প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৪০

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৪০
তানজিলা খাতুন তানু

শাহানা আজকে কলেজে যায়নি, বাড়িতে গেষ্ট আসার কথা আছে। জমজমাট আয়োজন চলছে, শাহানা এখনো বুঝতে পারছে না কে আসবে।
-মা কে আসবে আজকে? এত আয়োজন কার জন্য!
-তোর বাবার বিজনেসের কেউ। আজকে একটা ডিল হবার কথা আছে, যদি ডিলটা আমরা পাই তাহলে কোম্পানির অনেক উন্নতি হবে।
-ওহ।

কলিংবেল বেজে উঠাতে শাহানার মা শাহানাকে দরজা খুলে দিতে বলল। শাহানা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে চমকে উঠল।
– তুই?
অতসী নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি হলো তুই আমাদের বাড়িতে কেন?
অতসী তখনো চুপ করে আছে, শাহানার রাগ তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে।‌ রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে শাহানার বাবা পেছন থেকে বলে উঠলেন,
– আরে মিস খাঁন আপনি চলে এসেছেন। ভেতরে আসুন।
অতসী শাহানাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল, শাহানা কিছুই না বুঝে দাঁড়িয়ে রইল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আপনার আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো।
– না, না।
– আপনি নিজে থেকে এই বাড়িতে এসেছেন, আমি বলে বোঝাতে পারব না আমি ঠিক কতটা খুশি হয়েছি।
– এইভাবে বলবেন না। আর আমার এইখানে আসার তো একটা কারন আছে,তাই এসেছি।
– কি কারন?
অতসী কিছু না বলে মুচকি হাসল। শাহানার বাবা অবাক হলো, এই মেয়েটা এতটা রহস্যময়ী কেন? এত কমবয়সে নিজেকে একটা জায়গাই প্রতিষ্ঠিত করা মুখের কথা নয়, কিন্তু সেটা অতসী করিয়ে দেখেছে। উনিও চান ওনার মেয়েও অতসীর মতো হোক। কিন্তু মেয়েটা তো দিনকে দিন অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
শাহানা ততক্ষনে দরজা বন্ধ করে ওদের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। শাহানা দেখা মাত্রই অতসী বাঁকা হাসল।শাহানার বাবা শাহানাকে বলল,

– মিস খাঁন ওটা আমার মেয়ে শাহানা। আর শাহানা উনি আমার …
– আমি ওকে ভালো করেই চিনি বাবা।
– এটা তো ভালো খবর। ওকে দেখে ইন্সপায়ার হও।
– না বাবা এটা মোটেও ভালো খবর নয়। আর ওকে দেখে আমি ইন্সপায়ার হবো কেন?
– কেন?
– বাবা এটা অতসী, যে তোমাকে ফোন করে আমার নামে উল্টেপাল্টা কথা বলেছিল।
শাহানার বাবা চমকে উঠলেন। অতসীর মুখে তাকিয়ে দেখল, অতসী চুপচাপ বসে আছে, যেন এইখানে কিছু কথাই হয়নি।

– এসব কি বলছিস তুই। উনি কিভাবে?
শাহানা কিছু বলতে যাবে,তার আগে অতসী বলল,
– আমার পুরো নাম অতসী খাঁন। ……. থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট।
শাহানার বাবার মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। উনি ভালো করেই বুঝে গিয়েছে অতসীই সেই মেয়ে, যে সেইদিন ফাইট করেছিল। উনি ভেবে পেলেন না সেইদিন অতসীকে যা অপমান করেছে, তারপরেও কি অতসী এই ডিলটা করতে রাজি হবে?

– আঙ্কেল এতটা ঘাবড়ে যাবার কিছুই নেই। আমি আমার পার্সোনাল লাইফের‌ সাথে প্রফেশনাল লাইফটিকে কখনোই গুলিয়ে ফেলি না। আর তার থেকে বড়ো কথা কি জানেন আমার এইখানে আসার কারন একটাই, আমি আপনাদের বোঝাতে চেয়েছিলাম কাউকে কখনো ছোট করা ঠিক নয়। হতে পারে মানুষটি সাধারণ, তবে তার অসাধারণ হতে পারাটা অস্বাভাবিক কিছু না। প্রতিটা মানুষই চেষ্টা করলে সাফল্যের চূড়াতে পৌঁছাতে পারে।
শাহানার বাবা অপমানে মাথা নিচু করে ফেললেন। মেয়ের বয়সী একজন মেয়ে ওনার ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। উনি মাথা নিচু করে বলল,

– সরি।
– আঙ্কেল আপনার মেয়েটার দিকে একটু নজর দেবেন। মনে রাখবেন, মানুষ হতে সময় লাগলেও অমানুষ হতে কিন্তু সময় লাগে না। আচ্ছা বাদ দিন এইসব কথা, আন্টি আমার জন্য কি রান্না করছে গন্ধেতেই আমার পেট ছু ছু করছে।
অতসীর কথাতে শাহানার বাবা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। আর যাইহোক মেয়েটা খারাপ না।
অতসী সারাদিন শাহানার পরিবারের সাথে সময় কাটাল। হইহই করে সারাদিন কাটলো, শাহানাও মন খুলে আনন্দ করেছে আজকে।

– আঙ্কেল আমাকে এইবার যেতে হবে।
– আচ্ছা সাবধানে যাবো।
অতসী বেরিয়ে গেল। শাহানার বাবা নিজের মেয়েকে বললেন,
– পারলে এইবার আমার একটু মানুষ হও।
শাহানার বাবা চলে যেতেই শাহানার মা শাহানাকে বলল,
– মেয়েটা খুব মিষ্টি তাই না, কি অমায়িক ব্যবহার।

– অমায়িক ব্যবহারটা তোমার নজরে পড়ল, আর আমাকে যে কত অপমান করল সেটা নজরে পড়ল না।
– তুই অপরাধ করেছিস তাই বলেছে। বেশি কথা বলবি তো আমার হাতে মা/র খাবি।
শাহানা গাল ফুলিয়ে চলে গেল। অতসী বাড়ি ফিরে যাবার সময়ে অতীতে ডুব মারল।
বাড়িভাড়া, কলেজ, সংসার খরচা সবকিছু নিয়ে অতসী হাঁপিয়ে উঠেছে। একটার পর একটা চাকরির খোঁজ করেই চলেছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। তেমনি একদিন একটা কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গেছে,তখনি ওর সাথে নিলয়ের বাবা দেখা হয়,

– আরে অতসী তুই এইখানে কি করছিস?
– আঙ্কেল তুমি এইখানে?
অতসী সংক্ষেপে ওনাকে সবটা বলল।
– এতকিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে কিছুই জানালি না।
– আঙ্কেল সবটা তো শুনলে বলো।
– জানিস তোর বাবা আগে এইরকম ছিল না, প্রানবন্ত একটা ছেলে ছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে গম্ভীর, জেদি আর একরোখা হয়ে গেছে।
অতসী কিছু বলল না। নিলয়ের বাবা আবারো বলল,

– চাকরি খুঁজছিস?
– হুমম।
– আমার কোম্পানিতে চাকরি করবি?
অতসীর একটা চাকরির দরকার, কিন্তু কারোর সুপারিশে চাকরি করতে চাই না। নিজের যোগ্যতায় চাকরি করতে চাই তাই চুপ করে থাকল।
– আমি তোকে একটা কাজ দিতে পারি।
– কি কাজ।
– কম্পিউটারের কিছু কাজ। আবার পক্ষে অনেক চাপ পড়ে যায়, তুই কাজটা করলে আমার বেশ হেল্প হতো।
– কিন্তু আমি কি পারব।

– আমি শিখিয়ে দেবো। আর তুই কাজটা ২-৩ ঘন্টা বাড়িতে বসে করলেই হয়ে যাবে।
অতসী অনেক ভেবে চিন্তে রাজি হয়ে যায়। তারপর থেকে অতসী টিউশনি করানোর পাশাপাশি রাতে কিছুটা সময়ে ল্যাপটপে কাজ করতে শুরু করে। নিজের চেষ্টাতে অতসী ধীরে ধীরে কাজটা সম্পূর্ণ আয়ত্ত করে ফেলে। আর নিলয়ের বাবার একটা কোম্পানি অতসী দেখাশোনা করতে শুরু করে। নিজের চেষ্টা, পরিশ্রমে অতসী ৩বছরের মধ্যে একটা জায়গা করে নেই।
অতসীর ধ্যান ভাঙে ফোনের আওয়াজে।

– হ্যালো আঙ্কেল বলো।
– কিরে ডিলটা হয়েছে।
– হ্যাঁ।
– খুশি তো তুই?
– হুমম, এইবার শাহানা শুধরে যাবি আশা করি।
– শুধরে গেলেই তো ভালো।
– হুম।
কি মনে হয় আপনাদের, শাহানা কি এইবার শুধরে যাবে?
অতসী বাড়ি ফিরে আকরাম খাঁনকে ফোন লাগল। আদৃতের সাথে কি কথা হয়েছে, সেইসব কিছুই ওর জানা নয়। তবে আদৃত রাজি হয়নি এটা শিওর।

– হ্যালো বাবা।
– হ্যা অতসী বল।
– বলছি বাবা আদৃত কি বলল, তুমি আমাকে বললে না, তো।
অতসীর বাবা কি উত্তর দেবে বুঝতে পারল না। চূপ করে থাকল।
– কি হলো বাবা বলো।
– আদৃতের থেকে জেনে নিস। আমি কিছু বলতে পারব না।
– কিন্তু কেন?
– সব কেন ওর উত্তর হয় না। আমি তোকে কিছূ বলতে পারব না, যদি পারিস আদৃতের থেকে জেনে নিস। আর একটা কথা কালকে বাড়িতে আসিস।

– কেন?
– আদৃত আর ওর বাড়ির সবাই আসছে কাল বাড়িতে। তুই ওহ আসিস তোর মা খুব খুশি হবে।
– চেষ্টা করব।
অতসী ফোনটা কেটে দিলো। কোনো কিছুই মাথাতে ঢুকল না, আকরাম খাঁনের কথার মানে কিছুই বুঝল না।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৯

দিনকে দিন অলস হয়ে যাচ্ছি। এক্সাম শেষ করেই আবারো নতুন সেমিস্টারের জন্য পড়াশোনা করতে শুরু করতে হয়েছে। আবারো ব্যস্ততা আর তার মাঝে অলসতা😬
কয়েকদিন একটু গুছিয়ে নিই আবারো জোরতমে গল্প লিখব ইনশাআল্লাহ্।
যাইহোক সবাই ভালোবাসা নেবেন। আমার ভালো থাকার জন্য সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর ভালোবাসা 😘🥰

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৪১