হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৭+১৮

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৭+১৮
সাইয়ারা মম

(আমি প্রথমেই সবার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাচ্ছি।কালকে আমি লিখতে চেয়েছিলাম নির্মলেন্দু গুণ যদি এখানে থাকতেন কিন্তু হয়ে গেছে বেঁচে থাকতেন।তিনি আমার একজন প্রিয় কবি।তার সম্পর্কে এমন কথা বলায় আমি আবারও ক্ষমা চাচ্ছি)

আজকে যেহেতু প্রথম রোজা তাই সবাই একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছে।নীলু অসুস্থ হওয়ায় রোজা রাখতে পারেনি।ওকে টাইম টু টাইম ওষুধ খেতে হবে তাই রোজা রাখতে পারেনি।এটা নিয়ে একটু মন খারাপ ও করেছিল যখন সবাই সাহরী খেতে উঠেছিল।তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।মিহু নীলুর কাছে ছিল আজকে রাতে।আরফানের সাথে তাই তেমন একটা দেখা হয় নি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নীলু ঘুমিয়ে আছে দেখে মিহুও বিছানা ছেড়ে ওঠে নি।বিছানায় বসেই ভাবছে ওর জীবনটা কেমন। ও কি নিজের ইচ্ছাতে চলছে নাকি কারো হাতের পুতুল? ও তো ওর দাদুর কথা শুনে।এ পর্যন্ত দাদুর কথা শুনে ও জীবনে কখনো ঠকেনি।দাদুর কথার জন্য ও আরফানের জীবনে মিশে গেছে। এখন তো ওর অবশ্যই কর্তব্য আছে আরফানের প্রতি।এসব ভেবেই ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখতে পেলো সাড়ে সাতটা বাজে।আজকে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।ও নীলুর দিকে তাকিয়ে উঠে পড়ল

আরফান কখনো টাইম হেরফের করে না। আজকে সবাই সাহরী করে ঘুমিয়ে পড়েছে।কিন্তু আরফানের যেহেতু অভ্যাস আছে সকালে ওঠার তাই ও আর ঘুমায় নি। ওর প্রডাক্টটা বিদেশে তো যাবেই কিন্তু তার আগে ও নিজের দেশে এটা সাপ্লাই করে দেখতে চায় কেমন প্রোগ্রেস হয়।যদি সবাই ওর প্রডাক্ট পছন্দ করে তাহলে ও বিদেশে আর দিবে না।এই ডিলটা শেষ হলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে।ও নেট ঘাটাঘাটি শুরু করল।

বিদেশের ডিলটা হলো আরফানের কম্পানি একটা পারফিউম তৈরি করবে।যে গ্রুপটা আরফানকে ডিলের অফার দিয়েছে তারা প্রত্যেক দেশ থেকে পারফিউম নেবে।তারপর তারা রিসার্চ করে দেখবে কাদের পারফিউম টা তাদের দেশের মানুষ পছন্দ করে।কিন্তু আরফান চাচ্ছে এই ঈদে তার পারফিউম টা লঞ্চ হোক। আরফান ফারিশের সাথে মিলে যৌথ ভাবে করছে এই ডিলটা।ফারিশদের কম্পানিটা মধ্যম পর্যায়ে আছে।আরফানের সাথে কাজ করায় ওদের কম্পানির প্রোগ্রেস ও বাড়তে থাকে।ও ফারিশকে ফোন দিল।ফারিশ ঘুমিয়ে ছিল।ঘুমন্ত অবস্থায় ফোনটা রিসিভ করে বলল

-হ্যালো।ফারিশ ফয়সাল স্পিকিং।হু আর ইউ
-ফোনের দিকে না তাকিয়েই কথা বলতে আছিস?
-ও তুই।বল কি জন্য ফোন দিয়েছিস
-বলবো তো কিন্তু তুই এখনো ঘুমিয়ে আছিস কেন?প্রডাক্টের লোগো যে তোকে নির্ধারিত করতে বলেছিলাম তা করেছিস?
-ভাই আমি যে লোগো পছন্দ করবো সেটা কেউ ই পছন্দ করবে না।তাতে আরো প্রডাক্টের খারাপ অবস্থা হবে।তার থেকে বরং তুই ই লোগোর ডিজাইন বানা।

-সব যদি আমি করি তাহলে তুই করবি কি?
-আমি বসে বসে দেখবো যাতে পরে বানাতে পারি।
-তুই আর মানুষ হলি না। আঙ্কেল আমার সাথে তোকে পাঠিয়েছে যাতে করে তুই তার পরে কম্পানিটা হ্যান্ডেল করতে পারো আর তুই এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছিস
-আচ্ছা এখন ফোনটা রাখ। আমার ঘুম ক্লিয়ার হয়নি
-ঘুমা তুই

বলে আরফান ফোনটা কেটে দিল। এতক্ষণ সোফায় বসে কাজ করছিল আর ফারিশের সাথে কথা বলছিল। এখন সোফা থেকে উঠে একটু আড়মোড়া ভাঙলো।তারপর হঠাৎ করেই বেডের কর্ণারে খেয়াল করতেই দেখতে পেল ওখানে টেবিলের ওপরে একটা কালো ডায়েরী রাখা।ডায়েরীটা তো আরফানের নয়।কৌতুহলবশত ডায়েরীটা খুলল।প্রথম পৃষ্ঠায় একটা ছন্দ লেখা দেখতে পেল

“যখন আমি থাকব না,থাকবে তখন তুমি
তোমার জন্য রেখে গেলাম আমার অজস্র স্মৃতি
আমার জন্য কাঁদবে তুমি যখনই
ভেসে উঠবে আমার সেই হাজারো স্মৃতি তখনই”
ছন্দটা আরফানের খুব ভালো লাগল।তারপরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখতে পেল সেখানে খুব সুন্দর করে একটা নাম লেখা ‘প্রিয়ন্তি জাহান’।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক সুন্দর ছবি আঁকতে পারে। পারদর্শী অনেক ছবি আকায়।তারপরের পাতা উল্টাতেই দেখতে পেল

“খুঁজছো আমায় কোথায়
আমি তো সেথায়
আবেগ গুলো গুছিয়ে
থাকে যেখানে লুকিয়ে ”
আরো পেইজ ঘুরিয়ে দেখতে চেয়েছিল কিন্তু আরফানের হাত থেকে হঠাৎ করে কেউ ডায়েরীটা নিয়ে নেয়। আরফান সামনে তাকিয়ে মিহুকে দেখতে পায়।মিহু একটু ভীত হয়ে ডায়েরীটা বুকে চেপে ধরে আছে।মিহুর এমন অবস্থা দেখে আরফান জিজ্ঞেস করল

-মিহু আপনি ঠিক আছেন তো?
-জ্ জ্ জ্বী
-হঠাৎ ডায়েরীটা নিয়ে গেলেন যে?পারসনাল কিছু আছে কী?(একটু থেমে)পারসোনাল কিছু থাকলে সমস্যা নেই।
-না আসলে তেমন না ব্যাপারটা
-আচ্ছা ইটস্ ওকে।বললাম তো সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি। একজন মানুষের পারসোনা কিছু বিষয় থাকতেই পারে।

বলে আরফান সোফার কাছে গিয়ে ওর অফিসের কাগজগুলো তুলতে লাগল।মিহু বুঝল আরফান হয়তো রাগ করেছে তাই ও আরফানের পেছনে পেছনে গেল এটা বলতে বলতে
-আসলে আপনি যা ভাবছেন তা না। আমার পারসোনাল কোনো বিষয় নেই। এটা আমার মায়ের ডায়েরী।মায়ের এই একটা স্মৃতিই আমার কাছে আছে
-যাই হোক আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি রাগ করিনি তো।আর রাগ করলেও বা কি?
বলে আরফান পেছন ঘুতেই মিহুকে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।মিহুর চোখের দিকে তাকি বলে
-তাহলে কি আপনি আমার রাগ ভাঙাতে চাইতেন?

আরফানের এরকম উক্তিতে মিহু বাকশূণ্য হয়ে পড়ল।কোন কথা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।আরফান মিহুকে এমন স্থির থাকতে দেখে মৃদু হাসল।তারপর সে আলমারির কাছে চলে গেল।মিহু বিষয়টা এড়িয়ে যেতে বলল
-নীলু মনে হয় ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে ।আমি যাই দেখি ওর কিছু লাগে কিনা

কথাটা বলেই দ্রুত চলে গেল। আরফান মিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটাকে আরফানের খুব ভালো লাগে।ওর স্তব্ধতা,হাসি,লজ্জা সবকিছুই ভালো লাগে। এমন কি ওর সম্পর্কে ভাবতেও ভালো লাগে।আচ্ছা আরফান তো এমন ছিল না,এটাকে তবে কি বলবে?বৈধ সম্পর্কের জোর নাকি ভালোবাসা?আরফান মিহুর জীবনের কাহিনী শুনে মিহুর প্রতি আরো দূর্বল হয়ে পড়েছে।মিহুর দাদু কালকে যত ঘটা করে ডেকেছিল তাতে ও বুঝেছিল কি না কি বলবে।

কিন্তু তিনি শুধু মিহুর মায়ের মৃত্যুতে মিহুকে কীভাবে বাকি সবাই ওকে দায়ী করেছে সেই কথাই বলেছেন।যা সম্পর্কে আরফান আগেই অনেক কিছু জানত।কিন্তু আজকে মিহুর মায়ের ডায়েরীটা পড়ে ওর অবচেতন মন তার সম্পর্কে জানতে চাইছে।তবে আরফান এখন মিহুকেই প্রধান্য দিচ্ছে।ও প্রথম দিকে মিহুকে যেভাবে বলে দিয়েছিল যে কখনোই ওকে হয়ত স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবে না এখন নিজেই মনে হয় ওর সান্নিধ্যে আসতে চায়। এসব ভেবে আলমারিতে কিছু কাগজ পত্র রেখে বাকি গুলো নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়।

দুপুর বারোটা বাজে।এখন নীলুর জন্য শুধু রান্না করা হয়েছে।রান্নাটা করেছে মিহু।আরফানদের বাড়িতে রান্নাবান্না বাড়ির নিজের লোকেরা করে।সারভেন্ট দিয়ে শুধু বাড়ির অন্য কাজগুলো করা হয়।রেবেকা রান্না করতে চেয়েছিল কিন্তু রোজা থাকায় আর একটু অসুস্থ হয়ে পড়ায় মিহু বলেছে যে এখন রান্নাটা না হয় ও করুক ইফতারির আয়োজন গুলো রেবেকা করবে।রেবেকা প্রথমে দিতে চায় নি কিন্তু মিহুর জোরাজুরিতে দিতে হলো।মিহুর রান্না হয়ে গিয়েছে।নীলুর ওষুধ গুলোর কারণে ও এখনো ঘুমাচ্ছে।মিহু এখন গোসল করে নীলুর করে নীলুর খাবার নিয়ে যাবে নীলুর রুমে।

নেহালের ভার্সিটির এক্সাম শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই।তবে নেহালের এই কয়েকদিনে ডিউটি ছিল না কিন্তু ওর সাব্জেক্টের এক্সাম দুইদিন আগে শেষ হয়েছে।সেই পেপার গুলো এখন বসে বসে দেখছে।এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ না করলে অন্য সেশনের খাতাগুলোও এসে যাবে আর তখন সবগুলো দেখতেও পারবে না।যেহেতু ওদের বিয়েতে রিসিপশান হয়নি তাই ওরা পিহুদের বাড়িতেও যেতে পারেনি আবার রোজাও পড়ে গিয়েছে এজন্য আজকে প্রথম রোজার ইফতারের দাওয়াত দিয়েছে।

ঐ বাড়িতে গেলে আবার পরেরদিন বাদে আসা যাবে না।তাই এখন খাতাগুলো দেখে রাখছে।পিহু এই কয়েকদিনে ভার্সিটি যেতে পারেনি তবে অ্যাসাইনমেন্ট গুলো অনলাইনে জমা দিয়েছে।পিহুর আরেকটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে যেটা কালকে বারোটার মধ্যে জমা দিতে হবে।এতদিন করব করব করে আর করা হয় নি তাই এখন উঠেপড়ে লেগেছে অ্যাসাইনমেন্ট টা করার জন্য।কি-বোর্ড চাপতে চাপতে আঙুল গুলো ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।নেহাল সোফায় বসে খাতা দেখছিল আর পিহু টেবিলে বসে অ্যাসাইনমেন্ট করছিল।নেহালকে বলল

-নেহাল শুনছো
-হুম বলো
-তুমি একটু আমার অ্যসাইনমেন্ট টা করে দিবে?আমার আঙুল গুলো ব্যাথায় চির চির করছে।
-তাহলে তুমি আমার খাতাগুলো দেখে দাও
-মজা করছো
-না মজা করলাম কই

-আচ্ছা যাক অ্যাসাইনমেন্ট করে না দিলে তুমি একটু আমাদের প্রফেসরকে বলবে যেন একটু সময় সীমা বাড়িয়ে দেয়।
-হ্যাঁ তা বলা যেতে পারে কিন্তু তাতে মনে হয় আমার ছুটির সময় সীমাটাও বাড়বে।একদম আর ভার্সিটিতে যাওয়াই লাগবে না।তখন আবার বেকার হাজবেন্ড বলে তুচ্ছ করো না
নেহালের এমন ছন্নছাড়া কথায় পিহু ল্যাপটপ টা ঠাস করে বন্ধ করল।তারপর উঠে চলে গেল গোসলের জন্য জামা কাপড় নিতে।থমথম করতে করতে বলে গেল

-একটা কথা সোজা বললেই হয়। এত প্যাচিয়ে বলার কি দরকার।
নেহাল পিহুর রাগ দেখে এখন নিজের প্রতি মায়া লাগছে
-এইরে বৌ আমার খেপেছে।একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল মনে হয়। একটু সহানুভূতি দেখালেই পারতাম। এখন আমার আবার রাগ ভাঙাতে হবে।

নেহাল ফোনটা বের করে কাউকে ফোন দিয়ে কিছু একটা বলল।তারপর মুচকি হাসলো।
বিদিশা আজকে ওদের সাথে বাড়ি চলে যাবে।একটু মন খারাপ হয়ে আছে।কারণ ঐ বাড়ি গেলেই পরের দিন আবার ওকে বাড়ি চলে যেতে হবে। এই নিয়ে আফসোসের শেষ নেই।নীলুকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওর সাথে গল্প করছে।তখনই মিহু নীলুর খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকল।

-ভাবি কষ্ট করে আনার দরকার ছিল না তো।আমাকে ডাকলেই নিচে যেতাম।
-হ্যাঁ পারতাম।কিন্তু এখন যেহেতু সবাই রোজা তাই বেটার হবে নিজের রুমে বসে খাওয়ার।রোজাদার ব্যক্তির সামনে বসে খেলে সেটা ভালো দেখায় না।তাই তোমার খাবার ঘরে নিয়ে আসলাম।আচ্ছা তুমি খেতে থাকো আমি যোহরের নামাজটা পড়ে আসছি।

-ভাবি তুমি সব সময় নামাজ পড়ো কীভাবে? এই যেমন ধরো তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে তখন কী কর।
মিহু মৃদু হেসে বলল-নীলু তোমার যেমন প্রথম রোজাটা না রাখায় মন খারাপ হলো।সে রকম আমিও নামাজ না পড়লে মন খারাপ লাগে।তবে আলহামদুলিল্লাহ আমার নামাজ একদম খুব কমই কাজা যায়। আর একটা কথা শোনো নীলু নামাজে ফরজ খুব বেশী।তুমি যদি যোহরের নামাজ আদায় করো তাহলে তুমি চার ফরজ পাবে যেখানে তোমার একটা রোজায় এক ফরজ। অনেকেই আছি আমরা রোজা রাখি কিন্তু নামাজটা ঠিক মতো আদায় করিনা।তারা তাহলে লোক দেখানোর জন্য রোজা রাখার আওতাভুক্ত হয়। আর লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহ্ গ্রহণ করেন না।

-তাহলে ভাবি আমিও নামাজ পড়ব
-হ্যাঁ অবশ্যই।নামাজ পড়া প্রত্যেকটা মুসলিমের কর্তব্য।তুমি যতই অসুস্থ হও না কেন তোমার নামাজ পড়ার উপায় আছে।দাঁড়িয়ে না পড়তে পারলে বসে পড়ো ,বসে পড়তে না পারলে ইশারায় পড়ো তারপরও তুমি সালাত আদায় করো।
যোহরের নামাজ পড়ে মিহু কতক্ষণ কুরান তিলাওয়াত করল।মিহুর তিলাওয়াত শুনে নীলু মুগ্ধ হয়ে গেল। এত সুন্দর কন্ঠ।তিলাওয়াত শেষে নীলু মিহুকে বলল

-আচ্ছা ভাবি একটা কথা জিজ্ঞেস করব
-হ্যাঁ বলো
-তোমাদের বাসায় যেদিন প্রথম গেলাম ঐ দিন রান্না কি তুমি করেছিলে?
-কেন বলো তো
-আহা বলো না
মিহু কিছু বলছে না দেখে বিদিশা জিজ্ঞেস করল-কেন নীলু?কিছু কী হয়েছে?
-ভাবির হাতের রান্না খেয়ে মনে হলো ঐদিন ভাবিই রান্না করেছিল।কিন্তু ভাবির চাচি বলেছিলেন তুলি আপু নাকি ঐদিন রান্না করেছিল।

বিদিশা একটা কথা বলতে নিয়েও থেমে গেল।তারপর বলল- রোজা থাকায় এখন কিছু বললাম না।শুধু বলি তুলি আপু একটা ডিম ভাজতেও পারে না রান্না তো দূরে থাক।
-তাহলে ঐদিন ভাবিই রান্না করেছিল।
-হ্যাঁ নীলু।কিন্তু তুমি কাউকে প্লিজ কথাটা বলো না
-সে না হয় না বললাম কিন্তু তোমার রান্না খেলেতো সবাই বুঝে যাবে
পিয়াস তার তোলা কয়েকটা ছবি ল্যাপটপে দেখছিল।তার মধ্যে বেস্টগুলো সে বেছে বেছে একটা ফোল্ডারে রাখছিল।তখন তার মা এসে জিজ্ঞেস করল

-তুই সেদিন ইন্টারভিউ দিতে গেলি না কেন?
-মা মনে ছিল না
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলল
-ল্যাপটপ রাখ এখন আমার দিকে তাকা।
মায়ের কথায় পিয়াস ল্যাপটপ অফ করে তার দিকে তাকিয়ে বলল-বলো কি বলবে?
-সত্যি করে বলতো তুই কি নীলুর কাছে থাকায় যাসনি নাকি সত্যিই মনে নেই
-মা
-রোজা রেখে মিথ্যা বলবি না।

পিয়াস একটু চুপ থেকে বলল-নীলু ঐ সময় হাসপাতালে ছিল। আমি কেমন করে যেতাম।
-তুই যাদের জন্য এতো করছিস তারা তোর জন্য কিছু করছে কী?আরফানকে বললাম ওর অফিসে তোকে একটু ঢুকিয়ে দিতে কিন্তু বলে কি।বলল যে তুই যদি যোগ্য হস তবেই তোকে নিবে না হলে না
-মা ভাই তো ঠিকই বলেছে

-তুই ওদের পক্ষে কথা বলবি না। দেখছো ওরা দুই ভাই কত সুন্দর টাকা আয় করছে
-মা আমাদের কি টাকার অভাব?
-হ্যাঁ তোর বাবাতো টাকার ভান্ডার তৈরি করে রেখেছে। দেখ এখনো কত খাটছে।আর তুই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেরাচ্ছিস।
উনি আরো কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তখনই নেহালের ফোন পেল।নেহাল বলেছে বিকেলের দিকে পিহুদের বাড়িতে যাবে।ইফতারের দাওয়াত আছে।চলে আসতে বলেছে।পিয়াস এখনই লাফ দিয়ে চলে গেল নেহালের বাড়ি।ওর মা পেছন থেকে বলল

-বাবা তুই তো বুঝতে পারছিস না দুনিয়া কি।এখন তুই যাদের আপন ভাবছিস তারা আসলে আপন না।যখন বিপদে পড়বি তখন দেখবি তোকে সাহায্য করে কে?মায়ের কথার মূল্য তো এখন দিচ্ছিস না কিন্তু পরে বুঝবি যখন আর সময় থাকবে না।
মিহু যাওয়ার কথা থাকলেও মিহু যাচ্ছে না।যেখানে নীলুর সাথে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে সেখানে আরফান কিছুতেই নীলুকে নিয়ে আবার যেতে চাচ্ছে না।মিহুকে বলেছিল যেতে কিন্তু মিহুও যায় নি।মিহু একটু একটু নীলু আর মাহিনের সাথে ঘটা ঘটনার সম্পর্কে জানতে পেরেছে।তাই ও নিজেও ঐ বাড়িতে যেতে চায় না।নেহাল আর বাকিরা ওদের বাড়িতে গেলে মিহুর দাদু তখন ঘটনাটা জানতে পারে।তারপর তিনি নিজে চলে যান মিহুকে আনতে।দাদু আসায় মিহু কিছুই বলতে পারে না।কার দিকে যাবে?

-মিহু দাদুকে তুমি ফিরিয়ে দেবে?
-কিন্তু দাদু উনি যেখানে যাবেন না সেখানে আমি কীভাবে যেতে পারি?
-আচ্ছা আমি যদি কথা বলি?
-তিনি যদি রাজি হন তাহলে আমার যেতে আপত্তি নেই।কিন্তু আমি নীলুকে ছাড়া থাকতে চাইছি না।
দাদু তখনই আরফানকে ফোন দিলেন।ফোন ধরার পরে আরফান বলল

-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুমুস সালাম।আরফান তুমি কোথায়? যাবে না
-কোথায় দাদু?
-কেন আমাদের বাসায়
-দাদু আপনি সবই জানেন। এখন আমার পক্ষে না যাওয়া টাই কি ঠিক না?
-হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা কিন্তু দেখো আরফান তুমি না গেলে তো মিহু ও যাবে না
-মিহু গেলে আমার কোনো আপত্তি নেই তো।

হৃদমাঝারে তুমি বোনাস পর্ব 

-তুমি কি আমার নাতনিকে চিনো নি?তুমি না গেলে সে কি কখনো যাবে?
আরফান একটু থমকালো।তারপর বলল-কিন্তু দাদু আমি যে নীলুকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইছি না।
-নীলুর আর কোনো ক্ষতি হবে না।সেটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।আমি তোমাকে আশ্বাস দিতে পারি যে নীলুর কিছু হবে না।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৯