হৃদমাঝারে তুমি বোনাস পর্ব 

হৃদমাঝারে তুমি বোনাস পর্ব 
সাইয়ারা মম

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ল নীলু।মিহু সবে মাত্র নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখল।নীলুকে উঠে যেতে দেখে ও জিজ্ঞেস করল
-নীলু কোনো সমস্যা হয়েছে?
নীলু বিষন্ন মনে বলল-না

-তাহলে তোমাকে এত আপসেট দেখাচ্ছে কেন?
-ওটা এমনিই দেখাচ্ছে মনে হয়।মাত্রই ঘুম থেকে উঠলাম তো তাই।
-আচ্ছা এখন খাবে কিছু?তোমার ভাইয়া কেক,রুটি,বিস্কুট সব কিনে দিয়ে গিয়েছেন।তুমি কি এখন খেতে চাচ্ছো কিছু?
-না বলে নীলু একটু মন খারাপ করে বসল।তারপর মিহুকে জিজ্ঞেস করল-আচ্ছা ভাবি ভাইয়া কোথায়?ভাইয়াকে তো দেখছি না।
আরফানের কথা বলায় মিহু কেন যেন লজ্জা পেল।থত মত খেয়ে বলল-তিনি তো বাসায় চলে গিয়েছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-কখন?
-কাল রাতেই চলে গিয়েছেন আর বলেছেন আজকে নাকি কি একটা ইমপর্টেন্ড কাজ আছে।তাই তিনি হাসপাতালে আসতে পারবেন না।তার বন্ধু ফারিশ এসে নাকি আমাদের বাসায় দিয়ে আসবে।
-ও ও
বলে নীলু আবার শুয়ে পড়ল।খুব মন খারাপ লাগছে তার। আজকে নীলুর জন্মদিন।কিন্তু দেখো ওকে কেউ ই উইস করছে না।এমনকি ওর আরফান ভাইয়া ও উইস করছে না।মিহু ভাবি না হয় নাই জানে তার জন্মদিনের কথা কিন্তু বাকি সবাই তো জানে।

কালকে মিহুর সাথে আরফানের আকস্মিক দুর্ঘটনায় আরফান মনে হয় একটু লজ্জা পেয়েছে।তাই ও একটু থেকে আবার চলে গিয়েছে।পরে ফারিশকে পাঠিয়ে জিনিসগুলো কিনে দিয়েছে। আর ফারিশ কে নিয়ে যেতে বলেছে সকালে।ফারিশের কথায় মিহুর মনে পড়ল ফারিশ একটা কার্ড দিয়ে বলেছিল নীলু সকালে ঘুম থেকে উঠলেই যেন এই কার্ডটা দেয়।তাই মিহু নীলুকে বলল

-নীলু এইদিকে ঘোরো।দেখো ফারিশ ভাইয়া একটা কার্ড দিয়ে গিয়েছেন তোমাকে দিতে বলেছেন। এই নাও
নীলু মিহুর বিপরীতে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।ও কান্না করছে।মিহুর দিকে ফিরলে মিহু ওর কান্না দেখে ফেলবে।তাহলে মিহু আবার হাজার প্রশ্ন করবে।শেষমেষ ওর নিজেরই বলে দিতে হবে ওর জন্মদিনের কথা।নিজের জন্মদিন কেউ বলে দেয় নাকি?তাই নীলু মিহুকে বলল
-এখন ঘুরতে ইচ্ছা করছে না।তুমি পাশে রেখে দাও আমি পরে দেখে নেবো।
-আচ্ছা

বলে মিহু নীলুর মাথার কাছে কার্ডটা রেখে দিল।মিহুকে কার্ডটা খুলতে নিষেধ করেছিল ফারিশ তাই আর কার্ডটা খুলেনি।মিহু আঙুল দিয়ে তাজবীহ্ গুনতে গুনতে বেলকনিতে গেল। সূর্য ওঠার সময় হয়ে গিয়েছে।সকালে আযান দেওয়ার পরে সময় থাকে একটুকু।সূর্যটাও উঠি উঠি করে উঠে যায়।তারপর আবার ডুবেও যায়। আজকে রাত পেরোলেই মাহে রমজান।মিহু মন ভরে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করল।শহর যতই ধূলোবালিতে পূর্ণ থাকুক না কেন সকাল বেলার বাতাসটা একদম টাটকা।মিহু সব থেকে এই সময়টাকেই পছন্দ করে।নিরিবিলি কোলাহল মুক্ত। আর দু একটা পাখির মিষ্টি কন্ঠের গান শুনতে খুব ভালো লাগে।একটু সময় পরে মিহু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গুলো গুছিয়ে নিল। আজকে সকালের দিকেই নীলুকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।ফারিশ এসে পড়বে আটটার মধ্যেই।আর মাত্র দুঘন্টার মতো বাকি।

নীলু তার ড্রেস পরিবর্তন করে তার কাপড় গুলো গুছিয়ে নিল।মিহু সব কিছু গুছিয়ে নিচে রওনা দিল।ফারিশ ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।নীলু যাওয়ার আগে একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল কিছু ফেলে গিয়েছে কিনা।বেডের ওপরে কার্ডটা দেখে হাতে নিল।তারপর কৌতুহল হয়ে খুলতে যাবে এমন সময় মিহু ডাক দিল। ও আসছি বলে নিজের ব্যাগের মধ্যে কার্ডটা ঢুকিয়ে নিল।তারপর দৌড়ে মিহুর কাছে গেল।
বাসার সবাই অপেক্ষায় আছে নীলু কখন আসবে।পিয়াস তো একরকম একপ্রকারে একটা কবিতা বানিয়ে ফেলল

-একটি সারপ্রাইজ দেওয়া হবে তার জন্য লক্ষ্য লক্ষ্য অধীর সারপ্রাইজ দাতা বসে আছে
কখন আসবে নীলু?কখন আসবে নীলু?
এই বাড়ি সেদিন ছিলো না,শোভিত ফুলের রুমটা কালকে ছিল না
বলার পরে নেহালের দিকে তাকিয়ে বলল-নেহাল এরপর যেন কী?কবিতার লাইনটা মনে পড়ছে না
-ভাই তুই থাম,তোর মনে করা লাগবে না।নির্মলেন্দু গুণ যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে তোর পা ধরে মাফ চাইতেন।বলতেন আমি আর কবিতা লিখব না তুমি দয়া করে থামো।

-প্রসংশা যদি করতেই হয় ঘুরিয়ে পেচিয়ে না করে সোজাসুজি করলেই পারিস। এত প্যাচানোর কি আছে?
বলার পরে নিজের শার্টের হাত ঠিক করে তারপর চুলগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল- আমি জানি আমি ভালো আবৃত্তি করতে পারি আর ভালো কবিতা বানাতেও পারি।আমি অলওয়েজ হিরো
-হিরো না জিরো
বিদিশার কথায় পিয়াস প্রতিবাদ করে বলল- আপনি এখন একটা প্রুভ দেখান পারলে।
-আপনি লক্ষ্য লক্ষ্য সারপ্রাইজ দাতা পেলেন কোথায়? এখানে আমরা ৬ জন আছি।আপনার চোখের পাওয়ার জিরো।কিচ্ছু দেখেন না চোখে।

পিয়াস আশেপাশে তাকিয়ে সবাইকে গুনল।বিদিশা,পিহু,নেহাল,বড় মা আর ও নিজে মিলিয়ে মোট ৫ জন হয়। এবার ও হেসে বলল
-আপনি গনিতে কাচা বাদশা বিদিশা।আমরা এখানে ৫ জন আছি।
পিয়াসের বলা শেষ হলে বিদিশাও পিয়াসের মতো করে হেসে বলল- ষাঁড় মশাই একটু আপনার ঘাড়টা ঘুরালে আমি ধন্য হতাম।কৃপা করে যদি ঘাড়টা বা দিকে ঘুরিয়ে রান্নাঘরে তাকাতেন
পিয়াস বিদিশার বলা কথায় রান্নাঘরে তাকিয়ে দেখে রেবেকার সাথে ওর মাও তাকে হেল্প করছে।এটা দেখে মনে মনে বলল

-আজ কেক এর বদলে পান্ডার মতো বাশ খেতে হবে।
গাড়ি থেকে নামার পরে ফারিশ গাড়ি নিয়ে চলে গেল।মিহু নেমে নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মুড খারাপ করে রেখেছে।নীলুর কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল
-কি হয়েছে?মন খারাপ করেছো?
-না ভাবি
-তাহলে ভেতরে চলো

বাড়ির কলিংবেল বাজানোর পরেও যখন কেউ দরজা খুলল না তখন নীলু বলল-
-দাড়াও ভাবি আমার কাছে অতিরিক্ত চাবি আছে ঐটা দিয়ে খুলি
দরজা খোলার পরেই কয়েকটা বেলুন ফাটানো হলো।ওপর থেকে গোলাপের পাপড়ি পড়তে লাগল। আর সবাই চিৎকার করে বলল
-হ্যাপি বার্থডে নীলু

নীলু সত্যিই সারপ্রাইজড হয়ে আছে।খুশিতে চোখে পানি এসে গেলো।সবাই তাহলে এই প্লান করছিলো।তাই ওকে কেউ কিছু বলেনি।বিদিশা নীলুকে নিয়ে ওর রুমে গেল।নীলু খুশিতে বিদিশাকে জড়িয়ে ধরল।তারপর বলল
-ধন্যবাদ ।ধন্যবাদ তোমাকে
-আমাকে ধন্যবাদ দিও না।এই প্লানটা সব করেছে নেহাল ভাইয়া।তাকে দেও ধন্যবাদ।
নেহাল সহ বাকি সবাই ওদের পেছনে পেছনে এসেছিল।নীলু দৌড়ে গিয়ে নেহালকেজড়িয়ে ধরল।তারপর ওর হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল

-তুমি এই জন্য আমার সাথে হাসপাতালে দেখা করো নি।তাই তো বলি নেহাল ভাই আসে না কেন
-হ্যাঁ নীলু।তোমার নেহাল ভাই আমাকে শপিং মলে ডেকে নিয়ে এইসব জিনিস কিনিয়েছে।
রেবেকা নীলুকে জড়িয়ে ধরে বলল-হ্যাপি বার্থডে মামণি।আজকে তোমার ফেভারিট চকলেট ফ্লেভারের কেক বানিয়েছি।আমার মনে হয় তুমি পছন্দ করবে।আচ্ছা তোমাকে আর কেউ উইস করেনি
নীলু কিছু বলার আগেই মিহু বলে উঠল- আমার মনে হয় করেছে।তোমাকে যে কার্ডটা দিয়েছি সেটা কি দেখেছিলে?
মিহুর কথা শুনে নীলু তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে কার্ডটা বের করে সেটা খুলল।

‘তোর জন্য আছি,তোর জন্য বাঁচি
থাকতে পারব না তো চিরকাল
যা কিছু হোক না কেন,তুই জেনে রাখিস
তুই হলি আরফানের প্রাণ’
শুভ জন্মদিন আমার ছোট্ট বোনু।দেখতে দেখতে তুই কবে যে এত বড় হয়ে গেলি আমি জানি না।তবে তুই আমার কাছে এখনো সেই ছোট্ট নীলুই আছিস।যাই হোক রাগ করিস না,আজকে একটা কাজ পরে গেছে তাই সরাসরি তোকে কিছু বলতে পারলাম না।কিন্তু আমার পক্ষ থেকে একটা ছোট উপহার। আজকে দুপুরে সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ট্রিট দেওয়া হবে।ফারিশ তোদের নিতে যাবে সবাই রেডি থাকিস

আরফানের ট্রিটের কথা শুনে সবাই খুশি হলো।
সবাই রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছে।মিহু যদিও মুখ ঢেকে রেখেছিল কিন্তু আরফান যেহেতু একটা রুমের মতো জায়গা বুক করেছে সেহেতু এখানে বসে খাচ্ছে।খাওয়ার মাঝেই দুজনে দুজনার দিকে তাকালো।তারপর আবার লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। আরফান ঘড়ির দিকে তাকাতেই উঠে চলে গেল।

কফি শপে বসে আছে আরফান।তার সামনে বসে আছে মিহুর দাদু।মিহুর দাদুকে দেখে আরফান অনেক অবাক হলো।তিনি তো ইন্ডিয়া ছিলেন। ওদের বিয়েতেও আসতে পারেনি এমনকি এক মাসেও নাকি আসতে পারবে না এমনটা বলেছিলেন।তাহলে বিয়ের দু দিন পরেই দেশে আসলেন কীভাবে?উনি আবার চিঠি দিতে যাবেন কেন?
-আমি জানি তোমার মনে অনেক কিছু ঘুর পাক খাচ্ছে ।দেখো আমার ইন্ডিয়া কাজ ছিল ঠিক আছে।কিন্তু রমজান উপলক্ষে আমি দেশে চলে এসেছি।

-কিন্তু আপনি তো আমাকে ফোন করলেই পারতেন।চিঠি লিখেছেন কেন? আর মিহু সম্পর্কে আমার এমন কি জানা প্রয়োজন যা না জানলে অনেক সমস্যা হবে?
মিহুর দাদু একটু সময় কিছু ভাবলেন।তারপর আরফানকে বলল
-আসলে চিঠিতে কি লিখেছিলাম অত খেয়াল নেই।বয়স হয়েছে তো তাই মনে নাই।থাক কোনো ব্যাপার না। চলো তোমাকে মিহুর সম্পর্কে অনেক কিছু বলি।
প্রায় ঘন্টা খানেক বলার পরে মিহুর দাদু উঠে গেলেন।বাহির হবার সময়ে একজন মহিলার সাথে ধাক্কা লাগল।দাদু সরি বলে চলে গেলেন। ঐ মহিলাটি আরফানকে দেখে বলল

-তুমি নিশ্চয়ই আরফান?
-হ্যাঁ কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না
-তুমি আমাকে চিনবেও না।মাস্ক পড়া অবস্থায় তো চিনবেই না মাস্ক খুললেও চিনবে না। আমি তোমার বাই পিয়াসের মায়ের বোন।

যাই হোক দেখা হয়ে ভালো লাগল। আসি ঠিক আছে
আরফান হতভম্ব হয়ে রইল। মহিলাটি ঝড়ের মতো আসলো আবার ঝড়ের মতো চলে গেল।মাঝখানে কি বলে গেল কিচ্ছু বুঝতে পারল না।সে যাই হোক ওর মাথায় এখন মিহু সম্পর্কে বলা কথাগুলো ঘুরছে। আচ্ছা মিহুর সম্পর্কে জানতে ভাবতে এত ভালো লাগে কেন?কোনো কিছু ভেবে মুচকি হাসল আরফান।তারপর আবার রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে চলে গেল

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৬

(রি চেক করিনি।ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। আর অনেকেই বলছেন গল্পটা দুই দিন দেই নি কেন? আসলে আমাদের এখানে পায় সময় ই কারেন্টে প্রবলেম হয় । আর গত কয়েকদিন তো আবহাওয়া বেশি ভালো ছিল না।তাই ফোন বন্ধ ছিল।যাই হোক সবাই একটু মানিয়ে নিবেন। আর সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।)

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৭+১৮