চৈত্রিকা পর্ব ২৫

চৈত্রিকা পর্ব ২৫
বোরহানা আক্তার রেশমী

কথায় আছে সময় আর স্রোত কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় তার নিজ গতিতেই চলে। সময়ের প্রেক্ষিতে মানুষ শুধু আফসোস করে। সময় কারো জন্য থমকে নাা থাকলেও জমিদার বাড়ি থমকে আছে একটা জায়গাতেই। ‘চিত্র’! চিত্র নিখোঁজ হওয়ার পর কেটেছে প্রায় ১ মাস। তবুও চিত্রর কোনো রকম খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ প্রহর দিনরাত খুজেই চলেছে কিন্তু চিত্রর কোনো খোঁজই তার কাছে আসেনি। অর্পিতা দিন দিন গুমড়ে ম’রছে।

বার বার নিজের কাজের জন্য আফসোসে জর্জরিত হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছে চিত্রকে পাওয়ার। পল্লবীও খুব একটা ঘর থেকে বের হয় না। জমিদার বাড়ির তেজ কমে গেছে এতটুকুতেই। অর্থির আর কয়েকদিন পর পরীক্ষা। নিবিড়,চৈত্রিকা, নীরা অনেক কষ্টে তাকে কোনো রকমে পড়া সম্পূর্ন করায়। একটা মানুষের জন্য তো মাধ্যমিক থেমে থাকবে না। থেমে থাকবে না কারো জীবন! সবাই নিজেদের মতো চলছে ঠিকই তবো কারোর মধ্যেই প্রাণ নেই। জমিদার বাড়িটা এখন হাহাকার করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈত্রিকা চিত্রর হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কষ্ট পেলেও মাঝে মাঝে হাসে। জমিদার বাড়িতে সে প্রবেশের কেবল দেড় মাস। এতেই জমিদার বাড়ির হাহাকার হলে চলবে? প্রতিদিনকার মতোই সকাল সকাল উঠে গোসল করে বাড়ির কাজের মানুষকে নিয়ে বাড়ির দুই বউ সব কাজ শেষ করে সবাইকে ডাকে খেতে। পল্লবী আর অর্পিতার জন্য খাবার ঘরে নিয়ে যাবে। চৈত্রিকা প্রথমেই আসে প্রহরের কাছে।

শেষ একদিন এই মানুষটা তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেও গত ১ টা মাসে মুখে টু শব্দও করেনি। চৈত্রিকা শুধু তাকিয়ে থাকতো তার মুখের দিকে কিন্তু প্রহর তার সাথে কোনো রকম শব্দ না করেই চুপচাপ শুয়ে থাকতো। দুজন দু পাশ হয়ে শুয়ে থাকলেও চৈত্রিকা বুঝতো প্রহর জেগে আছে। কত দিন তো প্রহর বাড়িতেই ফিরতো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চৈত্রিকা ঘরে পা রাখতেই কোথাও প্রহরকে নজরে আসে না। আজও কি প্রহর তাকে না বলেই চলে গেছে নাকি! ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ এলোমেলো বিছানার দিকে তাকিয়ে আবার নিজেই চোখ বন্ধ করে নেয়। বিড়বিড় করে বলে,

‘তাতে আমার কি? জমিদার সাহেব যাক মন চায় থাকুক! তাতে আমার কি? আমি উনার এমন কে লাগি যে আমাকে বলে বের হতে হবে? আর আমারই বা এতো যায় আসবে কেনো উনি বলে যাওয়ায় বা না বলে যাওয়ায়! আমি নিজ লক্ষ থেকে সরে কেনো যাচ্ছি বার বার?’

নিজেই নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে বিছানা গোছাতে শুরু করে। পেছন থেকে গোসলখানার দরজা খোলার শব্দে চমকে তাকায় চৈত্রিকা। প্রহর তোয়ালেতে চুল মুছতে মুছতে আয়নার কাছে এগিয়ে আসে। কিন্তু চৈত্রিকার সাথে কোনো কথা বলে না। চৈত্রিকা খানিকটা উসখুস করলেও দৃষ্টি এদিক ওদিক করে নিচে তাকিয়ে বলে,
‘খাবেন না জমিদার সাহেব?’

প্রহর কতক্ষণ চুপ থাকে। তারপর চুল ঠিক করে আলমারি থেকে শার্ট বের করে নেয়। শার্ট গায়ে জড়িয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে, ‘খাবো। নিচে চলো! আর আমি আজ একটু শহরে যাবো। আসতে রাত হতেও পারে আবার রাতে নাও ফিরতে পারি। তুমি চিন্তা করো না। দরজা লাগিয়ে ঘুমাবে। রাতে কেউ ডাকলেও দরজা খুলবে না। মাথায় থাকবে?’
চৈত্রিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে৷ বিড়বিড় করে বলে, ‘কে যেনো তার জন্য চিন্তা করতে যাাবে! আমার কিসের ঠ্যাকা হুহ! তার কথা শুনবোই বা কেনো?’

প্রহর হয়তো শুনলো তবে কোনো রকম কথা বাড়ালো না। চুপচাপ জুতা পড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। প্রহর যেতেই চৈত্রিকা চোখ মুখ কুঁচকে নাক ফুলিয়ে বলে,
‘আমি যে ডাকতে আসলাম আমাকে পাত্তাই দিলো না! অন্তত মানুষ তো ভদ্রতার খাতিরেও সাথে যেতে বলে নাকি!’
কোনো রকমে সব গোছগাছ করে মনে মনে প্রহরকে বকতে বকতেই ঘর থেকে বের হয়৷ নিচে এসে বাড়ির ছেলেদের সবার খাওয়া হয়ে গেলে চৈত্রিকা নিজেই প্লেট নিয়ে পল্লবীর ঘরে যায়। পল্লবী তখন নামাজের বিছানায় বসে তজবি পাঠ করছিলো। সারাদিন এখন তার এই জায়গাটাই সবকিছু। এখান থেকে অপ্রয়োজনে সে ওঠেও নাহ। চৈত্রিকা খাবার টেবিলের ওপর রেখে ছোট করে বলে,

‘আম্মা খাবেন না?’
পল্লবী চোখ তুলে তাকায়। চৈত্রিকাকে হাতের ঈশারায় কাছে ডেকে পাশে বসায়। নিস্তেজ গলায় বলে, ‘প্রহর কোথায় বড় বউ?’
‘উনি তো খেয়ে বের হলেন। আজও বোধহয় চিত্র ভাইকে খুঁজতেই গেছে।’
পল্লবী ভাসা ভাসা চোখে তাকায়। চোখের পানি আড়াল করে বলে, ‘ছেলেটা আমার দিনরাত খুঁজে যাচ্ছে! ওকে বলো আর না খুঁজতে! ছেলেটা মনে হয় না আর বেঁ*চে আছে!’

গলা কেঁপে ওঠে পল্লবীর। চৈত্রিকা শক্ত করে পল্লবীর হাত ধরে। আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘আপনি ভুল ভাবছেন আম্মাজান। চিত্র ভাইয়ের কিছু হয়নি৷ দেখবেন আপনার বড় ছেলে ঠিকই চিত্র ভাইকে ফিরিয়ে আনবে।’
পল্লবী চৈত্রিকার দিকে চেয়ে থাকে। মেয়েটার বয়স কম হলেও বুঝ, ধৈর্য কতটা বেশি! পল্লবী গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। চৈত্রিকা একবার খেয়ে নিতে বলে। পল্লবী সে কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলে,

‘আমি তোমার মতো আশ্বাস দিতেও পারি না নিতেও পারি না চৈত্রিকা। আমি তোমাকে চিনি৷ তুমি মুখে যতটা আশ্বাস দিতে জানো ভেতরে ততটাই আশ্বাস নিতে জানো না। কিন্তু তুমি জমিদার বাড়ির একটাও মানুষকে চিনো না। এরা নিজ স্বা’র্থে সব পারে। চয়ন রেনওয়াজ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের ছেলেকে কু’র’বা’নি দিতেও দুবার ভাববে না। আমার প্রহরটা ভীষণ কঠিন , পা’ষাণ।

‘ও’ কাউকে ভালোবাসলেও সেই মানুষটার অন্যায় সহ্য করতে পারে না। ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে একটু একটু করে আ’ঘাত করে। তখন সেই মানুষ পানি ছাড়া মাছের মতো ছটফট করে মৃ’ত্যু কামনা করে। ওর মতো পা’ষান, কঠিন ওর বাপও না। পিয়াসটা তো মানুষই না। এক্কেবারে বা’পের মতো জা’নো’য়ার। শুধু আলাদা আমার চিত্রটা। ছেলেটা এসব কিছু থেকে সবসময় দুরে থাকে। চাপা স্বভাবের ছেলেটা আমার ভেতরে ভেতরে ভীষণ সরল। সেই ছেলেটাকেই আমার ওরা কোলহারা করতেছে। যদি আমি একটুও টের পাই আমার ছেলেটাকে এভাবে কেড়ে নেওয়ার জন্য চয়ন রেনওয়াজ দায়ী! কসম আল্লাহর নিজ হাতে ওর বুকে তলোয়ার বসিয়ে সেই র’ক্ত আমি গায়ে মাখবো।’

পল্লবীর শেষ উক্তিতে কেঁপে ওঠে চৈত্রিকা। অজান্তেই হাত চেপে ধরে পল্লবীর। কথাটাই কিছু একটা তো ছিলো! কি ভীষণ রাগ, ক্ষো’ভের বহিঃপ্রকাশ! চৈত্রিকা পল্লবীর তেজী চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ায়,
‘তবে কি আমি একা এই জমিদার বাড়ির ওপর ক্ষো’ভ রাখিনি? জমিদার গিন্নি পল্লবী কেনো এতো রাগ, ক্ষো’ভ পুষে রেখেছে? কি এমন রহস্য আছে এসবের পেছনে!’

দুপুরবেলা চৈত্রিকা কাপড় ধুয়ে ছাঁদে রোদে দেওয়ার জন্য যায়। আপনমনে কাপড় মেলছিলো সে সময় ছাঁদের দরজা থেকে মহিলা কন্ঠ ভেসে আসে। চৈত্রিকা ঘাড় বাকিয়ে তাকিয়ে দেখে নাসিমা দাঁড়িয়ে আছে। চৈত্রিকা দাঁতে দাঁত চেপে টান টান হয়ে দাঁড়ায়। নাসিমা তাচ্ছিল্যের সুরে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে চৈত্রিকার কাছে। ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে,
‘তাহলে কি এখন শ’ত্রুর সংসারই গুছিয়ে দিচ্ছিস চৈত্রিকা?’

চৈত্রিকা বোঝার চেষ্টা করে কথাটা। তারপর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে নিজ কাজ করতে করতে বলে, ‘হ্যাঁ। কি করবো? হাজার হলেও সব শ’ত্রুর বিদায়ের পর তো সংসারটা আমারই থাকবে নাকি!’
‘তোর এখনো মনে হয় তুই এই সংসারে টিকতে পারবি?’
‘না টিকার মতো তো কিছু দেখছি না।’

নাসিমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। চৈত্রিকার তাতে কোনো হেলদোল নেই। সে যেনো নাসিমাকে দেখেও দেখছে না, চিনেও চিনছে না। নাসিমা চৈত্রিকার হাবভাব বুঝে উঠে না। কাছাকাছি এগিয়ে আসে। চৈত্রিকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
‘কি সমস্যা? কাজ কাম নাই?’
‘তুই এতো স্বাভাবিক কেনো? চিত্রকে তুই সরিয়েছিস তাই না?’

এপর্যায়ে কপালে ভাজ পড়ে চৈত্রিকার। কাপড়ের বালতি হাত থেকে নিচে রেখে হাত বগলদাবা করে দাঁড়ায়। কাঠকাঠ গলায় বলে, ‘আমারে কি আপনার নিজের মতো মনে হয়? আমি আপনার মতো নিচু মানসিকতা নিয়ে ঘুরি না। চিত্র ভাইকে সরানোর কথা আপনি, আপনার স্বামী, আপনার ভাসুরই ভাবতে পারেন! আপনারা তো আবার নিজের লো’ভে অ’ন্ধ।’
জ্বলে ওঠে নাসিমা। চৈত্রিকা বালতিটাা হাতে নিয়ে চলে আসতে নিলে হাত ধরে আটকায় নাসিমা। চৈত্রিকা ঘাড় বাকিয়ে তাকাতেই নাসিমা অদ্ভুত ভাবে বলে,

‘তোকেও আগে বলেছি আরো একবার বলছি! এখান থেকে চলে যা। এখানে থাকলে তোর সংসার হবে না৷ যত যায় করিস দিনশেষে তোর ম’রতেই হবে। প্রহরকে যতটা নিষ্পাপ ভাবছিস ‘ও’ কিন্তু অতোটাও নিষ্পাপ না।’
চৈত্রিকা আলগোছে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে, ‘সাহস থাকলে আর কলিজা থাকলে আমার গায়ে একটা টোকা দিতে বলিয়েন! দেখবো কার কত বড় কলিজা! আর রইলো বাকি প্রহর রেনওয়াজের কথা! তাহলে শোনেন আমি জানি কে সত্যিই কতটা নিষ্পাপ আর কে কতটা নিষ্পাপ সাজে! তাই আপনার আর কষ্ট করে আমার শ’ত্রুদের কথা আমাকে মনে করানোর দরকার নেই। ধন্যবাদ।’

চৈত্রিকা চলে যায়। নাসিমা চৈত্রিকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কিছু ভাবে। ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে নিজেও স্থান ত্যাগ করে।

বৈশাখ মাস মানেই হুটহাট বৃষ্টি, বাতাস। সন্ধ্যা থেকেই হুট করে বাতাস বয়ছে। চারপাশে নিকষ কালো আঁধার ছড়িয়ে গেছে। জমিদারের বাড়ির সব দরজা, জানালা বন্ধ করে নিজ ঘরে বিছানার ওপর পা তুলে বসে আছে চৈত্রিকা। যতই মুখে বলুক প্রহরের জন্য সে চিন্তা করে না, করবে না কিন্তু এই ঝড়, বাতাসের রাতে হুট করেই মাথায় চিন্তারা আগমন ঘটায়। এই ঝড়ের রাতে প্রহর কোথায়!

হাসফাস হাসফাস করতে করতে পুরো ঘরে পায়চারী শুরু করে। পায়ে প্রহরের দেওয়া নুপুরগুলোর শব্দ হচ্ছে। চিন্তায় বিভোর থাকা চৈত্রিকা নিজের নুপুরের আওয়াজটুকুও খেয়াল করছে না। তাার ভাবনার মাঝেই বেশ কয়েক বার দরজায় কড়াঘাত পড়ে। চমকে উঠে চৈত্রিকা একবার দরজা খুলতে গিয়েও খোলে না। উল্টো দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কান পেতে থাকে বাহিরে কি হচ্ছে তা শোনার জন্য! কিছুক্ষণ পরই জমিদার বাড়ির সার্ভেন্ট এসে চৈত্রিকাকে ডাকতে শুরু করে। মহিলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয়। মহিলাটি যেমন তাড়া নিয় এসেছিলো তেমন তাড়া নিয়েই কোনো রকমে বলে,

‘বড় ভাবীজান, বড় গিন্নিমা আপনাকে নিচে ডাকে!’
মহিলাটি চলে যায়। চৈত্রিকা কপালে ভাজ ফেলে মাথায়য় আঁচল টেনে নিচে নামে। ততক্ষণে চেঁচামেচির আওয়াজ তার কান পর্যন্ত চলে গেছে। কোনো শব্দ ছাড়াই নিচে নেমেই শুনতে পায় পল্লবীর কান্না। চৈত্রিকা এ পর্যায়ে ছুটে আসে। পল্লবী তাকে দেখতে পেয়েই হায় হায় করে বলে,
‘বড় বউ রে আমার প্রহরের এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। এই ঝড় বাতাসের রাতে ছেলেটাকে আমার একটা গাড়ি র’ক্তাক্ত করে ফেলে গেছে।’

চৈত্রিকা চমকায়। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে নীরা ধরে। ধীরে সুস্থে তাকে বসিয়ে দেয়। শায়লা এক গ্লাস পানি নিয়ে ছুটে আসে। পল্লবী তখনও আহাজারি করছে। এক ছেলে এমনিতেই নিখোঁজ এরওপর আরেক ছেলের এক্সিডেন্ট যেনো পল্লবীর ভেতরের ক্ষ’ত বাড়িয়ে দিয়েছে। চৈত্রিকার মাথা ঘুরপাক খায়। কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক কাজ বন্ধ করলেও পরে বুঝতে পারে ঘটনাটা। কিন্তু মেয়েটা কাঁদে না। দুর থেকে নাসিমা এগিয়ে আসে চৈত্রিকার কাছে। চৈত্রিকার গা ঘেষে বসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

‘স্বামী হারাইতে চলেছিস! একটু কাঁদ চৈত্রিকা। নয়তো আবার তোকে অনেক কথা শুনতে হবে।’
চৈত্রিকা দমে না। ক্ষোভ নিয়ে তাকায় নাসিমার দিকে। কন্ঠের তেজ ধরে রেখে বলে, ‘প্রহর রেনওয়াজ এতো সহজে সব ছেড়ে ছুড়ে আপনাদের শান্তি দিয়ে চলে যাবে মনে হয়? উহু একদমই ওইরকম ভাবনা মাথায় আনবেন না। আমি স্বামী হারাবো না।’

চৈত্রিকার আত্মবিশ্বাসে ‘থ’ মে’রে যায় নাসিমা। চৈত্রিকা নিজেই কথাগুলো বলে অবাক হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই ভেতরে অস্থিরতা তৈরি হয়। নীরা চৈত্রিকার পাশে বসে অসহায় কন্ঠে বলে,
‘এসব কি হচ্ছে ভাবীজান? এমনিতেই চিত্র ভাই নিখোঁজ তারওপর এখন বড় ভাইজানের এক্সিডেন্ট! বাড়ি তো পুরো মৃ’ত্যুপুরী হয়ে উঠতেছে। মানুষগুলো উপরে উপরে বেঁচে থেকেও প্রতিদিন ভেতরে ভেতরে মা*রা যাচ্ছে!’

চৈত্রিকা কোনো উত্তর দেয় না। সে নিজেই তো চায় জমিদার বাড়ির সাথে এমনই হোক। তবুও মন শান্তি পাচ্ছে না। অনেকটা সময় হলরুমে কান্নাকাটির ধুম থাকে। চৈত্রিকা কোনো টু শব্দও করেনি। চুপচাপ বসেছিলো। সবার ধারণা মেয়েটা স্বামীর শোকে ওমন হয়ে গেছে। বেশ অনেকটা রাতে যে যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। নীরা রাতে চৈত্রিকার কাছে ঘুমাতে চাইলে চৈত্রিকা না করে দেয়।

নিজের ঘরের দরজা আটকে চুপচাপ বিছানার ওপর বসে থাকে। মনের মাঝে কিছুতেই শান্তি নামক জিনিসটার দেখা মেলে না। রাত এভাবেই গভীর হয়৷ বাহিরে ঝড়, বাতাস, বৃষ্টি বাড়ে৷ চৈত্রিকার ঘরের দরজায় কড়া পড়ে। ঘোরে ডুবে যাওয়া চৈত্রিকা দরজার কাছাকাছি গেলে শুনতে পায় প্রহরের কন্ঠ। চৈত্রিকা প্রহরের কন্ঠ শুনেই ভুলে বসে সব। প্রহর যে শহরের হাসপাতালে রয়েছে তা তার মাথা থেকে বেড়িয়ে যায়। বোকার মতো দরজা খুলতেই দেখতে পায় সামনে দাঁড়ানো পিয়াসকে।

চৈত্রিকা পর্ব ২৪

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা হয়তো এলোমেলো হয়েছে একটু মানিয়ে নিবেন আজকের মতো😑 কালকে কোচিং এ এক্সাম আছে। টেনশন+ মাথা ব্যাথা নিয়ে লিখেছি😑 রিচেকও দেওয়া হয়নি৷ বানান ভুল হলে দুঃখিত)

চৈত্রিকা পর্ব ২৬