প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৭

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৭
তানজিলা খাতুন তানু

কথাগুলো অতসীর আত্মসম্মানে আ’ঘাত করলো। অতসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল, রাগে গর্জে উঠে বলল…
– এই আপনারা শিক্ষার বড়াই করেন। একজনের সম্পর্কে কিছুই না জেনে এইভাবে তাকে অপবাদ দিয়ে দিচ্ছেন!
অতসীর কথা শুনে সবাই চুপ করে থাকলেও ভদ্রমহিলাটি চুপ করে থাকল না। তিনি বলেন উঠলেন…

– এই মেয়ে এত গলাবাজি করছো কেন? আমাদের মনে যেই প্রশ্নগুলো এসেছে তার উত্তর দিয়ে দাও তাহলে আর কেউ কিছু বলবে না।
অতসী কিছু বললো না চুপ করে থাকল। অতসীকে এইভাবে অপমানিত হতে দেখে নিলয় এগিয়ে আসতে গেলে ওর বাবা ওকে আটকে দিলো।
– কি হলো বাপি আটকে দিলে কেন?
– তুই যাবি না।
– কিন্তু বাপি।
– আজকে অতসী নিজেই সবকিছুর মোকাবিলা করবে। তুই চুপ করে দেখে যা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাবার কথায় যুক্তি দেখে নিলয় দাঁড়িয়ে গেল। হ্যাঁ ও নিজেও চাই, অতসী নিজে থেকে সবকিছু বলুক,অন্যায়ের প্রতিবাদ করুক। এখন সবকিছু দেখার পালা, ঠিক কি হয়।
অতসীকে চুপ করে থাকতে দেখে ভদ্রমহিলাটি আবারো বলে উঠল…
– কি হলো চুপ করে গেলে কেন?
– প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করি না। আপনাদের কোনো কাজ নেয় আমার পেছনে পড়লেন কেন?

অতসী বিরক্ত হয়ে কথাগুলো বললো। এতে সমস্যা কমার বদলে আরো বেড়ে গেলো। মানুষজন আরো আজেবাজে কথা বলতে লাগল। অতসী আর সহ্য করে উঠতে পারল না, চেঁচিয়ে উঠল…
– চুপ করুন আপনারা একটু। আচ্ছা আপনারা কী জানতে চাই বলুন।
– একজন লো ক্লাসের মেয়ে হয়েও তোমার কাছে এত দামী ড্রেস,ফোন কিভাবে?
– এইটুকুই!

অতসীর কথা বলার ধরন দেখে সকলেই কপাল কুঁচকে তাকাল, ওর কথার মানেই কেউ বুঝতে পারল না। শাহানা অতসীর ভাবগতি কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। ভদ্রমহিলাটি বললেন…
– হ্যাঁ এটাই বলো।
অতসী সবকিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনি ভীড়ের মাঝখান থেকে একজন বলে উঠল..
– বোন।
সকলেই চমকে উঠল। অতসী কিছু বলে উঠতে পারল না। ইতিমধ্যেই ওইখানে মিহান, মিহানের বাবা- মা। জিনিয়া, জিনিয়ার বাবা-মা সকলে চলে এসেছে। মিহান রুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল…

– আপনি কাকে বোন বলছেন?
রুদ্র সেইদিকে কর্নপাত না পেরে অতসীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। অতসীর ইচ্ছা করছে এখুনি পালিয়ে যেতে কিন্তু আর উপায় নেয়। রুদ্র এগিয়ে এসে অতসী কে জড়িয়ে ধরল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য সবকিছু থমকে গেল। সবাই রিয়াক্ট করতে ভুলে গেছে। কে কি বলবে বুঝতে উঠতে পারছে না। এতদিন পর রুদ্রের সংস্পর্শ পেয়ে অতসী আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। রুদ্রের চোখেও পানি গড়িয়ে পড়ছে।
সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না। নিলয় আর থেমে থাকল না, এগিয়ে এসে বলল..

– আরে এইবার থাম তোরা আর কত কাঁদবি।
নিলয়ের কথা শুনে রুদ্র অতসী কে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলল…
– পাগলি মেয়ে, কাঁদছিস কেন?
– দাদাভাই।
– হুমম।
সবকিছু নিরব দর্শকের মতো দেখলেও শাহানা আর নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারল না, বলে উঠল…
– কি হচ্ছেটা কি? কে কার বোন, কি হচ্ছে কেউ একটু বলবেন।
নিলয় মুচকি হেসে বলল..

– আমি বলছি।
নিলয় সত্যিটা বলতে গেলে অতসী হাত ধরে আটকে দিলো। নিলয় অতসীর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল…
– আর নয় অতসী। আজকে সকলের জানা উচিত তারা কার সম্পর্কে কি বলছিলো।
অতসী নিলয়কে আটকাতে পারল না। রুদ্রও অতসী কে চোখের ইশারায় ভরসা দিলো। অতসী কোনো উপায় না পেয়ে চুপ করে রইলো। নিলয় অতসী কে নিজের পাশে দাঁড় করিয়ে বলল…

– এই যে মেয়েটিকে আপনারা দেখতে পারছেন, এতক্ষন যার সম্পর্কে এত বাজে কথা বলছিলেন। যাকে চরিত্রহীন উপাধিটাও দিয়ে দিয়েছিলেন। আপনারা জানেন মেয়েটির আসল পরিচয়! না জেনেই এত কথা বলে দিলেন তার সম্পর্কে।
ভদ্রমহিলাটি বলে উঠল…
– এত ভনিতা না করে আসল কথাটা তো বলতে পারো।
– বলছি তো, এত তাড়া কেন?
নিলয় সকলের দিকে তাকিয়ে বলল…
– এই রির্সোটের মালিক কে আপনারা জানেন?

অনেকে চুপ করে থাকল, আবার কখনো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকল। মিহানের মা বলে উঠল..
– হ্যাঁ, জানব না কেন। আকরাম খাঁন এই রির্সোটের মালিক।
– আকরাম খাঁন। তাকে আমরা কমবেশি সবাই চিনি তাই তো! এই শহরে অনেক রির্সোট, হোটেল,কলেজ, হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটিতে তার শেয়ার আছে।
– হ্যাঁ। কিন্তু আপনি ওনার কথা বলছেন কেন?
– আরে ওনার বিষয়ে না বললে চলে।
– মানে?

– মানে এটাই অতসী আর কেউ নয় আকরাম খাঁনের মেয়ে।
কথাটা বজ্রাঘাতের মতো সকলের মাঝে পড়ল। সকলেই চমকে উঠলো।
– আপনি এইসব কি বলছেন! অতসী আকরাম খাঁনের মেয়ে মানে? (শাহানা)
– মেয়ে মানে মেয়ে আবার কি।
– একমিনিট অতসী যদি আকরাম খাঁনের মেয়ে হয় তাহলে ও সাধারণ মেয়ের মতো চলাফেরা করে কেন?
শাহানার প্রশ্নটা শুনে জিনিয়া বলে উঠল…
– উত্তরটা আমি দিচ্ছি।
জিনিয়ার কথা শুনে সকলে ওর দিকে তাকাল। জিনিয়া সকলের দিকে তাকিয়ে বলল…

– অতসী নিজের জীবনটা নিজের মতো চালাতে চেয়েছিল। নিজের রোজগারে চলতে চেয়েছিল তাই ফ্যামিলির থেকে আলাদা থাকত এবং নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিল। এখন আর এই বিষয়টা নিয়ে আর কেউ কিছু বলবেন না। নিজেদের মতো অনুষ্ঠানটা এনজয় করুন।
জিনিয়ার কথা শুনে সকলে নিজেদের কাজে চলে গেল। মিহান জিনিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল…
– তারমানে তুমি সবটা জানতে?
– হুমম।
মিহান আরো কিছু বলতে যাবে তখনি জিনিয়া ওর‌ সামনে থেকে সরে গিয়ে অতসীর সামনে দাঁড়িয়ে অতসীকে জড়িয়ে ধরলো।

– অতসী মন খারাপ করিস না। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আর কতদিনই বা নিজের পরিচয় আড়ালে রাখবি বল।
অতসী কিছু না বলে চুপ করে রইল। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থাতে ফিরে যায়। শাহানা থম মেরে বসে বিরবির করে বলল..
– অতসী এত বড়োলোকের মেয়ে হয়েও এইভাবে সাধারন বেশে থাকত কেন! শুধুই নিজের পরিচয় তৈরি নাকি এর পেছনে আরো অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে?
অতসী চুপ করে বসে আছে। রুদ্র ওর পাশে বসে বলল…

– বোন।
অতসী নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল, কিছু কথা বললো না।রুদ্র আবারো বলল..
– বোন এই বার কি আমাদের কাছে ফিরবি? নাকি এখনো ফিরবি না!
– আমি ওই বাড়িতে কিছুতেই ফিরবো না দাদাভাই। আমাকে মাফ করে দে।
– প্লিজ বোন ফিরে চল। তুই ছাড়া ওই বাড়ির কেউ ভালো নেয়।
– আমি কে?

– তুই কে মানে, তুই ওই বাড়ির মেয়ে।
– মেয়ে! (বিদ্রুপের হাসলো অতসী)
– বোন প্লিজ আমার সাথে ফিরে চল। তোকে দেখে সকলেই খুব খুশি হবে।
– দরকার নেয় কাউকে খুশি করার। আমি আমার মতো ভালোই আছি।
– সত্যিই কি ভালো আছি তুই?
অতসী কিছূ বললো না। কি আর বলবে, সত্যিই কি ওহ ভালো আছে? উত্তরটা অতসীর কাছে নেয়। তাই চুপ করে থাকল।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৬

– কিরে চুপ করে গেলি কেন?
– কিছু না। তুমি এইখানে কেন?
– দেখতে আসলাম, তবে ভাবতেই পারিনি এইখানে এসে তোর দেখা পেয়ে যাবো।
– আমার দূর্ভাগ্য সেটা। (আসতে করে)
– কি বললি।
– কিছু না।
রুদ্র অতসীর সাথে কথা বলতে লাগল। জিনিয়া দূর থেকে দাঁড়িয়ে বিয়ের আগের দিনের কথাতে ডুব মারলো।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৮