প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৮

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৮
তানজিলা খাতুন তানু

অতসী রিসোর্টের রুমে গিয়ে নিজের জীবনের পুরানো কথাগুলো মনে করতে লাগল।
ফ্ল্যাশব্যাক…
বাড়ির সকলের ছোট হওয়াতে সকলের আদরের ছিল অতসী। বলার আগেই সবকিছু পেয়ে যেত, অভাব কি জিনিস সেটা কখনোই বোঝেনি। অতসী সবথেকে বেশি আদরের ছিল রুহি আর রুদ্রের। ওরা অতসীকে নিজেদের থেকেও বেশি ভালোবাসত। রুদ্র রুহির থেকে ১বছরের বড়ো আর অতসী ওদের থেকে অনেকটাই ছোট ছিল।

-দিদিভাই তুই কবে বিয়ে করবি রে।
অতসীর কথা শুনে রুহির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। অতসী সেটা দেখে বলল…
– কি হলো দিদিভাই মুখটা এইরকম করে নিলি কেন?
– কিছু না। তুই পড়তে বস নাহলে আমি মাকে বলছি।
– না আমি যাচ্ছি।
অতসী মুখ গোমড়া করে চলে যায়। রুহির অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– বাবা যে আমাদের ভালোবাসা মেনে নেবে না, তাহলে আমি কি করব!
ছোট অতসী গোটা পরিবারটাকে মাতিয়ে রাখত, রুদ্রকে রাগিয়ে দিত, রুহির সাথে খেলা করত, দুষ্টুমি করত। তবে ওর বাবা আকরাম খানকে বড্ড ভয় করত। ওনার গম্ভীর স্বভাবের জন্য অতসী ওনার সাথে মিশত কম। ছোট থেকেই অতসী গম্ভীর স্বভাবের মানুষদের এড়িয়ে চলত। বাবার গম্ভীর স্বভাব নিয়ে অতসীর অনেক অভিযোগ ছিল, আর সব অভিযোগ রুহির সাথে শেয়ার করত।

– আচ্ছা দিদিভাই আমাদের বাবাটা এতটা গোমড়া মুখো কেন?
– কেন কি হয়েছে।
– কি আর হবে। দৌড়াতে গিয়ে ফুলদানিটা পড়ে যেতেই আমাকে এক ধমক দিলো। (ঠোঁট ফুলিয়ে অতসী কথাগুলো বলল)
অতসীর কান্ড দেখে রুহি ফিক করে হেসে দিয়ে অতসীকে জড়িয়ে ধরে বলল…

– বাবা নামক মানুষগুলো এইরকম হয়। একটু গম্ভীর তবে সন্তানদের নিজেদের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
– আমি বাবা আমার ছেলেমেয়েদের জন্য গোমড়ামুখো বাবা নেবো না।
অতসীর কথা আর কথা বলার ধরন দেখে রুহি চোখ বড়ো বড়ো তাকালো।
– বড্ড পেকে গেছিস তুই। আমি মাকে বলছি।
– আমি মাকে বলবো, দিদিভাই বিয়ের কথা বলছিলো।
– অতু তুই কিন্তু এইবার আমার হাতে মা/র খাবি।
– হি হি।

ছোট অতসী সবদিক থেকে উপযুক্ত ছিলো। পড়াশোনা, খেলাধুলা,দুষ্টুমি সবকিছুতেই ওর নাম সবার আগে থাকত। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো, রুহির জন্য বিয়ের কথা আসছে ভালো ভালো পরিবার থেকে। রুহি নিজের ভালোবাসার কথা আর লুকিয়ে রাখতে পারল না বলে দিলো। তখনি ঝামেলা শুরু হয়।
বিয়ের দিন রুহি পালিয়ে যায়। এতে আকরাম খাঁন প্রচন্ড পরিমানে রেগে যায়। মাকে কাঁদতে দেখে ছোট অতসী এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

– মা তুমি কাঁদছ কেন? আর দিদিভাই কোথায় মা।
অতসীর মা অতসী কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে। অতসী কিছু বুঝতে না পেরে সেও কাঁদতে থাকে। সেইদিন টা কেঁদেই কেঁদেই কেটে যায়।
পরেরদিন,

– আমি জানি তুমিই রুহিকে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করেছে।
আকরাম খানের গম্ভীর কন্ঠ শুনে অতসীর মা কেঁপে উঠলেন। নিজের স্বামীর রাগ সম্পর্কে উনি অবগত, রেগে গেলে ঠিক-ভুল কোনো কিছুর হিসাব থাকে না।
– কি হলো চুপ করে আছো কেন? উত্তরটা দাও।
– আসলে..
– খবরদার মিথ্যা বলবে না। আমার মিথ্যা একদম সহ্য হয় না। (ধমক দিয়ে)
স্বামীর ধমক খেয়ে অতসীর মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সত্যিটা স্বীকার করে নেয়। এতে আকরাম খাঁনের রাগটা আরো বেড়ে যায়।

– তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার কথা অমান্য করার।
রাগে জ্ঞানশূন্য হয়ে নিজের স্ত্রীয়ের গলা টিপে ধরলেন। অতসীর মায়ের প্রান যায় যায় অবস্থা, অতসী কেঁদে কেঁদে বাবার কাছে বারবার মাকে ছেড়ে দেবার অনুরোধ করতে লাগল।
– বাবা মাকে ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও না, মায়ের লাগছে।
আকরাম খান রাগে অন্ধ হয়ে গেছেন। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তার বিচার করতে ভুলে গেছেন। ছোট অতসী ওনার কাজে বাঁধা দিচ্ছিল বলে উনি অতসী কে ধাক্কা মারে, ছোট অতসীর কপাল ফেঁটে গিয়ে রক্ত পড়তে থাকে তবুও ওনার সেইদিকে খেয়াল নেয়। চেঁচামেচি, অতসীর কান্নার আওয়াজ শুনে রুদ্র এসে ওই দৃশ্য দেখে আকরাম খানকে অনেক কষ্টে সামলে নেয়।

– বাবা শান্ত হও। রাগে কি করছো তুমি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার।
– হ্যাঁ, মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখুনি ওই মেয়েটাকে আমার বাড়ি থেকে বের হতে বল। যে আমার সম্মান নিয়ে খেলা করে তার এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেয়।
অতসীর মা আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করতে থাকে। মানুষটাকে ভালো করেই চেনে,এককথার মানুষ যা বলবে তাই করবে। আর সেটা না হলে সবকিছু শেষ করে দিতে এক সেকেন্ডও ভাববে না।
বাবাকে শান্ত করে রুদ্রের চোখ পড়ে অতসী মেঝেতে শুয়ে আছে আর কপাল থেকে রক্ত পড়ছে।

– বোন।
রুদ্র দৌড়ে গিয়ে অতসী কে কোলে তুলে নেয়। অতসী কে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল, কপালে অনেকগুলো সেলাইও দিতে হয়েছিল। ঘটনাটা আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে গেলেও ছোট অতসীর মনে আঘাত থেকেই গেলো। বাবা নামক মানুষটির প্রতি বিশ্বাস,ভরসা সবকিছুই যেন এক নিমিষেই হারিয়ে যেতে লাগল।
রুদ্র আর ওর মা অতসীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো থেকে শুরু করে সবকিছুই করে। আকরাম খান একবারো যায়নি পর্যন্ত। একদিন পর অতসী কে নিয়ে বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকতে যাবে তখনি আকরাম খান বলে উঠল…

– খবরদার বাড়ির ভেতরে পা রাখবে না।
অতসীর মা চমকে উঠলো। রুদ্র ওর বাবাকে বলল..
– বাবা এটা কি বলছো। এখন প্লিজ ঝামেলা করো না বোন অসুস্থ।
– তুমি অতসীকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে আসো কিন্তু তোমার মা এই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না। এই বাড়ির দরজা ওর জন্য সারাজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

রুদ্র ওর বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো ফলাফল হলো না। অতসীর মা বুঝল, কোনো কথা বলে লাভ নেয় তাই তিনি চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। অতসীর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন…
– ভালো মেয়ের মতো থাকবে, একদম দুষ্টুমি করবে না। দাদাভাই আর বাবার কথা সব শুনে চলবে ঠিকাছে।
– মা আমি তোমাকে ছেড়ে ওই লোকটার কাছে কিছুতেই থাকব না। আমাকেও নিয়ে চলো।
– রুদ্র অতসী কে নিয়ে ভেতরে যাও।

– না। আমি কোথাও যাবো না। আর যদি যায় মাকেও আমার সাথে যেতে হবে।
– মা এইরকম করতে নেয়।‌ বাবার কথা শুনো যাও।
– না মা। ওই গম্ভীর মানুষটার কাছে আমি কিছুতেই থাকব না মা। মা প্লিজ আমাকে ওনার কাছে রেখে যাবে না, আমি ম/রে যাবো এইখানে থাকলে।
অতসী মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। অতসীর মাও কাঁদছে, রুদ্র কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এখন যদি রাগ দেখিয়ে মায়ের সাথে চলে যায় তাহলে ওর বাবা যে একা হয়ে যাবে। আর মাকে যদি যেতে দেয় সেটাতেও ওর কষ্ট হবে মাকে ছেড়ে থাকতে।

– রুদ্র অতসীকে নিয়ে ভেতরে যেতে কতবার বলবো।
– না আমি কোথাও যাবো না। আমি আমার মায়ের সাথে থাকব।
– অতসী এককথা আমার বারবার বলতে ভালো লাগে না।
অতসী ওর বাবার কথার উত্তর না দিয়ে মাকে বলল…
– মা চলো আমরা আর এইখানে থাকব না।

অতসীর মা ওনার স্বামীর দিকে তাকালেন। ওনার দৃষ্টি স্পস্ট বলে দিচ্ছে, অতসীকে যদি ওনি নিয়ে চলে যায় তাহলে ওনার ভাগ্যে অনেক কষ্ট আছে। উনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারলেন না।
অতসী ছোট হলেও প্রচন্ড পরিমানে জেদি ছিলো।
– মা এই বাড়িতে না থাকলে আমিও কিছুতেই থাকব না।
আকরাম খান মেয়ের জেদ দেখে রেগে গেলেন।
– ঠিক আছে থাকতে হবে না। এখুনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।
ছোট অতসী মায়ের হাত ধরে বেড়িয়ে গেল। যেখানে তার মায়ের স্থান নেয় সেই রাজপ্রাসাদে অতসীর থাকার প্রয়োজন নেয়।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৭

আগেই বলেছি আমার এক্সাম তাই নিয়মিত কিংবা বেশি পর্ব দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর আশা করি আর কয়েকপর্বের মধ্যে অতসীর অতীত নিয়ে সমস্ত কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে। যদি তারপরেও কারোর কোনো প্রশ্ন থাকে বলবেন আমি ক্লিয়ার করে দেবো।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৯