মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ১০

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ১০
লেখিকা Sabihatul Sabha

ব্যস্ত নগরী।চারপাশ শুনশান নীরবতা। রাত না হলেও ১২টা বাজে। জানালার পর্দা টেনে বাহিরে তাকালো আহনাফ। দুইপ্রান্তে জ্বল জ্বল করছে হলুদ রঙের ল্যাম্পপোস্টের বাতি।
বিকেলের দিকে হসপিটাল এসেছে। এসেই একের পর এক পেসেন্ট দেখে যাচ্ছে। ভিন্ন মানুষ ভিন্ন রোগ।
রনির থেকে বেশি কিছুই জানা যায়নি ওকে ওই বাড়িতেই আঁটকে রেখেছে যতোক্ষন সব সত্যি না বলবে এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হবে না।

পেসেন্ট দেখা শেষ করে করিম চাচাকে ডাকলো।
হসপিটালে এখন কেউ ঝিমোচ্ছে, কেউ দায়িত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
করিম চাচাঃ জ্বি স্যার।
আহনাফঃ আমার জন্য এক মগ কফি পাঠিয়ে দেন ।
করিম ছুটলো ক্যান্টিনের দিকে। হসপিটালের দুইতালায় ক্যান্টিন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

কফি খেয়ে বেরিয়ে পড়লো হসপিটাল থেকে। বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন। ওর ডিউটি শেষ।
বাড়ি ফিরে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো। সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভীর করলো। এখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। কিছু খেতেও ইচ্ছে করছে না। সাদা স্বচ্ছ কাঁচের চশমা খুলে পাশে রাখলো। ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো কিছু কাজ বাকি শেষ করেই ঘুমাতে হবে।

দরজার কড়া নাড়তেই বিরক্ত হলো! এতো রাতে আবার কে এসেছে..? আম্মু নয় তো..? নিশ্চয়ই খাবার খাওয়ার জন্য এখনো জেগে আছে!!..।
আহনাফ ল্যাপটপ রেখে উঠে চশমা পড়ে দরজা খুলে দিলো। সামনে ছোঁয়াকে দেখে অবাক হলো।
ছোঁয়ার শরীর কাঁপছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আহনাফঃ কি হয়েছে..? তুই এভাবে ভয় পেয়ে আছিস কেনো..? কান্না কেনো করছিস.?
ছোঁয়াঃ ভাইয়া জলদি আমার রুমে চলো। প্লিজ ভাইয়া,
আহনাফঃ শান্ত হ! কি হয়েছে আগে সেটা বল.?
ছোঁয়াঃ মহুয়া…রক্ত..

আহনাফঃ কি হয়েছে উনার.? বলেই ছোঁয়ার সাথে পাশের রুমে দ্রুত আসলো৷
ছোঁয়া আহনাফ কে ওয়াশরুমে দরজার কাছে নিয়ে গেলো৷ ভেতরে মহুয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কপাল ফেঁটে রক্ত পড়ছে।

আহনাফ মহুয়ার এমন অবস্থা দেখে দ্রুত ওকে কোলে তুলে নিলো। মহুয়ার ঘা পুড়ে যাচ্ছে । আহনাফ মহুয়াকে বিছানায় শুইয়ে কপাল শক্ত করে চেপে ধরলো জেনো রক্ত পড়া বন্ধ হয়। ছোয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ দ্রুত আমার রুম থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আয়।’
ছোঁয়া দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে কান্না করছিলো আহনাফের কথা শুনতেই দৌড় দিলো আহনাফের রুমের দিকে। মহুয়ার এমন অবস্থার জন্য নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে! সে ঠিক মতো মহুয়ার খেয়াল রাখতে পারেনি সেই জন্যই এখন মেয়েটার এই অবস্থা।

আহনাফ দরজা থেকে চোখ সরিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে হাসফাস করতে লাগলো৷ ওড়না নেই মহুয়ার গায়ে হয়তো ওয়াশরুমে পড়ে আছে। আহনাফ মহুয়ার কপালটা শক্ত করে ধরেই আশেপাশে ওড়না খুঁজলো। পাশেই একটা ওড়না দেখে, ওড়না একটা হাতে অন্য দিকে ফিরে মহুয়া উপর দিয়ে তাকালো। কেমন শান্ত হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। কপাল পুড়ে যাচ্ছে! জ্বর অনেক।

ছোঁয়া ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে আহনাফের সামনে রাখলো। আহনাফ যত্ন করে দ্রুত ব্যান্ডেজ করে দিলো। মহুয়ার পেসারও মেপে নিলো।
~ উনার তো জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও করে না..? । পেসার তো একদম কম।

ছোঁয়া নাক টেনে বলে উঠলো, ‘ বিকাল থেকেই শরীর ভালো না। জ্বর এসেছে আমি অনেকবার বলেছি চলো ডাক্তারের কাছে যাই, মেডিসিন নিয়ে আসি। কিন্তু বললো একটু পর সেরে যাবে প্রয়োজন নেই। আম্মুকে বলতে চেয়ে ছিলাম নিষেধ করেছে। সন্ধ্যার পর তিনবার বমি করেছে আমাকে বলেনি।আর এখন ওয়াশরুমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে কপাল ফেঁটে গেছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, তুমি তো জানো রক্ত দেখলে আমি নিজেও অজ্ঞান হয়ে যাই। বলেই মহুয়ার হাত ধরে কান্না শুরু করলো।

~ এমন ফ্যাঁচফ্যাঁচ না করে মুখ চোখ দুইটাই বন্ধ রাখো। আমাকে বিকেলে বলতে পারতে ফোন করে নাকি আমাকে ডাক্তার মনে হয় না?
ছোঁয়া মাথা নিচু করে আছে।আহনাফ কে আসলেই বলা উচিত ছিলো।
~ উনার শরীর ভীষণ দূর্বল ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করার কারনে। কিছু খাইয়ে মেডিসিন খাওয়াতে হবে।
~ আমি স্যুপ করে নিয়ে আসছি। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ছোঁয়া।

আহনাফ মহুয়ার পাশে টুলের উপর বসে আছে। পাশে গ্লাস থেকে পানি হাতে নিয়ে মহুয়ার মুখে হাল্কা ছিটা মারলো৷ কিছু সময় যেতেই পিটপিট চোখ খুলে তাকালো মহুয়া। সব কিছু চোখের সামনে ঝাপসা দেখছে৷ আস্তে আস্তে চোখ ঝাপটে আশেপাশে তাকালো৷ বুঝার চেষ্টা করলো সে এখন কোথায় আছে.? পাশে তাকাতেই আহনাফ কে দেখে উঠে বসতে চাইলো। কিন্তু শরীর ভীষণ দূর্বল উঠতে গিয়েও চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।

আহনাফ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ চুপচাপ শুয়ে থাকুন। আপনার শরীর ভালো নেই।এখন বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। ডক্টরের কাছে অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথে যাওয়ার দরকার ছিলো! এতোটা অসুস্থ আর বাড়ির কেউ জানেও না.? এখন আপনার কিছু হয়ে গেলে আপনার বাড়ির লোকেরা বলতো আমরা আপনার ঠিক খেয়াল রাখতে পারিনি। বাড়িতে ডাক্তার থেকেও চিকিৎসা করিনি! আমরা কি জবাব দিতাম তখন.?? ‘

মহুয়াঃ আপনি এখানে কেনো.? আর আমি একদম ঠিক আছি বেলেন্স হারিয়ে পড়ে গিয়ে ছিলাম।
আহনাফঃ পাকনামো করে ডাক্তারের কাছে জাননি আবার নিষেধ করেছেন ডাক্তার ডাকতে। এখন আকাম করে পড়ে আছেন। তাই নিজ থেকে ডাক্তার চলে এসেছে। বেলেন্স হারাবেন না কেনো.? শরীরে এতো শক্তি যে বেলেন্স রাখতে পারেননি!!।

মহুয়াঃ আমি এখন ঠিক আছি ডাক্তার এবার আপনি প্লিজ আসুন। আর অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আহনাফের ভীষন রাগ হলো। এই মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে তাও এটিটিউড দেখাচ্ছে!!??
” মাথা চিনচিন ব্যাথা করছে মহুয়া কথা বলতে চাইলেই ব্যাথা বাড়ছে।”
আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আহনাফঃআপাতত মুখ বন্ধ রাখুন, মুখে মুখে কথা বলা আমার একদম পছন্দ না৷ কিছু খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিলে ব্যাথা কমে যাবে।”
মহুয়ার শরীর কেঁপে জ্বর আসলো। জ্বরে থরথর করে কাঁপছে। বিরবির করে কি জেনো বলছে।
আহনাফ দ্রুত ওর হাত ধরলো।

” মিস মহুয়া আপনি ঠিক আছেন..? জ্বর তো বেড়ে চলছে। আহনাফের অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। সে এখন কি করবে.? এখন কি হসপিটাল নিয়ে যাবে.?
ছোঁয়া স্যুপ নিয়ে আসলো। মহুয়া খেতে চাইল না জোর করে দুই চামচ খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো।
মহুয়া আহনাফের হাত শক্ত করে ধরে আছে৷ জ্বরের ঘুরে ছোঁয়া ভেবে আহনাফ কে আঁকড়ে ধরে আছে।
আহনাফ না চাইতেও মহুয়ার দিকে তাকালো। ফর্সা মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। চুলগুলো নিচে পড়ে আছে। চোখ গুলো লালচে হয়ে ফুলে আছে।

ছোঁয়াঃ ভাইয়া আম্মুকে ডাকবো.?
~ প্রয়োজন নেই। একটু পর জ্বর কমে আসবে, ব্যাথাও কমে যাবে। কাল সকালে হসপিটালে নিয়ে আসবি আমি কিছু টেস্ট দিবো।

ছোঁয়াঃ মামী জেগে ছিলো তোমার জন্য। আমি বললাম আমি জেগে আছি ঘুমিয়ে পড়তে তাই মামী চলে গেছে আমি কি তোমার খাবার গরম করে দিবো.?
আহনাফঃ না লাগবে না। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আর উনার খেয়াল রেখো।
মহুয়ার হাত থেকে নিজের হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে নিলো। ঘুমের মেডিসিন খাওয়ায় মহুয়া কিছু সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।

আহনাফ ফিরে একবার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
সেই ছোটো বয়স যখন থেকে বুঝতে শিখেছে। তখন থেকেই সয়নে স্বপ্নে মনের ঘরে জায়গা দিয়ে রেখেছে ছোঁয়া এই কঠিন মানবটিকে। যদি এই পুরুষটি একবার বুঝতো!.? ছোঁয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আহনাফের যাওয়ার দিকে। সে খুব ভালো করে জানে আহনাফ শুধু ওকে বোন ভাবে তাও নিজের আপন বোনের মতো দেখে। ওর এই ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই৷ আহনাফ কখনো ওকে বোন ছাড়া অন্য নজরে দেখেনি।

ছোঁয়া মহুয়ার চুলগুলো যত্ন করে মুছে শরীরটা হাল্কা মুছে দিলো। গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে কপালের ব্যান্ডেজটার দিকে তাকালো বলে উঠলো ইসস কতোগুলো রক্ত ঝড়েছে!.
ছোঁয়া খুব মিশুক একটা মেয়ে। যার সাথে মিশে একদম মন থেকে মিশে। তাকে আপন ভাবতে শুরু করে।
মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো।

আহনাফ রুমে এসে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে । কিন্তু কাজে আর মন দিতে পারছে না। মেয়েটা কি জেগে গেছে.? মাথা কি ব্যাথা করছে.? নিশ্চয়ই ভীষণ কষ্ট পেয়েছে কপালে!.?
কিছু আজগুবি চিন্তাভাবনা মনে এসে উঁকি মারছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।

ফজরের দিকে শরীর ঘাম দিয়ে ঘুম ভেঙে গেলো মহুয়ার। শরীর থেকে ছোঁয়ার হাত সরিয়ে উঠে বসলো। মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে। কপালে হাত দিতেই আহ্ বলে হাত সরিয়ে ফেললো। শরীরে জ্বর নেই৷
আজান শেষ হতেই মহুয়া আস্তে ধীরে ওয়াশরুমে গিয়ে ঘা দোয়ে নিলো। কপাল না ভিজিয়ে আলগোছে মাথায় পানি ঢালার চেষ্টা করলো।

আহনাফ বাগানে গিয়ে একবার মহুয়ার ব্যালকনির দিকে তাকালো। মেয়েটা কি ঘুম থেকে উঠেছে..? এখন শরীর কেমন আছে..? আজ রাতে একদম ঘুম হয়নি আহনাফের। সারা রাত হাসফাস করে সকাল হতেই বাগানে ছুটে এসেছে যদি মেয়েটাকে দেখা যায়.? আবার নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে, ” এই মেয়ের জন্য তার কেনো এতো টেনশন কেনো এতো বেকুলতা.?? এইসবের উত্তর মিলবে কোথায়..?

সকালে মহুয়ার কপালে ব্যান্ডেজ দেখে সবাই অবাক হলো।
ছোঁয়া কাল রাতের সব কথা সবাইকে বললো।
আমেনা বেগম মহুয়ার কাছে এসে বললো,’ আমাদের আপন মনে করো না তাই না..? এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমরা কেউ কিছু জানতে পারলাম না!.. ‘

মহুয়া এক হাতে ঘোমটা টা টেনে ধরলো। নিচু স্বরে বলে উঠলো ” কি বলছেন আন্টি! আমি আপনাদের আপন মনে করছি বলেই তো আপনাদের সাথে আছি। আমি আপনাদের টেনশনে ফেলতে চাইনি আন্টি.’
নিরুপমা বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। এইসব আধিখ্যেতা দেখানোর সময় নেই। দেখারও সময় নেই এর থেকে বসে বসে সিরিয়াল দেখা ভালো।

আনোয়ার চৌধুরীঃ কিছু খেয়ে এখন মেডিসিন খেয়ে নিও। একবার হসপিটাল গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসবে।
মহুয়া চুপচাপ সোফায় বসে আছে ওর মুখে কোনো শব্দ নেই।
আহনাফ আঁড়চোখে একবার মহুয়াকে দেখে নিলো। খাবার শেষ করে রুমে চলে গেলো।

আহনাফ বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ছোঁয়া উঠে পড়ে লাগলো হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার জন্য। মহুয়া বুঝানোর চেষ্টা করলো সে ঠিক আছে কিন্তু কে শুনে কার কথা! এক পর্যায় রেডি হয়ে বের হলো হসপিটালের উদ্দেশ্য।
আহনাফ হসপিটালে এসে পেশেন্ট দেখে এসে বসলো। সাদা এপ্রোন পাশে রেখে কফি হাতে নিলো।
দরজায় খটখট আওয়াজে বলে উঠলো।

” আসুন”
করিম ভেতরে এসে বলে উঠলো, ‘ স্যার একটা পেশেন্ট এসেছে বলছে উনি নাকি আপনার বোন।’
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আসতে বলুন।’
ছোঁয়া মহুয়া কে নিয়ে ক্যাবিনে আসলো।
আহনাফ মাথা নামিয়ে ফাইল দেখছে।

ছোঁয়া চেয়ার টেনে বসতে নিলে মহুয়া হাত ধরে থামিয়ে দিলো। চোখের ইশারায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। ছোঁয়াও ভালো মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
আহনাফ একবার ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বসুম’
মহুয়া আর ছোঁয়া বসতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ কিছু টেস্ট করতে হবে আপনার।’

মহুয়া টেস্ট করে এসে আহনাফের সামনে বসে আছে। খুব বিরক্ত লাগছে। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তিন ঘন্টা হসপিটালে। খিদেও পেয়েছে ভীষণ।
ছোঁয়া বার্গার, পিজ্জা নিয়ে হসপিটালে আসলো। নিশ্চয়ই মহুয়ারও খিদে পেয়েছে। সকালে একটা রুটি শুধু খেয়েছে।
আহনাফ রিপোর্ট দেখে মুখ গম্ভীর করে তাকিয়ে আছে রিপোর্টের দিকে।
ছোঁয়া চুপচাপ ক্যাবিনের বাহিরে বসে আছে। আহনাফ করিম চাচাকে ডাকলো। পেশেন্টের সাথে যে এসেছে তাকে আসতে বলুন।

ছোঁয়া ভেতরে গিয়ে মুখ ভার করে বলে উঠলো , ‘ ভাইয়া তুমি হসপিটালে এমন ভাব করছো জেনো আমাদের এর আগে কখনো কোথাও দেখোনি!.? আমরা সম্পূর্ণ অপরিচিত। এর থেকে ভালো ছিলো অন্য ডাক্তারের কাছে যেতাম টিকেট কাটতে এতো গুলো টাকা লাগতো না বলেই দুঃখী দুঃখী মুখ করে ডেস্কে হাতের উপর মুখ রেখে আপসোস করতে শুরু করলো। অন্য ডাক্তারের কাছে গেলে না খাইয়ে এতোক্ষন রাখতো না। ভালো ভালো খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতো।

আহনাফের ভীষণ হাসি পেলো তাও মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বললো,’ তাহলে তুই হসপিটালে না এসে কোনো রেস্টুরেন্টে চলে গেলেই পারতি খুব ভালো আপ্যায়ন করতো। এটা হসপিটাল কোনো আপ্যায়ন সালা নয়, আর তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছু না আমি বাড়িতে তোর ভাই কিন্তু হসপিটালে একজন দায়িত্ববান ডাক্তার। ‘
ছোঁয়া মাথা তুলে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,’ ডাক্তার না কসাই।’

আহনাফ রেগে ছোঁয়ার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো।
” মিস মহুয়া আপনার শরীর দুর্বল ঠিক ঠাক ভাবে খাওয়া দাওয়া করা প্রয়োজন। আমি সব কিছু লিখে দিয়েছি আর যে মেডিসিন গুলো দিচ্ছি ঠিক ঠাক সব গুলো খেলে আর নিয়ম মেনে চললে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন। আর এইসব বাহিরের খাবার খাওয়া আপনার জন্য বন্ধ। আমি এখানে লিখে দিয়েছি কি কি খেতে হবে..১৫দিনের মধ্যে আপনার মধ্যে পরিবর্তন দেখতে চাই .’
মহুয়া উঠতে গেলে আহনাফ বলে উঠলো, ” আপনার কি কোনো জমজ বোন আছে”..???

সন্ধ্যায় ছোঁয়া কিছুতেই একটা সাবজেক্ট বুঝতে পারছে না। হেলতে দুলতে বই নিয়ে নির্জনের রুমের সামনে আসলো। নির্জনের থেকে বুঝে নিবে।
” অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমন তুমি ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না নিহা।”
ছোঁয়ার পা আপনা আপনি থেমে গেলো। দরজা আলগোছে খুলে মাথা প্রথম ভেতরে দিলো। নির্জনের ব্যালকনি থেকে শব্দ আসছে।

” তুমি মিশে গেছো আমার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তুমিহীনা আমি কিছু ভাবতে পারি না কোনো মেয়ের দিকে তাকালেই তোমাকে দেখতে পাই। ভোরের আলো শুরু হয় তোমাকে ভেবে, রাতের আঁধারের সমাপ্তি আসে তোমার কথা ভেবে।”
ছোঁয়া খুব কষ্ট হাসি আঁটকে রাখলো। নির্জনের টেবিলের উপর বসে মোবাইল বের করে রেকর্ড চালু করে রাখলো।

” এই বুকেতে লিখেছি তোমার নাম, স্বপ্ন তুমি, সাধনা তুমি, তুমি আমার প্রান।”
এই পর্যায় এসে ছোঁয়া আর নিজের হাসি আঁটকে রাখতে পারলো না। খিলখিল করে হেসে উঠলো।
কারো হাসির শব্দ শুনেই নির্জন ফোন কেটে দিলো। ভ্রু কুঁচকে রুমে আসতেই টেবিলের উপর ছোঁয়াকে এভাবে হাসতে দেখে বুঝলো সব এই কটকটি শুনে নিয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যা ছিলো না সমস্যা তো যখন দেখলো মোবাইলে রেকর্ডিং অপশন চালু। তার মানে এতোক্ষন ওর বলা সব কথা রেকর্ড হয়েছে..?

ভীষণ রেগে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়ার বাচ্চা কটকটি তোর জন্য কি প্রেম করেও শান্তি পাবো না??। কতোটা নির্লজ্জ তুই লুকিয়ে একজনের প্রেম ভালোবাসা রেকর্ড করিস!..?’
ছোঁয়া ভয় পাওয়ার বদলে নির্জনের কথা শুনে আরও হাসতে শুরু করলো। বই রেখে মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বের হতে নিলে নির্জন হাওয়ার বেগে সামনে চলে আসলো।

” মোবাইল দে.?”
~ ফুট সামনে থেকে।
~ ছোঁয়া ভালো হবে না মোবাইল দে।
~ তুই প্রেম করবি লোক দেখিয়ে আর আমরা দেখলেই দোষ!.? আহারেএএ কি ভালোবাসা! বলেই আবার হাসতে লাগলো।

~ আমি লোক দেখিয়ে কখন করলাম.?
~ দরজা তো খুলা ছিলো!
~ তাই বলে না পারমিশন নিয়ে কেনো রুমে আসবি?!
ছোঁয়া নির্জনের দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া।’
~ হুম বল শুনছি তবে আগে মোবাইল থেকে রেকর্ড ডিলিট কর।
ছোঁয়া এক পা দুই পা করে নির্জনের আরও কাছে এগিয়ে গেলো।
বেচারা ছোঁয়ার এমন এগিয়ে আশা দেখে পিছিয়ে গেলো,’ এ্যাঁই দূরে থাক’।

ছোঁয়া আরও এগিয়ে আসলো। কেমন করে তাকালো সাথে সাথে নির্জন থমকে গেলো৷ ছোঁয়া নির্জনের বুকে এক হাত রাখলো। সাথে সাথে নির্জন জমে গেলো বরফের মতো। ছোঁয়া মুচকি হাসি দিতেই নির্জনের ভাবনা গুলো এলোমেলো হতে শুরু করলো।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ৯

ছোঁয়া হঠাৎ নির্জন কে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে দৌড় দিলো মোবাইল নিয়ে, আজ সে সবাই কে শুনাবে নির্জনের ভালোবাসার গল্প ৷
নির্জন এখনো সেই আগের মতো থমকে দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ১১