মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ২১

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ২১
আবরার আহমেদ শুভ্র

এয়ারপোর্টে বসে আছে তানিম। আর কিছুক্ষণ, তারপরে হয়তো কখনও আসা হবে না তার এই মাতৃভূমিতে। কখনো তার প্রিয় মানুষগুলোকে তার দেখা হবে না। নিজের দোষে আজ সে সর্বহারা হতে চলেছে। প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে নিজের উপর। হয়তো এমন ভুল না হলে তার জীবনটা আরও সুন্দর হতে পারতো! অনেক কষ্ট দিয়েছে সে তানজিমকে। সাথে অথৈকেও! বিয়ের পর যদি স্বামী অন্য কোনো মেয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লে বা নিজের পুরোনো প্রেম আবারও জাগ্রত হতে দেখা গেলে অবশ্যই সেটা স্ত্রীর খারাপ লাগবেই!

কেননা, সে তাকে বিশ্বাস করে নিজের পরিবারের থেকে এতো দূর এসেছে সংসার নামক জীবনে! সেখানে যদি এসবকিছুর সম্মুখীন হতে হয় তাহলে কার না ভালো লাগবে এই সংসার নামক জীবনকে মূল্য দিতে। হোক সেই নারী তার আপন কেউ! তবুও তো পুরুষটা হয় তার প্রিয়তম! বিশ্বাসের প্রধান অবলম্বন! তখন স্ত্রীর নিকট সে নর্দমার কীটের চেয়েও মারাত্মক ঘৃণিত বস্তুতে রূপান্তরিত হতে সময় লাগে না। অথৈয়ের বেলায়ও তা হয়েছিল ঠিক। মেয়েটা প্রচন্ড পরিমাণে ঘৃণা করেছিলো তাকে! নাহলে এমন সিদ্ধান্ত সে কখনোই নিতো না। কখনো সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। একসাথে দু দুটো মনকে সে ভেঙে চুরমার করেছে! আর নিজের সন্তানকে করেছে পিতৃহারা!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাথানিচু করে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সে অনেক্ক্ষণ। মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার! আর বক্ষপিঞ্জরের ধুকধুকানি বেড়েই চলেছে তার। আঁকড়ে ধরেছে প্রিয়জন হারানোর ভয়। হঠাৎ মাথা নিচু করে চোখজোড়া খুলে তাকাতেই সামনে দু’জোড়া পা দেখে থমকে গেলো সে, একজোড়া পর তার অতিপরিচিত! মনে মনে তাকে ভাবিয়ে তুললো এই যে, সে যা ভাবছে সবটাই তার ভ্রুম!

সেদিকে তাকালে হয়তো সব আগেট মতোই হয়ে যাবে। কিন্তু মনতো আর মানে না, মাথা তুলে সেদিকে তাকালো তানিম। তার ধারণা মিথ্যে করেদিলো তার প্রিয় মানুষটির উপস্থিতি! দাঁড়িয়ে গেলো সে। কিন্তু তার দাঁড়াতে দেরি অথৈয়ের তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেও দেরি হলো না। পাশে তানজিম দাঁড়িয়ে দেখছে তাদের কান্ড। তার মতোন উপস্থিত সেখানের প্রত্যেকটা পাবলিকও তাদের দিকে চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে। তানিম অবাক হয়ে অথৈয়ের কান্ডকারখানা লক্ষ্য করছে। সে কখনো ভাবে নি অথৈ এমন করবে। কেঁদে কেঁদে পুরো শার্ট ভিজিয়ে ফেললো সে তানিমের। তানিমও তাকে জড়িয়ে নিলো। কিন্তু মনে তার চাপা আক্রোশ রয়ে গেলো। অথৈ ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলে উঠলো,

–আমার জন্যই কি আপনি চলে যাচ্ছেন আপনার ছেলেকে ফেলে? আমি নাহয় অভিমান করেই আপনার থেকে ওইটা চেয়েছিলাম। তার জন্য আমাদের এতো বড়ো শাস্তি দিবেন? আপনি চলে গেলে আমার কি হতো? আমাদের ছেলেটার কি হতো? ও বাবা বলে আদৌ বুলি কন্ঠে কাকে ডাকতো? কেন্্্
অথৈকে থামিয়ে দিলো তানিম। কিছুক্ষণ চেয়ে রইল তার দিকে। তারপরে উপস্থিত সকলের দিকে একবার চোখ বুলাতেই সকলে আবারও যে যার কাজে মনোযোগ দিলো। অন্যদিকে তাকিয়ে এবার সে অথৈয়ের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

–কান্নাকাটি অনেক হয়েছে এবার বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও। আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে। আর কখনো তোমাদের সাথে হয়তো দেখা হবে কিনা জানি ন, হয়তো হবেও না দেখা। সো, সবসময় নিজের যত্ন নিবে আর সাথে আমার ছেলেটার! উহ স্যরি তোমার ছেলের।
তানিমের কথায় বেশ লজ্জিত হলো অথৈ। চোখ বেয়ে কয়েকফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তা তানিমের চোখ এড়ালেও তানজিমের চোখে ঠিকই ধরা পড়েছে। তা দেখে এবার তানজিম বলে উঠলো,

–ভাইয়া সব কিছু ভুলে আবারও নতুন করে শুরু করো এতে তোমার আর ভাবির উভয়ের মঙ্গলকরই হবে ইনশাআল্লাহ। তাশরিফের কথা এখানে নাই বা বললাম। তার মনে অভিমান জমেছিলো বলেই তো সে তোমার সাথে এমন বিহেব করেছিলো। কিন্তু সে যদি তোমার সাথে বিচ্ছেদটা মন থেকেই চাইতো তাহলে আজ হয়তো সে তোমায় আটকাতে এতোদূর আসতো না। বরং তোমার যাওয়াতে তার জন্য সুবিধার হতো। তাই আবারও বলছি সবকিছু সহজভাবে নিয়ে সব মান অভিমান ভুলে ভাবিকে কাছে টেনে নাও।

তানজিমের কথা শোনে হালকা হাসলো সে। তারপরে একপলক তাকালো অথৈয়ের দিকে। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থেকে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
–তাহলে কি আর করার বাকি রইল। চলেন তাহলে যাওয়া যাক। আপনাদের উপর কথা বলার অধিকার আমার নেই।
বলে নিজেই আগে বেড়িয়ে গেলো ওয়েটিং রুম থেকে। পিছুপিছু ওরা দুজনেও এলো তার সাথে। অতঃপর বাইরে এসে উঠে পড়লো গাড়ীতে।

সাথে তানজিম আর অথৈও,আর ড্রাইভিং সিটে বসে আছে ফুয়াদ। অথৈয়ের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। তা দেখে তানজিম হালকা হাসলো। মনে মনে তৃপ্তিও পেলো৷ কেননা সে পেরেছে তার কথায় তানিমের মন মানাতে! ফুয়াদ একপলক মিরর গ্লাসে তাকিয়ে দেখলো তানজিমের মুখে তৃপ্তির হাসি! তা দেখে মনে মনে হাসলো ফুয়াদ। অতঃপর নিঃশব্দে গাড়ি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো বাড়ীর উদ্দেশ্যে।

বাড়িতে এসে হালকা ফ্রেশ হয়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো তানিম। নিজেকে বেশ একা লাগছে তার। আজ হয়তো তার জীবন আরও সুন্দর হতে পারতো যদি না সে তানজিমের মনে কষ্ট না দিয়ে তাকে আপন বোনের ন্যায় ভালোবাসতো। সে হয়তো মোহে পড়ে এসব করেছে কিন্তু পরিস্থিতি বরাবরই হিতে বিপরীত হয়। সে মনে মনে ঠিক করলো কখনো কোনো পরিস্থিতিতে সে কারো মন নিয়ে খেলবে না। বিড়বিড় করে বলে উঠলো সে,

–এটাই হয়তো রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার। নাহলে কখনো পদে পদে এমন বিহেভিয়ারের সম্মুখীন হতে হতো না।
হঠাৎ কারো উপস্থিতিতে ধ্যান ভাঙলো তার। পাশ ফিরে তাকালো সে। ফুয়াদ দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। চোখ বিনিময় হলো দুজনের। তানিম সামনের দিকে তাকালো। সন্ধ্যার মূহুর্তটা বেশ ভালো লাগছে তার আজ। কখনও এভাবে উপভোগ করা হয় না তার। তাই হয়তো! ফুয়াদ হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো,

–জানো ভাইয়া যেদিন তুমি তানজিমের সাথে প্রতারণা করেছিলো সেদিন থেকেই তোমার প্রতি অজানা ক্ষোভ জন্মেছিলো আমার। প্রতিটি মুহূর্ত অপেক্ষা করতাম কখন আমি সেই ক্ষোভ মেটাতে পারবো! বার বার মনে হতো তোমায় এমন শাস্তি দিতে যাতে তুমিও বুঝতে পারো যে, যদি তুমি কোনো মানুষের মন ভাঙো তাহলে সেই মানুষটার মনের অবস্থা কেমন হয় তার প্রতিফলনটা তোমায় আমি বুঝাবো ঠিক অমন করেই। কিন্তু দেখ আল্লাহর কি রহমত! তোমায় তিনি নিজ হাতেই শাস্তি দিয়েছেন, আমায় ইনভলভ করতে হয় নি। যায়হোক, যা হয়েছে তা ভালো জন্যেই হয়েছে। এখন সবকিছুই ভুলে সামনে ফোকাস করো নিশ্চয়ই তোমার জীবনে সুখের দিম সন্নিকট! আমায় ক্ষমা করিও তোমায় অনেককিছু বলেছিলাম, আই মিন এখনও বলেছি।

দীর্ঘশ্বাস ফেললো তানিম। কতোকিছুই না ঘটেছে তার জীবনে কিছু সময়ের মধ্যেই। সবকিছুই কি আর মনে রাখা যায়? কিছু কিছু মূহুর্ত থেকে আবার শিক্ষাও নিয়েছে। ফুয়াদের এহেন কথায় তার তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো তানিম। প্রতিত্তোরে ফুয়াদও হাসলো। সে আবারও সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

–জানিস ফুয়াদ, আমার জীবনে অনেক কিছুই ঘটেছে কিন্তু এই কয়েকদিনের গুলো ছিলো ভীষণ বেদনাদায়ক। হে আমি মানছি আমি অন্যায় করেছিলাম তার ফলও পেয়েছি তাই বলে কি তাতেও সে আমার দিকটা একবার ভাববে না? অবশ্যই কাকে ভাবার কথা বলছি আমি! সে তো নিজের কথায় ভাবে এখন।
তানিমের কথায় বাধ সাধলো ফুয়াদ,

–ভুল বলছো ভাইয়া, অথৈ কেমন মেয়ে তুমিই নিশ্চয় আমার চেয়ে অনেক ভালো জানো। সে কখনোই নিজের কথা ভাবে না প্রথমে সে তোমার দিকটা চিন্তা করে পরে তার কথা! তাকে তুমি ব্লেইম অবশ্য দিবে না৷ মেয়েটা তোমাকে প্রচণ্ড পরিমাণে ভালোবাসে সে। যে দুইদিন তুমি ছিলে না চলে গিয়েছিলে তাকে ফেলে খবর নিয়ে দেখলে হয়তো জানতে মেয়েটা তোমায় ছাড়া একফোঁটা পানিও খায় নি। তারপরও তুমি বলবে সে এখন নিজের কথাই ভাবে? এমন কথা তোমার থেকে আশা করা যায় না ভাইয়া।

ফুয়াদের কথায় অবাক হলো তানিম। দ্রুত তাকে ফেলে সে অথৈকে খুঁজতে তার রুমে ছুটে গেলো। তার রুমে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো সে। অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,
–অথৈ……

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ২০

[এতোদিন পরপর গল্প দিয়ে কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে গল্পটা৷ কাহিনী প্লট সবকিছুতে গন্ডগোল পাকিয়ে যাচ্ছে বার বার। তবুও গল্পটা শেষ করা তো অতি জরুরি। তাই খুব শীঘ্রই গল্পটা শেষ করে দিবো। হয়তো সর্বোচ্চ ২/৩ পর্ব ইনশাআল্লাহ। আর আমার নতুন আইডির লিংক দিয়ে দেব সকলে সেখানে এড হয়ে যাও। আগের আইডি ডিএক্টিভ করে দিবো। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে, ধন্যবাদ। ]

মেঘফুল ফুটলো মনে শেষ পর্ব