প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৬

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৬
তানজিলা খাতুন তানু

অতসী কে নিঃশ্চুপ থাকতে দেখে মানুষটি আবারো বলল..
– কিরে মামনি চুপ করে আছিস কেন? কথা বলবি না আমার সাথে।
মিহানের মা মানুষটি ভালো করেই চেনে উনি নিলয়ের বাবা এবং জিনিয়ার বাবার বিজনেস পার্টনার।
মিহানের মা নিজের কৌতুহল আর দমিয়ে রাখতে পারল না। নিলয়ের বাবা উদ্দেশ্য বললেন..

– আপনি ওকে চেনেন?
উনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অতসী বলে উঠল…
– আঙ্কেল আসলে আমি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি বলে শুভকে পড়াতে যেতে পারছি না। আপনি কিছু মনে করবেন না।
নিলয়ের বাবা কিছুই না বুঝে অতসীর দিকে তাকিয়ে থাকে। অতসী কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে ওই কথাটাই বলে। শুভ নিলয়ের দিদির ছেলে।
– আঙ্কেল ওইদিকে চলুন আমি সমস্যাটা সবটা বলছি।
– আচ্ছা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিলয়ের‌ বাবাকে অতসী এক সাইডে নিয়ে চলে যায়। মিহানের মায়ের কিরকম একটা সন্দেহ হচ্ছে বিষয়টা।
– কেসটা কি হলো। অতসী যদি সত্যিই শুভ ওর টিউশন টিচার হয় তাহলে উনি অতসী কে মামনি বলে ডাকলেন কেন? কিছু তো একটা গন্ডগোল‌ আছে কিন্তু কি সেটা?
অতসী ওনাকে আড়ালে এনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
– কি হয়েছে মামনি, এইভাবে মিথ্যা বললি কেন?
– আঙ্কেল এটা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমার।
– কিন্তু কেন?

– আঙ্কেল তুমি তো সবটাই জানো। নতুন করে কিছুই তো বলার নেয় আমার।
– হ্যাঁ সবটা জানি। কিন্তু নিজের‌ পরিচয় লুকিয়ে রাখার কারন কি মামনি।
– আমি আমার অতীতের মুখোমুখি হতে চাই না আঙ্কেল।
– কিন্তু কতদিন পালিয়ে বেড়াবি। সেটা তোর অতীত হলেও, তোর জীবনের অংশ আর কতদিন সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখবি।

– যতদিন না পুরানো সবকিছু ভুলতে পারবি।
– তুই দিনকে দিন আরো জেদি হয়ে যাচ্ছিস কিন্তু।
অতসী মুচকি হাসলো। তা দেখে নিলয়ের বাবা আরো ক্ষেপে গেলেন। নাক ফোলাতে ফোলাতে বললেন…
– এই হাসি দিয়েই সবকিছু সামলে নিস তুই। আর আমাকেও পটিয়ে নিস।
– থাক আর বাচ্চাদের মতো নাক ফোলাতে হবে না।
– হুমম।

অতসী মুচকি হাসলো। মানুষটি নিজের মেয়ের থেকে অতসী কে কোনো অংশে কম ভালোবাসেন না। অতসীও মানুষটিকে বড্ড ভালোবাসে, এই মানুষটির জন্যই তো এখনো মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে।
অতসী আর বাবাকে একসাথে গল্প করতে দেখে নিলয় এগিয়ে এসে বলল…
– বাবা মেয়ে এত কি কথা বলা হচ্ছে।
– তোমাকে শুনতে নেয়।
– কেন?
– এটা আমাদের বাবা মেয়ের পার্সোনাল কথা, কাউকে বলতে নেয়।
– ভালো। তাহলে আমি গেলাম।

নিলয় মেকি রাগ দেখিয়ে চলে যায়। নিলয়ের বাবা আর অতসী দুজনেই হেসে উঠলো।
মিহানের মা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটাই খেয়াল করলেন।নিলয়ের বাবার সাথে অতসী কে দেখে মনে হচ্ছে, ওনাদের মাঝে ভালোই সম্পর্ক। কিন্তু নাতনীর টিউশন টিচারের সাথে এত ভাব কেন? বিষয়টি শুধু উনি নয় শাহানাও খেয়াল করেছে, ওর মনেও এই একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। শাহানা একটা সুযোগ খুঁজে চলেছে অতসীকে অপমান করার।
কিছুক্ষন পর,

অতসী নিলয়ের বাবার সাথে কথা শেষ করে হেঁটে যাচ্ছিল তখনি একজনের সাথে ধাক্কা লেগে তার হাতে থাকা খাবারটা তার গায়ে পড়ে যায়। মহিলাটি ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠল..
– এই মেয়ে আমার এত দামী ড্রেসটা নষ্ট করে দিলে।
– সরি ম্যাম।‌আসলে আমি খেয়াল করিনি।
– চোখ কোথায় ছিলো তোমার।

– সরি ম্যাম প্লিজ চেঁচামেচি করবেন না, এখানে অনেকেই আছে বিষয়টা ভালো দেখাবে না।
মহিলাটি আরো ক্ষেপে গেলো। আরো চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। বিষয়টির সুযোগ নিলো শাহানা।‌ বাঁকা হাসি দিয়ে মহিলার দিকে এগিয়ে এসে শাড়িটার দিকে নজর দিয়ে বলল…
– ইশ্ এত সুন্দর শাড়িটা নষ্ট করে দিলি অতসী।
– আমি ইচ্ছা করে করিনি।
– ইচ্ছা করে করিস নি মানে কি?

– বললাম তো ইচ্ছা করে করিনি, তুই এত ঝামেলা করছিস কেন?
শাহানা আরো কিছু বলতে যাবে তখনি অতসী চলে যায়। শাহানা নাক ফুলিয়ে মহিলাটিকে তাঁতিয়ে তুলতে লাগল।
– শাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলো ইশ্। আচ্ছা আন্টি এই শাড়ির দাম কত?
শাহানার তেল‌ লাগানো কথা শুনে মহিলাটি ন্যাকা স্বরে বলে উঠল…
– ১২হাজার টাকা। আমার এত দামী শাড়ি।
– আরে আন্টি ওকে কি বলছেন, ওহ তো এত দামের শাড়ি কখনোই দেখিনি ওহ বুঝবে কিভাবে এইসব।
– মানে? (মহিলাটি)
শাহানা বাঁকা হেসে বলল…

– আরে আন্টি ওই মেয়েটার নাম অতসী। আমাদের সাথেই পড়ে, নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি পড়ায়। ওহ কিভাবে এত দামী শাড়ির দাম জানবে বলুন।
– কি বলছো এইসব।
– হুম আন্টি সত্যি।
– কিন্তু ওর পোশাক দেখে তো মনে হয় না।
– আরে কারোর চেয়ে পড়েছে নাহলে বড়োলোক ছেলের থেকে পটিয়ে নিয়েছে।
– কি বলো।
– হ্যাঁ আন্টি। আমাদের মিহানের পেছনেও তো পড়েছিল কিন্তু আমাদের মিহান পাত্তা দেয়নি।
– মেয়েটা তো ডেঞ্জা”রেস আছে।
– হুম।

কথাটা আসতে আসতে গোটা বিয়ে বাড়িতে ছড়িয়ে গেল। সকলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চলেছে। অতসী ততক্ষণে একটা প্যাকেট নিয়ে ফিরে এসে মহিলাটির হাতে ধরিয়ে দিলো।
– কি এটা।
– এতে একটা শাড়ি আছে। আপনি পড়ে নিন।
– কার থেকে চেয়ে নিয়ে আসলে?
– মানে। কি বলছেন আপনি।
– মানে কার শাড়ি এটা?
– আমার কেন।
– তুমি এত দামী শাড়ি কোথায় পেলে?
– আপনি এত খোঁজ নিচ্ছেন কেন?

– না। আমার কাছে খবর আছে, তোমার পেটের ভাতটাও জোগাড় করার জন্য টিউশনি পড়াতে হয় সেইখানে এত দামী শাড়ি কোথায় পেলে তুমি?
– কোথায় পেয়েছি সেটা বড়ো কথা নয়। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, অতসী কখনোই কারোর কাছ থেকে কোনো দান নেয় না। শাড়িটা আমার নিজের হাতেই কেনা।
– টাকাটা কে দিয়েছে?
– আপনি কিন্তু আমাকে প্রতিনিয়ত জেরা করে চলেছেন। আমি আপনাকে এত উত্তর কেন দেবো।
– উত্তর তো তোমাকে দিতেই হবে। আর সবাইকেও তো জানতে হবে, তোমার চরিত্র কেমন।
– আপনি এইসব কি বলছেন।

মহিলাটি কোনো কথাতে কান না‌ দিয়ে, চেঁচিয়ে বলে উঠল…
– এটেনশান প্লিজ।আপনাদের সকলকে আমার কিছু দেখানোর আছে।
মহিলাটির কথা শুনে সকলেই ওনার দিকে নজর দিলো। অতসী বুঝে উঠতে পারছে না, মহিলাটি কি করতে চাইছে। মহিলাটি সকলের দিকে একবার তাকিয়ে তারপরে অতসীর দিকে তাকিয়ে বলল…
– সামনের মেয়েটির নাম অতসী। একজন লো ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। অথচ ওর কাছে দামী শাড়ি, দামী ড্রেস কিভাবে?
অতসী সহ সকলেই মহিলাটির দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলাটির কথা কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
একজন ভদ্রলোক বলে উঠল…

– আপনি কি বলছেন এইসব।
– হ্যাঁ ঠিক বলছি। অতসীর পরিবারে কেউ নেয়, খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করাতে হয়। আর সেইখানে ওর কাছে এত দামী শাড়ি এলো কিভাবে। আপনি দেখুন শাড়িটা।
শাড়িটা দেখে সকলের মাঝেই প্রশ্ন জাগলো। নানা মানুষ নানা কথা বলছে একজন তো বলেই দিলো।
– দ্যাখো বুঝি টাকার জন্য অ’কাজ কু’কাজ করে বেড়িয়েছে। এইসব মেয়েগুলো বড্ড লোভী।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৫

আরো আরো অনেক কথা বলে চলেছে মানুষজন। অতসী একটা কথাও বলার সুযোগ পাচ্ছে না,চুপ করে আছে।
– হ্যাঁ এটা সত্যি লো ক্লাসের মেয়েগুলোর চরিত্রের কোনো ঠিক ঠিকানা থাকে না। চরি’ত্রহী’ন মেয়ে একটা।
-স্টপ ইট।
অতসী আর চুপ করে থাকতে পারল না, চেঁচিয়ে উঠলো। অতসীর চিৎকার শুনে সকলে চুপ করে গেল।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৭