মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২
ফাবিয়াহ্ মমো

প্রচণ্ড বিষ্ময় নিয়ে দরজায় তাকালো সবাই! কে এই লোক? কেনো গোলাপী ড্রেসের খোঁজ করছে? কি চাচ্ছে সে? লোকটার দিকে আপাদমস্তক তাকালো মেহনূর। দুই চোখ ভারি কৌতুহল করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ততক্ষণে সুজলার বিষ্ময়ী মুখ আগন্তকের দিকে প্রথম প্রশ্নটা ছুঁড়লো,

– তোমাকে তো চিনলাম না। আগে পরিচয় বলো। কোথা থেকে এসেছো তুমি। কি চাচ্ছো এখানে?
আগন্তকের গেটআপ যথেষ্ট শালীন এবং স্মার্ট। গায়ে ইয়েলো রঙের পোলো শার্ট, প্যান্টটা মোটা জিন্সের। কবজিতে একঝাঁক বাদামী ব্রেসলেট পেঁচানো। ছেলেটা সুজলার দিকে তাকাতে গিয়ে হঠাৎ কাঙ্ক্ষিত জায়গায় দৃষ্টি পরলো। সুজলার পিছন থেকে ধীরপায়ে মেহনূর এসেছে, চোখের চাহনি সংযত করে অচেনা লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। সুজলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আবার প্রশ্ন করলো। কিছুটা ঝাঁজের সাথে ছুঁড়ে মারলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– এ্যাই ছেলে? শুনতে পাচ্ছো না? তুমি এখানে কেনো এসেছো? তোমার পরিচয় কি?
প্রশ্নের তীর্যকে চমকে উঠলো আগন্তুক। নিজের অপ্রস্তুত অবস্থা সামাল দিয়ে সুজলার দিকে তাকালো। চোখের ইশারায় সুজলার পেছনে থাকা ব্যক্তিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললো,

– আমি উনার খোঁজে এসেছি। ঠিক আপনার পেছনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন।
আগন্তকের ইশারা দেখে পিছনে তাকালেন সুজলা। যদিও ধারণা করেছিলেন, এই ছেলে মেহনূরের খোঁজেই এসেছে। তবুও মনকে শক্ত করার জন্য ব্যাপারটা আরেকটু খতিয়ে নিলেন। মেহনূরের দিকে তাকাতেই ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। সুজলা দৃষ্টি ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললেন,

– কি জন্যে খোঁজ করছো? নাকি তোমাকে কেউ পাঠিয়েছে? কে তুমি?
প্রশ্নের শঠতা দেখে ছেলেটার চেহারায় কালো ছাপ পরলো। এই প্রৌঢ় মহিলা কি অন্দরের খবর টের পাচ্ছে? নাকি মুক্ত বাতাসে তীর ছুঁড়েছে? কিছু বুঝতে না পারলেও নিজেকে সহজ করে বললো,
– জ্বী? আমি আপনার কথাটা বুঝতে পারিনি। আমাকে কেউ পাঠাবে মানে?

সুজলা তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। চোখের চাহনি, চেহারার ছাপ দেখে ছেলেটার আসল উদ্দেশ্য ধরতে চাচ্ছেন। কিন্তু, এটুকু বুঝতে পারছেন, ছেলেটা অতিমাত্রায় চালাক। চালাকদের চোখ শান্ত থাকে, মুখটা থাকে বোকাদের মতো। এমন একটা ভান ধরে, যেনো সময়ের হিসেবটাও তারা বুঝে না। সুজলা ও পথ মাড়লেন না। শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলেন,
– এ বাড়ির খোঁজ কিভাবে পেয়েছো? কে তোমাকে পথ চিনালো? আগে বলো, তুমি কে।

ছেলেটা সভ্য একটা হাসি দিয়ে সুজলার দিকে তাকালো। জবাবটা ততটাই সভ্য ভাবে বলার চেষ্টা করলো,
– আমি তানভীর। পাশের গ্রাম থেকে এসেছি। চেয়ারম্যান আবুল সৈকত চৌধুরীর বড় ভাগিনা। আপনার বাড়ির ছোট মেয়েটি আমার দুজন ভাই-ব্রাদারকে মে:রে এসেছে। ভাইটার অবস্থা খুবই খারাপ। তার মাথায় এখন সেলাই পরবে। অন্যজন যেটুকু সেন্সে ছিলো, আমি ওই মোতাবেক এখানে পৌঁছেছি।
সুজলা আচানক চট করে বললো,

– তোমাকে দেখে তো গাঁ-গণ্ঞ্জের ছেলে মনেহচ্ছে না। কথাবার্তাও বেশ শুদ্ধ ভাবে বলছো। আর সৈকত সাহেবের ভাতিজা আছে। ভাগিনা আছে বলে তো কোনোদিন শুনিনি।
জেরার মুখে পরলো তানভীর। এই মহিলা প্রচুর চতুর। চোখ-কান ঠিক বিড়ালের মতো পরিস্কার। বাড়ি থেকে না বেরুলেও এই মহিলা যথেষ্ট খোঁজখবর রাখে। তানভীর নিজেকে নিয়ে নূন্যতম ভুল করলো না। খুবই চালাকির সাথে এগুলো,

– আমি এখানকার ছেলে নই। শহরে থাকি। কিছুদিনের জন্য মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। আমার মামাতো ভাইয়ের অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে আসতে হলো। ইনি কি আপনারই মেয়ে?
তর্জনী তুলে মেহনূরের দিকে তাক করলো তানভীর। তর্জনীর দিকে একপলক তাকালেন সুজলা, ইশারাটা বুঝতে পেরে সোজাসুজি বললেন,

– হ্যাঁ, আমারই মেয়ে। তুমি সম্ভবত নালিশ নিয়ে এসেছো। নাহলে সৈকত সাহেবের মেহমান আমার বাড়িতে পা মাড়াতো না।
তানভীর মনে-মনে হাসলো। চালটা খাপে খাপ জায়গা মতো পরেছে! চাপা হাসিটা বাইরে থেকে বুঝতে দিলো না সে। সপ্রতিভ ভঙ্গিতে বলে উঠলো,

– কথাটা ভুল বলেননি। এমন অস:ভ্য কারখানায় নালিশ ছাড়া আসা যায় না। আপনার মেয়ে যে এতো অস:ভ্য, সেটা চেহারা দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে? গ্রামের মেয়েরা যে এতো উগ্র হয়, আগে জানতাম না। এবার প্রমাণ পেলাম। আগামীকাল সকাল দশটায় আপনি, আর আপনার অসভ্য মেয়ে-সহ বাকি দুজনকে নিয়ে আসবেন। ঠিক দশটায়! দেরি যেনো নাহয়। সামান্য টিজে যদি —
কথার মাঝখানে দাঁড়ি বসালো মেহনূর। নিজের কথাটা শক্ত গলায় পেশ করলো,

– ভুল! টিজট করতে গিয়ে টাচ করেছে।
কথাটা মুখের উপর ঠাস করে লাগলো। তানভীর কিন্ঞ্চিত বিব্রত হয়ে বললো,
– সরি, দুঃখিত। আপনি ওদের যাই করেছেন, তাতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আগামীকাল মামার কাছে হাজির হবেন, এটাই জানাতে আসলাম।
মেহনূর কিছু বলার জন্য ঠোঁট খুলবে, তখনই সুজলা স্পষ্ট ভাষায় বললেন,

– তোমার মামার চেয়ে তোমার উদ্যোগটাই বেশি দেখছি। আগামীকাল আমি এমনেও যাবো, ওমনেও যাবো। একটা কথা ভালোভাবে মাথায় রাখবে, একহাতে কখনো তালি বাজে না। আজ যেতে পারো।
তানভীর কথা বাড়ালো না। শান্ত মুখে একবার মেহনূরের দিকে তাকালো, এরপর তাকালো বাড়ির রান্নাঘরের দিকে।

সেখানে নতমুখে সাবা ও সুরাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড ক্ষীপ্ত ভঙ্গিতে চোখ সরালো তানভীর। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। আগন্তকের গমন দেখে সুজলা কাউকে কিছু বলতে গেলেন না। নিজের মতো অন্য কাজে চলে গেলে বাকিরাও যার-যার মতো সটকে পরলো। শুধু আঙিনায় রইলো মেহনূর। সে চুপচাপ চৌকির কাছে ফিরে গেলো। অলস ভঙ্গিতে বসে পরতেই হঠাৎ দরজার বাইরে দৃষ্টি পরলো। সাথে-সাথে কপালে ভাঁজ ফেলে ভ্রুঁ কুঁচকালো মেহনূর! উঠোনের শেষ মাথায় গেটের কাছে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কেবল মাথাটা পিছু ঘুরিয়ে মেহনূরের দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে অব্যক্ত ক্ষোভ, প্রচণ্ড ক্রোধ, অসম্ভব জেদ যেনো ঠিকরে-ঠিকরে বেরুচ্ছে। সরাসরি দৃষ্টি বিনিময় হতেই ছেলেটা আচমকা মাথা ঘুরিয়ে ফেললো। একদম গটগট ভঙ্গিতে গেট পেরিয়ে চলে গেলো।

জীবনের সবটুকু হাসি-আনন্দ যেনো ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। যেখানেই চোখ পরে, সেখানেই শূন্য-শূন্য লাগে। নিজেকে বদলে ফেলাটা সহজ কর্ম ছিলো না। পুরোনো রীতিনীতি পালটে পরিবর্তন আনাটা মুখের কথা না। তবুও মেহনূর পেরেছে। দুটো বছরের ভেতর সেইসব গুণগুলো মার্জিত করেছে, যেটার জন্য একসময় ভুগতে হয়েছিলো। আজ শাড়ি পরা হয় না। যেই শাড়ির সাথে শৈশব থেকে উঠা-বসা ছিলো, সেই বেশভূষা বদলে ফেলেছে সে। এখন শাড়ি দেখলেই পুরোনো দিনগুলো মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই ছোট্ট চিরকুটের কথা। যেখানে ওই মানুষটা প্রতি মূহুর্তে ভালোবাসা মাখিয়ে লিখতো, সমস্ত আদর-স্নেহ-যত্ন এমনভাবে ফুটিয়ে ধরতো, তখন অবাধ্য মনের সবটুকু রাগ অজান্তেই পানি হয়ে যেতো।

অভিমানগুলো কিভাবে-কিভাবে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতো, ধারণা করা বড্ড মুশকিল। সেই পুরোনো কথাগুলো রিনরিন করে মাথায় বাজে। সেই চিরকুট, সেই কথা। ‘ আমার ভাগ্যবতী বউ, আমার চিরসঙ্গিনী। আমার মেহনূর আফরিনকে আঠারো শাড়ির ভালোবাসা। ‘ অদ্ভুত রেশে চোখ বন্ধ করলো মেহনূর। ডানহাতের মুঠোয় ছোট্ট চিরকুটটা মুচড়ে আছে। ছোট-ছোট সুখগুলো আজও মনে-প্রাণে ঠান্ডা স্পর্শ জাগায়। এই ছোট্ট চিরকুটের মধ্যে যেনো মাহতিমের স্পর্শটুকু লেগে আছে। কখনো-কখনো ঠোঁটে ছোঁয়ালে মনেহয় মাহতিম এসে যেনো ছুঁয়ে যাচ্ছে। কোমরে একহাত রেখে, পিঠে একহাত ফেলে বুকে মিশিয়ে নিচ্ছে।

নিরবে ছুঁয়ে দিচ্ছে লাবন্যময় কপালটা। যখন মনেহয় সব মিথ্যে, শুধুই কল্পনা। তখন ভারী দুঃখ লাগে। অব্যক্ত-অসহন কষ্ট হয়। চোখ দিয়ে পানি পরে, তবুও নিঃশব্দে-নিরবে। কেউ টের পায় না ভেতরে কতখানি দগ্ধ হচ্ছে। দুই বছর, চব্বিশ মাস, সাতশো চল্লিশ দিন চলছে। প্রতিটা ঘন্টা চলছে, প্রতি মিনিট যাচ্ছে, প্রতিটা সেকেন্ড ছুটছে। একবারও কেউ স্মরণ করেনি। কেউ ভুলেও স্মরণ করেনি। দুটো বছর কি সহজ ছিলো? সহজ ছিলো না।

মেহনূর প্রায়ই শুনতো, মানুষ মরে গেলে নাকি সবাই ধীরে-ধীরে ভুলে যায়। কেউ স্মরণ করে না। করলেও সেটা হুটহাট বা সাময়িক স্মরণ। মেহনূর কি ম:রে গেছে? বোধহয় ম:রেই গেছে। আজ অবধি, এই দুই বছর অবধি, কোনোপ্রকার খবর আসেনি। ওই অস:ভ্য, পা:ষাণ, নির্দ:য় মানুষটা কোনো ধরনের খোঁজ নেয়নি! কোলের ভেতর কাঁপুনি লাগতেই চোখ খুললো মেহনূর। মুঠোয় ধরা চিরকুটটা বিছানায় রেখে কোলে চোখ ফেললো। মাসখানেক আগে নতুন ফোনটা এসেছে। ফোনটা যে পাঠিয়েছিলো, বর্তমানে সে কল দিয়েছে। স্ক্রিনে বড়-বড় অক্ষরে লেখা, ‘ Ma ‘ .

মাগরিবের নামাজটা শেষ করলেন সুজলা। জায়নামাজটা দু’হাতে ভাঁজ করতে-করতে চিন্তা করছেন তিনি। মেহনূর যেই লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলেছে, সেটা ঠান্ডা করার উপায় পাচ্ছেন না। সৈকত চেয়ারম্যানটা খুবই বদমেজাজী। যদিও মেহনূরের দোষ এখানে খুবই সামান্য। কিন্তু একমাত্র ছেলের গায়ে হাত তোলার অপরাধে বীভৎস ভাবে অপদস্থ হতে হবে। আগামীকাল সমস্ত গ্রামবাসীর সামনে কটু কথা শোনালে কিচ্ছু করার থাকবে না।

লোকটা যেমন রাগী, তেমনি মানুষজন তাঁকে প্রচণ্ড ভয় পায়। ভাঁজ করা জায়নামাজটা বিছানার একপাশে রাখলেন তিনি। মাথা থেকে হিজাব খুলে সেটাও আলনায় গায়ে ছড়িয়ে দিলেন। আধ ভেজানো জানালাটা দুহাতে ঠেলে খুলে দিলেন। শোঁ শোঁ ধ্বনিতে শীতল হাওয়া ঢুকলো। আকাশে সন্ধ্যার শেষ ক্ষণ হিসেবে বেগুনি রঙটা লেগে আছে। একটু পরেই কালো আঁধারে সবকিছু ঢাকা পরবে। লম্বা-লম্বা সুপাড়ি গাছগুলো হাওয়ায় দুলছে। পাতার মর্মর ধ্বনিটা প্রকৃতির মাঝে মিলে গেছে। একাকী ঘরে চুপচাপ বসে থাকতেই দরজায় খটখট আওয়াজ হলো। সুজলা জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সাড়া দিলেন,

– ভেতরে আসো।
ক্যাচ করে কাঠের দ্বার খুলে গেলো। ভেতরে পা বাড়িয়ে শেফালি প্রবেশ করলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো, শান্ত সুজলা বিছানায় বসে আকাশ দেখছে। শেফালি দরজা চাপিয়ে বিছানার কাছে এসে বললো,
– ভাবী, কাইল কি যাওনই লাগবো? মেহনূররে রাখি যান। ওর বদলে আমি যাই।
সুজলা মুখ না ফিরিয়ে বললেন,

– ডেকেছে ওকে। সেখানে তুমি যাবে কেন? ওর পক্ষ নিয়ে চলাটা কমাও।
শেফালি মুখ নামিয়ে ফেললো। বিষণ্ণ ভঙ্গিতে আমতা-আমতা করে বললো,
– ওই চেয়ারম্যানে তো ভালা না ভাবী। এক নাম্বার খাডাইশ, হা:লা গুন্ডা। অমুন ব্যাডার কাছে নিয়া যাইবার চাইতাছেন? ব্যাডার নজর যেই খারাপ! ছেড়ির —

সুজলা এবার মুখ ফেরালেন। কথা শেষ করতে পারলো না শেফালি। শেফালি নিজের দ্বিতীয় অপরাধটা বুঝতে পেরে আবার মুখ নিচু করলো।লাইটের আলোয় শেফালির ভীতু মুখটা পরিষ্কার দেখতে পেলেন সুজলা। নিচু সুরে শেফালি কিছু বলতে নেবে, তখনই সুজলা ম্লান কন্ঠে বলে উঠলেন,

– কি করবো? কিছু কি বাকি আছে? আমার তো মাথাই কাজ করছেনা। স্বামীর সংসার ফেলে দিনের-পর-দিন গ্রামে থাকাটা ভালো চোখে দেখছে না মেজো বউ। আমরা যতোই ধামাচাপা দিয়ে রাখি, লাভ নেই। মানুষ অতো মূর্খ না। মাহতিম ট্রেনিংয়ে গেছে, ওমুক দিনে আসবে, তমুক দিনে যাবে, এসব নিয়ে কথা বানাতে খারাপ লাগে। গ্রামের মানুষ যে এখনো ‘ ছিঃ ছিঃ ‘ করেনি, এটা ওর কপাল মেজো বউ। কিন্তু আগামীকাল হয়তো ঠিকই মানুষ ‘ ছিঃ ছিঃ ‘ করবে। আজকের ঘটনা টেনে ওর চরিত্র নিয়ে নাক ছিটকাবে। ও যদি আরেকটু সহ্য করে বাড়ি পযর্ন্ত আসতে পারতো, তাহলেই ব:দমাশগুলোকে পাকড়াও করে ধরতাম।ওই চেয়ারম্যানের সামনে যেতে হবে, ভাবতেই আমার ঘেন্না হচ্ছে! কিভাবে ওই লোকটার সামনে দুটো কথা চালাবো? যেই বিপদে পড়েছি, আল্লাহ্ যেনো ডায়ে-বায়ে বিপদ কাটিয়ে দিক। আর কিচ্ছু চাই না! আর এসব সহ্য হয় না!

টিক-টিক-টিক করে সময় যাচ্ছে। ঘন্টার কাঁটাটা ‘ নয় ‘ এবং মিনিটের কাঁটাটা ‘ পাঁচ ‘ সংখ্যায় থেমেছে। ঘড়িতে এখন নয়টা পাঁচ বাজে। রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ায় মৃদ্যু হাওয়া বইছে। ঠিক যেনো ভিজে-ভিজে হাওয়া। উঁচু দালানগুলো বেশ দাম্ভিকতার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। বুক ফুলিয়ে গর্বের মতো দম্ভ প্রদর্শন করছে। আয়তাকার জানালাটা বিশাল বড়। পুরো জানালায় দামী থাই গ্লাস লাগানো। দু’ধারে পাতলা পর্দা ঝুলছে। হাওয়ায় ফুলে-ফেঁপে পর্দাগুলো উড়ছে। রুমের ভেতর লাইট নেভানো।

তবুও রুমটা উজ্জ্বল। বাইরের আলোগুলো কুচকুচে আঁধারকে গ্রাস করে ফেলেছে। সিলিংয়ের আভিজাত্য ফ্যানটা ফুলস্পিডে ঘুরছে। রুমের ভেতরে স্ট্রং কফির ঘ্রাণটা বহুগুণে ছড়িয়ে আছে। সুস্থ মানুষের পক্ষে বেশিক্ষণ সেই ঘ্রাণ টানাটা সুখকর হবে না। বিছানায় সটান হয়ে লম্বা মানুষটা শুয়ে আছে। পায়ের উপর পা তুলে ডান পা-টা ঘড়ির টিক-টিক তালের সাথে নাড়াচ্ছে। প্রতিটা সেকেন্ডের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মস্তিষ্কে জমা হচ্ছে।

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১

‘ বিপ্ ‘ করে অদ্ভুত একটা শব্দ হলো। এক সেকেন্ডের জন্য আধো-অন্ধকারের রুমটা বিদ্যুৎপৃষ্ঠের মতো জ্বলে উঠলো। আন্দাজ স্বরূপ বাঁ হাতটা বাঁদিকে চালান দিতেই বৃদ্ধাঙ্গুলটা কাঁচের উপর ডাবল ট্যাপ করলো। সাথে-সাথে রুমটা আবার আলোকিত করে ভয়েস লোড হলো। তিন সেকেন্ডের ভয়েসটা পুরুষ কন্ঠে চলতে লাগলো,
– খবর ভালো না স্যার..

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩