচকি হেসে বলল…..
—ডিস্টাব করবে কেন?হঠাৎ আমার সামনে আসলে তো তাই জিগ্যেস করলাম।তুমি তো আবার আমাকে এড়িয়ে চল।আমাকে দেখলেই পালাই,পালাই করো।
—পালিয়ে বেড়াতে যাব কেন?আপনি বাঘ না ভাল্লুক যে আপনাকে দেখে পালাবো?
—সেটা আমি কি করে বলবো।তার উওর তো তোমারই জানা।
ইশফা সান এর কথার উওর না দিয়ে কড়া গলায় বলল……
—আপনার কি চোখে সমস‍্যা আছে?কখন থেকে পানির বোতল আপনার সামনে ধরে রেখেছি ধরছেন না কেন?
সান ভ্রু কুচকে ইশফার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে বলল……..
—এটা দিয়ে কি করবো?
—মাথায় ঢালুন।
সান কপাল কুচকে বলল….
—মানে?

—পানি অবশ‍্যই আপনাকে খাওয়ার জন‍্য দিয়েছি মাথায় ঢালার জন‍্য নয়।আর চাইলে মাথায় ঢালতেও পারেন।তাতে মনে হয়না আপনার কোন কাজে দিবে।
সান ইশফার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই ইশফা বলল…….
—না মানে আপনার যেই ঝাকড়া চুল।এতোটুক পানি ঢালাতে কোন কাজে দিবে না।
সান ইশফার কথা শুনে হেসে দিল।হাসতে হাসতে বলল……
—তুমি আমার এতো সুন্দর চুলগুলোকে ঝাকড়া চুল বলছো।তুমি এভাবে যে কথা বলতে পারো তা কিন্তু আমার জানা ছিলো না।
ইশফা,সান এর কথার উওর না দিয়ে একটা খাবারের প‍্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল…..
—এটা আপনার।

সান কিছুক্ষণ খাবারের প‍্যাকেট এর দিকে তাকিয়ে থেকে তাসিল‍্য হেসে বলল….
–কারো জন‍্য কিছু করতে হলে মন থেকে করতে হয়।কারো কথার চাপে পরে নয়।
ইশফা সান এর পাশে দূরত্ব নিয়ে বসে বলল….
—যার রাগ তার উপরেই দেখাতে হয় খাবারের উপরে নয়।
সান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল…..
—আজ এই অধমের প্রতি দয়া দেখাচ্ছো যে?হেনা পাঠিয়েছে না তোমাকে?
—হুম।মিথ‍্যা আমি বলতে পারি না তাই সত‍্যি টাই বললাম।
সান সামনের দিকে তাকিয়ে বলল……
—ওদের কথায় কেন আসলে?

ইশফা পেকেট থেকে একটা বার্গার বের করে সান এর সামনে ধরে বলল……
—এমনি এমনি আসি নি।তারা আমাকে অফার দিয়েছে আপনাকে যদি কিছু খাওয়াতে পারি তাহলে আমাকে বার্গার ট্টিট দিবে।আমার মত বার্গার পাগলী কি করে এই অফার মিস করি বলুন।
সান মুখটা মলিন করে বলল……..
—ও তাহলে তুমি বার্গার এর লোভে এখানে এসেছো?
—ধরে নিন তাই।এবার এটা ধরুন।
সান বার্গারে হাতে নিয়ে বলল……
—তুমি তো দেখি গিরগিটির মত রং বদলাও।কখনো ইনোসেন্ট,কখনো রাগিনী আবার কখনো…….
ইশফা সান এর দিকে ভ্রু কুচকে বলল……
—আবার কখনো কি?
সান মুচকি হেসে বলল…….
—কিছুনা।
ইশফা মনে মনে বলল…..

—আমার অতো ঠেকা পরে নাই আপনার কথা শোনার।সবাই এতো করে রিকুয়েস্ট করছে যে তাদের রিকুয়েস্টে না করতে পারি নাই।আর তাছাড়া আমিও দেখতে চাই ঐ অজানা আমার খবর পায় কিনা।ঐ অজানাকে ধরতেই বিশেষ করে আমার এখানে আশা।নাইলে আপনার সাথে আবার এতো সুন্দর করে কথাও।
(সান এর রাগ একমাত্র সিনথিয়া ভাঙাতে পারে।সান বাড়িতে চলে গেলে কোন সমস‍্যা ছিলো না।আর সানকে একা এখানে রাখা মানেই রিক্স।রাগের মাথায় কি থেকে কি করে বসে ঠিক নেই।নিরব,হেনা তো ভুলেও সানের সামনে যাবে না।তাদের দেখলে সানের রাগ কমার জায়গায় আরো বাড়বে।তাই নিরব,হেনা মিলে ইশফাকে নানান ভাবে রিকুয়েস্ট করে সান এর এখানে পাঠায়।
ইশফা তো সরাসরি না করে দিয়েছিলো সান এর সামনে যাবে না।তারপর সবার রিকুয়েস্ট রাখতে রাজি হয়।
ইশফা এখান এসে কথার ফাকে ফাকে আশেপাশে নজর রাখছে।যদি কোন ক্লু পায় অজানাকে চেনার ।আর বার্গার তো কথা বাহানা মাত্র।)

ইশফা সানকে হাতে বার্গার নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল…..
—বার্গার খাবার জন‍্য দিয়েছি।হাতে নিয়ে সোঅফ করার জন‍্য নয়।
—তোমার টা কোথায়?
—আমারটা মানে?
—মানে একটা এনেছো কেন?
—কেন একটাতে কি আপনার পেট ভরবে না?না ভরলে সামনে রেস্টুরেন্টে আছে সেখানে গিয়ে আরেকটা গিলে নিয়েন।আই মিন খেয়ে নিয়েন।
সান মজা করে বলল….

—পেট তো ভরবে।পরে যদি আমার পেট ব‍্যাথা করে তাই জিগ্যেস করছিলাম।
—পেট ভরার সাথে পেট ব‍্যাথার কি সম্পর্ক?
—না মানে একটু আগে তুমিই না বললে তুমি বার্গার পাগলী।বার্গারের জন‍্য আমার এখানে এসেছো।তাই বলছিলাম যদি আমি তোমার সামনে একা একা খাই তাহলে তো আমার পেট ব‍্যাথা করবে।
সান এর কথা শুনে ইশফার মন চাচ্ছে সানের মাথা ফাটাতে।ইশফা সামনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সাভাবিক রেখে বলল……
—সবাইকে নিজেকে মত ছোঁচা ভাববেন না।আপনার কারো খাবারে নজর দেবার অভ‍্যাস থাকলে থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই।
—কিভাবে বুঝবো।যদি নজর দেবার অভ‍্যাস থেকে থাকে তাহলে তো পরে আমারই পেট ব‍্যাথা করবে বল।
সান যে ইশফাকে রাগানোর জন‍্য এসব বলছে তা ইশফা সানের মুখের হাসি দেখেই বুঝে গেলো।তাই ইশফা তার রাগটাকে সাইডে রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…….

—খাবার হাতে নিয়ে বসে থাকতে নেই।যদি ভেবে থাকেন এই সব বাচ্চামো কথা বলে আমাকে রাগাতে পারবেন তাহলে এটা আপনার ভুল ধারনা।এসব কথায় আমি রাগছি না।
সান ইশফার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল……
—মেয়েটা এমন কেন?কখনো সরল আবার কখনো গরল হয়ে যায়।একে কি আমি কখনো বুঝতে পারবো?

মনের পিঞ্জরে পর্ব ১৪+১৫+১৬

ইশফা বেডের উপর ল‍্যাপটব নিয়ে বসে আছে।ইশরা টেবিলে বসে কিছু একটা লিখছে আর তার উপর কলম চালাচ্ছে।
ইশফা অনেকক্ষন ধরে ইশরার কাজ লক্ষ করছে।ইশফা ল‍্যাপটবের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—কিরে কার রাগ নিরিহ খাতার উপর ঝারছিস?
ইশরা খাতায় কলম চালানো অবস্থাই বলল……
—তোর ভাইয়ের রাগ।বদের হাড্ডি বিদেশ থেকে এসে লুচিপরটা হয়ে ফিরেছে।আগে মেয়েদের থেকে একশ হাত দূরে থাকতো এখন মেয়েদের দেখলে মুখের রস বেড়ে যায়।
মুখ ফসকে কথাটা বলে ইশরা সাথে সাথে জিভে কামড় দিল।
ইশফা,ইশরার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….
—তাতে তোর সমস‍্যা কোথায়?তুই তো আর আমার ভাইকে বিয়ে করছিস না।তাহলে তোর এতো জ্বলছে কেন?
ইশরা আমতা আমতা করে বলল…..
—আ-মার জ্বলবে কেন?আ-আমি তো এমনিই বলেছিলাম।এদের মত লুচু স‍্যারদের জন‍্যই আমাদের কলেজের নাম খারাপ হবে ঐ আরকি।

ইশফা ল‍্যাপটবে তার কাজ করতে করতে বলল…..
—শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে লাভ নেই।শাক কম আছে মাছ ঢাকতে পারবে না।
ইশরা কোন কথা না বাড়িয়ে চুপ করে রইলো।কেননা কথা বাড়ালে তারই বিপদ।
??????
ইশফার ফোনটা লাগাতার বেজেই চলেছে।ইশফা রুমে নেই।ইশরা বেলকানি থেকে এসে আননোন নাম্বার দেখে ফোন রিসিভ করে চুপ করে রইল।একটু পর অপর পাশ থেকে ভেসে এল……
—কোথায় ছিলি।ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে।
জিদানের ধমক খেয়ে ইশরা কথা না বলে চুপ করে রইলো।ভাবলো ফোনটা কেটে দিবে।তার ভাবনার মাঝেই জিদান কড়া গলায় বলল…..

—ভুলেও কল কাটার চিন্তা করবি না ইশু।
ইশরা জিদানের কথা শুনে হা করে রইল।মনে মনে বলতে লাগলো…..
— আমি তো কোন কথা বলিনি।তাহলে বুঝলো কিভাবে আমি কল রিসিভ করেছি।তাছাড়া ফোনটাও তো করেছে ইফুর নাম্বারে।
ইশরার ভাবনার মাঝেই জিদান বলল….
—নিজের অস্তিত্বের খবর মন থেকে ফিল করলেই বুঝা যায়।তার নিশ্বাসের শব্দই বলে দেয় সে আমার।

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২০+২১+২২