মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ২৯

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ২৯
লেখিকা Sabihatul Sabha

সময় থেমে থাকে না, রাত গিয়ে সুন্দর একটা সকালের দেখা মিললো। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই হাত চোখের উপর রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু না সূর্য মামা আজ সকাল সকাল ভীষণ তেজ নিয়ে উঠেছে বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো ছোঁয়া। আশেপাশে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো ধীর পায়ে হেঁটে ছাঁদ থেকে নিচে নেমে গেল।
ছোঁয়া নেমে যেতেই দেওয়ালের ওপর পাশে বসে থাকা নির্জন মুখের উপর থেকে জ্যাকেট নামিয়ে বলে উঠলো ” মহারাণীর ঘুম ভেঙেছে, এই সকালটার মতো প্রতিটা সকাল আমার হোক।”

সবাই রেডি হয়ে নিচে আসলো। সাজ্জাদ এসে সবার সাথে কথা বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে শাড়িতে বেশি ভালো লাগে। এমন না যে সেলোয়ার-কামিজে ভালো লাগে না। আপনি মেয়েটাই এমন যা পড়েন তাতেই মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

মেঘলা হঠাৎ এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে নেয়। মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো ” ধন্যবাদ ”
বিপরীতে সাজ্জাদ কিছু না বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বলতে চেয়েছিল অনেক কিছুই কিন্তু এখনো যে সময় আসেনি। সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।
মহুয়া চুপচাপ সবার সামনে এসে দাঁড়ালো।

সবাই ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি রেডি হওনি..??’
মহুয়াঃ না, আসলে আমার শরীর ভালো লাগছে না। আপনারা চলে যান।’
নির্জন বাড়ি থেকে বের হয়ে মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ ক্রাশ মহুয়া সুন্দরী তুমি যদি আমাদের সাথে না যাও তাহলে কোনো মজাই হবে না, কতো আশিক হার্ট মিস করা থেকে বেঁচে যাবে এটা কিন্তু আপাতত আমি চাচ্ছি না জলদি রেডি হয়ে আসো। এতো সুন্দরী নারী, মেয়ে, বালিকা, মহিলা সরি মহিলা হবে না জাতির ক্রাশ বাংলাদেশে আছে তা গ্রামের লোকজনও দেখুক সাথে কিছু ঘটকদের পেটে ভাত পড়বে।

মহুয়াঃ ভাইয়া আমি….
নির্জন মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ ক্রাশকে ছাড়া আমরা কেউ যাব না তাই না গায়েস…!???
সবাই পেছন থেকে বলে উঠলো, ” একদম, তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ যাব না ”
মহুয়ার রাগে মন চাচ্ছে আহনাফের ঘাড় মটকে দিতে। এই লোক নিজেও যাবে না আর ওকেও ব্লাকমেইল করছে না যাওয়ার জন্য। এটা তো কাউকে বলতেও পারব না।

ছোঁয়াঃ এই তোর আবার কি হলো মহুয়া!.? জলদি রেডি হ যা।
মহুয়াঃ আমি বললাম তো যাব না ছোঁয়া আমার শরীর খারাপ লাগছে।
ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে হসপিটাল চল।’
মহুয়া ক্লান্ত চোখে ওর দিকে তাকালো।

মেঘলাও বলতে শুরু করলো চলো সবাই বলছে। তুমি একা একা বাসায় কেন থাকবে.? ভালো লাগবে চল।
মহুয়া বাধ্য হয়ে রেডি হয়ে ওদের সাথে বের হলো।
দাদু, নিরুপমা, নির্জন, ছোয়া এক গাড়িতে। অন্য গাড়িতে হালিমা বেগম, মহুয়া, মেঘলা, সাজ্জাদ।
সাজ্জাদ সামনে বসলো আর তারা পিছে।

সাজ্জাদ এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইলো না। পেছনে ফিরে বলে উঠলো, ‘ আন্টি আমাকে ড্রাইভার বানিয়ে দিলেন.? এটা ঠিক না আন্টি আমি আপনার ছেলের মতো, ছেলের মতো কি আমি তো আপনার ছেলে..। ‘
হালিমা বেগম সাজ্জাদের ইনোসেন্ট মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই বাবা না না আমি আসছি।’
সাজ্জাদঃ সামনে আপনার খারাপ লাগতে পারে আন্টি আপনি পেছনে শান্তিতে বসে ঘুমান।

হালিমা বেগম সামনে বসতে পারেন না মাথা ঘুরায়। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে সামনে যেতে বলার আগেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ মেঘলা আপনি সামনে চলে আসেন।’
মেঘলা অবাক হলো সাথে বিরক্তও। এই ছেলের ব্যাবহার একদম ঠিক লাগছে না।
হালিমা বেগম মেঘলাকে বলতেই মেঘলা তৃক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাজ্জাদের দিকে। এই ছেলের থেকে সব সময় দূরে থাকতে হবে।

সাজ্জাদের মনে খুশিতে লাড্ডু ফুটছে।এটাই তো চেয়ে ছিলো।
মেঘলা গাড়ি থেকে নেমে সামনের সিটে বসার আগেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো ” থামেন!!এদিকে আসেন।”
শ্রাবণের কন্ঠ শুনেই অবাক হয়ে মেঘলা পেছনে ফিরে তাকালো।
শ্রাবণ গাড়ির কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ আপনারা চলে যান আমি আমার বউকে নিয়ে আসছি।’

সাজ্জাদ রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। হালিমা বেগম হেঁসে বললো নিয়ে যা সাবধানে আসবি।
মহুয়া এসে সামনে বসলো। সাজ্জাদ গাড়ি স্টার্ট দিলো৷
মহুয়াঃ আস্তে গাড়ি চালান ভাইয়া।
সাজ্জাদঃ সরি বইনা।

গ্রাম এখন আর আগের মতো নেই। ডিজিটালের ছুঁয়া লেগেছে গ্রামেও। আগের মতো ভাঙা রাস্তা, অশিক্ষিত সমাজ তেমন নেই। এখন রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে, মাটির বাড়ি ভেঙে কাঠের বাড়ি তৈরি হয়েছে, কাঠের বাড়ি হয়েছে বিল্ডিং, সারা রাস্তা মহুয়া আর সাজ্জাদ প্রচুর গল্প করেছে, সাজ্জাদ গান লাগিয়েছে দুইজন গানের সাথে তাল মিলিয়ে গেয়েছে প্রচুর মজা করেছে। প্রথম প্রথম সাজ্জাদ রেগে থাকলে মহুয়ার সামনে তা বেশি সময় থাকতে পারলো না এটা সেটা জিজ্ঞেস করতে করতে ফ্রী হয়ে গেল। মহুয়ার প্রতি কেমন একটা মায়া কাজ করে। সাজ্জাদ মহুয়াকে বোন বানিয়ে নিয়েছে আর মহুয়া পেয়েছে একটা ভাই।

পাকা রাস্তা পেরিয়ে একটা খুব সুন্দর বাড়ির সামনে গিয়ে থামলো গাড়ি।
সবাই বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো কিছু মহিলা, বাচ্চা, মেয়ে।
সবার সাথে ভেতর গেল মহুয়া। ছোঁয়া মহুয়ার থেকে বেশ দূরে দূরে থাকছে। মহুয়া গিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে.? তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকছো কেন.??’

ছোঁয়া কিছু বলার আগেই এক মেয়ে এসে ছোঁয়ার বুকে জাপ্টে পড়লো। তাল সামলাতে না পেরে ছোঁয়া পড়ে যেতে নিলে নির্জন পেছন থেকে ছোঁয়ার কোমর দু-হাত ধরে সামনের দিকে ধরলো।
~ ছোঁয়া কেমন আছিস পিচ্চি.?
ছোঁয়াঃ রিয়া আপু এখন আমাকে ছাড়ো না হলে এতোক্ষন ভালোই ছিলাম এখন কোমর ভেঙে বসে থাকবো।
রিয়া ছোঁয়াকে ছেড়ে দাঁড়ালো।

ছোঁয়া নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো ” ধন্যবাদ, জীবনে আজ একটা ভালো কাজ করলি না হলে এতোক্ষনে আমার কোমর ভেঙে, কোমর ভাঙা মেয়ে হয়ে যেতাম।বিয়ে বাড়িতে এসে ঘরের কোনে বসে থাকতাম ”
নির্জনঃ তাতে ভালোই হতো। তোর এই পেত্নী চেহারা দেখা থেকে কতো ছেলে বেঁচে যেত। বলেই সাজ্জাদকে নিয়ে উপরে চলে গেল নির্জন।
ছোঁয়া রেগে নির্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিয়া মহুয়ার দিকে তাকাতেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ আমার বোন মহুয়া।

রিয়াঃ তোর বোন মানে.??
ছোঁয়া মহুয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ রক্তের সম্পর্কই সব না আত্মার সম্পর্কই আসল।’
রিয়াঃ আচ্ছা, আচ্ছা আর জ্ঞান দিতে হবে না আস্তে আস্তে পরিচয় হয়ে যাবে এখন রুমে চল।
শ্রাবণ বাইক থামালো বাড়ির সামনে এনে।
মেঘলা রেগে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো ” ভালো লাগেনি মেঘরাণী..? আমি জানি আমি অনেক ভালো ড্রাইভার….
মেঘলা রাগে কিছু বলতে পারছে না।
শ্রাবণ বউ নিয়ে এসেছে শুনেই সবাই আবারও বউ নিতে গেইটে আসলো।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ২৮

শ্রাবণ সুন্দর করে মেঘলার ঘোমটা টেনে দিয়ে মেঘলার হাতটা ধরে হাঁটতে শুরু করলো। মেঘলা রাগে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো….. শুধু একবার সুযোগ পাক সব সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবে..।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ৩০