মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৩

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৩
ফাবিয়াহ্ মমো

আর্তনাদে গোঙানি দিতেই মুখ চাপলো কেউ। মেহনূর অস্থিরভাবে নড়াচড়া করতেই শূন্যে তুলে ফেললো। মেহনূর শব্দ করতে পারছে না! গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে, শব্দ হচ্ছে না।
প্রচণ্ড ভয়ে হাত-পা ছেড়ে দিলো সে। এক ভয়াবহ ত্রাসের কাছে নত হয়ে সংজ্ঞা হারালো। কিছু মনে নেই ওর। চোখে-মুখে পানির ছিঁটা খেয়ে জ্ঞান ফিরলো। আস্তে-আস্তে চোখ খুললো মেহনূর। চোখের সামনে তখনও অন্ধকার দেখছে। তার মুখের কাছে কেউ তো ঝুঁকে আছে। খুবই সুক্ষ্মভাবে একটা হাত ওর গাল ছুঁয়ে ধরলো। নরম গালটা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে শীতল কন্ঠে বললো,

– চেনো না?
কন্ঠ ও স্পর্শের কাছে দ্রবীভূত হলো মেহনূর। নিশ্চিন্তে শ্বাস ছাড়লো সে। বুকের ভেতর বন্দি ভয়টা সুড়সুড় করে বেরিয়ে যাচ্ছে। চোখজোড়া বন্ধ করে হালকা গলায় বললো,
– ওরকম বাঘের মতো ধরলে চিনতে পারবো? ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। এক মূহুর্তের জন্য ভেবেছিলাম, এই বুঝি চোর ঢুকেছে। তার উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার। আরেকটু হলে তো মরেই যেতাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মৃদ্যু হাসির শব্দ পেলো মেহনূর। মানুষটা বুঝি হাসলো। তার শরীর ঘেঁষে মানুষটা খুব কাছে বসলো। যতটা কাছে বসলে এই নিঝুম রাতে শিরশির অনুভূতিটা খেলতে পারে, ততটা নিকটে এসে বসেছে। মেহনূর তখনও চোখ খুলে তাকায়নি; নীরবে অনুভব করছে। দুটো হাত ওর গালজুড়ে ধরলো; মুখটা টেনে একটু-একটু করে চোখের পাতায় চুমু খেলো। আবেশীভূত কন্ঠে ধীর ভাবে বললো,

– সকালে যা হয়েছে তা ভুলে যাও। কখনো ওরকম ভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল কোরো না। আমি যে সমস্ত কথা শুনতে পারি না, ওগুলো যদি তোমার মুখ থেকে শুনি, আমার যে কি অবস্থা হয় তুমি জানো না মেহনূর। দুটো দিন এক্সট্রা ছুটি নিয়েছি। তোমাকে নিয়ে দূরে যাবো। যদি তোমার আপত্তি না-থাকে, এখনই এই পোশাকে রওনা দেবো। কোয়ার্টারে ফিরবো না। যদি তোমার মনেহয় এখন যাবে না, পরে যাবে; তাহলে গাড়ি থেকে নেমে যাবো। কি করবে জানাও? যা করার দ্রুত বলো।

মেহনূর এতোক্ষনে বুঝলো সে গাড়িতে আছে। চারপাশটা এতো অন্ধকার করেছে যে, মেহনূর বুঝতেই পারেনি কোথায় আছে। তবে, কাজটা ইচ্ছাকৃত। কেন করেছে এটুকু সে জানে। গাল থেকে হাত সরিয়েছে মাহতিম। উত্তরের জন্য নিকষ আঁধারে অপেক্ষা করছে। মেহনূর উশখুশ ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁট কামড়ালো। একটু একাকী সময় কাটানোর ইচ্ছা তারও আছে। তার জাগ্রত মনটা স্নের্হাদ্রের চাদরে লুকোতে চাইছে। খুনশুটি আবেগটা ফুলের মতো দুহাতে কুড়িয়ে কাউকে দিতে চাচ্ছে। এই সুপ্ত অনুভূতির কথাগুলো মুখ ফুটে কিভাবে বলবে? তার যে এই ব্যাপারগুরো বলতে কুণ্ঠা লাগছে। দূরে যাওয়ার ইচ্ছাটা কিভাবে প্রকাশ করবে মেহনূর? উনি কি একটু মনসংযোগ দিয়ে বুঝতে পারেন না? টেলিপ্যাথি সিস্টেমে মনের সংকেত ধরতে জানেন না? মাহতিম অধৈর্য হয়ে শেষবারের মতোন বললো,

– তুমি কি যাবে নাকি যাবে না?
মেহনূর আর কিছুই পরোয়া করলো না। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার সাথে সামনে বসা মানুষটিকে হুড়মুড়িয়ে জাপটে ধরলো। মানুষটার কাধে ইতস্তত মুখটা লুকিয়ে ফেললো। লজ্জালু কন্ঠে ক্ষীণভাবে বললো,
– যাবো,
প্রলম্বিত শ্বাসে বাঁকা হাসলো মাহতিম। তার চোখের কোটরে পরিতৃপ্তির হাসি। সে বাঁহাতে মেহনূরকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো, অন্যহাতে জানালার কাঁচটা কিন্ঞ্চিত নামালো। কানে থাকা ব্লুটুথে ডিভাইসে ক্লিক করে বললো,
– আয় এখন, ব্যাগটা তুলে দে। সব রেডি।

ভাইয়ের আদেশ পেয়ে দরজা খুললো নীতি। নীতির দু’কানে সাদা এয়ারপড গোঁজা। হাতে একটা ট্রাভেল ব্যাগ। প্রচণ্ড ঘুমের চোটে হাই তুলতে-তুলতে বললো,
– ভাবীর কিছু-মিছু মিস গেলে তোমার শার্ট-প্যান্ট ধার দিও।
মাহতিম কপাল কুঁচকে বললো,
– কিছুমিছু মানে? চড় খাবি! একেবারে কঠিন চড় লাগাবো। ওর জিনিস মিস যাবে কেন? তোকে টাইম দেইনি? গুণে-গুণে পাঁচটা মিনিট দিয়েছি।

নীতি আবারও হাই তুললো। ঠোঁটে হাত চাপা দিয়ে ঘুম-ঘুম কন্ঠে বললো,
– যেই পাঁচ মিনিট ভিক্ষা দিয়েছো, সেটা তো ব্যাগের চেইন খুলতে-খুলতেই ফক্কা। তাড়াহুড়ো করে যেটুকু পেরেছি, সেটুকুই তুলে দিলাম।
গাড়ির বনেট খুলে ব্যাগটা তুলে দিলো নীতি। ফোনের ওপাশ থেকে বেজায় রাগ ঝাড়ছে মাহতিম। তার প্রতিটি কথা শুনতে-শুনতে মুচকি হেসে দিলো। বনেটটা লাগিয়ে ফিরে যেতে-যেতে বললো,

– যদিও তোমার উপর বিশ্বাস আছে, তবুও নিজের দিকে খেয়াল রেখো। দয়াকরে সুস্থ ভাবে যেও। তোমার জিনিস সবই গুছিয়ে দিয়েছি। শুধু একটু মিথ্যা বললাম। ঢাকায় পৌঁছে আমাকে ফোন দিও ভাইয়া। তুমি কিন্তু আগের মতো ঠাস-ঠাস আচরণ কোরো না। এখন তুমি আর একা নও। সবার ছোটজনকে হারিয়েছি। এখন বড়জনকে হারাতে পারবো না। তোমাকে যেভাবে বিদায় দিচ্ছি, সেভাবেই যেন ফিরে এসো।
মাহতিম কিছুক্ষণ থম মেরে রইলো। কথাগুলো স্বাভাবিক ঠেকলো না। এ যেনো মেহনূরের কথা। ঠিক ওরই মতো আভাস। একই চিন্তায় দুটো মানুষ অদ্ভুত কথা বললো। মেহনূর নাহয় লগ্ন থেকে ভীরু। কিন্তু, নীতি তো ভীরু ছিলো না।

জায়গাটা শহুরে ঝন্ঞ্জাট থেকে দূরে। বেশ নিরিবিলি জায়গা, যেন মানুষই থাকে না। সত্যিকার অর্থে জায়গাটা বিদেশীদের জন্য। যারা গণমান্য ব্যক্তি এবং বিভিন্ন জায়গায় ট্যুরিস্ট হিসেবে ঘুরাফেরা করে। চর্তুদিকে লম্বা-লম্বা গাছগুলো সারি বেঁধে আছে। মধ্যখানে সবুজ ঘাসের ভূমি। নান্দনিক বাঙলোটা রূপকথার মতো সুন্দর। বাইরে থেকে দেখলে মনেহয় নিউনির্য়কের মতো বাড়ি। দিনের নীলাভ আকাশটা যেন অভিমান করে আছে।

তার বুকে বিষণ্ণতার মেঘ জমেছে। সূর্যকে ঢেকেঢুকে গম্ভীরভাবে লুকিয়ে রেখেছে। এখন সকাল নয়টা হলেও সন্ধ্যার মতো লাগছে। সারারাত জার্নি করে দুজনই ক্লান্ত ছিলো। ঘুমে ঢুলু চোখজোড়া বন্ধ করে ঘুমে তলিয়ে যায়। সারারাত জুড়ে ইলশেগুঁড়ির বৃষ্টি হয়। এখন অবশ্য শীতের মতো লাগছে। খুব ঠান্ডা-ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। গায়ে একটা পাতলা কাঁথা মুড়ে নিয়েছে। বাতাসের জন্য কাঁথাটা আরেকটু শক্ত করে নিলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আক্ষেপের সাথে হাপিত্যেশ করলো। এই বৃষ্টি কি পিছু ছাড়বে না? যখনই একটু বাইরে আসে, তখনই ঝড়বৃষ্টি হাজির। হঠাৎ নম্রতার সাথে প্রশ্ন করলো মেহনূর,

– চা খাবেন?
আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে বাঁয়ে তাকালো মাহতিম। পাশেই এক কাপ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহনূর। গরমাগরম কাপটা দেখে মনটা চনমন করে উঠলো। মেহনূরকে পাশে বসতে বলে কাঁথা থেকে হাত বের করলো। গরম ধোঁয়া উঠা কাপটা মুঠোয় নিলো মাহতিম, দু’ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে ছোট্ট চুমুক দিলো। এক অদ্ভুত তৃপ্তিতে শরীর-মন প্রফুল্ল হয়ে যাচ্ছে। সেটাই মেহনূর শান্তচোখে চুপচাপ দেখছে।

পড়নে কমলা রঙের শাড়ি, পাড়টা টকটকে লাল। সেই পাড়টার সাথে মিশেল করে ব্লাউজটাও লাল। সুতির শাড়িটা একদম শীত নিবারণ করছে না। সুড়সুড় করে এক পশলা হাওয়া দেহের ভাঁজে-ভাঁজে লাগছে। আঁচলটা টেনে গা ঢাকলো মেহনূর। চা খেতে-খেতে সবই লক্ষ করছে মাহতিম। শেষ চুমুকটা ইতি করে কাপটা দূরে রেখে দিলো। আয়েশ করে বসতেই গলাটা খাঁকাড়ি দিয়ে বললো,

– আঁচলটার সাথে হাডুডু না-খেলে এদিকে আসলেই পারো। তোমার জ্বরকাতুরে শীত যদি কমাতে পারি, এই শীত তো একেবারে নাদান বাচ্চা। কাছে এসো মেহনূর। গায়ে বুলিয়ে দেই।

চোখ নামিয়ে ফেললো মেহনূর। ঠোঁটের-উপর-ঠোঁট চেপে টেনে রাখা আঁচলটা ছেড়ে দিলো। ফস করে আঁচলটা পিঠ থেকে সরে গেলো। দৃশ্যটা দেখে মিটিমিটি হাসছে মাহতিম। সে কাঁথা ধরা হাতদুটো দু’দিকে মেলে দিলো। ধীরগতিতে মেহনূর কাছে এসে চোখ বন্ধ করতেই একজোড়া হাত তাকে সজোড়ে টান মারলো। কাঁথা দিয়ে মেহনূরকে সযতনে ঢেকে দিলো। মাহতিমের উষ্ণসূচক কারাগারে শুধু মেহনূর আবদ্ধ।

সেখানে আর কেউ নেই। কারাগারটা খুব শূন্য, খুব শান্ত, খুব বেশিই আপন। এখানে একটুও শীত নেই। মনটা খুব হালকা হয়ে যাচ্ছে, যেন জাগতিক কোনো চিন্তা নেই। উঠা-নামা করা বুকটায় গাল রাখলো মেহনূর। ধুকপুক-ধুকপুক করা মাংশল যন্ত্রটা খুব কাঁপছে। জায়গাটা একটু ছোঁয়ার জন্য বিহ্বল হলো সে। ডান হাত উঠিয়ে বুকের বাঁ-পাশটা স্পর্শ করলো মেহনূর। তৎক্ষণাৎ ছোট্ট-ক্ষুদ্র কারাগারটা সংকুচিত হয়ে গেলো। দমটা সাথে-সাথে আঁটকে এলো ওর। মাহতিমের হাতদুটো বুঝি পরশ পেয়ে গুটিয়ে গেলো। মেহনূর দম আঁটকে কাশতে-কাশতে বললো,

– এভাবে ধরলে তো মরে যাবো।
হাতদুটো স্বাভাবিক করলো মাহতিম। কন্ঠ করে নিচু করে বললো,
– তোমাকে তো এভাবেই মে/রে ফেলবো। তোমাকে ক্ষণেক্ষণে মা/রার জন্য এনেছি মেহনূর আফরিন। কাল তো মালিবাগের জন্য রওনাই দিবো। আমার কাছে শুধু আজকের সময়টুকু আছে। মহিমপুর থেকে আনার পর একটা দিনও আলাদা থাকিনি। এখন যে কতদিনের জন্য যাচ্ছি, তাও বলে যেতে পারবো না। কোয়ার্টারের রাতটুকু আমার জন্য ছিলো অদ্ভুত সময়। তুমি ছিলে জ্বরে বেহুঁশ। তোমাকে পরিচর্যা করতে গিয়ে আমি বেসামাল ছিলাম।

তিনটে বছরে যতবার তোমাকে পুরোপুরি পাওয়ার সুযোগ এসেছে, আমি আগাইনি। আমাদের সন্ধিটুকু হুঁশে-জ্ঞানে পাওয়ার জন্য বারবার সূর্বণ সুযোগগুলোকে ফিরিয়ে দিয়েছি। তুমিতো আমার বাড়ির সবচেয়ে দামী সম্পদ। তোমাকে আমার ছায়ায় আগলে রেখে সতের থেকে বিশ করলাম। মেহনূর তোমাকে কাঁদিয়েছি, তোমাকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছি, কিন্তু তোমার প্রতি কখনো ভালোবাসা কমিয়েছি? ভালোবাসতে কার্পণ্য করেছি? তোমার প্রতি আমার আফসোস নেই। আমি কোনোদিন ভাবিনি তুমি আমার স্টান্ডার্ডের না, তুমি শহুরে মেয়ে না, তুমি আমার সঙ্গে তাল মিলাতে পারবে না।

তোমার সঙ্গে শুধু একটাই তফাত, যেই বয়সে আমি মারা যাবো, সেই বয়সে তুমি শক্তসর্মথ্য থাকবে। তোমাকে দেখে রাখার জন্য আমি থাকবো না। তুমি বিশ্বাস করো মেহনূর, তোমার-আমার মধ্যে শুধু বয়সের সংখ্যাটাই বেশি; আর কোনো দিক দিয়ে আমি কমতি রাখিনি। তুমিও কি মায়ের মতো ভাবো? তুমিও কি মনে করো আমি ভুল সিদ্ধান্ত নেই?

মেহনূর আশ্চর্য হয়ে গেলো। প্রচণ্ড উৎকন্ঠার সাথে তাকালো। এসব ত্যক্ত কথা মাথায় ঢুকালো কে? অন্যের কথা তো উনি কোনোদিন কানে নেন না। এই বয়সের কথাটা গাঢ় করে উঠলো কেন? নিশ্চয়ই কেউ তুলেছে! যেই ব্যক্তি কথাটা বলেছে, তার প্রতি চরম ক্ষুদ্ধ হলো। সামনে পেলে দু-চারটা কঠিন কথা শোনাতো। মেহনূর ক্ষিপ্ত মেজাজটা শান্ত করে জোরে শ্বাস ছাড়লো। মাহতিমের ডানহাতটা টেনে নিজের গালে চেপে বললো,

– ‘ মাহতিম ‘ অর্থ জানেন তো? নিশ্চিত, বাধ্যতামূলক, অবধারিত। আপনি আপনার নামের মতোই অটল। আপনার বাবা ভুল নামকরণ করেননি। আজ তো আমি এতিম। সম্ভবত এই এতিমের কপালে একজন আনসারী লেখা ছিলো। তাইতো, এতোকিছুর পরও আপনার হাত টেনে বসে আছি। আমি সবসময় আপনার উপর নির্ভর করেছি। সামনেও করবো। আপনি না-থাকলেও করবো। এটা শুধু আমার ব্যাপার। সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত। কোনো বাইরের মানুষ এ নিয়ে কথা তুললে আমি ছেড়ে দিবো না। আমি সজ্ঞানে আপনার বয়স নিয়ে চিন্তা করিনি।

আমার পরিবার আমাকে ছোট থেকে শিখিয়েছে, মেয়েদের একদিন পরের বাড়ি যেতে হবে। স্বামীর হাত ধরে সংসার করতে হবে। এটা কোনোদিন শিখায়নি স্বামীর বয়স তমুক হতে হবে; সংসারে ঝগড়া করলে বিচ্ছেদ হওয়া লাগবে। একসময় বোকার মতো যেসব কর্মকাণ্ড করেছি, তার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আপনিও আমাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমি কারো মতো ভাবতে চাই না। আমি সেভাবেই ভাবতে চাই, যেভাবে ভাবলে আপনার প্রসঙ্গটা ঠিকঠাক বুঝতে পারবো। আপনিও এসব নিয়ে কোনোদিন ভাববেন না। আপনি যখন-যেভাবে বলবেন, আমি প্রস্তুত। আপনার উপর বিশ্বাসের ঝুলিটা আগেই ছেড়ে দিয়েছি। শুধু অনুরোধ একটা জিনিসের জন্য, কখনো নিজের স্বকীয়তা হারাবেন না। সেটা মানুষের জন্য হোক, বা কাজের জন্য।

শ্রোতার মতো শুনতে-শুনতে মতিভ্রষ্ট হলো। চমকে গেলো মাহতিম। তার পকেটটা বিপ্-বিপ্ করে কাঁপছে। মেহনূরও সেটা টের পেয়ে সরে গেলো। মাহতিম পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই মনে-মনে বললো, ‘ আমার রোমান্টিক মোমেন্টটা খেয়ে দিলি হা;রা:মজা;দা। কত সুন্দর করে বউয়ের কথা শুনছিলাম। এখন যদি উলটাপালটা নিউজ শুনি, পুরো মুডটাই নষ্ট! ‘ বিরক্ত মুখে ফোনটা হাতে নিতেই স্থির হলো। কলার আইডিতে ‘প্রাইভেট ‘ লেখা। ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মেহনূরের দিকে তাকালো। ফোনটা বিপ্ করছে, কিন্তু ওর সামনে ধরছে না। ঠিক তখনই মেহনূর কাজের বাহানা দিয়ে কেটে পরলো। কলটা রিসিভ করলো মাহতিম।

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২২

– হ্যালো,
বিকট শব্দে চারধার কেঁপে উঠলো! সাংঘাতিক ভাবে ভিড়মি খেলো সে। কেউ গু:লি চালাচ্ছে! মাহতিম হয়তো তখনও জানতো না, তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। এখনো ফোনের ওপাশ থেকে কেউ চেঁচাচ্ছে, কেউ আপ্রাণভাবে জানিয়ে যাচ্ছে!কিন্তু, সেদিকে হুঁশ নেই মাহতিমের।

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৪