প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৪২

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৪২
তানজিলা খাতুন তানু

দাদাভাই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছে, হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্লিজ অতসী তুমি তাড়াতাড়ি আসো।
অতসীর হাত থেকে ফোন পড়ে গেল। কোনরকমে দৌড়ে বাড়ির ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। অতসী ড্রাইভ করতে পারে, লাইসেন্সও আছে।
অতসী আদৃতের হসপিটালে গিয়ে দেখল তখনো আদৃতের জ্ঞান ফেরেনি। মিতু করিডরে পাইচারি করছে। আদৃতের মা আর আরু কান্নাকাটি করছিলো, তাই ওরা বাড়িতেই আছে। মিতু একাই এসেছে, নিলয়কে ফোন করেছে ওহ কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।

– মিতু।
– তুমি চলে এসেছো।
– হ্যাঁ। ডক্টর দেখছে
– হ্যাঁ।
– কি বলল।
– রিপোর্ট করতে বলেছে।
– জ্ঞান ফিরেছে।
– না।
অতসী চিন্তাতে এদিক ওদিক করতে থাকল। মনটা চঞ্চল হয়ে উঠেছে, সুস্থ মানুষটার হঠাৎ করেই কি হয়ে গেল সেটাই বুঝতে পারছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– মিতু।
নিলয়ের গলা পেয়ে ওরা দুজনেই সেইদিকে তাকাল।
মিতু নিলয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে কেঁদে দিল।
– কেঁদো না মিতু কিছু হবে না। আদৃতদা ঠিক হয়ে যাবে।
অতসী মিতু আর নিলয়কে দেখে মুচকি হাসল। ভালোবাসা বুঝি এমনি মিতু এতক্ষন সবকিছু শক্ত হাতে সামলাচ্ছি কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না, কেঁদে দিলো।
এর মাঝেই একজন ডক্টর চলে আসলো, অতসী এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল।

– ডক্টর আদৃত কেমন আছে।
– ওনার সেন্স ফিরেছে।
– দেখা করতে পারি।
– হ্যাঁ।
ডক্টর চলে যেতে কথাটা মিতুকে বলল।
– অতসী তুমি যাও দাদাভাইয়ের কাছে যাও। তোমাকে দেখলে ওহ বেশি খুশি হবে।
– আচ্ছা।

অতসী ধীর পায়ে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখল আদৃতের নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে কি যেন গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। অতসী আদৃতের পাশের ঢুলে বসতেই আদৃত ধীর গলাতে বলল,
– তোমার দিদিভাই আমাকে ডাকছে অতসী।
অতসীর বুক কেঁপে উঠল। আদৃত হঠাৎ করেই এইরকম কথা কেন বলছে সেটা বুঝতে পারল না, ধমক দিয়ে বলল,

– কেউ সেন্সলেস হয়ে গেলেই কিছু হয় না। তাই উল্টোপাল্টা কথা বলা বন্ধ করুন।
আদৃত হাসল কিছুই বলল না। অতসীর সবকিছু বিরক্ত লাগছে।আদৃতের কথাটা ওর বুকে গিয়ে লেগেছে।
অতসী রাগ দেখিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। অতসী কে এইভাবে বের হয়ে যেতে গেলে মিতু বলল,

– কি হলো এইভাবে চলে আসলে যে।
– তোমার দাদাভাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
– মানে?
– যাও গিয়ে দেখা করে এসো।
মিতু আর নিলয় চলে যেতেই অতসী চেয়ারে বসে হাঁসফাঁস করতে থাকে। তখনি একজন নার্স এসে বলল,

– ডক্টর মিষ্টার আদৃতের বাড়ির লোকদের ডাকছে।
অতসী মিতু দের অপেক্ষা না করেই চলে গেল।
– মে আই কাম ইন।
– ইয়েস।
অতসী ডক্টরের চেম্বারে গিয়ে বসতেই ডক্টর বললেন,
– আপনি উনার কে হন।

অতসী কিছু বলতে পারল না। কি বলবে সেটাই বুঝতে পারল না। অতসী কে চুপ করে থাকতে দেখে ডক্টর ভ্রু কুঁচকে তাকাল। অতসী কিছু ভেবে বলল,
– আমি ওনার বন্ধু।
– ওহ।
– আপনি কি বলার জন্য ডেকেছিলেন।
– ডক্টর আমাকে বলতে পারেন,
– কিন্তু ওনার বাড়ির লোক হলে ভালো হতো
– আমি ওনার বাড়ির মতোই, আমাকে বলতে পারেন।
– ওকে। তবে ওনার‌ বাড়ির লোক হলে কিছু তথ্য দিতে পারত।

– মানে?
– আমার সন্দেহ হচ্ছে আদৃতের মাথাতে একটা সমস্যা হয়েছে। আর তার কারনেই ওহ সেন্সলেস হয়ে গেছে।
– সমস্যা মানে?
– সেটা এখনি বলতে পারছি না তবে একটা সন্দেহ তো হচ্ছেই।
– কি সন্দেহ।
– পরে বলবো, এখন আপনারা চাইলে আদৃত কে নিয়ে বাড়ি যেতে পারেন। পরশু এসে রির্পোট গুলো পরশুদিন এসে নিয়ে যাবেন।

– ওকে।
অতসী ধীর পায়ে মিতুর সামনে গিয়ে কথাগুলো বলল। মিতু খুব খুশি হলো যে আদৃত কে নিয়ে যেতে পারবে।
আদৃতকে বাড়িতে নিয়ে আসতে আরু জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
– বাবা তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে।
– এই তো মা আছি তো। কান্না করো না তুমি।
– আর ছেড়ে যাবে না তো।
আদৃত কিছু না বলে আরুর কপালে চুমু দিলো। অতসী বুঝল আদৃত বেশি কথা বাড়াতে চাইছে না,তাই পেছন থেকে বলল,
– আরু সোনা বাবাকে রেস্ট নিতে দাও।
– আচ্ছা।

দেখতে দেখতে ২দিন কেটে যায়। আজকে আদৃতের রিপোর্ট দেবার কথা, অতসীর বুক কাঁপছে ঠিক কি হবে কে জানে।
মিতুকে বলে দিয়েছে অতসী নিজেই রিপোর্ট আনবে তাই আর মিতু কিছু বলেনি। অতসী রির্পোট হাতে পাওয়া মাত্রই ডক্টরের কাছে ছুটে গিয়েছে। ডক্টর সবটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

– এইটা আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম। সরি আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ওনার হাতে সময় খুবই কম। উনি ঠিক যে কন্ডিশনে আছেন সেখান থেকে রিকোভার করা কখনোই সম্ভব নয় তবুও উপরওয়ালা কে ডাকুন দেখুন কি হয়।
অতসী পার্কে গিয়ে কান্নাতে ভেঙে পড়ল। ওহ ভাবতেই পারছে না সুস্থ সবল মানুষটার ভেতরে ভেতরে এত বড়ো একটা অসুখ দানা বেঁধে রয়েছে আর সেটা কেউই বুঝতে পারলো না।
অতসী বিধ্বংস হয়ে আদৃতের ঘরে গিয়ে আদৃতকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল। আদৃত সবটা বুঝে মুচকি হাসল, কোনোকিছুই ওর অজানা নয়।

– আর কত কাঁদবে অতু এখনো যে ম/রে যায়নি।
আদৃতের মুখে অতু ডাক আর ম/রে যাবার কথা শুনে অতসীর কান্না আরো দ্বিগুন হয়ে গেল।
– অনেক কেঁদেছ এইবার একটু চুপ করো প্লিজ।
– হুম।
অতসী শান্ত হয়ে বলল,
– তারমানে আপনি আগেই জানতেন সবকিছু।
– হুমম।
– তাহলে চিকিৎসা করান নি কেন?

– চিকিৎসা করার মতো কোনো জায়গা নেই যে তাই। আমাকে যে আমার রুহির কাছে ফিরতে হবে, ওহ যে একা আছে।
আদৃতের কথার ধরন দেখে অতসীর আবারো কান্না পেয়ে গেল। নিজের কান্না কোনোরকমে আটকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
কয়েকদিন আগেই আদৃতের প্রচন্ড মাথা যন্ত্রনা করে, যদিও এটা আগে থেকেই হতো কিন্তু আদৃত পাত্তা দেয়নি। বেশি পরিমানে হওয়াতে ডক্টরের কাছে যেতে উনি রিপোর্ট করান আর তখনি আদৃত জানতে পারে ওর ব্রেন টিউমার।

যেটা চিকিৎসা কিংবা অপারেশন করার মতো কোনো পজিশন নেই, মৃ’ত্যুর মুখ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে ওহ। তবুও কারোর কাছেই কিছু বলেনি সবটা লুকিয়ে রেখেছে নিজের মাঝে। কিন্তু এখন আর সেটা থাকল না।
অতসী বাড়ি ফিরে আবারো কাঁদতে লাগল প্রচন্ড কাঁদতে থাকল। বারবার ফিরিয়ে দেবার কারনটা আজকে অতসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। ওর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে মানুষটা আর কয়েকদিনের অতিথি মাত্র। অতসী আর কিছু ভাবতে পারছে না সবকিছু গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৪১

কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সেইদিকে খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙলো একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে আদৃত যেন অতসীর থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। অতসী আদৃত বলে চিৎকার করে করে উঠল। এসির মাঝেও মেয়েটা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে, মনের ভয়ট আরো তীব্রতর হয়ে উঠেছে। তবে কি আদৃতকে সত্যিই হারিয়ে ফেললো!

প্রয়োজনে প্রিয়জন শেষ পর্ব