চৈত্রিকা পর্ব ২৬

চৈত্রিকা পর্ব ২৬
বোরহানা আক্তার রেশমী

সামনে পিয়াসকে দেখে সব রকম ঘোর কেটে যায় চৈত্রিকার। পিয়াসের মুখে তখন শ’য়’তানী হাসি। চৈত্রিকা কিছু সময়ের জন্য থমকে গেলেও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। মনের পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় মনে তেমন জোড় আসে না। তবুও দমে না। গলা কোনো রকম না কাঁপিয়ে বেশ জোড়ালো কন্ঠে বলে,

‘কি সমস্যা? এখানে কি করছেন?’
পিয়াস কু’টিল হাসি হাসে। চৈত্রিকার দিকে দুপা এগিয়ে আসতে আসতে বলে, ‘আপনাকে দেখতে আসলাম ভাবীজান৷ আমি তো ভেবেছিলাম ভাইজানের শোকে বোধহয় আপনার হাল খারাপ! তা এখন তো দেখছি আপনি দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
চৈত্রিকা আপনা আপনিই পিছিয়ে যায়। দরজা শক্ত করে ধরে বলে, ‘দেখা হয়ে গেছে? এখন যান!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পিয়াস যায় না৷ চৈত্রিকা দরজা আটকাতে নিলে হাত দিয়ে আটকে দেয়। চৈত্রিকা চোখ বুজে বড় করে শ্বাস নেয়। হুট করেই উষ্ণ ঠান্ডা হাত উদরে ঠেকে। চমকে ওঠে চৈত্রিকা। চট করে সরে যায়। রাগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মুহুর্তেই সব ভয়, পরিস্থিতি মন থেকে উধাও হয়ে যায়। বাহিরে বৃষ্টি কমে গেছে। তবে বাতাস আছেই৷ বাহিরের বাতাস এসে সরাসরি চৈত্রিকার গায়ে লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। বাতাসে থেকে থেকে চৈত্রিকার শাড়ির আঁচলও নড়ে উঠছে। চৈত্রিকা শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। পিয়াসের দৃষ্টি তখন চৈত্রিকার দিকে। যে দৃষ্টিতে চৈত্রিকার গা গুলিয়ে ওঠে। চৈত্রিকা চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

‘এক্ষুণি এখান থেকে বের হোন! নয়তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।’
‘কেনো ভাবীজান? কি করবেন?’
চৈত্রিকা কোনো জবাব দেয় না। পিয়াস এগিয়ে এসে দাঁড়ায় চৈত্রিকার কাছাকাছি। এবার ভয় পেয়ে সরে যায় না চৈত্রিকা। ঠায় দাঁড়িয়ে রয় নিজের জায়গায়। দৃষ্টি একদম পিয়াস রেনওয়াজের দৃষ্টিতে। পিয়াস এগিয়ে এসে বাঁকা হেঁসে বলে,
‘ভাবলাম বড় ভাইজান তো হাসপাতালে! ভাবীজানকে সঙ্গ দেওয়ার মতো তো কেউ নেই। তাই চলে আসলাম আপনাকে সঙ্গ দিতে। ভালো করেছি না?’

চৈত্রিকা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। পিয়াস দূরত্ব মেটাতে আরো এক পা এগোয়। পিয়াস ভেবেছিলো হয়তো চৈত্রিকা এই রাতের আঁধারে তাকে ভয় পাবে। কিন্তু চৈত্রিকার মতো নারীকে ভীতু ভাবাটাই তার জীবনের চরম ভুল। পিয়াস বেখেয়ালি ভাবে এগিয়ে আসতে নিলেই চৈত্রিকা হুট করেই গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়। পিয়াস তাল সামলাতে না পেরে দু পা পেছোতেই চৈত্রিকা পেছন থেকে ফুলদানি নিয়ে হুট করেই পিয়াসের মাথায় বা’রি মা’রে।

চৈত্রিকা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মাথায় বেশ জোড়ে সোড়ে ব্যাথা পেলেও জ্ঞান হারায় না পিয়াস। কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্কই যেনো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। নিজেকে কোনো রকম সামলে র’ক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় চৈত্রিকার যাওয়ার দিকে। চৈত্রিকা কোনে দিকে না তাকিয়ে ছুটে যায় হল রুমের দিকে। পিয়াসের মনে তখন জিদ জেগে গেছে। চৈত্রিকা তাকে আ’ঘাত করেছে বিষয়টা সে ভালো ভাবে নিতে পারে না। ধুপধাপ পা ফেলে নিজেও ছুটে আসে চৈত্রিকার দিকে। উপর থেকে দেখতে পাায় চৈত্রিকা রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেছে। হঠাৎ করে চৈত্রিকাকে রান্নাঘরে যেতে দেখে মনে সন্দেহ জাগে পিয়াসের। তবুও পেছন পেছন যায়। পিয়াস রান্নাঘরে পৌঁছানোর আগেই চৈত্রিকা বের হয়ে আসে। পিয়াস তাকে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে বলে,

‘তোর অনেক দে*মাক তাই না! তোর এই দে*মাক, অ’হং’কার যদি আমি আজ না ভাঙতে পারি তবে…’
‘তবে কি?’
পিয়াস ক্ষো’ভ নিয়ে এগোতে নেয় চৈত্রিকার কাছে। চৈত্রিকা হুট করেই পেছনে রাখা হাত আনে সামনে। হাতে একটা বড় সড় ব’টি। হুট করে ব’টি সামনে চলে আসায় পিয়াস পিছিয়ে যায়। চৈত্রিকা নিজের তেজ ধরে রেখে বলে,

‘প্রহর রেনওয়াজ নেই মানে চৈত্রিকার তেজ নেই এটা যদি ভেবে থাকেন তবে আপনি ভুল পিয়াস রেনওয়াজ! আমি চৈত্রিকা। চৈত্রের উত্তপ্ত রোদ আমি। একসময় প্রহর রেনওয়াজ ছিলো না তখনও এই চৈত্রিকার তেজ ছিলো এখনো আছে। তাছাড়া প্রহর রেনওয়াজ আমার জন্য তেমন কেউ নাহ যে সে থাকা না থাকায় আমার সাহস, তেজ, কাঠিন্য কমে যাবে! আমাকে ছোঁয়ার সাহস করলে আমি এক কো’পে মাথা নামিয়ে নিতেও দুবার ভাববো না।

এই ঝড় বৃষ্টির রাতে আমি চিৎকার করলে আপনার বাড়ির কেউ শুনতে পাবে হয়তো তবে আমি করবো না চিৎকার। জানি এখানে আপনার মতো জা’নো’য়া’ররা আরো আছে। আমাকে দুর্বল ভাববেন না দেবর সাহেব। আমি নিজের ওপর হওয়া অন্যায়ের শা’স্তি নিজেই দিতে জানি। আর যদি আমাকে ছোঁয়ার বিন্দুমাত্রও চেষ্টা করেন তবে আমি আপনার এই হাত কে’টে ফেলতেও দুবার ভাববো না।’

পিয়াস চৈত্রিকার এই রুপে হুট করেই যেনো চমকে যায়। যা ভেবেছিলো পুরোটাই তার বিপরীত। তবুও পিয়াস দমবে না। রাগে, জিদ্দে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তোকে আমি দেখাচ্ছি!’

পিয়াস সত্যিই চৈত্রিকার কাছে এগিয়ে আসলে চৈত্রিকা ব’টি দিয়েই কো’প দেয়। কো’পটা গিয়ে লাগে সরাসরি পিয়াসের হাতে। পিয়াস ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে। চৈত্রিকা রাগে ফুঁসছে। পিয়াস রক্তে মাখা হাত ধরে বসে পড়ে মেঝেতে। সে বুঝতেই পারেনি সত্যি সত্যিই চৈত্রিকা তাকে এভাবে মে’রে দিবে! চারপাশের বাতাস তখন প্রখর। বাড়ির খোলা এক জানালা দিয়ে বাতাস ঢুকছে হু হু করে। সেই বাতাসে, হালকা আলোয় চৈত্রিকার রুদ্রাণী রুপ স্পষ্ট। চৈত্রিকা কন্ঠের কাঠিন্যতা ধরে রেখে বলে,

‘আমি দুর্বল নই। নারী মানেই দুর্বলতা নয়। নারীর এক বিশাল ব্যাখ্যা চৈত্রিকা। যার তেজ, সাহস কোনো কিছুরই কমতি নেই শুধুমাত্র দুর্বলতা ছাড়া।’
পিয়াস ফ্যালফ্যাল করে তাকায়৷ চৈত্রিকা হাতের ব’টি শক্ত করে ধরে রেখে দু পা এগিয়ে আসে। চোখ তখন লাল টকটকে হয়ে আছে। পিয়াসের চোখে চোখ রেখে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, সাবলীল ভাবে বলে,

‘সব নারীর সাথে অ’ন্যায় করে পার পাবি না। আমি জানি কিভাবে নিজের ওপর হওয়া অ’ন্যায়ের প্রতিকার করতে হয়! কিভাবে তোদের মতো জা’নো’য়া’রকে সোজা করতে হয়! লজ্জা থাকলে আর আজকের মা’র মনে থাকলে কখনো আমাকে ছোঁয়ার কথা চিন্তাও করবি না কিন্তু লজ্জা না থাকলে আমি লজ্জা এনে দেবো। আর রইলো বাকি প্রহর রেনওয়াজের কথা! মনে হয় না তোরা তার একটা চুলও বাঁকা করতে পারবি! কিরে নিজের ভাইরে চিনিস না? যাক! একটা কো’প আজ খেলি বাকিগুলো দিনে দিনে খাবি। কথা দিলাম।’

পরেরদিন সকালে কিছুই স্বাভাবিক হলো না। পিয়াসের কে’টে যাওয়া হাত দেখেই বাড়িতে একদফা ঝামেলা হয়ে গেলো। অন্যদিকে প্রহরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সকাল সকালই চয়ন রেনওয়াজ, শিমুল রেনওয়াজ আর সাদিক রেনওয়াজ শহরের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। পল্লবী থম মে’রে গেছে। রাতে যতুটকু কান্না করছিলো সকালে ততটুকুই শান্ত হয়ে গেছে। পিয়াসের হাতের অবস্থা দেখে নীরা কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি।

নিশ্চয় এটা কোনো অ’ন্যায়েরই শা’স্তি। অর্পিতা, অর্থি, নাসিমা, শায়লা, নীরা সবাই হল রুমে বসে আছে। সবার চিন্তা গিয়ে ঠেকে আছে প্রহর আর চিত্র। দুভাইয়ের সাথেই কেনো এমন হলো? চৈত্রিকা স্বাভাবিক। তার এতো স্বাভাবিক আচার আচরণ কারোর হজম হচ্ছে না। অর্পিতা আর নীরা দুজনে এগিয়ে যায় চৈত্রিকার কাছে। অর্পিতা উসখুস করতে করতে বলে,

‘বড় ভাবীজান!’
চৈত্রিকা মাথা তুলে তাকায়। অর্পিতা দৃষ্টি এদিক ওদিক করে বলে, ‘ঠিক আছেন আপনি?’
চৈত্রিকার স্বাভাবিক জবাব, ‘হ্যাঁ ঠিকই তো আছি। কেনো অর্পিতা আপু?’
চৈত্রিকার খোলাখোলি স্বাভাবিক আচরণে যেমন চমকালো তেমনই অস্বস্তিও হলো৷ সেই অস্বস্তি ধরে রেখেই শুধায়, ‘বড় ভাইজানের তো কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না! তোমার টেনশন হচ্ছে না?’
‘নাহ তো। টেনশন কেনো করবো? আমি জানি উনি ঠিক আছে।’

চৈত্রিকার মুচকি হাসি আর আত্মবিশ্বাসে অর্পিতা অবাক না হয়ে পারে না। এতোটা বিশ্বাস কার প্রতি? নিজের প্রতি! প্রহরের প্রতি! নাকি সৃষ্টিকর্তার প্রতি! সে তো চিত্র ভাইকে কতগুলো দিন থেকে চেনে, জানে, ভালোবাসে তবুও চিত্রর নিখোজের পর আজ পর্যন্ত সে এই আত্মবিশ্বাসটুকু আনতে পারেনি যে চিত্র ঠিক আছে। অথচ চৈত্রিকার কন্ঠে নেই ভয়, অস্বস্তি কিংবা অস্বাভাবিক কিছু। অর্পিতাকে কিছু ভাবতে দেখে পাশ থেকে নীরা বলে,
‘চৈত্রিকার মতো আমারও কিন্তু মনে হয় বড় ভাইজানের কিছু হয়নি। এতো সহজে হবেও না। বড় ভাইজান এতো সহজে কখনোই হার মানবে না।’

নীরার কথার মানে অর্পিতা না বুঝলেও চৈত্রিকা বোঝে। কোনোরুপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই বসে রয়। অর্পিতার মনে প্রশ্ন জাগলেও আর জিজ্ঞেস করে না। চুপচাপ বসে থাকে। জমিদার বাড়ির সবার এ বসে থাকাটাই দুপুর পর্যন্ত চলে। দুপুরের পর দিয়ে বাড়িতে হাজির হয় প্রহরসহ দুজন লোক। তারাই প্রহরকে এনেছে। প্রহরের শুধু পায়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ। প্রহরকে দেখেই বাড়িতে আরেক ধাপ কান্নাকাটি, চেঁচামেচির সৃষ্টি হয়। প্রহর কোনো শব্দ ছাড়াই সবটা দেখে গেলো। চৈত্রিকা হল রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রহর কয়েক পলক তার দিকে তাকিয়ে আর তাকায়নি। চৈত্রিকা ইতস্তত করছে। কি করবে, কি করবে না ভেবে পাচ্ছে না। কান্নাকাটি শেষে লোক দুইটিই প্রহরকে ঘরে রেখে আসে। মূলত প্রহর পায়ে ব্যাথা পাওয়ায় পা ভে’ঙেছে। চৈত্রিকাও পিছু পিছু এসেছে। লোক দুজন চলে গেলে চৈত্রিকা ঘরে আসে। ঘরের দরজা হালকা করে ভিজিয়ে দিয়ে ধীর পায়ে কাছে আসে। পুরো ঘরে তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ আর চৈত্রিকার পায়ের নুপুরের শব্দ ছাড়া কোনো শব্দ নেই। চৈত্রিকা প্রহরের সামনে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। প্রহর নিজেও চোখের ওপর হাত রেখে শুয়ে আছে। কতটা সময় এভাবে কাটে তা বোধহয় দুজনের কেউই জানে না। একসময় চোখ বন্ধ অবস্থাতেই প্রহর বলে,

‘কিছু বলবে?’
চৈত্রিকা নড়েচড়ে দাঁড়ায়। দৃষ্টি এদিক ওদিক করে ফাঁকা ঢোক গিলে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কি বলবে সে? যার সাথে মনের দূরত্ব এতোখানি! আদৌও কি তাকে বলার মতো কিছু আছে চৈত্রিকার? চৈত্রিকাকে অনেকক্ষণ যাবত চুপ থাকতে দেখে প্রহর চোখের ওপর থেকে হাত সরায়। সরাসরি চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আমার কিছু হয়নি। কাল সামান্য একটু এক্সিডেন্টে শুধুমাত্র পা ভেঙেছে আর মাথায় একটুখানি লেগেছে। আর কোনো প্রশ্ন আছে তোমার?’
চৈত্রিকা ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। সে কখন এসব কিছু জিজ্ঞেস করলো? সে তো এখন অব্দি একটা টু শব্দও করেনি। প্রহর তার ভাবনার মাঝেই ফের বলে,
‘কাল রাতে কি হয়েছে চৈত্রিকা?’

চৈত্রিকা যেনো আকাশ থেকে পড়ে। এতো বেশি অবাক হয় যে তার মুখই হা হয়ে যায়। মাথায় বার বার ঘুরপাক খায় একটাই কথা৷ ‘উনি কেমন করে জানলো কাল যে কিছু হয়েছে!’ এ প্রশ্নের উত্তর পায় না। প্রহরকেও মুখ ফুটে প্রশ্ন করে না। নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
‘কই! কিছু নাহ তো।’
প্রহর আর কিছু বলে না৷ চুপচাপ শুয়ে পড়ে। চৈত্রিকা বড় করে শ্বাস নিয়ে কোনোমতে বলে, ‘আপনি একটু বিশ্রাম নিন। আমি আসছি!’

চৈত্রিকা দ্রুত পায়ে পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে যায়। কোনো রকমে ঘর থেকে বের হতে নিলে পেছন থেকে প্রহরের শান্ত গলায় ভেসে আসে,
‘পিয়াসের হাতের ওই আ’ঘাত তুমি করেছো তাই না?’

নীরা হল রুমের সকল কাজ শেষ করে ঘরে এসে দেখে পিয়াস বিছানায় বসে আছে। নীরা দেখলেও তা আমলে নিলো না। নিজের মতো এলোমেলো ঘর গুছিয়ে নিতে শুরু করে। পিয়াস রাগী গলায় বলে,
‘আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছো কেনো?’
‘কিছু সময় কিছু কিছু প’শু পাখিকে এড়িয়ে চলতে হয়।’

পিয়াস ক্ষেপে ওঠে৷ নীরা ভাবলেশহীন ভাবে নিজের সমস্ত কাজ করছে। পিয়াস কিছু বলার আগেই নীরাই বলে,
‘আপনার হাতের এই ক্ষ’ত বড় ভাবীজান করেছে তাই না?’
পিয়াস জবাব দেয় না। নীরা ফের বলে, ‘এই বাড়ির কেউ জানুক বা জানুক আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি বড় ভাবীজানকে কেমন দৃষ্টিতে দেখেন।’

পিয়াস বিছানা ছেড়ে উঠে আসে। নীরা তা খেয়াল না করেই তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বলে, ‘অবশ্য ঠিকই আছে। এসব লোকজনকে শুধু একটা হাতের আ’ঘাতে চলবে না। এদের মা’থা থেকে গ’লা আ’লাদা করে দিতে হয়। আর তা যদি হয় আপনার মতো জা’নো’য়া’র তাহলে তো বিনাবাক্যে!’

কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পিয়াস চেপে ধরে নীরাকে৷ সরাসরি টান দিয়ে পেছনে ঘুরিয়ে গলা চে’পে ধরে৷ ঘটনার আকস্মিকতায় নীরার দম আটকে আসে৷ পিয়াস রাগে বেশ জোড়ে চেপে ধরে থাকে৷ দাঁতে দাঁত চেপে যা তা ভাষা বলতে থাকে নীরাকে৷ নীরা কোনো রকম ধাক্কা দিয়েও যখন ছাড় পায় না তখন করে বসে এক সাহসী কান্ড। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করেই পা দিয়ে জোড়ে লা’থি মা’রে। পিয়াস সরে যায়। নীরা বড় বড় শ্বাস নিয়ে একটুখানি সরে যায়। নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলে,

‘আমাকে মে’রে ফেললেও এই সত্যটা কিন্তু সত্যই থাকবে যে আপনি জা’নো’য়ার।’
পিয়াসের চোখ লাল বর্ণ ধারণ করে। হাতের কাছে থাকা ছোট্ট টব আর চেয়ার ঠাস করে ফেলে দেয়। কন্ঠে দ্বিগুণ ক্ষোভ রেখে বলে, ‘তোর গলার এতো জোড়! যে চৈত্রিকার জন্য তোর সাহস বেড়েছে সেই চৈত্রিকাকেই আমি নিঃশেষ করবো। করবোই।’

চৈত্রিকা পর্ব ২৫

নীরা তাচ্ছিল্য করে হাসে। সে হাসির রেশ ধরে রেখেই বলে, ‘চৈত্রিকাকে নিঃশেষ করা, ভেঙে দেওয়া এতে সহজ না পিয়াস রেনওয়াজ। চৈত্রিকার দিকে যতবার তাকাবেন মনে হবে সূর্য এসে চোখে হানা দিচ্ছে।’

চৈত্রিকা পর্ব ২৭