হৃদমাঝারে তুমি শেষ পর্ব 

হৃদমাঝারে তুমি শেষ পর্ব 
সাইয়ারা মম

– বাবা আম্মু পচা , আম্মু আমাকে রেখে মিলাকে বেশি আদর করে দিচ্ছে ।
আরফান তার অফিসে বসে কাজ করছিল তখন ফোন দিয়ে কথাগুলো বলল তার পাঁচ বছরের ছেলে আদিল । ছেলের কথা শুনে মুচকি হাসলো আরফান । তার জমজ সন্তান । মিলা আর আদিল দুজনের সব সময় ঝগড়া লেগেই থাকে । আদিল কিছু হলেই তার বাবাকে নালিশ করবে ।

– বাবা তো এখন কাজ করছে । এখন তো আসতে পারবে না । তো কি করলে আদি খুশি হবে ?
আরফান এখন আসতে পারবে না শুনে আদিল চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দিল । কান্নারত কন্ঠে বলল
– মিলা আমার গাড়ি ভেঙে ফেলেছে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে আসার সময় গাড়ি নিয়ে আসবো । এখন কান্না থামাও বাবা । না হলে আম্মু আবার বকা দিবে
নাক টানতে টানতে আদি বলল – বাবা !

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– হ্যাঁ বলো
– আসার সময় চকলেট নিয়ে আসবে ।
-ঠিক আছে
– আইসক্রিম ও
– আচ্ছা
– বার্গার
– আর কিছু ?
– আর একটা কেক —

আদি কথা শেষ করার আগেই মিলা এসে বলল – আদি তোর চোখে পানি নেই কেন ? একটু আগেই তো শিয়ালের মতো হুক্কা হুয়া দিয়ে কাদছিলি
মিলার কথাতে আদি আরফানকে শুনানোর জন্য আবার চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো । মিহু একটু আগেও দুজনকে থামিয়ে গিয়েছে আবার এখন দুজনার লেগেছে । মিহু তড়িঘড়ি করে রুমে এসে দেখলো দুজনে ফোন ধরে টানাটানি করছে ।

– আদি শেষ বারের মতো বলছি ফোন ছাড় । না হলে কিন্তু চড় মারবো ।
– শুনলে বাবা মিলা কি বলেছে । বলে কান্না করতে লাগলো ।
ওদের টানাটানিতে ফোনটা ঠাস করে ফ্লোরে পড়লো । তখন আদি মিলাকে ভেংচি কেটে বলল- মিলা ও মিলা , বড় বড় শিলা । শিলা পড়ে কাদা , মিলা একটা গাধা
ওমনি মিলা ঠাস করে আদিকে একটা চড় দিল । আদি এবার চোখের পানি ছেড়ে কেদে দিল ।

মিহু বলল – থামলি কেন ? আরেকটা মার চড় । ফোনটা তো তোদের অত্যাচারে মরেও রেহাই পাবে না । আর তোর চোখে কি পানির কুয়া লাগানো কথা বলার আগেই চোখ দিয়ে পানি পড়ে ? যা দুজনে এখন দরজার সামনে বসে কান ধরে থাকবি । যা
মিলা আর আদি দুজনেই তাদের মাকে ভয় পায় কিন্তু তাদের বাবাকে তারা ভয় তো দূরে থাক উল্টো সে আরো ভয় পাবে । তাই মিহুর আদেশ শুনে চলে গেল দুজনে । মিহু একটা দম ছাড়লো । এই দুই বিচ্ছুকে মানুষ করতে যে কি পরিমান ধৈর্য্য লাগে তা একমাত্র সেই জানে ।

মিহু ওদের দরজার সামনে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিয়েছে । মিলা যে জায়গায় দাড়ানো সেই জায়গার টাইলস এ একটা দাগ আছে । সেটা দেখে আদি বলল
– দেখছো আমার টাইলস সুন্দর । আর যারা গাধা তাদের টাইলস —

অন্য কিছু বলার আগেই মিলা আদির চুল ধরে টান দিলো । আদি ‘তুই আমার চুল টানলি কেন ?’ বলে মিলার জুটি বাধা চুলগুলো ধরে টান দিল । এরকম করতে করতে দুজনে মারামারি শুরু করে দিল । তখন নেহালের বড় ছেলে নাফি স্কুল দিয়ে ফিরেছে । নাফিকে দেখে দুজনে ওর সমবেদনা পেতে ওর কাছে গিয়ে বিচার দিল ।

– ভাইয়া দেখো মিলা আমার চুল ছিড়ে ফেলেছে ।
– ভাইয়া ও আগে আমাকে মারছে
– আমি কখন মারলাম ? তুই আমার চুল টেনেছিস আগে
– চুল টানা আর মারা এক হলো নাকি ?

তাহলে আমিও চুল টানলাম বলে নাফির সামনে বসে মিলার চুল টানলো । এরপর মিলাও বসে থাকলো না । দুজনে নাফির সামনে বসে আরেক দফা মারা মারি দিল । নাফি ওদের দিকে না তাকিয়ে সোজা দরজার কাছে গিয়ে বসল । নাফিকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে রেবেকা গিয়েছিল । রেবেকার আসতে একটু দেরি হওয়ার কারণে নাফি আগে চলে এসেছে । রেবেকা দরজার সামনে এসে দেখে মিলা আর আদি মারামারি দিচ্ছে । দুজনকে থামালো । আদি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল
– দাদু মিলা আমার চুল উঠিয়ে ফেলেছে । এই দেখো ।
মিলা মুখ ঙেংচি কেটে বলল – ঢং ।

রেবকা আদিকে কোলে নিয়ে বলল – আদি এভাবে কেউ কান্না করে ? তাহলে তো লোকে তোমাকে মেয়ে বলে ক্ষেপাবে ।
রেবেকার কথায় আদি আরো কেদে দিল । রেবেকা হতভম্ব হয়ে গেল । আদি কথায় কথায় কান্না করে । যেখানে মিলা ব্যাথা পেলে মুখ বুজে সহ্য করে সেখানে আদি ঘন্টায় ঘন্টায় কান্না করে ।
– কি হলো আবার কান্না করছো কেন ?
– তুমি আমার জন্য কিছুই আনো নি কেন ?
– এনেছি তো । কান্না থামালে দেবো ।

এয়ারপোর্টের সামনে অনেক ভীড় জমে আছে । কারণ বিখ্যাত ফটোগ্রাফার পিয়াস দেশে চলে এসেছে । অনেকেই তাকে আইডল হিসেবে মানে । আবার অনেকে এসেছে তার অটোগ্রাফ নিতে । পিয়াস এসব দেখে একটা আনন্দ অনুভব করে । যখন বিদিশাকে বিয়ে করেছে তখন ও আর চাকরি খুঁজে পায়নি । কারণ তখন আর ওর কোনো মামা খালু ছিল না ।

কি করবে কিছু ভেবে পায় নি । তখন বিদিশার সাপোর্টে নিজেকে একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হিসেবে গড়ে তুলেছে । যদিও সে জার্নিটা ছিল অনেক কঠোর একটা অধ্যায় । বিদিশাও বসে থাকেনি । অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছে । এখন দুজনেই জীবনে সফল । তবে এসব পুরোনো কথা মনে করে বর্তমানের সময় টাকে নষ্ট করতে চায় না । ভিড়ের মধ্যে থেকে তখন একটা চেনা কন্ঠস্বর ভেসে আসে
– আমি কি আপনার একটা অটোগ্রাফ পেতে পারি , মিস্টার পিয়াস?

– তারপর বলো কেমন ছিলে এতদিনে ?
– এতদিন খোঁজ খবর তো রাখলি না । এখন এসব জিজ্ঞেস করে কি লাভ হবে?
আরফান গাড়ি চালানো অবস্থায় পিয়াসকে বলল । পিয়াস কিছু না বলে চুপচাপ বসেছিল । পেছন থেকে বিদিশা বলল – ভাইয়া আজকের সফলতার পেছনের গল্পটা ভিন্ন ছিল । আমরা এখন যেরকম আছি সেরকম কি আগে ছিলাম ? তখন আমাদের নিজেদের ই খোঁজ খবর রাখতাম না ।

– তবে তোরা একবার আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারতি ।
– গিয়েছিলাম তোমার অফিসে কিন্তু সেখান থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল ।
পিয়াসের কথায় আরফান তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলে – আমাকে তো তারও অনেক আগে বের করে দিয়েছে
– মানে!

– ফারিশ আমাকে ধোঁকা দিয়ে আমার কম্পানি নিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু তারপরে আমি ধীরে ধীরে নিজেকে আরো শক্ত করে গড়ে তুলেছি । বিদিশার কথাটা ঠিক । আজকের সফলতার পেছনের গল্প টা ভিন্ন । সেটা সবার ক্ষেত্রে ।
– ভাই বাসার সবাই কেমন আছে ?
– আছে সবাই আল্লাহ্ রহমতে অনেক ভালো । এখন বল কোথায় যাবি ? তোদের বাসায়?
– আমাদের বাসা বলতে কিছুই নেই । কারণ সেটা অনেক আগেই ছেড়ে এসেছি । আপাতত তোমাদের বাসায় চলো পরে দেখি কোথায় যাওয়া যায় ।

– আমাদের বাসা আর তোর বাসা কি ভিন্ন ? আগে মনে নেই সব সময় আমাদের বাসায় থাকতি ।
– পাপা , হোয়ার আর উই গোয়িং?
ইয়াশা এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল । হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে গাড়ি তে বসা দেখে কথাটি বলে ।
– আমরা এখন তোমার এই আঙ্কেলের বাসায় যাচ্ছি ?
ইয়াশা অবাক হয়ে বলল – হোয়াই পাপা ? আরেন্ট উই গোয়িং ইউর কাজিন্স হোম ।

– হ্যাঁ মামণি ।
– বাট হোয়াই উই আর গোয়িং টু এ ড্রাইভারস হোম ?
আরফান হঠাৎ ব্রেক কষলো । এরমানে ইয়াশা ওকে একজন ড্রাইভার ভেবেছে ?

বাসায় মেহমান আসলে আদির আনন্দের কোনো সীমা থাকে না । কারণ তারা আসলে অনে কিছু নিয়ে আসে আবার সব থেকে বড় কথা কোনো দুষ্টমি করলে কেউ কিছু বলে না । যতই আদির দোষ হোক আদি ওর কিউট চেহারা দিয়ে সবার মন গুলিয়ে দেয় । সোফায় একটা বার্বিডলের মতো বাচ্চা দেখে তার সাথে কথা বলতে গেল ।
– এই যে বার্বিডল চিপস খাবে ?

ইয়াশা কখনো কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া এত মানুষ দেখেনি । তাই অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে দেখছে । ওর বাবা মা দুজনেই আসার পর থেকে গল্পে মেতে আছে । তখন একটা ছেলে চিপস খেতে খেতে ওকে খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করল ।
– নো । আই ডোন্ট লাইক দিস আন হেলদি ফুড
ইয়াশা যা বললো সব মাথার ওপর দিয়ে গেল আদির । একে তো ইংরেজি জানে না । আর এক ও এই বয়স থেকেই পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় । তখন নাফি কে বলল

– ভাইয়া ও কি বলেছে ?
– ও বলেছে যে এইসব অস্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করে না।
– ও কি ইংরেজি ভাষায় বলেছে ?
– হুম
তখন আদি একটু ভাব দেখিয়ে বলল – আই আদি । তোমার নেইম কী ?

– আসছে ইংরেজী ভাষা কি সেটাই জানে না এখন ইংরেজি তে কথা বলে ।
মিলা চিপস খেতে খেতে আদিকে বলে । আদি তখন কি করবে বুঝতে না পেরে কান্না করে দেয় । আদির কান্না শুনে সবাই দৌড়ে আসে ।
– কি হয়েছে আদি ?
– আম্মু মিলা আমার চিপস খাচ্ছে ।
– কই তোমার চিপস তো তোমার হাতে
– আমি যে চিপস খাই ঐ নামের চিপস ও খাবে কেন ?

বাসায় মেহমান থাকায় মিহু মুখ বুজে সব সহ্য করল । এই ছেলেটা যে মিহুর সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না । মানে কোনো মানে হয় কান্না করার !
– বাবা কান্না থামাও । চলো আমি তোমাকে আরও বেশি চিপস কিনে দেবো ।
বলে পিয়াস আদিকে কোলে নিয়ে বাইরের দিকে হাটতে শুরু করল । তখন মিলার মুখটা ভার হয়ে এলো । কারণ সবাই আদিকেই বেশি আদর করে । সেটা দেখে বিদিশা বলল – মিলা মামণি তুমি আমার কাছে আসো । তোমাকে দেখতে একদম মিহু আপুর মতো লাগে । চলো

ইয়াশা কাউকেই কিছু বলতে পারছে না । কারণ ওর মা বাবা দুজনেই আদি আর মিলাকে নিয়ে চলে গিয়েছে । তখন আরফান ওর পাশে বসে বলল
– কেউ যদি কিছু মনে না করে তাহলে এই ড্রাইভারের কাছে আসতে পারে ।
– আঙ্কেল আ’ম সরি । আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট ইউ আর মাই ফাদার্স কাজিন ।
– আচ্ছা চলো তোমাকে আমি এক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি ।

বিকেলের দিকে সবাই ঘুরতে বের হয়েছে । আরফান আর পিয়াস পাশাপাশি হাটছে । তখন পিয়াস জিজ্ঞেস করলো
– আচ্ছা ভাইয়া নীলুকে দেখলাম নাতো আসার পর থেকে ।
আরফান একটা দম ছেড়ে বলল – সেটা অনেক কাহিনী । সংক্ষেপে পিয়াস কে সব ঘটনা বলল ।
– তাহলে নীলু আর মাহিন ভাই কোথায়?
– চল তোকে দেখিয়ে আনছি ।

মাহিনদের বাসার সামনে এসে পিয়াস বলল – এখানে কেন আনলে ?
– আগে ভেতরে চল
মাহিন রান্নাঘরে কফি বানাচ্ছিল । সবাইকে দেখে মাহিন হাসি মুখে বলল
– কি ব্যাপার । সবাই একসাথে যে । আমার মামারা কোথায়?
– এই যে আমরা

বলে সব বাচ্চারা মাহিনের কাছে দৌড়ে গেল । মাহিন সবার সাথে কথা বলল আদর করে দিল । তখন ইয়াশা পিয়াসের কোলে থেকে ওকে জিজ্ঞেস করল
– পাপা হু ইজ হি ?
– এটাও তোমার একটা আঙ্কেল ।
– পিয়াস এটা তোমার মেয়ে নাকি ?
– হুম

– অনেক সুন্দর ।
পিয়াস বলল – আচ্ছা নীলু কোথায়?
– ও তোমরা ওকে দেখবে । আসো আমার সাথে
যন্ত্রপাতি দিয়ে একদম একটা রুম ঘেরা । সেখানে একজন নার্স সব সময় থাকে । নীলু এখনো কোমায় আছে । মাহিন আরফানের কাছে অনেক রিকোয়েস্ট করে নীলুকে ওর বাসায় এনে রেখেছে । পিহু মাহিনকে বলল

– ভাইয়া এভাবে আর কতদিন থাকবে ? একবার নিজের দিকটা ও ভাবো
– পিহু আল্লাহ্ না করুক নেহালের কিছু একটা হয়ে গেলে কি তুই আবার বিয়ে করতে পারবি ?
এরপর কেউ আর কোনো কথা বলেনি ।

বিদিশা ওর মায়ের সাথেও দেখা দিয়ে এসেছে । সব বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে । বাসায় আসার পর থেকে আদি সুযোগ খুঁজছে কান্না করার । আর ও সেই সুযোগটা পেয়েও গেল । কারণ প্রিয়ন্তি এসেছে
– নানু —
কান্না আর চিৎকারের সংমিশ্রণে আদির কন্ঠ থেকে কোনো মতে নানু কথাটি বের হলো । আদিকে কোলে নিয়ে প্রিয়ন্তি বলল
– কি হয়েছে আমার আদি নানুভাইয়ের ?
– আম্মু আমাকে বকেছে ।

কোনোমতে গলা দিয়ে আওয়াজ টা বের করলো । প্রিয়ন্তির কেমন একটা সন্দেহ হলো । তাই জিজ্ঞেস করল
– তোমার গলার কি হয়েছে?
আদি কিছু না বলে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিল । মিহু এসেছে সবার শেষে । ঘরে ঢুকেই বলল
– মা তুমি কখন আসলে ?
– মাত্রই আসলাম । কিন্তু আদির কি হয়েছে ? তুই নাকি বকেছিস ?

– কি আর বলব বলো । ঘরে বসে দুটো আইসক্রিম শেষ করেছে । বাইরে গিয়ে পিয়াস ভাইয়ের কাছ থেকে খেয়েছে । আবার নেহাল ভাইকে কতক্ষণ জ্বালিয়ে আইসক্রিম খেয়েছে । এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না । আসার সময় আবার বায়না ধরেছে আইসক্রিম খাবে । সেটা কিনে দেইনি বলে তোমার কাছে বিচার দিয়েছে ।
এদের কাছে সুবিধা পাবেনা বুঝে আদি চিৎকার করে কান্না করতে করতে রুমে গেল । আরফান সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিল । তাই এখন একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য বেডে বসেছে তখনই আদি কান্না করতে করতে এলো ।

– বাবা
– বলো আদি
– সবাই আমাকে বকে ।
-চলো তোমাকে আমি গল্প শোনাই । আসো
– আমিও শুনবো
কোথা থেকে মিলা এসে বলল । আদি সেটা দেখে বলে

– আগে আমি শুনবো । তোর আগে আমি এসেছি
– না আমিও শুনবো ।
দুজনে আবার ঝগড়া শুরু করল । আরফান একটা দম ছাড়ল । মিহু যে কিভাবে এই দুজনকে সামলায় তা ওই ভালো জানে ।
– এরকম করলে কিন্তু কাউকেই বলবো না ।
——-
সব কাজ সেরে মিহু রুমে আসলো । দুই ভাইবোন গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে । আরফান ওদের পাশে বসে আছে । মিহু চুলগুলো বেণী করতে করতে বলল
– ঘুমিয়েছে কখন ওরা
-কিছুক্ষণ আগে । মিহু আমি ভেবে পাচ্ছিনা তুমি এদের সামলাও কি করে ?
– তাহলে ভাবুন দুজনকে নিয়েই এই অবস্থা তাহলে সামনে কি করবেন ?
– আমি এই দুজনকে নিয়েই সন্তুষ্ট আর — কথাটি অসম্পূর্ণ রেখে মিহুর দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ।মিহু একটা লাজুক হাসি দিল

– তার মানে মিহু আমি আবারো বাবা হতে যাচ্ছি
আরফান খুশিতে মিহুকে কোলে নিয়ে বাগানে চলে গেল । আজকে বাগানে অনেক বেলী ফুল ফুটেছে । অনেকগুলো ছিড়ে এনে মিহুর বেণীতে দিয়ে দিল
– ধন্যবাদ মিহু আমার জীবনে বেলীফুল হয়ে আসার জন্য । ধন্যবাদ তোমাকে আমার জীবনটা আলোকিত করার জন্য । ধন্যবাদ আমাকে বাবা নামক অনুভূতি প্রদানের জন্য । সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ । আমার #হৃদমাঝারে_তুমি ছিলে আছো আর থাকবেই ।

নীলুর হাত ধরে মাহিন বসে আছে । না ওর কোনো দুঃখ হয়না । কারণ যাকে ভালোবাসে তার পাশে থাকতে পারছে এটাই ওর কাছে অনেক । নীলুর হাতে একটা চুমু দিয়ে বলল
– তুমি যেরকমই হও না কেন #হৃদমাঝারে_ তুমি ই থাকবে আর আছোও ।

সমাপ্ত

(আজকে যেহেতু লাস্ট পর্ব ছিল তাই একটু দেরি করে দিয়েছি । আমি জানি গল্পটিতে অনেক ভুলত্রুটি আছে । কিন্তু এটা আমার প্রথম কমপ্লিট গল্প হওয়ার কারণে এটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ । এর মাধ্যমেই আমি অনেক কিছু শিখেছি আবার আপনাদেরও ভালোবাসা পেয়েছি । আমার এই গল্প টা ততটা ভালো মানের না কারণ আমি যেভাবে শুরু করেছিলাম সেভাবে শেষ করতে পারিনি । আজকের শেষ দিনে আপনারা আমার গল্পের কয়েকটা অসংগতি জানিয়ে দেবেন । যাতে সামনে ভূলগুলো না হয় । ধন্যবাদ ।)

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৪৫