মি মাফিয়া পর্ব ৬২
সুমাইয়া সাবিহা
সময় টা ঠিক বিকেলের মধ্যে হবে সূর্যটা যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে তার তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় তখন ।
আয়নার সামনে আরিয়া চুপ করে বসে আছে ।দুজন পার্লারের মহিলা আরিয়া কে সাজিয়ে দিচ্ছে প্রায় শেষ পর্যায়ে এখন ।
হালকা পিংক কালারের লেহেঙা শরীরে জড়ানো আছে । হালকা কাজ করা বিয়েতে স্বাধারনত সবাই কিছুটা গর্জিয়াস এর মধ্যে ড্রেস পড়ে কিন্তু ড্রেস টা যে গর্জিয়াস এর ছিটেফোঁটাও নেই শুধু গলার কাছ টায় অল্প করে চোখ আকর্ষন করা কাজ রয়েছে আর উরনা টাতে ছোট ছোট কিছু পাথর বসানো আছে । মাথায় হিজাব বাধা ,দুহাত মুঠো ভর্তি ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে চুরি । তবে ড্রেস টা পছন্দ হলেও বিয়ের জন্য এটা মোটেও পছন্দ হয়নি তার কিন্তু এটাতে কোনো নাখোশতা প্রকাশ করেনি আরিয়া।
নিল রঙের সেই সামিরার পছন্দে ক্রয়কৃত লেহেঙাটা প্রেমার শরীরে । সাদেক মাত্র গোসল সেরে বের হয়েছে কাঁধের একপাশে টাওয়াল রাখা ।
ভেতর থেকেই কাপড় চেঞ্জ করে সেজে একেবারে কারন যাওয়ার সময় প্রেমা এখানেই ছিলো দেখেছে সে যদি বের হয়েও দেখে যে প্রামা তখনো ভেতরে আছে নিশ্চয়ই বিষয় টা কেমন দেখাবে ।
হলো ও সেটাই কিন্তু এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না সাদেক ,সেই দিন প্রথম এই ড্রেসেই এই মেয়ের উপর দৃষ্টি পরেছিলো মন কারা আজকেও আবারো ও সেই ড্রেস টাই কিন্তু আজ একটু বেশিই অন্য রকম লাগছে । গলায় কানে মাথায় সব খানে অলংকার আবৃত । উড়নার উপরে কোমরের পাথরের চিকন বেরী টা সুন্দর্য যেনো আরো আকর্ষণীয় করে কাছে ডাকছে ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদেক কে বের হতে দেখে প্রেমা একটু থতমত খেলো সে ভেবেছিলো সাদেক বের হওয়ার আগেই চলে যাবে রুম ছেড়ে ।হাত থেকে ছোট পাথরের ক্লিপ টা চট করে মাথায় গুঁজে নিয়ে বললো
__আপনি রেডি হয়ে নিন আমি আসছি ।
সাদেক প্রেমার দিকে তাকিয়ে আসতে আসতে বললো
__আ..আমার তেমন কোনো কাজ নেই তুমি চাইলে শেষ করতে পারো সমস্যা নেই ।
__শেষ আমার ।
আজ যেনো চাইলেও চোখ সরাতে পারছেনা প্রেমার উপর থেকে ।শরীর টা যেনো কারো ভারী হয়ে আসছে , মাত্রই তো গোসল করে আসলাম তবুও শরীর টা গরম হয়ে আসছে কেনো? সাদেকের দৃষ্টি তে ভিষন রকমের আসক্তির ঘোর প্রকাশ পাচ্ছে,চোখ জোড়া আগের থেকে কেমন যেনো নেশালো হয়ে গিয়েছে । চিবুকের নিচ বরাবর কন্ঠনালীর ভাসমান হাড় টা তে প্রেমার দৃষ্টি বার কয়েক ঢোঁক গিলেছে সাদেক আসতে আসতে।
কিছু দিন ধরেই লক্ষ্য করছিলো প্রেমার প্রতি সাদেকের হালকা আসক্তি ।বারবার কথা বলার চেষ্টা।দুর থেকে তাকে লক্ষ্য করা এসব কিছুই প্রেমার দৃষ্টি এড়াতে পারেনি । কিন্তু কোন মুখে তার এই মুখ নিয়ে তার ভেতরের অনুভূতি প্রকাশ করবে ? উনি যে খুব ভালো মনের মানুষ অথচ সে তো কতোটা নিচ ।বিয়ের আগে পরিবারের সম্মান নিয়ে খেলেছে সে যার দরুন আজও ঠিক ভাবে মুখ দেখাতে পারেনা । কিন্তু উনি তো সম্পুর্ন উদার মনের একজন মানুষ সব টা জেনেও সত্যিই কি মেনে নিয়েছে? নাকি শুধু মাত্র ফ্যামিলির জন্য চিন্তা করে সব টা ঠিক করতে চাচ্ছেন ?
কথা গুলো ভাবার মাঝেই আকস্মিক প্রেমার নিজ কোমরে কারো হাতের ছোঁয়া অনুভব করতেই চমকিয়ে উঠে প্রথমেই কোমরে দৃষ্টি দেয় কোমরের অল্প দৃশ্যমান অংশ টুকু তে সাদেক হাত আলতো ভাবে তাকে স্পর্শ করেছে ।
প্রেমা কাঁপছে শরীর থরথর করে কাঁপছে।সাদেকের দিকে তাকানোর সাহস টুকু পাচ্ছে না এই মুহূর্তে তাই এভাবেই চোখ বন্ধ করে নেয় । দুহাতে নিজের লেহেঙাতেই ঝাপটে ধরে আছে ।
সাদেক এই প্রথম বার কোনো মেয়ে জাতির শরীরে অনাচ্ছাকৃত ভাবে ছুঁয়েছে। না চাইতেও ঐ ফর্সা অংশটুকুতে হাত চলে গিয়েছে । শরীরের গরম তাপ প্রতি মুহুর্তে বেড়ে চলেছে ।
সেকেন্ড কয়েক পর নিজ অবস্থানের কথা মাথায় আসতেই চট করে হাত সরিয়ে নেয় ।কপালে হালকা ঘামের ছড়াছড়ি , কাঁধের টাওয়াল টা দিয়েই কপালের ঘাম মুছে নেয় ।
সাদেকের হাত সরাতেই প্রেমাও চোখ খুলে নেয় সঙ্গে সঙ্গে কি করবে এই মুহূর্তে সে ? বেড়িয়ে যাবে দৌড়ে? নাকি এখানেই থাকবে ? দুটানায় আছে ।চোখের পাপড়ি গুলো বারবার বন্ধ হচ্ছে আবার তাকাচ্ছে কোন দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে তার জানা নেই
লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে লাল হয়ে গিয়েছে পুরো প্রেমা ।
সাদেক এখনো ঐ মুখশ্রী থেকে চোখ সরাতে পারছেনা প্রতি টা জিনিস খুব নিখুঁত ভাবে পরখ করছে আজ ।প্রেমার অবস্থা দেখে নিজের অবস্থা যেনো ভুলে গিয়েছে সে , ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি জমে । কিন্তু প্রেমা কি প্রস্তুত এসবের জন্য? ও কি আমাকে মেনে নিতে পেরেছে ? কথাটা ভাবতেই আবার বলা শুরু করলো
__আ…আ’ম সরি ।আসলে আমি… কিভাবে …কি থেকে…ইয়ে মানে বলতে চাচ্ছি যে ,আমি ইচ্ছে করে এমন করতে চাইনি সত্যি কিন্তু জানিনা আমার আজ কাল কি হয়েছে বারবার যেনো কি হয়ে যায় বুঝতে পারিনা । প্রেমা দেখো সত্যি বলছি তুমি যতোদিন আমাকে হাসব্যান্ড হিসেবে না মানতে পারবে আমি ….
এটুকু বলতে প্রেমা দুহাত কচলাতে কচলাতে বললো
__আমি কখনো বলিনি আমি আপনাকে হাসব্যান্ড হিসেবে এক্সেপ্ট করিনি ।
কথাটা বলার সময় চোখ স্থির রাখতে পারলো না প্রেমা ।
সাদেক কিছু টা অবাক হয়ে বললো
__অর্থাৎ তুমি …
__হ্যা আমি বর্তমান নিয়ে চলতে চাই অতীত নিয়ে ভাবতে চাইনা কখনো তাছাড়া ওসব আমি দুঃস্বপ্ন হিসেবেই ভেবে নিয়েছি ।আমি সামনে এগুতে চাই আমি জানি আমি আপনার যোগ্যতা রাখি না তবুও বলছি আমি চাইনা আমার আপনার সম্পর্ক টা ভেঙে যাক।আমি জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে তবে আমি বর্তমানে আর কোনো ভুল করতে চাইনা ।পাশে চাই আপনাকে হয়তো আপনি ভাবছেন সমাজ কিংবা দুপরিবারের দিকে তাকিয়ে আমি এসব বলছি কিন্তু বিশ্বাস করুন বিষয় টা এমন নয় ,জানিনা আপনার মাঝে কি আছে আমি জানিনা সেকেন্ড টাইম কেউ কারো প্রতি মুগ্ধতা খুঁজে পায় কিনা কিন্তু আমি দ্বিতীয় বারের মতো আপনার প্রতি ….
এটুকু বলেই চুপসে যায় প্রেমা ।সব গুলো কথা বলার সময় কান চোখ বেয়ে পানি বেড়িয়েছে নিজেও জানেনা ।কথা গুলো একসাথে বলতে গিয়ে উত্তেজনায় কি বলে ফেলছে বুজতে পেরে হাঁসফাঁস শুরু করে দেয় । এতোক্ষণ চোখে চোখ রেখে কথা গুলো বলেছে কিন্তু এখন পারছে না আর তাই চোখ সরিয়ে নেয়।
সাদেক এতোক্ষণ প্রেমার কথা বলার ধরন গুলো দেখছিলো প্রতি টা কথার সময় একেক রকম লেগেছে । কথা গুলো যে মনে হলো সব টা অনুভূতি জুড়ে সাদেক কে বুঝাতে চাইলো কিছু যেটা বুঝতে সাদেকের সমস্যা হয়নি । কিন্তু এভাবে কান্না গলায় কেনো বললো কথা গুলো? এই মুহূর্তে যে প্রেমার চোখে জল সোভা পাচ্ছে না তাছাড়া এভাবে কখনো কাঁদতে দেখেনি প্রেমা কে যথেষ্ট ধারনা ছিলো প্রেমা একজন স্ট্রং পার্সোনালিটির মেয়ে কিন্তু এই মুহূর্তে সব ধারনা যেনো মিথ্যা প্রমানিত হলো ।
কথা গুলো ভাবা শেষ করেই দুসেকেন্ড সময় নিলো না প্রেমার অশ্রু মাখা গাল দুটো দুহাতে আলতো আকারে ধরে ভেজা গালেই পর পর দু’টো চুমু খেয়ে বললো
__হেয় ,এভাবে কাঁদছো কেনো ?
প্রেমা চমকিয়ে উঠে সাদেকের দিকে তাকায় হঠাৎ করেই কি হলো বুঝার চেষ্টা করলো । এটা সত্যিই ছিলো ?
প্রেমার এমন প্রশ্ন যুক্ত চাহনি দেখে সাদেক এবার কিছুটা ঝুঁকে ঠিক গলার নিচে প্রগাঢ় চুমু বসায় বেশ মিনিটের মতো তার সেই অনুভূতি যুক্ত চুমুটা ধরে রাখে সেখান টায় ।
প্রেমা চোখ বন্ধ করে সাদেকের পরিহিত ব্লু সিকোয়েন্স যুক্ত পাঞ্জাবির পেছনে একহাতে চেপে ধরে অন্য হাতে সাদেকের মাথার চুল গুলো আকড়ে ধরে নিজেকে সাদেকের একদম কাছে নিয়ে আসে । নিঃশ্বাস ঘন হয়ে যাচ্ছে প্রতিটা প্রহর জানান দিচ্ছে এটা আবেগপ্রবণ দুজন নব দাম্পত্য স্বামী স্ত্রীর কিছু রঙিন মূহুর্ত ।
আজ বিয়ের দিনেও আফরান বেরিয়ে গিয়েছে কাজের জন্য ।বাড়ির সব টা দায়িত্ব তানভীর কে সামলাতে হচ্ছে একা ।সবাইকে প্রোটেক্ট করার দায়িত্ব টা এই মুহূর্তে তানভীরের উপর বলা যায় কারন ইতালির একজন দক্ষ প্রতাপশালী বিজনেস ম্যান অথবা নেশনাল সেক্রেট মাফিয়াও বলা যায় আফরানের মতোই ক্যারেক্টার কিছু টা ,নাম অর্পন কার্তিক রায় ,সনাতনী ধর্ম পালন করে লোকটা । দেশে এসেছে শুধু মাত্র আফরান এর সব বিজনেস , পরিবার ধ্বংস করা উদ্দেশ্য। আফরান এর সাথে বিজনেস ডিল নিয়ে কয়েকবছর আগে ঝামেলা হয়েছিলো । সেখানে থেকেই শত্রুতা পিছু নিয়ে এই পর্যন্ত এসেছে একমাত্র উদ্দেশ্য আদৃত আফরান চৌধুরীর অস্তীত্ব ছিন্নভিন্ন করে তবেই সে ক্ষান্ত হবে ।
সবাই এই মুহূর্তে ঠিক আরিয়ার চারদিকে ঘিরে আছে ,সবার মুখে একটাই কথা ঐ ছেলে আজকের দিন টাতেও এমন হেঁয়ালি করছে কেনো ? অথচ আকাশে রাত নেমে তারার মেলা প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ঘন্টা খানিক হয়ে যাবে আরিয়া এভাবে বসে আছে ।
জাফর সাহেব আয়শ এই পর্যন্ত কয়েকহাজার কল দিয়েছে এমন কি তানভীর ও আজ অসহ্য হয়েছে আফরানের কাজে অথচ আফরান এর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না এখনো ।
সবার অগুছিত কথায় আরিয়া হাজার টা অভিযোগ একে দিয়েছে আফরানের উপর এই পর্যন্ত এতো গুলো কথা আর হজম করতে পারছেনা আরিয়া । কিভাবে এতো টা উদাসীন হতে পারলেন উনি সেটাও আজকের এই দিনে ? চোখের কোনে জল নামে আরিয়ার অথচ সে সবার সামনে কাঁদতে চাচ্ছে না তবুও যেনো মনের কথা গুলো শুনে নিয়ে চোখজোড়া নিজ গতিতে থাকছে না ।প্রবল বেগে নেমে আসছে অশ্রু ধারা ।লোকজনের গুঞ্জন কিছুতেই আর নিতে পারছেনা আরিয়া । হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়িয়ে গেলো সবার মাঝে ।
পাশ থেকে সামিরা আস্তে করে বললো কি হয়েছে ? একটু ধৈর্য ধর ভাইয়া এক্ষুনি চলে আসবে ।
জাফর সাহেব আরিয়া দিকে তাকিয়ে কিছু বলার মতো কথা পেলেন না ।
খলিল সাহেব জাফর কে বললো
__ভাইজান এসব কি হচ্ছে আমার মেয়েটাকে যদি ঐ ছেলে বিয়ে না করার ছিলো তবে কেনো গতকাল বিয়ের কথা টা নিজেই বলে ছিলো ।
__তুমি চিন্তা করো না আমি দেখছি ।কথাটা বলে খলিল সাহেব কে আস্বাস দিয়ে ফোন টা আবারো অন করে আফরানের নাম্বার টা ডায়াল করলো ।
আরিয়া জায়গা থেকে নেমে সবার মাঝ থেকেই হাটা শুরু করলো ।এতে যেনো আরো বেশি মহিলাদের আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো ।
একহাতে চোখের জল মুছে কারো কথায় কর্নপাত না করে চলে যেতে লাগলো আকস্মিক পেছন থেকে কেউ আরিয়ার বাম হাত টি কেউ ধরে উল্টো ঘুরিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে যেতে লাগলো ।
আরিয়া আহ শব্দ করে লোকটির দিকে তাকিয়ে যেনো আরো এক সমুদ্র অভিমানী গলায় বলতে লাগলো
____ছাড়ুন বলছি থাকবো না আমি আপনার সাথে।আমি বিয়ে করবো না । হাত ছাড়ুন আমার ।
আফরান কোনো কথা না বলে আরিয়া টেনে নিয়ে গিয়ে আগের জায়গায় বসিয়ে কাজী সাহেব কে বলতে লাগলো শুরু করুন ।
পুরো বাড়ি যেখানে এতোক্ষণ গুঞ্জনে ভরপুর ছিলো তেমনি এই মুহূর্তে ততটাই নিস্তব্ধ হয়ে আছে ।কখন আসলো এই ছেলে ? এসেই আবার শুরু করে দিয়েছে নিজের ক্যারেক্টার দেখানো ।যদিও কথা গুলো সবাই পেটের ভেতরেই রেখেছে মুখে বলার সাহস আছে নাকি কারো ?
আরিয়া আফরানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য অন্য হাতে আফরানের হাত সরাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো কিন্তু এতো জোড়ে ধরেছে যে দুই হাত দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না ছাড়ানো ।
__বললাম তো আমাকে ছেড়ে দিন ,আপনি আপনার কাজেই থাকুন লাগবেনা আমার এমন বিয়ে ।
আফরান আরিয়ার দিকে এখনো একবারও চোখ রাখেনি
আফরান কর্কশ কন্ঠে বললো
__আর একটা কথা বলবি তো এখানেই পুঁতে দিবো ।চুপ থাকতে বলেছি তোকে ।
___যা ইচ্ছে করুন কিন্তু আপনাকে আমি বিয়ে করবো না যেতে দিন আমায় ।
আফরান বিরক্ত হয়ে মৌলভী(কাজী) কে আবারো বললো কি বলেছি শুনেন নি ?
__স্যার মেডাম তো রাজী নয় তাহলে কিভাবে বিয়ে হবে ? বিয়ের জন্য দুইজন কেই সম্মতি থাকতে হবে কেউ একজন রাজি না হলে …
এটুকু বলতে আফরান লোকটাকে ধমকিয়ে বললো
__একদম পেঁচার পারিস না ,যেটা বললাম সেটা কর নয়তো এখান থেকে ভালোভাবে ফিরতে পারবি না বলে দিলাম ।কথাটা বলে তানভীরের দিকে তাকায়
তানভীর কিছু টা ভয় পেয়ে কাজী কে বললো
___আপনি যা করার জলদি করুন নিজের ভালো চাইলে
__লোকটা ভয়ে কেঁপে উঠে বিয়ের জন্য যা যা পড়তে হয় ওসব পড়া শুরু করলো অর্থাৎ কিছু আরবী বাক্য মুখে বলতে লাগলো ।
___দেখলেন কি বললো আমি সম্মতি না দিলে বিয়ে হবে না এখন কি করবেন আপনি ? ছেড়ে দিন আমাকে একদম জোড় করবেন না বলে দিলাম ।আমাকে মানুষ দের দিয়ে কথা শুনিয়েছেন আপনি আপনার সাথে আমার কথা নেই ।
__কে কি বলেছে?
আফরান এর শক্ত কন্ঠ
আরিয়ার বুঝতে বাকি নেই লোকটা আবারো রেগে গিয়েছে তাই নিজের ন্যাকা কান্না বন্ধ করে বললো
___ক..কেউ কিছু বলেনি তো ।আপনি দেরী করেছিলেন তাই আমি…
আরিয়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন টা আবার প্রয়োগ করে ।
__আসলছ স্যার কে কি বলবে ? সবাই তো আত্মীয় স্বজন এছাড়া কেউ নেই ।
তানভীরের কথায় আফরান কিছু টা শান্ত হয় ।
কাজী সাহেব এবার আফরান এর দিকে ভীত দৃষ্টি নিয়ে বললো
__আপনার কাবিনের ব্যাপারে কিছুই তো এখানে উল্লেখ নেই কি বলবো?
__ওটা বাদ ওটা আমি করে নিয়েছি আসল কাজ করুন
__এটাই তো আসল স্যার…
আবারো ধমকিয়ে বললো বলেছি না ওটা আমার একান্ত ব্যাপার আমার কাছেই আছে ওটা বাদে যা যা বাকী ওসব বলেন ।
আবারো কেটে উঠে কাজি
পাশ থেকে জাফর বলে উঠে
__এভাবে কেউ বিয়ে করে ? আমি আবার জিবনে তোমার মতো বেহায়া ছেলে কখনো দেখিনি । আর কাবিন ছাড়া তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছো? তোমার সম্পদের এতোই দরকার যে …
এটুকু বলতেই পাশ থেকে তানভীর বলে উঠলো,ভুল বুঝছেন স্যার কে স্যার আগেই এটা করে নিয়েছিলেন স্যারের কাবিন নামা আমার কাছে ছিলো দেখেছি আমি ।
খলিল সাহেব:- তা কি ছিলো কাবিন ? সাক্ষী ছাড়া কাবিন কিভাবে গ্রহন যোগ্য? দেখা গেলো পরবর্তী যে ওদের সম্পর্ক টায় ঝামেলা চলছে বা ….
এটুকু বলতে তানভীর বললো
__আপনি ভুল করছেন,স্যার অবুঝ নয় । সারের হাজার কোটি টাকার সম্মতির ৫০ পার্সেন্ট আপনার মেয়ের নামে লিখা আর সাথে যেটা সম্ভব নয় সেটাও স্যার জোড় করে সেখানে লিখিয়েছেন আপনার মেয়ের প্রান যত……..এটুকু বলতে আফরান তানভীরের দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টি ফেলে বললো
___কিছু বলতে বলেছি তোকে? উত্তর দিতে এখানে আনা হয়েছে তোকে?
আফরান এর কড়া গলার কথায় তানভীর কেঁপে উঠে একদম চুপসে গিয়ে ঠোঁটের উপর আঙুল ছোয়ায় ।
তানভীরের কথা শুনে সবাই একটু অবাক হলেও কারোই যেনো বিশ্বাস হলো না ।তাই জাফর সাহেব আবারো প্রশ্ন করলেন
__বিষয় টা তোমাদের কাছে মজার মনে হচ্ছে? এটা মোটেও মজার নয় ঠিক ভাবে বলো ।
___কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই ।
তানভীর আবারো বলে উঠে
__আমি মিথ্যে বলছিনা স্যার ।
আফরান আবারো বিরক্তির চাহনি রাখে তানভীরের উপর ।
এবার একটু বেশিই ভয় পেয়ে দুকদম পিছিয়ে যায় ।
___আর একটা কথাও যেনো এটা নিয়ে না হয়
আফরানেরশেষের কথায় আর কারো সাহস হলো না এটা নিয়ে কথা বাড়ানোর ।
কাজী সাহেবের দিকে আবারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলতেই লোকটা বলে উঠলো
__ম..মেডাম কে কবুল বলতে বলুন
আরিয়া চট করে সোজা উত্তর দেয়
__আমি এই লোকটাকে বিয়ে করবো না কিছুতেই না ।
পাশ থেকে আফরান আরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
__মার চিনিস ? দেখ আরু পরে যা ইচ্ছে বলিস এখন এটা ন্যাকামোর জায়গা না । চুপচাপ কথা শুন নয়তো..
__বলবো না বলবো না ।সত্যি বলছি আমি আপনাকে বি……
এটুকু বলতেই নিজের হাতে ব্যাথা অনুভব করে আরু ।”ওহ” শব্দ করে হাতের দিকে তাকায় আফরান যেখানে শক্ত হাতে ধরে আছে সেখান টায় আরো জোড়ে চেপে ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যম আঙুলের নখ দিয়ে খামচে আছে ।
বারবার এই মেয়েকে নিজের সীমা লঙ্ঘন করে নিজেই শাস্তি গুলো বাড়িয়ে নেয় ভালোভাবে বলেছিলাম পরে নিজের রাগ মেটাবি কথাটার গুরুত্বই তো রাখলো না এই মেয়ে ।আফরানের উপর নিচের দাঁত গুলো একটাকে অন্যটা পিষে যাচ্ছে।
__আহ…কি করছেন ব্যাথা লাগছে আমার ।
আরিয়ার কথার মানেটা উপস্থিত কেউ বুঝলো না কারন কারো চোখেই বিষয় টা পড়েনি ।
পাশ থেকে আয়শ বললো
__রাগ করেছিস ? কিন্তু এখন কাজী সাহেবের কথা শুন নয়তো পরে নিজেই আফসোস করবি দেখবো ।
কাজী:- ব..বলুন মেডাম
আরিয়া আফরানের দিকে একবার তাকায় ,আফরান কাজী সাহেবের হাতের ডায়রিটার দিকে তাকিয়ে আছে ।ঘারের রগ গুলো ভাসমান । পরনে সাদা রঙের কোট পেন্ট কিন্তু মাঝের ছোট পাথরের বোতাম টা ছাড়ানো হয়তো আসতে আসতেই পড়েছে এগুলো তাই সময় পায়নি অথবা খেয়াল করেনি ।সব টানতে আবার হালকা কারুকাজের ছাপ বসানো যেটা জায়গাটাকে আরেকটু সুন্দর করে তুলেছে । হাতে আজ ঘরি নেই সাদা আর গোল্ড কালারের মিক্সড একটা চিকন ব্রেসলেট।
কিন্তু আজ এসবে আরিয়া মোটেও আকৃষ্ট হবার নয় এই লোকটার প্রতি , সব সময় নিজের কাজ আগে ,করবো না বিয়ে থাকবো না উনার সাথে ।কথাটা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে আফরান আরো জোড়ে খামচে ধরতেই আরিয়া গদগদ করে উচ্চ আওয়াজে বলে উঠলো
__কবুল কবুল কবুল কবুল । ছাড়ুন এবার লাগছে আমার ।
আরিয়ার কবুল বলা টা সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়েছে এভাবেও কবুল বলে কেউ ? সেটাও এতো লোকজনের সামনে বিয়ের কনে ।
আফরান ঠোঁটের কোনে হাসি লুকায় এভাবে বললে কার হাসি আসবে না? অবশ্যই এই মুহূর্তে আফরানের খুব জোড়ে হাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পাবলিক প্লেস মোটেও হাসলে চলবে না বউয়ের জন্য।
কাজী সাহেব জোড় করে হাসি এনে বললেন
__বাহ এতোক্ষণ তো বিয়ে করবে না বলে যাচ্ছিলো এখন এক সাথেই চার….
এটুকু বলতে আফরান বললো
__আর কিছু বাকি থাকলে বলুন নয়তো যেতে পারেন
__স্যার আপনাকেও তো বলতে হবে নয়তো..
__আফারান কপাল কুঁচকে তানভীরের দিকে তাকায় ।
তানভীর ভীত গলায় বললো
__হ্যা স্যার দুজনকেই বলতে হবে ।
আফরান মুখে বিরক্ত প্রকাশ করে বললো
মি মাফিয়া পর্ব ৬১
__ওকে ,কবুল ।চলবে এবার ? শেষ হলে আসতে পারেন।
__স্যার ৩ বার বলতে হয়
আরেকবার ধমক দিয়ে বললো
__আমাকে কি জোকার মনে হয় ? একবার নয় তিনবার কেনো বলতে হবে? আমি কি মিথ্যে বলছি মনে হচ্ছে? কথা টা বলেই আরিয়ার হাত ধরে উঠে দাড়ায় আফরান । তারপর……