মায়াবতী পর্ব ৩৩

মায়াবতী পর্ব ৩৩
তানিশা সুলতানা

বাবার মুখের মা ডাকটা পৃথিবীর সব সুখ এনে দেয়। এই যে তন্নির মন খারাপ করছিলো অর্ণবের জন্য। খুব করে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাকে। আশা বেগমের ব্যবহারের কথা মনে পড়েও কষ্ট হচ্ছিলো। তখনই কল আসে তারেকের। তার “আমার মা কি করছে” কথাটাই মন ভালো করে দিয়েছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে। ভুলে গেছে সব কিছু। মত্ত হয়ে যায় বাবার সাথে কথা বলাতে।

ইতি বেগমও শুনছে। কই একবারও তো তামিমের কথা বললো না তারেক? ছেলেটাও তো তার। তাহলে কেনো ছেলেকে ভালোবাসে না? কেনো ছেলের খোঁজ নেয় না?
ইতি রাগ হয় তন্নির ওপর। তন্নির জন্যই বোধহয় তামিমকে দেখতে পারে না।
তামিম দৌড়ে যায় তন্নির কাছে। তারেক দুই ছেলেমেয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে থাকে।
এটা দেখে এবার ইতি বেগমের প্রাণ জুরায়। রাগ কমে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকাল সকাল তন্নি কলেজের জন্য বেরিয়েছে। অথৈকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে সে ডিরেক্ট কলেজে যাবে। ও যেনো চলে আসে।
তন্নি এক মনে হাঁটছে। তখনই তন্নির সামনে বাইক থামায় সাগর। সে এই দিকে এসেছিলো একটা কাজে।
তন্নি দাঁড়িয়ে যায়। তাকায় সাগরের দিকে। সাগর হেলমেট খুলে চুল ঠিক করতে থাকে। তন্নির হাসি পায়। যখন সাগর হেলমেট খুলে তখনই চুল ঠিক করে। বেপারটা নোটিশ করেছে তন্নি।
সাগর চুল ঠিক করা শেষ করে বলে

“একা যে?
তোমার অথৈ কই?
” ও ওর ভাইয়ের সাথে আসবে।
“আচ্ছা
আমি কলেজেই যাচ্ছি। চলো এক সাথে যাই।
” না না আমি একা যেতে পারবো।
“জানি তো পারবা। তবুও চলো না তন্নি প্লিজ।
” আমি যেতে পারবো ভাইয়া
“প্লিজ তন্নি

এবার আবার না বলার সাহস হয় না তন্নির। এভাবে বললে কখনো মুখের ওপর না করা যায়? সিনিয়র তো। অসম্মান করা হয়ে যাবে। কিন্তু অর্নব দেখলেও হাড্ডি গুড়ো গুড়ো করবে।
আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বাইকে বসে পড়ে তন্নি। অর্ণব যেনো না দেখে।
সাগর খুশি হয়। ” হোক না সে অন্য কারো তবুও একটুখানি তার সঙ্গ পেলে দোষ কি?
কলেজের মাঠে তন্নির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো অথৈ। অথৈয়ের আর একটা ফ্রেন্ড অথৈকে দেখে দাঁড়ায়। তার নাম রিয়া। সে তন্নি না আসার কারণ জানে।

তখনই সাগরের বাইক ঢোকে কলেজের গেইট দিয়ে।
অথৈয়ের হাসি মুখটা চুপসে যায়। সে মাথা নিচু করে ফেলে।
রিয়া বলে ওঠে
“সাগরের থেকে লিফট নেবে বলেই ও তোর সাথে আসে নি।
এক মুহুর্তের জন্য অথৈয়ের রিয়ার কথা সত্যি মনে হয়। কিন্তু পর মুহুর্তেই মনে হয় এমনটা কখনোই হতে পারে না।
অথৈ শক্ত গলায় রিয়াকে বলে

” আমার তন্নি এমন না। নিশ্চয় অন্য কোনো কারণ ছিলো। আমি আমার তন্নিকে ভালো করেই চিনি।
রিয়া চেয়েছিলো ওদের মধ্যে ঝামেলা পাকাতে। কিন্তু যখনই বুঝলো পারবে না তখন মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়।
সাগর অথৈয়ের সামনে বাইক থামায়। তন্নি নেমে অথৈয়ের কাছে আসে।
সাগর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত নারিয়ে বাই বলে চলে যায়।
তন্নি অথৈকে বলতে থাকে।

“অথৈ আমি কখনো তোর থেকে কিছু লুকাই নি। কিন্তু আজকে লুকাবো। প্লিজ পাল্টা প্রশ্ন করবি না।
অথৈ জড়িয়ে হালকা জড়িয়ে ধরে বলে।
” ঠিক আছে করবো না।
“যতদিন না তোর ভাই আমাকে সম্মান দিয়ে তোদের বাড়িতে নিবে ততদিন আমি তোমাদের বাড়িতে যাবো না।
তন্নির কথা শুনে অথৈ থমকে যায়। ছেড়ে দেয় তন্নির হাত। অসহায় চোখে তাকায় তন্নির দিকে। তন্নি চোখ নামিয়ে নেয়। অথৈ যে কষ্ট পাচ্ছে।
” আমি জানি খুব তাড়াতাড়ি তোর ভাই আমাকে নিয়ে যাবে।
বলেই তন্নি ক্লাসের দিকে হাঁটতে থাকে। অথৈও পেছন পেছন যায়।

অর্ণব আর বিয়ের বেপারটা লুকাবে না। তন্নি শোনে নি অর্ণবের কথা। ফের উঠেছে সাগরের বাইকে। খুব কি বাইক পছন্দ ওর? একটা বার তো অর্ণবকে বলতে পারতো। অর্ণব কিনতো বাইক। কিন্তু সেটা না করে বারবার সাগরের বাইকে উঠছে। কাঁধে হাত রেখে বসছে। এটা আর মেনে নেওয়ার মতো বিষয় না।
অর্ণব আজকে অফিসে জয়েন করবে। তাই সকাল সকাল ফর্মাল লুকে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো তন্নির মুখটা দেখে অফিসে যাবে বলে। কিন্তু কি দেখলো?
অর্ণব কালো সানগ্লাসটা খুলে ফেলে। গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সোজা হয়ে দাঁড়ায়। পকেট থেকে ফোন করে কল করে আনোয়ারকে।

আনোয়ার ইম্পর্টেন্ট মিটিং এ ছিলো। অর্ণবের কল পেয়ে মিটিং রেখে বাইরে এসে কল রিসিভ করে।
“পাপা আমাকে আজকেই বাইক কিনে দিবা।
আনোয়ার বলে
” এটা বলার জন্য কল করেছো? আমি মিটিং এ ছিলাম বাবা।
“তোমার মিটিং এর থেকে বাইক কেনা বেশি জরুরি। তোমার বউমা অন্য ছেলের বাইকে উঠছে। চজ ওবদি নিজে থেকে কখনো আমার হাত ধরলো না আর আজকে সাগরের কাঁধে হাত রেখে বসেছে।
পাপা দুই ঘন্টার মধ্যে বাইক কিনো। আজকে সারা রাত ওকে বাইকে বসিয়ে রাখবো আমি।
বলেই খট করে কল কেটে দেয় অর্ণব। আনোয়ার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে

” তন্নির কপাল পুরেছে”
কলেজ ছুটি না হওয়া ওবদি অর্ণব ওখানে একই ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। কলেজ ছুটি হতেই তন্নি আর অথৈ বেরিয়ে আসে। আর ওদের পেছনে সাগর। আবারও কি বাইকে উঠবে না কি তন্নি? পা ভেঙে ফেলবে এবার অর্ণব।
সে বড়বড় পা ফেলে তন্নির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অথৈ আর তন্নি অর্ণবকে দেখে বেশ অবাক হয়।
অথৈ জিজ্ঞেস করে ফেলে।

“ভাইয়া তুই এখানে?
অর্ণব জবাব দেয় না।শক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে তন্নির দিকে। তন্নি বুঝে গেছে সাহেব দেখে ফেলেছে তাকে সাগরের বাইকে।
তন্নি পাশ কেটে চলে যায়। অর্ণবের রাগ বেরে যায়। অথৈ দুজনকে দেখছে। কি হলো এদের?
অথৈ ও পেছন পেছন যায়। এবার অর্ণবও যায়।
রাস্তার এক পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তন্নি। অর্ণব ধমক দেওয়ার জন্য মুখ খুলতেই তন্নি বলে ওঠে

” গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে সবার যাতায়াতে অসুবিধা হতো।
আর সাগর ভাইয়ার বাইকে আমি ইচ্ছে করে উঠি নি। উনি অনেক করে বলেছে তাই উঠেছি।
ভয়ে ভয়ে বলে ফেলে তন্নি।
“আজকে আগে সাগরকেই দেখবো আমি। কি চায় এটাও জানতে হবে।
চলো আমার সাথে।

মায়াবতী পর্ব ৩২

তন্নির হাত ধরে হাঁটতে থাকে। অথৈও পেছন পেছন হাঁটছে। আজকে কি তাহলে তন্নি জেনে যাবে সাগরের কথা? ভাইয়া কি মারবে সাগরকে? সাগর যদি ত্যাড়া জবাব দেয়? সে যদি অধিকার দেখাতে চায়? ভিলেন গিরি শুরু করে দেয়?
চোখের সামনে সাগরকে মা*ই*র খেতে কি করে দেখবে অথৈ?

মায়াবতী পর্ব ৩৪