মন দিতে চাই পর্ব ১৪

মন দিতে চাই পর্ব ১৪
লেখনীতে সুপ্রিয়া চক্রবর্তী

বাসর রাতটা আমার জীবনে যেন এক অন্ধকার রাত হয়ে থাকল। যেদিন আমার স্বামীর সোহাগ পাওয়ার কথা সেদিন কিনা আমাকে এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হলো। জীবনের প্রতিই বিতৃষ্ণা এসে গেল আমার। ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে শে*ষ করে দিতে।

রহিমা খালা আমার মাথায় ভরসার হাত রাখলেন। আমাকে বললেন, তুমি চিন্তা করো না। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখো। উনি যা করেন ভালোর জন্যই করেন। দেখবে তোমার সাথেও ভালো কিছু হবে। একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীর অধিকার সবার আগে। তুমি সেই অধিকার ছেড়ে দেবে না। এক্ষুনি যাও ঐ ডাই*নিটাকে ঘর থেকে বের করো।
রহিমা খালার কথায় প্রভাবিত হলাম আমি। মুক্তোর রুমের দরজায় এসে কড়া নাড়লাম। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো মুক্তো একা। আমি ভীষণ অবাক হলাম তাকে একা দেখে। প্রশ্ন করলাম, আপনি একা কেন? ঐ ইভানা কোথায়?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুক্তো কোন কথা না বলে আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। তাহলে কি মুক্তো আমার থেকে কিছু লুকাতে চাইছে? আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মুক্তো যাই লুকানোর চেষ্টা করুক আমি সেই সত্যি বের করে আনব। তাই আমি রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর দেখলাম কেউ রুমের দিকেই আসছে। আমি একটু দূরে সরে এলাম। অজানা ব্যক্তি রুমের সামনে এসে দরজা নক করল। দরজা খুলে যেতেই ভেতরে ঢুকল। আমি কিছু বুঝলাম না। কে ছিল সেই ব্যক্তি?

মুক্তোর বন্ধু হ্যারি এসেছে তার রুমে। বিদেশে মুক্তোর সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সে। হ্যারি এমনি এমনি আসে নি। মুক্তো নিজে তাকে ডেকেছে। সেই কারণেই আজ হ্যারি এসে উপস্থিত হয়েছে। হ্যারি আজকেই দেশে ফিরল। মুক্তোর রিশেপসনের জন্যই মূলত তার বাংলাদেশে আসা।
হ্যারি মুক্তোকে জিজ্ঞাসা করল, বল তুই কেন আমায় জরুরি তলব করেছিস? আজ না তোর বাসর ঘর। তোর নিজের বউয়ের সাথে থাকার কথা। তা না করে একা কি করছিস ভাই?

মুক্তো উদাস হয়ে বলল, আমার ভাগ্য এত নিষ্ঠুর কেন তুই জানিস? আমি যেই ঝিনুককে পাওয়ার জন্য এত আশা নিয়ে ছিলাম। যাকে নিজের মন দিতে চেয়েছিলাম আজ তার থেকে দূরে সরে আসতে হচ্ছে।
তুই দূরে কেন সরে আসছিস সেটাই তো বুঝতে পারছি না৷ কাহিনিটা খুলে বল।
মুক্তো নিজের আলমারি থেকে কিছু রিপোর্ট কার্ড বের করে এনে হ্যারির হাতে দিল। হ্যারি রিপোর্ট দেখে হতবাক হয়ে গেল।

মুক্তো অশ্রুসিক্ত নয়নে বলল, বিয়ের আগের দিন আমি টেস্ট করাই। বিয়ের পর রিপোর্টটা আসে।
হ্যারি বলল, বাট এটা কিভাবে পসিবল ব্রো? আমার জানা মতে মানে আমি যতদূর জানি তুমি তো বিয়ের আগে কারো সাথে ফি*জিক্যাল হওনি। তাহলে তোমার এইচআইভি পজেটিভ কিভাবে হতে পারে?
আমার এক বছর আগে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত নিতে হয়েছিল। জানিসই তো আমার কত বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আই থিংক সেই সময় যার রক্ত নিয়েছিলাম তার থেকেই এই রোগটা আমার শরীরে এসেছে।
এটা কিভাবে হতে পারে? রক্ত নেওয়ার আগে চেক করিস নি?

তুই তো জানিস আমার ব্লাড গ্রুপ বি নেগেটিভ। যেই রক্ত খুবই রেয়ার। তাই অনেক কষ্টে একজনকে পাওয়া গেছিল। সেই সময় তাই আমার মম ড্যাড তাড়াহুড়ো করে রক্ত নিয়েছিল।
হ্যারি দুঃখ প্রকাশ করে বলল, তাহলে তো ব্যাপারটা খুব খারাপ। এই রোগের তো কোন চিকিৎসাও নেই। তাহলে এখন তুই কি করবি?

মুক্তো মন খারাপ করে বলল, এখন মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। শুধু ঝিনুকের থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ আমি চাইনা আমার প্রতি সে দূর্বল হোক। এইজন্য আমি ইভানাকে দিয়ে আজ নাটক করিয়েছি। যাতে ঝিনুক আমার থেকে দূরে থাকে। নিজের জীবন নতুন করে গুছিয়ে নিতে পারে।
ইভানার কথা শুনে হ্যারির টনক নড়ে৷ ইভানা একজন ডাক্তার। হ্যারি, ইভানা ও মুক্তো তিনজন খুব ভালো বন্ধু। হ্যারি ইভানাকে একতরফা ভাবে ভালোবাসে৷ অনেকবার তাকে প্রপোজালও দিয়েছে। কিন্তু বারবার রিজেক্ট হয়েছে। রিজেক্ট হওয়ার একমাত্র কারণ ইভানা মুক্তোকে ভালোবাসে।

হ্যারির মনে এবার সন্দেহ বাসা বাধে। তাই সে মুক্তোকে প্রশ্ন করে, বাই এনি চান্স তুই কি ইভানার কাছে এই চেকআপ করতে গেছিলি?
মুক্তো মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
হ্যারি কোন ভাবনায় মগ্ন হয়।

অনেকক্ষণ থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আমি। মশার কামড় ছাড়া আর কিছুই খাইনি আমি। খুব খারাপ লাগছিল তাই। কান পেতেও ভেতরের কোন কথা শুনতে পারছি না জন্য। যেটা আরো বেশি বিরক্ত করছিল আমাকে। আমি বিরক্ত হয়ে রহিমা খালার কক্ষে পুনরায় যাই।
আমাকে দেখেই রহিমা খালা বলল, এভাবে ফিরে এসেছ কেন? তোমার উচিৎ ছিল নিজের অধিকার বুঝে নেওয়া।
আমি রহিমা খালাকে সব কিছু বলি। সব শুনে রহিমা খালা বলে, আমার মনে হয় কোন বিরাট ঘাপলা আছে এসবের মধ্যে। শোন মেয়ে একটু বুদ্ধি খাটাও। নিজের সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য তোমার উচিৎ একটু বুদ্ধি খাটানো। একটু চালাক না হলে এই কঠিন দুনিয়াতে টিকে থাকা মুশকিল।
আমি মাথা দুলালাম। শুয়ে পড়লাম রহিমা খালার পাশেই।

দ্বিতীয় দিন ঘুম থেকে উঠলাম। আজ আমার নতুন সংসার শুরু হওয়ার কথা ছিল। অথচ সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। সকালে উঠে সর্বপ্রথম মুক্তোর খোঁজ করতে তার কক্ষে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই আমি আর কিছু বললাম না।
মুক্তো আমাকে পুরোদমে ইগনোর করে অফিসে চলে গেল। আমার খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। মুক্তোর এমন ব্যবহারের কারণ আমার অজানা। কিন্তু আমিও ঠিক করে নিয়েছি এসব ব্যবহার অযথা আর আমি সহ্য করবোনা। আমি এবার প্রতিবাদ করব। আমাকে বিয়ে করে এনে মুক্তো এতো অবহেলা করতে পারেন না। আমি কোন পুতুল নই। জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। এখন একটু সুখের মুখ দেখতে চাই।

দুপুরে স্নিগ্ধা আপি ফোন করল। তার সাথে কথা বলেই সময় যে কিভাবে অতিবাহিত হয়ে গেল বুঝতেও পারলাম না। স্নিগ্ধা আপি আমাকে মুক্তোর সাথে সংসার কেমন চলছে জিজ্ঞাসা করল। আমি মিথ্যা বললাম, যে আমরা অনেক সুখী আছি। সত্যিটা কাউকে জানাতে চাই না এখনই। আগে মুক্তোর সাথে একটা ফয়সালা করতে হবে।

রাতে মুক্তো বাড়ি ফিরল। খুব ক্লান্ত লাগছিল তাকে। আমি তার জন্য নিজে যত্ন করে পানি এগিয়ে নিয়ে গেলাম। অথচ সে পানির গ্লাস ছু*ড়ে ফেলল। আমার মাথার রাগ উঠে গেল আমি মুক্তোর দিকে আঙুল তুলে বললাম, এমন ব্যবহার আমার সাথে কেন করছেন আপনি? আপনার কোন এখতিয়ার নেই আমার সাথে এমন করার। ভুলে যাবেন না আপনি কবুল বলে আমাকে বিয়ে করেছেন। এখন আপনি আমাকে মেনে নেবেন না। এটা কি ইন্ডিয়ান সিরিয়াল নাকি? আপনি যদি আমাকে মানতে না পারেন তাহলে তালাক দিন। আমার কোন শখ নেই অবহেলায় সংসার করার। যেখানে আপনি অন্য কারো সাথে ছি আমার বলতেও লজ্জা করছে যে বাসর রাতে আপনি অন্য একটা মেয়ের সাথে ছিলেন।

এসবের মাঝে কোত্থেকে যেন ইভানা নামের মেয়েটা হাজির হলো। আমার কথা শুনে বোধহয় তার গায়ে লাগল। তাই সোজা এসে আমায় গা*লে থা*প্পড় দিল। থা*প্পড়ের শক্তি অনেক বেশি ছিল। আমার গাল লাল হয়ে গেল। মাথা ঘুরতে লাগল।

মন দিতে চাই পর্ব ১৩

ইভানা আমাকে বিশ্রীভাবে লা*থি মারল। ঠিক পেট বরাবর ছিল লা*থিটা। লা*থি দিয়ে বলল, ইউ ব্লাডি বিচ। হাউ ডেয়ার ইউ? এভাবে বলছ কেন আমার নামে যেন আমি প্র*স্টি*টিউড।

মন দিতে চাই শেষ পর্ব