মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ১১

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ১১
লেখিকা Sabihatul Sabha

বিয়ের আগের রাতে বউ উধাও! কোথাও বউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মহুয়া পুরো বাসা,ছাঁদ খুঁজে এসে কথাটা মেঘলা কে বললো। মেঘলা চিন্তিত হয়ে নিরুপমা কে কথাটা বলতেই উনি বলে উঠলেন” আমার মেয়েকে আমি চিনি ও কখনো এমন কাজ করবে না যেটা আমার সম্মানে লাগে। ”
মহুয়াঃ তাহলে ছোঁয়া কোথায়.?

নিরুপমা হসপিটাল হতে শুরু করে ছোঁয়ার সব ফ্রেন্ডের বাসায় কল দিল। ছোঁয়া কোথাও নেই।
সারারাত গেল সবাই ছোঁয়ার অপেক্ষা করলো কিন্তু ছোঁয়া ফিরেনি।
নিরুপমার চোখ জলে ভরে উঠলো। এখন উনি কি জবাব দিবে ছেলে পক্ষ কে!.?
উনি মোবাইল বের করে রাফি কে কল দিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাফি কল ধরতে নিরুপমা সবটা রাফি কে বললো। রাফি উনাকে শান্ত হতে বলে বললো,’ রাতে কেন এই খবর ওকে জানায়নি.? ও ছোঁয়ার হবু স্বামী একবার কি ওকে ছোঁয়া মিসিং সেটা জানানোর দরকার ছিল না.? এখন ও আসছে। ‘
বাড়ি ভর্তি মেহমান সবাই এটা সেটা বলা বলি করছে। মহুয়া সবাই কে চুপ করিয়ে বললো,’ ছোঁয়া ওর এক ফ্রেন্ডের বাসায় আছে।’

মিম সাইডে দাড়িয়ে কাউকে কল দিয়ে ওদিকের অবস্থা জিজ্ঞেস করলো!
কিছু সময়ের মধ্যে রাফি বাইক নিয়ে চলে আসলো।
প্রথমে এসেই জিজ্ঞেস করলো নির্জন কোথায়.??
সবাই অবাক হলো রাফি নির্জন কেও চিনে.!? রাত থেকে কেন একবারও কারো নির্জনের কথা মনে পরেনি!
নিরুপমা হালিমা বেগমের কাছে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো ” নির্জন কোথায়!.?”
হালিমা বেগমঃ নির্জন ওর রুমে।কেন.?

নিরুপমাঃ নির্জনের রুমে গিয়ে ওকে ফোনটা দেন।
হালিমা বেগম নির্জনের রুমে গিয়ে অনেক বার দরজা ধাক্কা দিল, দরজা ভেতর দিয়ে লাগানো। অনেক ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পেলে হালিমা বেগম ছেলের জন্য ভয় পেয়ে গেল! ছেলে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেনি ত! সুইসাইড করেছে কি.? এইসব মনে হতেই উনি চিৎকার চেচামেচি শুরু করলো দারোয়ান এনে দরজা ভাঙালো। ভেতরে গিয়ে দেখে কেউ নেই রুমে।

বাড়িতে হালিমা বেগম ছাড়া সবাই এখন নিরুপমার বাড়িতে।
হালিমা বেগম কল দিয়ে বললো নির্জন বাসায় নেই। কোথায় আছে উনি জানে না।
নিরুপমা রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনার বেয়াদব ছেলে আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেছে!.? আজ ওর বিয়ে ছিল আর কিভাবে আমাদের নিচে নামাবেন!.? মা ছেলে মিলে পেয়েছেনটা কি.? আর কোনো ভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার থাকলে আমাকে মেরে ফেলুন।
হালিমা বেগম কিছুই বুঝলো না! নির্জন ছোঁয়াকে কোথায় নিয়ে গেছে! আর ছোঁয়া এতো ভালো হলে নির্জনের সাথে কেন গেল.?

আহনাফ শ্রাবণ অনেক বার নির্জন কে কল দিল ওর মোবাইল বন্ধ।
মহুয়া আহনাফের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল , আহনাফ কে শুনিয়ে শুনিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এদের ভাইদের এই স্বভাব জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে নেওয়া! ভাইরা এমন করেছে সে কেন বাকি থাকবে!!

আহনাফ মহুয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হেঁসে ফেললো। মহুয়ার দিকে আরও একটু ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বললো,’ কেন তুমি খুশি হওনি.? জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ছিলাম বলেই ত আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা স্বামী পেয়েছো!’
মহুয়াঃ হয় আমাকে উদ্ধার করেছেন! সুদর্শন পুরুষের চেয়ে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী, যত্নশীল পুরুষ, কেয়ারিং হাসবেন্ড বেশি সুন্দর। যা আপনার মধ্যে নেই! সুন্দর চেহারা দিয়ে কি হবে যদি মন পরিস্কার না হয়।
আহনাফ মহুয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ছোঁয়া নির্জনের কাছেই ভালো থাকবে, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। ‘

মহুয়াঃ নিজের জিনিস সবার ভালো মনে হয়! ছোঁয়া নির্জনের কাছে ভালো থাকলে এতোটা কষ্ট পেতে হতো না! যখন ওকে প্রয়োজন ছিল এভাবে হাত ছেড়ে দিতে পারতো না, সুবিধা বাদি পুরুষ কখনো ভালো স্বামী হতে পারে না।
আহনাফ মহুয়ার রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে গেছে।
আহনাফঃ সুন্দর লাগছে…
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ গরম ভীষণ বলে অন্য পাশে গিয়ে দাড়ালো।’

একটা রুমে হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় ছোঁয়া রেগে ছুটার জন্য ছটফট করছে।
দূরে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জন। ছোঁয়ার এমন রাগী চোখ দেখে নির্জন মুচকি হাসলো যা ছোঁয়ার রাগ আরও বাড়িয়ে দিল।
নির্জন উঠে গিয়ে ছোঁয়ার মুখের বাঁধন খুলে দিল।

ছোঁয়া জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ হাত গুলো খুলে দে।’
নির্জন বাধ্য ছেলের মতো ওর হাতের বাঁধন ও খুলে দিল।
হাত ছাড়া পেতেই ছোঁয়া হামলে পড়লো নির্জনের উপর। রাগে নির্জনের বুকে কিল ঘুসি মারলো, চুলগুলো টেনে ধরলো এক পর্যায়ে নির্জনের ঘাড়ে কামর বসিয়ে দিল।
নির্জন ব্যথায় চোখ বন্ধ করে নিল।

নিজের সব রাগ কামরের উপর দিয়ে গেল। রক্ত পড়ছে নির্জনের ঘাড় দিয়ে।
নির্জন ঘাড়ে হাত দিয়ে সামনে এনে দেখে রক্ত।
নির্জনঃ তোর এক রাতে এতো খিদে লাগলে আমাকে বলতি, রক্ত! মাংস যা লাগে আমি এনে দিতাম ডাইনীর মতো আমার রক্ত মাংস কেন খাচ্ছিস!.?

ছোঁয়াঃ পাঁচ মিনিটে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবি না হলে তোকে আমি খু’ন করবো!
নির্জনঃ এমনিতেই সেই কয়েক যুগ,বছর আগে মরে গেছে, যেদিন তোকে প্রথম শাড়িতে দেখে ছিলাম সেই দিন কয়েকবার হার্ট মিস করে ছিলাম, আমাকে ত তুই সেই পিচ্চি থাকতেই মে’রে ফেলেছিস আর নতুন করে কি মারবি!.?

ছোঁয়াঃ এইসব সিনেমার ডায়লগ বন্ধ করে আমার সামনে থেকে যা। আজ আমার বিয়ে নিশ্চয়ই সবাই আমাকে খুঁজছে। আশেপাশের লোকজন আম্মুকে কথা শুনাচ্ছে! আর কিভাবে শেষ করবি আমাদের! এর থেকে ভালো মেরে ফেলতি।
নির্জনঃ রেডি হ এখন কাজী আসবে।
ছোঁয়া রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো,’ কিসের কাজী!.?’
নির্জনঃ ওমা কাজী চিনস না!.? বিয়ে পড়ায়।
ছোঁয়া রেগে নির্জনের কলার চেপে ধরে বললো,’ কার বিয়ে!.? ‘

নির্জন ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকাতেই হেঁসে বলে উঠলো, ‘ এখানে তুই আর আমি ছাড়া আছেটা কে!.?’
ছোঁয়াঃ নির্জনের বাচ্চা এখন কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে!.? সারা রাত আমাকে আঁটকে রেখেছিস আমি তোকে পুলিশে দিব!
নির্জনঃ ছিঃ ছোঁয়া নিজের স্বামী কে পুলিশে দেওয়ার চিন্তা তোর মাথায় কিভাবে আসে! তুই অনেক ভদ্র, লক্ষি বউ ছিলি।

ছোঁয়াঃ আমি বাড়ি যাব।
নির্জনঃ আমি কি নিষেধ করেছি.? আগে শুভ কাজটা শেষ হোক।
ছোঁয়াঃ আমি তোকে মরে গেলেও বিয়ে করবো না।
নির্জনঃ তাহলে কাকে করবি!.?
ছোঁয়াঃ যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
নির্জনঃ ওর সাথে বিয়ের কথা ভুলে যাও।

ছোঁয়াঃ তুই বলে দিতে হবে কাকে ভুলবো আর কাকে মনে রাখবো!.?
নির্জনঃ আজ থেকে আমি যা বলবো তাই হবে।
ছোঁয়া রেগে দরজা খুলে আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হলো। যতোদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ পাশেই সমুদ্র এর একটু দূরে পাহাড়।

ছোঁয়াঃ এটা কোন জায়গা.? আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস.?
নির্জনঃ একটু পর স্বামী হবো একটু ত সম্মান দিয়ে তুমি করে বল।
ছোঁয়াঃ তুই এর থেকে নিচে কোনো শব্দ থাকলে সেটাই ব্যাবহার করতাম। আমাকে বাড়িতে দিয়ে আয়।
নির্জন ছোঁয়ার হাত ধরে বাহিরে সমুদ্রের পাড়ে নিয়ে আসলো।
নির্জনঃ সুন্দর না.?

ছোঁয়াঃ সব কিছু বিষাক্ত লাগছে নির্জন! সবাই আমার জন্য টেনশন করছে।
নির্জন কাউকে কল দিয়ে বললো জলদি নিয়ে আসতে।
কিছু সময়ের মধ্যে চারজন ছেলে একজন কাজী নিয়ে এসে দাঁড়ালো।
কাজী কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনাকে ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে এসেছে।
ছোঁয়া কাজীর ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ নির্জন আর কতোটা নিচে নামবি.? তোকে আমি পুলিশে দিব!
নির্জন হাসলো ছোঁয়ার বোকার মতো কথা শুনে।

ছোঁয়াঃ হাসবি না! হাসলে তোকে রাক্ষসের মতো লাগে!!
নির্জনঃ ছোঁয়ারাণী ভুলে যান কেন! আপনার স্বামী একজন পুলিশ তাকে আর কি পুলিশের ভয় দেখান!?
ছোঁয়াঃ আমাকে বাড়িতে নিয়ে চল নির্জন পাগলামি করিস না! আমার বর নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে! আম্মুর কি অবস্থা কে জানে.! এইসব করে কি শান্তি পাচ্ছিস.?
নির্জন ওর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল।

ছোঁয়া নির্জনের হাত ছেড়ে দৌড়তে শুরু করলো। কোন দিকে যাচ্ছে সে নিজেও জানেনা কিন্তু ওকে বের হতেই হবে।
নির্জন পেছন থেকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে, শুধু শুধু নিজের এনার্জি গুলো নষ্ট করছো আমার বোকারাণী ঘুরে ফিরে সেই একই যায়গায় এসে তোমাকে থামতে হবে।

এমন কোনো জায়গা বাকি নেই রাফি ছোঁয়াকে খু্ঁজছে না।সব জায়গায় লোক লাগিয়েছে।
আহনাফ আলভিকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে মহুয়া চুপচাপ বসে বসে তা দেখছে ভেতর ভেতর রাগে ফেটে পড়লেও উপরে একদম শান্ত দেখাচ্ছে।
এদিকে শ্রাবণ বউকে নিয়ে ব্যস্ত জোর করে নিজেই খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। বাহিরের সব মেহমানদের খাইয়ে বিদায় করে দিয়েছে।

রাফি আহনাফ আর শ্রাবণের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। এদের বোন কে পাওয়া যাচ্ছে না অথচ এই দিকে এদের কোনো খবর নেই একজন বাচ্চা ত আরেকজন বউ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে!!
মহুয়া হয়তো রাফির এভাবে তাকানোর কারণ বুঝলো।
রাফির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ ছোঁয়ার কোনো খবর.?’

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ১০

রাফিঃ নাহ্ ভাবি তবে খুব জলদি পেয়ে যাব,লাস্ট নির্জনকে কোথায় দেখা গেছে তার লোকেশন পেয়ে গেছি।
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ কোথায়!.? ‘
রাফি ইশারা করে মিমের দিকে তাকালো।
মহুয়া আরও অবাক হলো রাফি মিমকে ইশারা করায়।
মিম মোবাইলে কিছু একটা করে সামনে তাকিয়ে দেখে রাফি আর মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ১২