প্রয়োজনে প্রিয়জন শেষ পর্ব 

প্রয়োজনে প্রিয়জন শেষ পর্ব 
তানজিলা খাতুন তানু

একজন সুদর্শন যুবক কফিশপে বসে আছে একবার নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, আর একবার কফিশপের গেটের দিকে তাকাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে ফোনের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দিলো।
– এক্সকিউজ মি।
মহিলা কন্ঠস্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো, সামনে একজন মধ্যবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। পরনে হালকা গোলাপী রঙের তাঁতের শাড়ি, চুলগুলো হাত খোঁপা করা চোখে চশমা, হাতে ঘড়ি। মহিলাটির বয়স কত হবে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

– তুমি সাগর রাইট।
– ইয়েস, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
– আমি আরুর মামনি।
– ওহ আপনি, আপনারই অপেক্ষা করছিলাম আমি। বসুন।
সাগরের কথা শুনে মহিলাটি বসল। আর মহিলাটি অন্য কেউ নয়, অতসী। বয়সের ছাপ পড়লেও অতসীর সৌন্দর্যের কোনো ঘাটতি হয়নি, আগের মতোই সুন্দরী আছে।
– আমাকে এইখানে হঠাৎ আসতে বললেন কেন?
সাগরের প্রশ্ন শুনে অতসী মৃদু হেসে সাগরকে পর্যবেক্ষণ করল। ছেলেটা বেশ সুন্দর দেখতে, গলার স্বরটাও ভারি মিষ্টি। হয়তো তাই আরু এর প্রেমে পড়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আরুকে ভালোবাসো?
– হ্যাঁ।
– কতদিনের রিলেশন তোমাদের?
– ৩বছর।
অতসী একটু অবাক হলো তার মেয়ে প্রেম করছে আর সে এতদিন কিছুই বুঝতে পারেনি।
– তুমি কি করছো এখন?
– মেডিকেল পাশ করে ডাক্তারি করছি।
– আরুকে বিয়ে করতে চাও?
– হ্যাঁ। আপনাদের বাড়িতে আমাদের যাওয়ার কথা আছে, বাবা মা সকলেই রাজি।
– সাগর আমি তোমাকে কিছু কথা চাই।
– কি কথা।
– আরু আমার মেয়ে নয়।
– মানে?

– আরু আমার দিদিভাই আর আদৃতের সন্তান। আরুর জন্মের সময়েই দিদিভাই মা’রা যায় তারপরে আদৃত একাই ওকে বড়ো করে তোলে ওর যখন ৫বছর বয়স তখন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে আদৃত মা’রা যায়। তখন থেকেই আরু আমার কাছেই বড়ো হয়, এইসব ঘটনা ঘটে যখন আরুর বয়স খুবই কম সেইজন্য ওর এইসব কথা খেয়াল নেই ওহ জানে আমিই ওর মা। কিন্তু আমার মনে হলো তোমাকে সবটা জানানো দরকার তাই এইখানে আসা।

– আপনি বিয়ে করেননি?
অতসী মুচকি হাসল।
– আদৃত বেঁ’চে থাকলে হয়তো বিয়ে করতাম।
– মানে?
– ওহ কিছু না। এখন বলো আরুকে বিয়ে করতে কোনো অসুবিধা নেই তো।
– আমি আরুকে ভালোবাসি, আরুর সাথেই সংসার করব। ওর পরিবারের সাথে না তাই ওর পরিবারের বিষয়ে না জানলেও আমার কিছু অসুবিধা হতো না।

অতসী খুশি হলো। যাক আরুকে একটা যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দিতে পারছে।
– ঠিকাছে তুমি পরিবার তোমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসো আমার কোনো আপত্তি নেই।
– আন্টি আরুকে কিছু বলবেন না,আমি সারপ্রাইজ দেবো।
– আচ্ছা।

দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১৮টা বছর। ১৮বছরে অনেকেকিছুই বদলে গেছে, আরু অনেক বড়ো হয়ে গেছে। আদৃতের মৃত্যুর পর অতসী আদৃতের পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেই। বড়ো বোনের মতো দায়িত্ব নিয়ে মিতু আর নিলয়ের বিয়ে দেই। আরুর দায়িত্ব নেই, আদৃতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করে। আরুকে বড়ো করে তোলে, আরু এখন একজন ডাক্তার, অতসী নিজের মনের ইচ্ছা আরুকে দিয়ে পূরন করিয়েছে।

মিহান আর জিনিয়ার সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে গেছে ওদের একটা মেয়ে হয়েছে মুনিয়া বয়স ১৬ বছর।আরুর সাথে খুব মিল আরু বলতে পাগল। অতসীকেও খুব ভালোবাসে আর অতসীও। বলে না মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি ঠিক সেইরকম মুনিয়া ওর‌ মায়ের থেকে অতসীর কাজ বেশি ফ্রি। রুদ্র আর সামিয়ার ছেলে সামির মুনিয়ার থেকে ১বছরের বড়ো অতসীর কাছে মুনিয়ার অবাধ যাতায়াতের সূত্রে সামিরের সাথে মুনিয়ার পরিচয়, সামির তো মুনিয়া বলতে পাগল।
মিতু আর নিলয়ের ছেলে মৃদুল পুরোই আদৃতের কার্বন কপি। আদৃত থাকলে হয়তো মামা-ভাগ্নের জুটিটা খুব সুন্দর হতো কিন্তু কপাল।

সবাই সুখেই আছে। সবাই কি সত্যি আছে! অতসী আজও আদৃতের জন্য নিজের চোখের পানি ফেলে, প্রতিবারেই নিজের চোখের পানি ফেলে। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে অভিযোগ করে, আদৃতকে না পাবার জন্য। আদৃত চলে যাবার পর সবাই ওকে বুঝিয়েছিল নতুন করে শুরু করার জন্য। অতসী নতুন করেই সবকিছু শুরু করেছিল অতসীকে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড়ো করে তোলে। আদৃতের মা ছেলেকে হারানোর পর শয্যাসায়ী হয়ে পড়ে আর বছর না ঘুরতে ঘুরতেই মা’রা যান। অতসীর মা বছরখানেক আগেই মারা যান আর আকরাম খাঁন বর্তমানে শয্যাসায়ী। আদৃত চলে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু আরুকে দুটো পরিবার আর একটা মা দিয়ে গিয়েছিল। ছোট আরু বড়ো হবার সাথে সাথে অনেককিছুই ভুলে যায় আর অতসীকে নিজের মা হিসাবে বড়ো হতে থাকে।

রবিবার,
ছুটির দিন আরু নাক ডেকে ঘুম দিচ্ছে। অতসী দুইবার ডেকে গেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
– ওই তুই উঠবি না আমি এইবার পানি ঢালব।
– মামনি আর একটুখানি।
– তোকে আজকে দেখতে আসবে।
কথাটা আরুর কানে আসতেই আরু সোজা হয়ে বসে পড়ল। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইল অতসীর দিকে।
– মামনি কি বলছো তুমি?
– হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি উঠে নীচে এসো, ওনারা আসবেন তার জন্য আয়োজন করতে হবে।

অতসী চলে গেল কিন্তু আরু ঠাঁই বসে আছে। সাগরের বিষয়টা আরু অতসী কে বলবে বলবে করেও আর বলা হয়নি হঠাৎ করেই এইরকম পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে সেটা ওর ধারনার বাইরে ছিল। আরু তাড়াতাড়ি সাগরকে কল দিলো কিন্তু সাগর ফোন তুলল না। আরুর সবকিছু তছনছ করে দিতে মন চাইছে।
অতসী রান্না করছে আর আরু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আবারো কলিং বেল বেজে উঠল।
– আরু দেখো কে এসেছে।
– এইনিয়ে তিনবার গেলাম আমি আর পারব না। আমি গেলাম।

আরু রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। অতসী মুচকি হাসল, এর আগের বার সামিয়া আর মৃদুল এসেছিল আর তার আগে মিতু,নিলয় আর মুনিয়া এসেছে। সকলের আগমনে আরুর বুঝতে অসুবিধা নেই যে আজকে বিকালে মারাত্মক কিছু হতে চলেছে। কিন্তু মামনির মুখের উপরে কিছুই বলতে পারছে না আর না সাগরকে ফোনে পাচ্ছে রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর।
অতসী রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে দরজা খুলতে বলল, মুনিয়া দরজা খুলে দিলো। মিহান আর জিনিয়া এসেছে। বাড়ির মেয়েরা মিলে রান্না করতে লাগল।

বিকালে…
আরু কিছুতেই রেডি হতে চাইছে না।
– দ্যাখ মুনি আমার ভালো লাগছে না তুই যা তো এখান থেকে।
অতসী ঘরে ঢুকে মুনিয়া আর আরুর বান্ধবীকে বের হয়ে যেতে বলল। ওরা চলে যেতে অতসী দরজা আটকে দিয়ে আরুর সামনে গিয়ে বসল, অতসীকে দেখে আরু চমকে উঠল।

– মামনি তুমি কখন আসলে।
– একটু আগে।
– সরি আসলে।
অতসী ইশারায় চুপ করতে বলল। অতসী আরুর হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল,
– এইটা পড়ে আয়।
– মামনি।
– মিষ্টিবুড়ি মামনির কথা শুনবে না।
মিষ্টিবুড়ি ডাকটা আজ ১৮বছর পর শুনল, আরুর চোখের কোনে পানি জমা হতে লাগল। আদৃত চলে যাবার পর থেকে অতসী ওকে আর এই নামে ডাকেনি আরু বলেই ডাকত। আজকে এতগুলো বছর পর এই নামটা উচ্চারণ করল।

– মিষ্টিমা তুই আমাকে বিশ্বাস করিস তো।
– হুমম।
– তোর মামনি তোর ক্ষতি কি কখনো চাইতে পারে বলে তোর মনে হয়।
– না মামনি আমি সেইভাবে বলতে চাইনি।
– তাহলে চুপচাপ ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে আয় আজকে আমি নিজের হাতে আমার মেয়েকে সাজাবো।
আরু আর উপেক্ষা করতে পারল না। আরু জানে অতসী ওর জন্য অনেক করেছে, যায় করুক এই মানুষটিকে কষ্ট দিতে পারবে না। অতসী আরুকে শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।

– আমার মাকে কারোর নজর না লাগুক।
অতসী আরুর কপালে চুমু এঁকে দিলো। একটু পরে মুনিয়া আরুকে নিয়ে বসার সামনে বসালো, আরু মাথা তুলছে না। সবাই কথা বলছে অতসী তার মাঝে বলল,
– আমরা বড়োরা কথা বলছি ততক্ষন ওর নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিক।
– আচ্ছা। (সাগরের বাবা)
মুনিয়া সাগর আর আরুকে আরুর ঘরে রেখে চলে গেলো।

– আরু।
চেনা কন্ঠস্বর শুনে আরু মাথা তুলে তাকিয়ে সাগরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠল।
– তুমি।
– হুমম। তোমার মামনি আমার সাথে দেখা করে বিয়ের প্রস্তাব আনতে বলল।
– সত্যি।
– হুমম।
আরু সাগরকে জড়িয়ে ধরল। ভাবতেই পারছে না, ওর ভালোবাসার মানুষটির সাথেই ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়েটা ১৫দিন পরে ঠিক করা হলো। সবাই খুব খুশি।

– মামনি থ্যাঙ্ক ইউ।
– খুশি তো।
– হুমম খুব। আমার বেস্ট মামনি।
অতসী মুচকি হাসল। আদৃতের ঘরটা আগের মতোই আছে, অতসী প্রতিদিন ওই ঘরে আসে নিজের মতো কথা বলে গুছিয়ে রাখে চলে যায়। কোনো মেডের এই ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই।
সবাই ঘুমিয়ে পড়তে অতসী আদৃতের ঘরে গিয়ে বিছানায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। এই ঘরের প্রতিটা জিনিসে অতসী আদৃতকে অনুভব করতে পারে।

– আদৃত তুমি খুশি তো। তোমার রাজকুমারীর তার পছন্দের মানুষটির সাথে বিয়ে ঠিক করেছি তুমি খুশি তো আদৃত। বলো না আদৃত।
অতসী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আদৃত কে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিল কিন্তু আপন করে নেবার আগেই আদৃত ওকে ছেড়ে চলে যায়।
দেখতে দেখতে কেটে যায় ১৫টা দিন। আজকে আরুর বিয়ে অনেকগুলো বছর পরে খাঁন ভিলা আবারো নানা রঙে সেজে উঠেছে। সকলের মনেই আনন্দ, আর আনন্দ হবেই না কেন খাঁন ভিলার সকলের আদরের চোখের মনি আরুর বিয়ে।
আরুকে বউয়ের সাজে খুব সুন্দর লাগছে। অতসী আরুর সাথে কথা বলবে বলে সবাইকে চলে যেতে বলে,

– মিষ্টিবুড়ি নতুন পরিবার,নতুন মানুষ সবার সাথে মানিয়ে সুখে থাকবি কেমন। আর শোন অন্যায় কিন্তু অন্যায়ই তাই কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোষ করবি না। নিজের কাজ নিজের ডাক্তারিকে কখনোই অবহেলা করবি না। মানুষের সেবাই ডাক্তারের ধর্ম। সাগর ছেলেটা বড্ড ভালো ওকে ভালো রাখিস কখনোই কোনো বিষয়ে ঝামেলা হলে রাগারাগি করবি না। বিষয়টাতে ঠান্ডা মাথাতে চিন্তা করবি, রাগারাগি করলে ঝামেলা বেড়েই যাবে কমবে না। ভালো থাকিস তোরা দুজন খুব সুখে থাকিস।

– মামনি তুমি এমনভাবে কথা বলছো কেন? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না স্বাভাবিক আছো তুমিড় কি হয়েছে তোমার।
– কিছু হয়নি। তুই এসব বাদ দে তো, এখুনি তোকে নীচে নিয়ে যাবে। আর কিছুক্ষণ পর তুই একজনের স্ত্রী হয়ে যাবে অনেক দায়িত্ব কিন্তু।
– দোয়া করো মামনি।
– আমার দোয়া সবসময়েই তোর উপরে থাকবে সে আমি থাকি আর নাই বা থাকি।
– না থাকি মানে? মামনি আজকের দিনে কিসব বলছো তুমি।
– কিছু না মা।

অতসী আরুর কপালে চুমু এঁকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আরু কেঁদে উঠে,
– মামনি আমি তোমাকে ছেড়ে থাকবো কিভাবে‌
– সব অভ্যাস হয়ে যাবে মা।
দরজায় টোকা পড়ল। আরুকে নীচে নিয়ে যাবে বলে,
– সুখে থাকিস মা।
আরুকে নিয়ে চলে যাবার পর অতসী সবার কাছে একবার করে যায়।

– নিলয়’দা।
– আরে অতু বল।
– নিলয় দা আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো।
– এইসব কি বলছিস। ওর তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে দেখবি ওহ খুব ভালো থাকবে।
– তাই যেন হয়।

শুধু নিলয় নয় মিতু, রুদ্র,সামিয়া, জিনিয়া,মিহান সবার কাছে গিয়েই এই কথাটাই বলেছে। মৃদুল, মুনিয়া আর সামির সকলের কপালে চুমু দিয়ে আদর করেছে। তারপরে কোথায় গেল কেউ আর দেখেনি।
ভালো ভাবেই আরু আর সাগরের বিয়ে সম্পন্ন হয়।‌বিয়ে শেষে বিদায়ের সময়ে অতসীর খোঁজ পড়ে, মুনিয়া অতসীর খোঁজ করতে করতে আদৃতের ঘরে আসে, অতসীকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে বলল,

– মা দিদিভাই মামনি বাবাইয়ের ঘরে শুয়ে আছে।‌কত করে ডাকলাম কিন্তু উঠল না তাড়াতাড়ি চলো তোমরা।
কথাটা শোনা মাত্রই সবাই আদৃতের ঘরে ছুটল। আরু তো কেঁদেই দিয়েছে, সাগর অতসীর পালস্ চেক করে বলল,
– সি ইজ নো মোর।
সবার মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়ল। সুস্থ মানুষটার হঠাৎ কি হলো সেটাই কেউ বুঝতে পারল না। আনন্দের অনুষ্ঠানটা নিমিষেই শোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। আরু কাঁদতে কাঁদতে অতসী কে জড়িয়ে ধরেছে,

– ওহ মামনি উঠো না আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। ওহ মামনি উঠো না, তুমি না থাকলে আমাকে কে শাসন করবে বলো। ওহ মামনি উঠো না ,মামনি।
অতসী আর উঠলো না। আরুকে সামলে রাখা যাচ্ছিল না, কেঁদে কেঁদে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল। সাগর অতসীর হাতের মুঠোয় কিছু একটার উপস্থিতি টের পেয়ে হাতটা খুলে দেখল একটা চিরকুট,

জীবিত থাকাতে সবার #প্রয়োজনে_প্রিয়জন হলেও মৃত্যুর পর কারোর না কারোর প্রিয়জন হবো ঠিকই। কিন্তু আফসোস যার প্রিয়জন হবো সে না পারবে আমাকে ছুঁতে আর না পারবে দুচোখ ভরে দেখতে।
চিরকুটের কথাগুলোর মানে সেইদিন সাগর কিছুই বোঝেনি। তবে দায়িত্ব নিয়ে অতসী শেষ কাজ সম্পন্ন করেছে, আরুকে সামলে রেখেছে। ওর কারোরই কল্পনায় ছিল না এই সুখের দিনটা এইভাবে দূর্বিষহ হয়ে উঠবে। পরে সাগর সবাইকে এই চিরকুটটা দেখায় আর ওই কথাগুলোর মানে জানতে চাই। তখন অতসীর জীবন কাহিনী পুরোটা সাগরকে বলা হয়। সবটা শুনে সাগরের চোখের কোন থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে আর বিরবির করে বলে উঠে,

– কারো কারো জীবনে সুখ ধরা দেয়না আর আমাদের জীবনে সুখ ধরা দিলেও আমরা অবহেলা করি। আমরা এতটা স্বার্থপর কেন? অতসী কে #প্রয়োজনে_প্রিয়জন না করে প্রিয়জন বানালে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত? ভালো থেকো মামনি, কেউ তোমাকে প্রিয়জন না ভাবলেও আজ থেকে তুমি আমার প্রিয়জন, আমার সুখ দুঃখের সাথী। তবে তোমার কথাটাই ঠিক হলো, তুমি আমার প্রিয়জন হলে ঠিকই কিন্তু তোমাকে আমি কখনোই ছুঁতে পারবো না, মামনি বলে জড়িয়ে ধরতে পারবো না আর না পারবো তোমাকে সামনে থেকে দেখতে। মামনি একটাবার কি আমার জন্য তোমার ছেলের জন্য ফিরে আসা যায়না!

প্রতিনিয়ত হাজার হাজার অতসী জন্ম নিচ্ছে, আবার হাজার হাজার অতসীর মৃ’ত্যু ঘটছে। আমরা কতজনের জীবনের খবর রাখি, শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ মেটাতেই ব্যস্ত থাকি। কারোর কথাই ভাবি না, প্রয়োজনে প্রিয়জন বানায় আবার প্রয়োজন শেষে ছুঁড়ে ফেলে দিই। এটাই বাস্তবতা আর এটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আর চলে যাবে।

সমাপ্ত

গল্পটা শেষ করেই দিলাম। গোটা গল্পটা কেমন লাগল সবাই বলবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৪২